রচনা : নৌকা ভ্রমণ

রচনা : নৌকা ভ্রমণ
Admin June 27, 2024 149

ভূমিকা :

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। তাই নৌকা ভ্রমণ এদেশে কারো অজানা নয়। কেননা, বর্ষাকালে যখন রাস্তা-ঘাট পানিতে ডুবে যায়, তখন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে নৌকার প্রয়োজন হয়। দীর্ঘ পথে নৌকাযোগে যাওয়াটাই মূলত ‘নৌকা ভ্রমণ’ বলে গণ্য করা হয়। আমরাও নৌকা ভ্রমণ করে পেয়ে থাকি অনাবিল আনন্দ। এছাড়াও নৌকাবাইচ খেলার মাধ্যমেও বাঙালিরা ব্যাপক আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে।

যাত্রার শুরু :

নৌকা ভ্রমণ খুব আনন্দদায়ক ও চিত্তাকর্ষক। গত বর্ষায় গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম। বহুদিন পর গ্রাম্য সঙ্গীদের সাথে দেখা হওয়ায় ভুলে গেলাম শহরের সবকিছু। তখন ছিল পূজার ছুটি। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ঠিক করলাম নৌকা ভ্রমণে যাব। হঠাৎ মা বললেন, বড় আপুর বাড়িতে বেড়াতে যেতে। তখন স্থান নির্বাচন হতে মুক্ত হলাম এবং মায়ের প্রস্তাবে সম্মতি জ্ঞাপন করে পরদিন একটি নৌকা ভাড়া করলাম। আপুর বাড়ি আমাদের এখান থেকে ৩০ কি.মি. দূরে। তাতে কী হবে? আমরা পাঁচজন একত্র হলাম। যাত্রা উদ্যোগ-আয়োজন শুরু হয়ে গেল। বাজার থেকে জিনিসপত্র কেনা হলো। পরদিন সকাল ৮টায় নৌকায় উঠলাম। নৌকার মাঝি ছিল দু জন। একজনের বয়স যৌবন পেরিয়ে যাবার পথে; অন্যজন তার ছেলে।


যাত্রাপথের বর্ণনা :

সকাল ৮.১৫ মিনিটে নৌকা ছাড়ল। আকাশের অবস্থা ভালোই ছিল। ভাটার টানে নৌকা চলতে শুরু করল। দুপুর দুটার দিকে আমরা সাভার বাজারে এসে পৌঁছলাম। নদীর তীরে বাজারের দৃশ্য বড়ই মনোরম ও নয়নাভিরাম। সবাই মিলে বাজারে নেমে গেলাম। বাজারে সাজানো দোকানগুলোর যেন নববধূর সাজে অঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে স্বর্ণালঙ্কার। এদিকে মাঝির রান্না প্রায় শেষ, সে আমাদের ডাক দিল। মাঝির ডাকে ফিরে এসেই ক্ষুধার্ত পেটকে সান্ত্বনা দিলাম। মাঝি সাড়ে তিনটার দিকে সাভার হতে নৌকা ছাড়ল। এবারও নদীর স্রোত ও বাতাস আমাদের ভ্রমণের অনুকূলে। মাঝি পাল খাটানোর সুযোগের সদ্ব্যবহার করেই মনের আনন্দে হাল ধরে ভাটিয়ালি সুরে গান ধরল। নৌকা বেশ দ্রুতগতিতেই ছুটে চলল। নদীর দু পাশের সারিবদ্ধ গ্রাম ও ফসলের মাঠ যেন এক অপরূপ শোভা ধারণ করেছে। দুই কূলে দেখতে পেলাম অনেক বালক-বালিকা নদীতে সাঁতার কাটছে। কেউবা নদীর পাড়ে খেলাধুলা করছে। কেউবা মাঠে গরু চরাচ্ছে। নববধূরা আলতো পায়ে কলসি কাঁখে জল নিতে এসেছে নদীতে।

রাতের দৃশ্য :

সন্ধ্যা শেষ হয়ে রাতের অন্ধকার এসে জমাট বেঁধেছে। দূরের গাছগুলো আবছা দেখা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে বৃক্ষরাজির ফাঁক দিয়ে অদূরবর্তী গ্রামের আলো দেখা যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, কে যেন সংকেত দিচ্ছে। আকাশে দেখতে পেলাম অসংখ্য তারকা। চারদিকের নীরবতায় শুধু শুনতে পেলাম আমাদের মতো কয়েকটি নৌকার ছপ ছপ দাঁড়ের শব্দ। এর স্তব্ধতা ভঙ্গ করে মাঝি গেয়ে উঠল-
“মন মাঝি তোর বৈঠা নে রে
আমি আর বাইতে পারলাম না।”

বাইরের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম বোনের বাড়ির নিকটে এসে গেছি। মাঝির গানের এ কলির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বললাম, “তুমি আর বাইতে না পারলেও চলবে।” মাঝি হো-হো করে হেসে বলল, “বুঝেছি, যাত্রার শেষ।” মাঝির গান থেমে গিয়েছিল কিন্তু গানের রেশ তখনও কানে বাজছিল। আমাদের নৌকা যখন বোনের বাড়ির ঘাটে এসে পৌঁছল তখন রাত আটটা।

উপসংহার :

নৌকা ভ্রমণ বেশ আনন্দদায়ক ও চমকবপ্রদ একটি ভ্রমণ। মাথার ওপর বিশাল আকাশ, চারিদিকে হু-হু বাতাস আর পানির ঢেউখেলানো শব্দে নৌকার সাথে সাথে আমাদের মন হারিয়ে যায় বহুদূর।