তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
Admin March 01, 2024 329
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে তুলসী গাছ অতিপবিত্র। প্রতিদিনের গৃহ দেবতার পূজোয় বা ভোগে তুলসী পাতা ব্যবহার করা হয়। তবে শুধু পুজার কাজেই নয় রোগ নিরাময়ে তুলসী পাতার জুড়ি নেই।

আধুনিক চিকিৎসা আসার আগে প্রাকৃতিক ওষুধগুলোতেই নির্ভর করতে হয়েছে মানুষকে। যে কোন অসুখে প্রকৃতি থেকে নানা উপাদান নিয়ে ওষুধ তৈরি করে খেতে হতো। সে সময় এসব ওষুধের কার্যকারিতা কেমন ছিল তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা বোকামি।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রকৃতি থেকে যে সব উপাদান নিয়ে ওষুধ খাওয়া হতো তা ব্রেন সেলের জন্মহার বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করতো।ফলে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতো খুব সহজেই। তাইতো সে সময়কার অনেক ওষুধই এখন আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়েছে।

তুলসী গাছের পাতা, বীজ, বাকল ও শেকড় সবকিছুই অতি প্রয়োজনীয়। ঔষধিগুণের এই তুলসী বিভিন্ন রোগ সারাতে কাজ করে।

ফুসফুসের দুর্বলতা, কাশি, কুষ্ঠ, শ্বাসকষ্ট, সর্দিজ্বর, চর্মরোগ, বক্ষবেদনা ও হাঁপানি, হাম, বসন্ত, কৃমি, ঘামাচি, রক্তে চিনির পরিমাণ হ্রাস, কীটের দংশন, কানব্যথা, ব্রংকাইটিস, আমাশয় ও অজীর্ণে তুলসী দিয়ে তৈরি ওষুধ বিশেষভাবে কার্যকর।

এছাড়া মশার কামড় থেকে বাঁচতে হলে মশারি টানানো, অ্যারোসল স্প্রে করা অথবা তীব্র ধোঁয়াযুক্ত কয়েল জ্বালানোর প্রয়োজন পড়বে না। যদি তুলসী থাকে ঘরে।

তুলসী পাতার উপকারিতা-

মানসিক চাপ


তুলসী পাতা আমাদের মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। কারণ তুলসী পাতায় রয়েছে ভিটামিন-সি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধযা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। আবার তুলসী পাতা খেলে আমাদের শরীরের কার্টিসেল মাত্রা কমে যায় এবং মানসিক চাপ থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া যায়। সুতরাংমানসিক চাপ কমাতে তুলসী পাতা খেতে পারেন।


সর্দিকাশি ও জ্বর নিরাময়


জ্বরসর্দি ও কাশি হলে তুলসির পাতা খেলে রোগগুলো নিরাময় হয়ে থাকে। জ্বর নিরাময়ে তুলসী পাতা + এলাচ + পানি ফুটিয়ে পান করলে জ্বর ভালো হয়ে যায়। আবার তুলসী পাতা খেলে কাশি নিরাময় করে থাকে। কাশি নিরাময়ের জন্য তুলসী পাতা + মধু + আদার রস মিশিয়ে খেলে কাশি ভালো হয়। সর্দি থেকে রক্ষা পেতে তুলসী পাতার রস অনেক উপকারী। তাই জ্বরসর্দি-কাশি থাকলে তুলসী পাতার বা তুলসী পাতার রস খেতে পারেন।


ওজন কমাতে


ওজন কমাতে তুলসী পাতা হচ্ছে উত্তম একটি খাবার। কারণ রক্তে থাকা কোলেস্টেরল ও সুগারের মাত্রা তুলসী পাতার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তাই আপনি তুলসী পাতা খাওয়ার মাধ্যমেই ওজন কমাতে পারবেন।


দাঁতের স্বাস্থ্য


দাঁত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সুস্থ-সবল রাখতে তুলসী পাতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তুলসী পাতার মধ্যে রয়েছে মাইক্রোবিয়াল ও এন্টি-ব্যাক্টিরিয়াল উপাদানযা আমাদের দাঁতকে শক্ত রাখে এবং দুর্গন্ধ মুক্ত করে।


ব্রণ দূর করতে


ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করতে তুলসী পাতার উপকারিতা রয়েছে। তুলসী পাতার পেস্ট বানিয়ে সাথে চন্দন মিশিয়ে মুখে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখবেন। এরপর জল দিয়ে ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার করে নিন। এর ফলে ব্রণ থেকে মুক্তি পুরোপুরি মুক্তি পেতে পারেন।


