#Quote
More Quotes by Bishnu Dey
লাঙল ফলায় চেতনাকে করাে উর্বর তবে তাে ফলবে জ্ঞান-বিজ্ঞানে মনের ফসল, তবে তাে গড়বে যন্ত্র হাতের দরদে সচল।
কবিতা তাে লেখাই হয় কাজের শব্দের প্রায় অবচেতন অর্থাৎ খনিকটা ব্যক্তির বাইরে নিজস্ব তাড়নায়। ভাষার প্রকাশ্য সত্তা শক্তি পায় কবিতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কথার এই চেতন-অবচেতন সঞ্চারিত ধ্বনি ফল্গুস্রোতে।
আবার অন্যদিকে এমন অত্যুক্তিও করা চলে না যে কবি ও যোগী এক ও অভিজ্ঞ কাব্যরচনা ও যোগ-সাধনায় পার্থক্য নেই, কবির তবুও হল বাঙ্ময় জগৎ এবং সেটি মানসলোকের অন্তর্ভুক্ত। কবির যে অন্তরাত্মার জ্যোতি তা এই বাঙ্ময় মানসলোককে ভাস্বর, অধ্যাত্মপ্রবণ করে তোলে।
মহাকাব্যের যুগ চলিয়া গিয়াছে, আমরা আধুনিকেরা বলিয়া থাকি। কারণ দিই এই যে, বাহ্য ঘটনা-পরম্পরার দিকে শিল্পী আর মন দিতে পারেন না, আধুনিক শিল্প অন্তর্মুখী, তিনি বলিতে চাহেন ভিতরের জগতের রহস্যের কথা তাই আজকাল হইতেছে বিশেষভাবে গীতিকাব্যের যুগ। আরো একটা কারণ এই, মহাকাব্য রচনা করতে প্রয়োজন চিত্তের মধ্যে যে অবসর, যে স্থৈর্য-ধৈর্য, যে টানা দম তা আধুনিকের নাই।
ভাষার একটা স্বাভাবিক স্থিতিপ্রবণতার জন্য রচনার গতিতে আসে দ্বিধা। গতিতে গা ভাসালে অবশ্য খুঁটিতে বাঁধা মনের দ্বিধাও নিষ্প্রয়ােজন। সজীব রচনাতে তাই শিল্পী ও শিল্পবস্তু, বিষয় ও টেকনিকে টান পড়ে জ্যা বদ্ধ ধনুকের টংকারে ধনু ও ছিলা টানের
বিচার দেয় খণ্ডের অনুভূতি, এক সময়ে একটি জিনিসের এক রকম জ্ঞান, কিন্তু বিবেকে পাই গোটার অনুভূতি, এক সময়ে এক জিনিসের বা বহু জিনিসের বহুল রূপের জ্ঞান এক বহু বহুধা’র সমন্বয় সম্মিলন হইতেছে বিবেকের জ্ঞান।
কিন্তু যোগীর ক্ষেত্র আরো বিস্তৃত ও বস্তুগত—কারণ যোগীর প্রয়াস প্রাণে ও দেহে অধ্যাত্মের আলো প্রজ্বলিত করা। কবি এই প্রয়াসের আরম্ভ হতে পারেন। সহায় হতে পারেন কিংবা শেষে জয়ের প্রকাশ বা ঘোষণাও হতে পারেন, কিন্তু কবি যোগীকে সরিয়ে তার স্থান গ্রহণ করতে পারেন না—যোগী হতে গেলে যে কবি হতেই হবে তা নয়।
সমালোচনা এখন বিজ্ঞাপনের মূর্তি ধারণ করেছে। তার থেকে বোঝা যায় যে, যাতে বাজারে বইয়ের ভালোরকম কাটতি হয় সেই উদ্দেশ্যে আজকাল সমালোচনা লেখা হয়ে থাকে নারী বাদ।
বিষয় হিসাবে, আমরা চাহিতেছি বটে জ্ঞান আরও জ্ঞান, কিন্তু জ্ঞানের বস্তু অপেক্ষা আমাদিগকে বেশি অনুপ্রাণিত করিতেছে অনুসন্ধান, অনুসন্ধানের আবেগ জ্ঞানের সাধক হইয়াও, এই উপলব্ধিটি, আমরা কখনোও ছাড়াইয়া উঠিতে পারি না যে, সকল জ্ঞানই পরিশেষে আপেক্ষিক, সকল জ্ঞানই সাময়িক এবং দেশিক ; তবুও চাহিয়াছি সেই জ্ঞান, একটা চির অতৃপ্তির জের টানিয়া ক্রমাগত চলিয়াছি এক জ্ঞান হইতে আরেক জ্ঞানে। জানি চিরন্তন অনন্ত সত্য কিছু নাই—আছে আজকার এখনকার সত্য, তাহার স্থানে আসিবে কালিকার ওখানকার সত্য—এইরকম সত্যের ক্ষণিকের কাহিনি হইল আর সত্য।
শান্তি অন্তরের ইন্দ্রিয়কে, বাহিরের ইন্দ্রিয়কে উদার প্রসারিত করিয়া ধরে, আর এইজন্যই সেখানে আসিয়া ধরা দেয় অন্তরের অসীমের স্বাচ্ছন্দ্য। শান্তির মধ্যেই গাঢ় হইয়া জমিয়া উঠে একটা আত্মস্থ সামক্ষ্য শান্তি স্বচ্ছতা দৃষ্টিকে লইয়া চলে গভীর হইতে গভীরে।