ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম শোষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই ভিটামিনের অভাবে তাই হাড় ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। এছাড়া ক্লান্তিবোধ, ক্ষুধামন্দা ও হতাশার কারণও হতে পারে ভিটামিন ডি ঘাটতি হলে। সূর্যের আলো থেকে পাওয়া যায় ভিটামিন ডি। সকাল এগারোটা থেকে দুপুর দুইটার মধ্যে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রোদ পোহালে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। বিভিন্ন খাবার থেকেও পেতে পারেন ভিটামিনটি। জেনে নিন কোন কোন খাবারে মেলে ভিটামিন ডি।
ভিটামিন ডি অভাবের লক্ষণ
১. চুল পড়ে যাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা দিলে বুঝতে হবে শরীরে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি রয়েছে।
২. হাড়, পেশিতে দুর্বলতা এবং ব্যথা, অস্থিসন্ধির বিকৃতি এবং দীর্ঘস্থায়ী পিঠে ব্যথা ভিটামিন ডি-র ঘাটতির সাধারণ লক্ষণ হতে পারে।
৩. শরীরে ভিটামিন ডি-র মাত্রা কম হলে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ দেখা দিতে পারে, যা ঘনঘন মেজাজের পরিবর্তন ঘটাতে পারে।
৪. স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে, ভালোভাবে বিশ্রাম নিয়েও যদি আপনি অলস এবং ক্লান্তিবোধ করেন, তবে বুঝতে হবে আপনার ভিটামিন ডি-র অভাব রয়েছে।
৫. অতিরিক্ত মুটিয়ে যাওয়াকেও ভিটামিন ডি-র ঘাটতি বলে মনে করা হয়। কিংবা হঠাৎ ওজন কমতে থাকা, ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়ার পরও ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণও ভিটামিন ডি-র অভাব হতে পারে।
৬. শরীরে ভিটামিন ডি-র অভাবে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমতে শুরু করে। এ কারণে ঘা শুকাতেও অনেকটাই সময় লেগে যায়।
৭. অকারণে ক্লান্তিভাব, ঝিমুনি এবং শুয়ে-বসে থাকার ইচ্ছে হতে পারে শরীরে ভিটামিন ডি-র অভাবে।
৮. থাইরয়েডে সমস্যা, মেরুদণ্ডের ব্যথা ও অসময়ে দাঁত পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে শরীরে ভিটামিন ডি-র অভাব হলে।
৯. ভিটামিন ডি-র অত্যাবশ্যকীয় অভাবে পায়ের হাড় ধনুকের মতো বেঁকে যেতে পারে। এ ছাড়াও গাঁটে ব্যথা এবং বৃদ্ধরা বাতের সমস্যায় ভোগেন।
১০. শিশুদের রিকেট রোগ, বড়দের অস্টিওমিলেশিয়া এবং বয়স্কদের হাড়জনিত ক্ষয় রোগের বড় কারণ ভিটামিন ডি।
ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার
সামুদ্রিক মাছ
উচ্চমাত্রায় ভিটামিন ‘ডি’ থাকে সামুদ্রিক মাছ বা তৈলাক্ত মাছে। যেমন—স্যামন, সাডিন, টুনা, হ্যারিং, ইলিশ মাছের ডিম, চিংড়ি প্রভৃতি।
তিন আউন্স ফ্যাটযুক্ত স্যামন মাছে ভিটামিন ‘ডি’ পাওয়া যায় ৩৭০ আইইউ, যা দৈনিক চাহিদার ৮৪ শতাংশ পূরণ করে। সমপরিমাণ টুনা মাছে থাকে ৫৯ আইইউ।
ডিমের কুসুম
একটি মাঝারি আকৃতির ডিমে ০.৯ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ‘ডি’ থাকে। এ ছাড়া প্রতিটি ডিমের কুসুমে প্রায় ৪০ আইইউ ভিটামিন ‘ডি’ থাকে।
