photo

Ramprasad Sen

Poet
Date of Birth : 17 Jul, 1718
Date of Death : 10 May, 1775
Place of Birth : Garalgacha, India
Profession : Poet
Nationality : Indian
"কবিরঞ্জন" রামপ্রসাদ সেন (১৭১৮ বা ১৭২৩ – ১৭৭৫) ছিলেন অষ্টাদশ শতাব্দীর এক বিশিষ্ট বাঙালি শাক্ত কবি ও সাধক। বাংলা ভাষায় দেবী কালীর উদ্দেশ্যে ভক্তিগীতি রচনার জন্য তিনি সমধিক পরিচিত; তার রচিত "রামপ্রসাদী" গানগুলি আজও সমান জনপ্রিয়। রামপ্রসাদের জীবন সংক্রান্ত নানা বাস্তব ও অলৌকিক কিংবদন্তি বাংলার ঘরে ঘরে প্রবাদবাক্যের মতো প্রচারিত। তবে নানা সূত্র থেকে তার জীবন সম্পর্কে কিছু ঐতিহাসিক তথ্যও পাওয়া যায়।

রামপ্রসাদ সেন জন্মগ্রহণ করেছিলেন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের এক তান্ত্রিক বৈদ্যব্রাহ্মণ পরিবারে। বাল্যকাল থেকেই কাব্যরচনার প্রতি তার বিশেষ আগ্রহ লক্ষিত হত। পরবর্তীকালে তিনি তন্ত্রাচার্য ও যোগী কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তার রচিত ভক্তিগীতিগুলি তার জীবদ্দশাতেই বিপুল জনপ্রিয়তা লাভে সমর্থ হয়। নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় তার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।

বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকসঙ্গীত ধারা বাউল ও বৈষ্ণব কীর্তনের সুরের সঙ্গে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রাগরাগিণীর মিশ্রণে তিনি বাংলা সংগীতে এক নতুন সুরের সৃষ্টি করেন। রামপ্রসাদী সুর নামে প্রচলিত এই সুরে পরবর্তীকালেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম সহ বহু সংগীতকার গীতিরচনা করেছেন।

জীবনী
বিভিন্ন সূত্র থেকে রামপ্রসাদ সেনের যে জীবনকথা সংগৃহীত হয়েছে, তার একটি বড়ো অংশই হল লোকমুখে প্রচারিত কিংবদন্তি। যদিও এর সঙ্গে নানা ঐতিহাসিক বাস্তব তথ্যেরও সংমিশ্রণ ঘটেছে।

প্রথম জীবন
কলকাতা শহরের ২৫ মাইল উত্তরে হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত হালিশহর গ্রামে (বর্তমানে শহর) এক তান্ত্রিক বৈদ্যব্রাহ্মণ পরিবারে রামপ্রসাদ সেনের জন্ম। তার জন্মের প্রকৃত তারিখটি জানা যায় না। তবে বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ বিশ্লেষণ করে অনুমিত হয় যে, তার জন্ম হয়েছিল ১৭১৮ অথবা ১৭২৩ সালে। রামপ্রসাদের পিতা রামরাম সেন ছিলেন একজন আয়ুর্বৈদিক চিকিৎসক ও সংস্কৃত পণ্ডিত। রামপ্রসাদের মা সিদ্ধেশ্বরী দেবী ছিলেন রামরাম সেনের দ্বিতীয়া পত্নী। সেকালের রীতি অনুযায়ী, বাল্যকালে রামপ্রসাদকে একটি সংস্কৃত টোলে শিক্ষালাভের জন্য প্রেরণ করা হয়। সেখানে তিনি সংস্কৃত ব্যাকরণ, সাহিত্য, ফার্সি ও হিন্দি ভাষা শিক্ষা করেন। ছেলেবেলা থেকেই কাব্যরচনা ও নতুন নতুন ভাষাশিক্ষায় তার আগ্রহ ছিল প্রবল।

রামরাম সেন চেয়েছিলেন যে, তার পুত্রও পারিবারিক চিকিৎসক বৃত্তি গ্রহণ করুক। কিন্তু রামপ্রসাদের সেদিকে আগ্রহ ছিল না। বরং আধ্যাত্মিক জীবনযাপনেই তিনি অধিকতর সুখী ছিলেন। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে তার পরিবারবর্গ সর্বাণী নামে এক বালিকার সঙ্গে বাইশ বছর বয়সী রামপ্রসাদের বিবাহ দেন। বিবাহের পর পারিবারিক প্রথানুযায়ী নবদম্পতি কুলগুরু মাধবাচার্যের নিকট দীক্ষা গ্রহণ করেন। কথিত আছে, দীক্ষাগ্রহণকালে গুরু তার কানে মন্ত্রপ্রদান করলে তিনি দেবী কালীর অনুরক্ত হয়ে পড়েন। এক বছর পর তার গুরুর মৃত্যু হয়। এরপর রামপ্রসাদ তান্ত্রিক যোগী ও পণ্ডিত কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ ছিলেন বঙ্গদেশে কালী আরাধনার প্রবর্তক এবং সুপ্রসিদ্ধ শাক্ত তন্ত্রগ্রন্থ তন্ত্রসারের রচয়িতা। আগমবাগীশ রামপ্রসাদকে তন্ত্রসাধনা ও কালীপূজার পদ্ধতি শিক্ষা দেন।

