রচনা : ধূমপানের কুফল

রচনা : ধূমপানের কুফল
Admin June 20, 2024 104

ভূমিকা :

বিশ্বের দেশে দেশে ধূমপায়ীদের সংখ্যা খুব বেড়ে গেছে। ধূমপান আমাদের দেশে সর্বদাই কুঅভ্যাস বলে নিন্দিত হলেও এখনও ধূমপায়ীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, আমাদের শরীরের অনেক রোগের মূলে রয়েছে ধূমপান। ধূমপানের কারণে অধূমপায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ট্রেনের কামরায়, বাসে বা কোন যাত্রী বিশ্রামাগারে ধূমপায়ীদের বিড়ি, সিগ্রেটের ধোঁয়া পরিবেশ হরহামেশাই দূষিত করে। ধূমপান না করলেও অধূমপায়ী শিশু, বৃদ্ধ, নারীসহ অনেকেই তামাকের তীব্র বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। 

ধূমপানের কুঅভ্যাস :

শৈশব কৈশোর কাল থেকেই ধূমপানের কুঅভ্যাস গড়ে ওঠে। এতে কোন উপকার নেই, শুধু ক্ষতি হয়। নানা কারণে শিশু-কিশোরদের মধ্যে ধূমপানের কুঅভ্যাস গড়ে ওঠে। শিশুরা খুব কৌতূহলী। তারা সব কিছুরই স্বাদ গ্রহণ করতে চায়। হাতের কাছে যা পায় তাই ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে উপভোগ করতে চায়। বড়দের দেখাদেখি ছোটরা ধূমপান করতে শেখে। নিছক খেয়ালের বশেও ধূমপান করে কেউ কেউ। নেশায় পরিণত হলে এ কু-অভ্যাস কেউ সহজে ছাড়তে পারে না। দুষ্ট বন্ধু ও ধূমপায়ীর সংসর্গে থাকলে ধূমপানের অভ্যাস গড়ে ওঠে। ছোটরা খুব অনুকরণ প্রিয়। তাই দর্শনীয় বিজ্ঞাপনে রঙিন নেশার ভাব-ভঙ্গি দেখে ছোটরা সিগ্রেট, পাইপ ইত্যাদি টানতে চায়। সিনেমায়, টিভি-পর্দায়, পত্রিকায়, রাস্তার বিজ্ঞাপন বোর্ডে তামাক কোম্পানিগুলো চমকপ্রদ ভাষায় ধূমপানের গুণ, ভাবভঙ্গি, ব্যক্তিত্বের মহিমা প্রচার করে। ছোটরা সহজেই এতে ধরা দেয়। বাড়িতে সিগ্রেট ও দিয়াশলাই সহজলভ্য হলে কেউ আর ফেরাতে পারে না তাদের। 

ধূমপানের ক্ষতিকর দিক :

নানানজাতের তামাক দিয়ে প্রস্তুত হয় সিগ্রেট, বিড়ি ইত্যাদি। তামাকের সঙ্গে সুগন্ধি রাসায়নিক দ্রব্যও মেশানো হয়। কেউ কেউ হুক্কা, পাইপ ব্যবহার করে ধূমপান করে থাকে। যেভাবেই পান করুক ধূমপানের ফলে শরীরের ক্ষতি হবেই। তামাকে থাকে নিকোটিন নামক উগ্র বিষ। ধূমপানে তাই নিকোটিন বিষ গ্রহণ করা হয়। প্রতিটি সিগ্রেট বা বিড়িতে পাঁচ থেকে ছয় মিনিট আয়ু কমে যায়। ধূমপানে নানারূপ দুরারোগ্য ব্যাধি দেখা দেয়। কোন কোন ব্যাধি অতি দ্রুত মৃত্যু আনে। ধূমপানের ফলে সকলেরই নেশাগ্রস্ত ভাব সৃষ্টি হয়। মস্তিষ্ক হয় প্রায় অচল। এই অচলাবস্থার জন্য মস্তিষ্কে কোনো চিন্তা চালিত হয় না বা কোনো প্রশ্নের সঠিক মীমাংসা আসে না। তাৎক্ষণিক যা আগে তা খুবই হঠকারী সিদ্ধান্ত। দেহে-মনে, ব্যক্তিত্বে ও সারা জীবনে একজন ধূমপায়ী খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অর্থহানির সঙ্গে ঘটে স্বাস্থ্যহানি, যার পরিণাম মৃত্যু। 