মুরগির ডিমের কুসুমে লসোজাইম, ওভাটান্স ফ্লোরিন, এভিডিন, সিস্টেসিন আছে, যা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া ডিমের কুসম ইমিউনোগ্লোবিন-সমৃদ্ধ, যা ঠাণ্ডা বা ফ্লু ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে। একটি গোটা ডিমে অ্যামাইনো এসিড ও অ্যান্টি-অক্সিজেন্ট আছে, যা যেকোনো রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ভূমিকা রাখে। তবে ভিটামিন ‘ডি’ পেতে অবশ্যই তেল দিয়ে ডিম খেতে হবে। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা মুরগির ডিম বেছে নেওয়া ভালো। ফিডের মুরগির তুলনায় এতে চার গুণ বেশি ভিটামিন ‘ডি’ পাওয়া যায়।
মাশরুম
মাশরুম বিভিন্ন ধরনের এবং সব মাশরুমেই ভিটামিন ‘ডি’ আছে। তবে ইউভি লাইট বা সূর্যের আলোর কারণে মাশরুমে ভিটামিন ‘ডি’র পরিমাণ বাড়ানোর অনন্য ক্ষমতা রয়েছে। যেসব মাশরুম আট ঘণ্টা সূর্যের সংস্পর্শ পায় সেগুলো ৪৬০০০ আইটিইউ ভিটামিন ‘ডি’ তৈরি করে।
মাশরুমে বিটা-গ্লুকানস নামে শক্তিশালী পলিস্যাকারাইড থাকে, যা প্রদাহের সঙ্গে লড়াই করতে ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
দুধ
দুধ খুব বেশি ভিটামিন ‘ডি’ প্রদান করে না। তবে এটিকে ভিটামিন ‘ডি’ দিয়ে পরিণত করা যায়। কিছু দেশে গরুর দুধকে ফরটিফায়েড করে ভিটামিন ‘ডি’ যোগ করা হয়। এক কাপ দুধে প্রায় ১২৫ আইইউ ভিটামিন ‘ডি’ রয়েছে। এ ছাড়া ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ও প্রোটিনের ভালো উৎস দুধ।
লিভার বা যকৃৎ
রান্না করা ২.৫ আউন্স বা ৭০ গ্রাম পরিমাণ গরুর কলিজায় ৩৬ আইইউ ভিটামিন ‘ডি’ থাকে, যা মুরগি বা অন্য কোনো প্রাণীতে থাকে না। তবে এতে কোলেস্টেরল বেশি বলে পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে।
ফরটিফায়েড খাবার
কিছু খাবারে ফরটিফায়েড করে ভিটামিন ‘ডি’ বাড়ানো যায়। এসব খাবার বিশ্বের অন্যান্য দেশে বেশি দেখা যায় আমাদের দেশের তুলনায়। যেমন—কিছু সিরিয়ালস, ওটস, ফরটিফায়েড কমলার জুস, গরুর দুধ প্রভৃতি। আমাদের দেশে শিশুখাদ্যে ও টিনজাত গুঁড়া দুধে ভিটামিন ‘ডি’ যোগ করা হয়। আধা কাপ ফরটিফায়েড ওটসে ১২০ আইইউ ভিটামিন ‘ডি’ আছে। এ ছাড়া ১০০ গ্রাম টফুতে ১০০ আইইউ ভিটামিন ‘ডি’ থাকে। এক কাপ ফরটিফায়েড দুধে ১২০ আইইউ ভিটামিন ‘ডি’ থাকতে পারে।
সাপ্লিমেন্টারি
উচ্চমাত্রার ভিটামিন ‘ডি’-সমৃদ্ধ খাবার সচরাচর না মেলায় সাধারণ মানুষ এর চাহিদা পূরণ করতে পারে না। তাই ভিটামিন ‘ডি’ সাপ্লিমেন্টারির প্রয়োজন পড়ে। কারোর ভিটামিন ‘ডি’র মাত্রা কম থাকলে নিজে নিজে নয়, বরং চিকিৎসকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্টারি গ্রহণ করা উচিত।
তবে খাবার বা সাপ্লিমেন্টারির চেয়ে সময়মতো নিয়ম মেনে সূর্যের আলো গ্রহণ করাই ভালো। কেননা ক্যালসিয়াম শোষণে ভিটামিন ‘ডি’ শরীরের জন্য বেশ দরকার, যা বিনা মূল্যে মেলে সূর্যের আলো থেকে।