ত্বক পরিষ্কার রাখতে


তুলসী পাতা ত্বকের সংক্রমণ ও পরিষ্কার রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। কারণ তুলসী পাতায় রয়েছে এন্টি-বায়োটিক উপাদান। যা ত্বকের ব্যাকটেরিয়া এবং আর্থাসিস দূর করতে সহায়তা করে।


চোখের সমস্যা সমাধানে


চোখের সমস্যা সমাধানে তুলসী পাতার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ তুলসী পাতায় রয়েছে এন্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানযা আমাদের চোখের সমস্যার সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাই চোখের কোনো সমস্যা থাকলে তুলসী পাতা বা রস খেতে পারেন।


মাথাব্যথা কমাতে


মাথা ব্যথা দূর করতে দৈনিক ১-২ বার তুলসী পাতা খেতে পারেন। মাথা ব্যথা কমাতে তুলসী পাতার উপকারিতা অনেকগুণ থাকায় আপনি চাইলে তুলসী পাতা খেয়ে মাথা ব্যথা পুরোপুরি দূর করতে পারেন।


রক্তনালী পরিষ্কারে


রক্তনালী পরিষ্কারে তুলসী পাতার ভূমিকা অপরিসীম। কারণ তুলসী পাতায়  ইনফ্লেমেটরি নামক উপাদান রয়েছে যা রক্তনালী পরিষ্কার ও রক্ত চলাচল সচল রাখতে সাহায্য করে।

তুলসী অর্থ যার তুলনা নেই। তুলসী একটি ভেষজ গাছ যার বৈজ্ঞানিক নাম Ocimum Sanctum  হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে এটি একটি পবিত্র উদ্ভিদ হিসাবে সমাদৃত। ভেষজ তুলসী পাতার সুগন্ধিযুক্তরুচিকরকটু তিক্তরস। এটি সর্দিকাশিকৃমি ও মুত্রকর এবং বায়ুনাশকএন্টিসেপটিক ও হজমকারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 

তুলসী পাতার ব্যবহার: আমাদের দেশে ছেলেমেয়েদের সর্দি-কাশিতে তুলসী পাতার রস  ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হয়। এসব ক্ষেত্রে কয়েকটি তাজা তুলসী পাতার রসের সাথে একটু আদার রস ও মধুসহ খাওয়ানো হয়। বাচ্চাদের সর্দি-কাশিতে এটি বিশেষ ফলপ্রদ। তাজা তুলসী পাতার রস মধুআদা ও পিঁয়াজের রসের সাথে এক সাথে পান করলে সর্দি বের হয়ে যায় এবং হাপানিতে আরাম হয়।


তুলসী পাতার অপকারিতা:


তুলসী পাতা যতই বেশি উপকারী হোক না কেন, কিছু ক্ষেত্রে এই পাতা এড়িয়ে চলাই ভাল। চলুন জেনে নেয়া যাক, তুলসী পাতার অপকারিতা সম্পর্কে।


গর্ভাবস্থা বা স্তন্যপান করার সময়


গর্ভাবস্থার সময় বা মা হওয়ার পর স্তন্যপান করানোর সময় অল্প পরিমাণে তুলসী পাতা খেলে কোনো রকম ক্ষতি হয় না, তবে অতিরিক্ত পরিমাণ তুলসী পাতা খেলে নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এই সময়গুলোতে তুলসী পাতা না খাওয়াই ভাল। এছাড়াও অতিরিক্ত পরিমাণে তুলসী পাতা খাওয়ার ফলে মহিলাদের বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে। সুতরাং নির্দিষ্ট পরিমাণে তুলসী পাতা খাওয়া বা ব্যবহার করাই ভালো।


রক্তপাতের সমস্যা


প্রয়োজনের চেয়ে বেশি তুলসী পাতা খেলে শরীরে রক্তের প্রবাহ বেড়ে যায়। ফলে শরীরের স্বাভাবিক রক্ত জমাট হওয়ার প্রবণতা একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়। ফলে অতিরিক্ত রক্তপাতের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার কোন রকম সার্জারি বা কাঁটা ছেঁড়া হলে ওই সময় তুলসী পাতা এড়িয়ে চলবেন। এছাড়াও সার্জারির করার ২ সপ্তাহ আগে থেকে তুলসী পাতা খাওয়া বন্ধ করা উচিত