ধূমপানের অনিবার্য প্রতিক্রিয়া :

যেভাবেই ধূমপান করা হোক, অনিবার্য বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবেই। প্রফেসর ডা. নূরুল ইসলাম বলেন, “ধূমপানের কারণে আপাদমস্তক মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গে কুফল দেখা দেয়। ধূমপানে অনেক বিচিত্র ধরনের রোগ হতে পারে।” ধূমপানের ফলে ফুসফুসের ক্ষতি হয় সবচেয়ে বেশি। ধূমপানের বিষক্রিয়া প্রথমে ফুসফুস ও পরে রক্তের সঙ্গে মিশে শরীরের নানা জায়গায় ছড়িয়ে যায়। ফলে দেখা দেয় যক্ষ্মা, ব্রংকাইটিস, দন্তক্ষয়, ক্ষুধা মান্দ্য, গ্যাস্টিক, আলসার, হৃদরোগ, মাথাঘোরা এমনকী মৃত্যু দূত ক্যান্সার। চোখের দৃষ্টি পর্যন্ত নষ্ট এবং ঠোঁট মুখ, দাঁত ইত্যাদির মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে ধূমপান। ডা. নূরুল ইসলাম বলেন, “মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের অন্যতম প্রধান কারণ ধূমপান”। এ কুঅভ্যাস হৃৎপিণ্ডে রক্ত সঞ্চালনেও বাধা সৃষ্টি করে থাকে। 

প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা :

ধূমপান যে বিষপান আর বিষপানের অর্থ যে মৃত্যু তা বুঝিয়ে দেয়া প্রয়োজন। সমাজে ধূমপানের বিরুদ্ধে সচেতন প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত। আমাদের দেশে মহিলারা (ব্যতিক্রম বাদে) ধূমপান করেন না। মা, বোন, স্ত্রী হিসেবে ধূমপানের বিরুদ্ধে তাঁরা যোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন। জাতীয় প্রচার মাধ্যমে ধূমপান বিরোধী প্রচার অব্যাহত রাখে, প্রকাশ্য বিজ্ঞাপন প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি এবং সিগ্রেটের গায়ে বিষপানের কথাটি লিখতে বাধ্য করা কর্তব্য। ধূমপানমুক্ত এলাকা গঠন ও ধূমপানহীন দিবস এবং ধূমপানহীন-সপ্তাহ পালন করা উচিত। ধূমপানের বদভ্যাস ছাড়ানোর জন্য প্রতিষেধখ আবিষ্কার করাও জরুরি। বড়রা ইচ্ছাশক্তি ও প্রতিজ্ঞা পূর্বক ধূমপান ত্যাগ করতে পারেন। নেশাগ্রস্ত ও ছোটদের কুঅভ্যাস ছাড়াবার ব্যবস্থা করতে হবে। 

এ বিষয়ে সরকারেরও করণীয় আছে। বাংলাদেশে সরকার ধূমপান বিরোধী আইন পাশ করেছে। এ আইনটি কঠোরভাবে প্রয়োগ করলে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমবে। 

উপসংহার :

মানুষের অসাধ্য কিছুই নেই। নেশামুক্ত হবার পরিবেশ ও উৎসাহ সৃষ্টি হলে ধূমপান কমতে, এমনকী দূরীভূত হতে পারে। ধূমপান মানে আত্মহত্যা এটা বুঝতে পারলে কেউ ধূমপান করবে না। জাতিকে ধূমপান মুক্ত করতে হলে প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি ও সামাজিক দায়িত্ব বোধের জাগরণ।