touba bangla

touba bangla
Admin November 13, 2024 287
তওবা করতে পারাই বড় নেয়ামত। অনেক মানুষ পাপ করে তওবা করতে পারে না। তাই আল্লাহর কাছে তওবা এক মহান ইবাদত। পবিত্র কোরআনের অনেক জায়গায় তাওবার গুরুত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে। গুনাহ হয়ে গেলে দ্রুত তওবা করা জান্নাতিদের গুণ।

আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেন, ‘(ভালো মানুষ হচ্ছে তারা) যারা যখন কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেলে কিংবা নিজেদের ওপর নিজেরা জুলুম করে ফেলে, (সঙ্গে সঙ্গেই) তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং গুনাহের জন্যে (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করে।

কেননা আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে যে গুনাহ মাফ করে দিতে পারে? (তদুপরি) এরা জেনে বুঝে নিজেদের গুনাহের ওপর কখনও অটল হয়ে বসে থাকে না। এই মানুষগুলোর প্রতিদান হবে, আল্লাহ তাআলা তাদের ক্ষমা করে দেবেন। আর (তাদের) এমন এক জান্নাত (দেবেন) যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা বইতে থাকবে, সেখানে (নেককার) লোকেরা অনন্তকাল অবস্থান করবে। সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের জন্যে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) কত সুন্দর প্রতিদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।' (সুরা আল ইমরান ১৩৫-১৩৬)

তওবার ফজিলত

ইস্তিগফার পড়ার ফজিলত অনেক অনেক বেশি। কারো যদি মানসিক সমস্যা দেখা দেয়, তার অবশ্যই খুব বেশি বেশি তওবা করা উচিত। অনেক বড় দোয়া পড়ার প্রয়োজন নাই। শুধু আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ পড়লেও তার মনে শান্তি আসবে। পেরেশানি দূর হবে। আর পাপ কাজ বা গুনাহের কাজ যত বেশি হবে, মানুষের পেরেশানিও তত বেশি হবে। তাই পাপ কাজ হয়ে গেছে সঙ্গে সঙ্গে তওবা করা প্রয়োজন।

"আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, ‘আল্লাহ অবশ্যই সেসব মানুষের তওবা কবুল করবেন, যারা ভুলবশত মন্দ কাজ করে ও সত্বর তওবা করে। এরাই তারা, যাদের তওবা আল্লাহ কবুল করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। তওবা তাদের জন্য নয়, যারা আজীবন মন্দ কাজ করে, অবশেষে তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হলো; সে বলে, আমি এখন তওবা করছি। এবং তাদের জন্যও নয়, যাদের মৃত্যু হয় কাফের অবস্থায়। এরা তারাই, যাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তির ব্যবস্থা।’ (সুরা নিসা ১৭-১৮)"

তওবা করতে দেরি করলে, তাদের অন্তরে দাগ পড়ে যায়। ক্রমান্বয়ে অন্তর ঢেকে যায় কালো দাগে। তখন গুনাহকে গুনাহ মনে হয় না। এ ব্যাপারে রসুলুল্লাহ সা. এই বলে সতর্ক করেছেন, ‘বান্দা যখন একটি গুনাহ করে তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে। যখন সে গুনাহের কাজ পরিহার করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তওবা করে তখন তার অন্তর পরিষ্কার ও দাগমুক্ত হয়ে যায়। সে আবার পাপ করলে তার অন্তরে দাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তার পুরো অন্তর এভাবে কালো দাগে ঢেকে যায়। এটাই সেই মরিচা আল্লাহ তাআলা যা বর্ণনা করেছেন, ‘কখনই না, বরং তাদের অপকর্মসমূহ তাদের অন্তরে মরিচা ধরিয়েছে’ (সুরা মুতাফফিফিন ১৪) (তিরমিজি ৩৩৩৪, ইবনে মাজাহ ৪২৪৪, মেশকাত ২৩৪২, সহিহুল জামে ১৬৭০)
 

