রচনা: ডিজিটাল বাংলাদেশ

রচনা: ডিজিটাল বাংলাদেশ
Admin June 26, 2024 113

ভূমিকা:

বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। আধুনিক এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে প্রতিদিন নতুন নতুন তথ্য ও সত্য উদ্ঘাটিত হচ্ছে। সময়ের বিবর্তনে রাজনীতি, অর্থনীতি, জলবায়ুর পরিবর্তনসহ নানা কারণে দ্রুত বদলে যাচ্ছে বিশ্বপ্রেক্ষাপট। বিগত কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বে তথ্য প্রযুক্তির অনেক উন্নতি ঘটেছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশেও লেগেছে প্রযুক্তির নামের জাদুর কাঠির ছোঁয়া। যার নাম ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’।

ডিজিটাল বাংলাদেশ:

ডিজিটাল বাংলাদেশ হলো কম্পিউটার এবং উন্নতর তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া এবং জবাবদিহিতার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। এটি একটি যুগোপযোগী, কিছুটা ব্যাপকভিত্তিক ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা, এ পরিকল্পনার মাধ্যমে ই-গভর্নেন্স, ই-কৃষি, ই-স্বাস্থ্য, ই-বাণিজ্য, ই-ভূমি মালিকানা, ই-শিক্ষাসহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক সেবা নিশ্চিত করাই হলো ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য।

ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণার উদ্ভব:

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর নির্বাচনী ইশতেহার ‘দিন বদলের সনদ’-এর অংশ হিসেবে ২০২১ সালের মধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন থেকেই ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণার উদ্ভব।

ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি:

সাধারণভাবে বলতে গেলে একটি ডিজিটাল সমাজ নিশ্চিত করবে জ্ঞানভিত্তিক সমাজব্যবস্থা, যেখানে সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের কর্মকাণ্ডে পর্যাপ্ত অনলাইন প্রযুক্তির প্রয়োগ নিশ্চিত হবে। বাংলাদেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ করতে গেলে এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বিশেষ নজর দিতে হবে। যেমন :

ক. বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবিলা: সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মার্চ ২০১৮ পর্যন্ত দেশে সর্বোচ্ছ ১০,০৮৪ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে, যা আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তাই এ কথা মনে রাখতে হবে যে, একটি পরিপূর্ণ তথ্যপ্রযুক্তি কাঠামো গড়ে ওঠার জন্য যথাযথ বিদ্যুতের ব্যবহার একান্ত প্রয়োজন। তাই বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবিলায় সরকারকে আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে।

খ. ইন্টারনেট ব্যবহার সম্প্রসারণ: তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য একটি দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়াতে হবে। ২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সুপার হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সমুদ্র তলদেশের সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জন ও বাস্তবতা:

বিশ্বায়ন সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বলতে গেলে বিশ্বব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তি দ্রুত প্রসারের ফলে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বহির্বিশ্বের যোগাযোগ স্থাপন করেছে। আজ তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য মোবাইল ফোনের ব্যবহার। এটি বাংলাদেশের যোগাযোগ মাধ্যমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। তবে তথ্যপ্রযুক্তির অন্যান্য ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা থেকে অনেকখানি দূরে। দেরিতে হলেও বাংলাদেশ SEA-ME-WE4 সাবমেরিন ফাইবার অপটিক ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্ন বাস্তবায়নে ইন্টারনেট কাঠামোর উন্নয়ন ও ইন্টারনেটের ব্যয় সাধারণের সীমার মধ্যে এনে সকল জনগণের জন্য তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আর না হয় বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপে গড়ার যে স্বপ্ন তা স্বপ্নই থেকে যাবে, বাস্তবে রূপান্তরিত হবে না।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে গৃহীত পদক্ষেপ:

ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে বাংলাদেশ সরকার এ পর্যন্ত যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সেগুলোর কিছু অংশ নিচে উল্লেখ করা হলো : 

১. ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম): ১৭ জুন ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাাচনে সীমিত পরিসরে কার্যকর হয়।

২. ই-ফাইল বা ডিজিটাল ফাইল: ডিজিটাল প্রশাসনের প্রথম ধাপ হিসেবে ও জানুয়ারি ২০১০ সালে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ডিজিটাল নথি নম্বর চালু করে।

৩. মোবাইল মানি অর্ডার: এক ঘণ্টার মধ্যে টাকা পৌঁছানোর এ মোবাইল মানি ওর্ডার সার্ভিসটি ৯ মে ২০০৯ সালে ডাক বিভাগে চালু হয়।

৪. অনলাইন জিডি: ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের থানাগুলোতে ৫ মে ২০১০ সালে কার্যক্রম শুরু হয়।

৫. আইসিটি মোবাইল ল্যাব: প্রথমবারের মতো দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারিভাবে এটি চালু হয় ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ সালে।

৬. অনলেইন টেন্ডার: সরকারি ক্ষেত্রে প্রথম ভূমি প্রশাসনে এটি চালু হয় ৪ অক্টোবর ২০০৯ সালে।

৭. মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট: ১ মে ২০১০ সালে ইস্যু করা হয়।

৮. প্রাথমিক পাঠ্যবইয়ের ওয়েব: চালু হয় ৪ জানুয়ারি ২০১০ সালে।

৯. দেশের ৬৪ জেলায় ওয়েব পোর্টাল www.dc(Zillaname)gov.bd চালু হয় ৬ জানুয়ারি ২০১০ সালে।

১০. মোবাইলে কৃষি সেবা: বাংলাদেশের বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানি কৃষি সেবার জন্য কৃষকদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছে।

১১. টেলিমেডিসিন সেবা: ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়ায় বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিষয়ক যে কোনো সমস্যার সমাধান এবং প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারে।

১২. ই-শিক্ষা: বাংলাদেশে বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি সংক্রান্ত তথ্য, আবেদন, ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিজ নিজ স্থান থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে জানা যায়। তাছাড়া পিইসি, জেএসসি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল ইন্টারনেটে প্রকাশ করা হয়। মাধ্যমিকের টেক্সট বইও এখন ইন্টারনেটে পাওয়া যায়।

১৩. হাইটেক পার্ক ও কম্পিউটার ভিলেজ স্থাপন: আইসিটি টাস্কফোর্স গঠন, আইটি শিল্পের বিকাশ ১০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন, দেশের বিভিন্ন স্থানে হাইটেক পার্ক, আইসিটি ইনকিউবেটর এবং কম্পিউটার ভিলেজ স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

১৪. বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ: বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিক উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়।

উপসংহার:

বর্তমান পৃথিবী তথ্যপ্রযুক্তির পৃথিবী। পরিবর্তনশীল পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্রিক জ্ঞানভিত্তিক সমাজব্যবস্থার প্রচলন করতে হবে। এ স্বপ্নকেই ধারণ করছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। বর্তমান বিশ্বে যে জাতি তথ্যপ্রযুক্তিতে যত বেশি দক্ষ তাদের সার্বিক অবস্থাও তত বেশি উন্নত। নানারকম প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপে গড়ে তোলা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে সবাইকে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক যত্নশীল হতে হবে।