চাকুরিবৃত্তি
রামপ্রসাদের পিতামাতা তাকে উপার্জনক্ষম করে তুলতে চাইলেও, রামপ্রসাদ অধিকাংশ সময়ই সাধনায় অতিবাহিত করতেন। এমতাবস্থায় রামরাম সেনের মৃত্যু হলে দারিদ্র্যের বশবর্তী হয়ে রামপ্রসাদকে বিষয়কর্মে প্রবৃত্ত হতে হয়। কলকাতায় এসে দুর্গাচরণ মিত্র নামে এক ধনীর কাছারিতে মাসিক ত্রিশ টাকা বেতনে কেরানির কাজ শুরু করেন তিনি। কথিত আছে, কাছারির হিসাবের খাতায় সদ্যরচিত শ্যামাসঙ্গীত লিখতে শুরু করলে, অন্যান্য কর্মচারীরা তাদের মালিকের নিকট রামপ্রসাদের বিরুদ্ধে নালিশ জানান। কিন্তু দুর্গাচরণ মিত্র গানগুলি পড়ে রামপ্রসাদের কবিত্বশক্তিতে মুগ্ধ হয়ে যান। তিনি কবিকে কেরানির কাজ থেকে অব্যহতি দিয়ে স্বগ্রামে প্রেরণ করেন এবং তার মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করেন।

সাধনা ও কাব্যরচনা
গ্রামে ফিরে রামপ্রসাদ কঠোর সাধনায় মগ্ন হন। জানা যায়, এই সময় তিনি আকণ্ঠ গঙ্গাজলে নিমজ্জিত অবস্থায় শ্যামাসঙ্গীত গাইতেন। তান্ত্রিক প্রথা অনুযায়ী, তন্ত্রসাধনার আদর্শ পবিত্র এক পঞ্চবটীর (বট, বেল, আমলকি, অশোক ও অশ্বত্থ গাছের সম্মিলিত রূপ) তলায় পঞ্চমুণ্ডীর আসনে (সাপ, ব্যাঙ, খরগোশ, শৃগাল ও মানুষের করোটীর দ্বারা সৃষ্ট আসন) বসে তিনি ধ্যান ও সাধনা করতেন। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, দেবী কালী আদ্যাশক্তি মহামায়া রূপে তাকে দর্শন দিয়েছিলেন।

নদীয়ার মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায় রামপ্রসাদের গান শুনে মুগ্ধ হন। তিনি নিজেও ছিলেন কালীভক্ত। তাই রামপ্রসাদকে তিনি সভাকবির মর্যাদা দেন। রামপ্রসাদ অবশ্য মহারাজের রাজসভায় বিশেষ আসতেন না। তিনি তন্ত্রসাধনা ও কালীপূজাতেই অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করতেন। কৃষ্ণচন্দ্র তাকে ১০০ একর (০.৪০ বর্গকিলোমিটার, ০.১৬ বর্গমাইল) নিষ্কর জমি প্রদান করেন। এর প্রতিদানে রামপ্রসাদ তার বিদ্যাসুন্দর কাব্য কৃষ্ণচন্দ্রকে উৎসর্গ করেন। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রামপ্রসাদকে কবিরঞ্জন উপাধিও প্রদান করেছিলেন। মহারাজের অন্তিম সময়ে রামপ্রসাদ তার পাশে থেকে তাকে কালীর নামগান শুনিয়েছিলেন। শোনা যায়, নবাব সিরাজদ্দৌলা ও সুফি সন্তেরাও রামপ্রসাদের আধ্যাত্মিক সংগীতে মুগ্ধ হন। নবাবের অনুরোধে রামপ্রসাদ একবার তার সভাতেও গিয়েছিলেন বলে কথিত আছে।

মৃত্যু
বৃদ্ধ বয়সে রামপ্রসাদের দেখাশোনা করতেন তার পুত্র রামদুলাল ও পুত্রবধূ ভগবতী। রামপ্রসাদের মৃত্যু নিয়ে একটি কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। রামপ্রসাদ প্রতি বছর দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালীপূজা করতেন। একবার সারারাত পূজা ও গানের পর সকালে কালীপ্রতিমা মাথায় করে নিয়ে বিসর্জনের পথে বের হন রামপ্রসাদ। ভক্তগণ তার পিছন পিছন বিসর্জন শোভাযাত্রায় অংশ নেন। স্বরচিত শ্যামাসঙ্গীত গাইতে গাইতে গঙ্গার জলে প্রতিমা বিসর্জনার্থে অবগাহন করেন রামপ্রসাদ। প্রতিমা বিসর্জনের সঙ্গে সঙ্গেই তার প্রাণ বহির্গত হয়। মনে করা হয়, এটি ১৭৭৫ সালের ঘটনা।

Quotes

Total 0 Quotes
Quotes not found.