তওবা করার দোয়া

أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الْعَظِيمَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىَّ الْقَيُّومَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণ: ‘আসতাগফিরুল্লাহাল আজিমাল্লাজি লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।’ অর্থ: ‘মহান আল্লাহর কাছে আমি ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, যিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং আমি তাঁর কাছে তওবা করি।’ জায়দ (রা.) রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি এই দোয়া পড়ে, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়, যদিও সে রণক্ষেত্র থেকে পলায়ন করে থাকে। (তিরমিজি: ৩৫৭৭)
 
ﺭَﺏِّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲْ ﻭَﺗُﺐْ ﻋَﻠَﻲَّ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃﻧْﺖَ ﺍﻟﺘَّﻮَّﺍﺏُ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴْﻢُ

উচ্চারণ: ‘রাব্বিগফিরলি ওয়া তুব ‘আলাইয়া, ইন্নাকা আনতাত তাওয়াবুর রাহীম’ অর্থ: ‘(হে আমার) রব! আমাকে মাফ করুন; আমার তওবা কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি তওবা কবুলকারী পরম দয়াময়।’ হযরত ইবনু উমার রা. বলেন, আমরা গুণে দেখতাম যে, নবী কারিম সা. একই মজলিসে দোয়াটি ১০০ বার পর্যন্ত পাঠ করছেন।’ (তিরমিজি ৩৪৩৪, আবু দাউদ ১৫১৬)

أَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ وَأَتوبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণ: ‘আসতাগফিরুল্লাহা ওয়া আতূবু ইলাইহি।’ অর্থ: ‘আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাচ্ছি এবং তাঁর নিকট তওবা করছি।’ হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, আমি রাসুল সা.-এর চেয়ে আর কাউকে এটি অধিক পরিমাণে পড়তে দেখিনি।’ (ইবনু হিব্বান: ৯২৮)

رَبِّ اغْفِرْ لِيْ رَبِّ اغْفِرْ لِيْ

উচ্চারণ: ‘রাব্বিগফিরলি, রাব্বিগফিরলি।’ অর্থ: ‘হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন। হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন।’ নবী কারিম (স.) দুই সেজদার মাঝে বসা অবস্থায় পড়তেন। (মুসলিম ৭৭২)
 
اَللّٰهمَّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ظُلْمًا كثِيرًا، وَلَا يَغْفِرُ الذُّنوْبَ إِلاَّ أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِيْ مَغْفِرَةً مِّنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِيْ، إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْم

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী জলামতুন নাফসী জুলমান কাছীরা, ওয়ালা ইয়াগফিরুজ জুনূবা ইল্লা আংতা, ফা-গফিরলী মাগফিরাতান মিন ইনদিকা ওয়ারহামনী, ইন্নাকা আংতাল গাফূরুর রাহীম।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি (গুনাহ করার মাধ্যমে) নিজের উপর অনেক জুলুম করেছি; তুমি ছাড়া অন্য কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না।
 
অতএব, তোমার পক্ষ থেকে আমাকে পরিপূর্ণভাবে ক্ষমা করো এবং আমার উপর দয়া করো। তুমি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ হযরত আবু বকর রা. রাসুল সা.-কে বলেছিলেন একটি দোয়া শিখিয়ে দিতে, যা তিনি নামাজে পড়বেন। তখন নবী কারিম সা. এটি শিখিয়ে দেন, যা দোয়া মাসুরা নামে পরিচিত। (বুখারি ৮৩৪)
 

তওবা কবুলের শর্ত

শুধু আল্লাহর কাছে তওবা করলাম, কিন্তু যে গুনাহর কারণে তওবা করছি, তা ছাড়ছি না, তাহলে কি তওবা কবুল হবে? না এমন তওবা কবুল হওয়ার না। তাই তওবা কবুলের ছয়টি শর্ত রয়েছে।