টাঙ্গুয়ার হাওর

টাঙ্গুয়ার হাওর
Admin February 16, 2024 109
আসলামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক গণ আজ আমি আলোচনা করবো টাঙ্গুয়ার হাওর (Tanguar Haor) নিয়ে, টাঙ্গুয়ার হাওর কোথায় অবস্থিত, টাঙ্গুয়ার হাওরের ইতিহাস, এইখানে কি কি নিদর্শন রয়েছে 

টাঙ্গুয়ার হাওর (Tanguar Haor):

টাঙ্গুয়ার হাওর (Tanguar Haor) সুনামগঞ্জ জেলায় প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি। আঠাই জলাভূমি, নীল আকাশ, পাহাড় আর চোখ ধাঁধানো সবুজ এই হাওরকে সাজিয়েছে অনন্যভাবে। টাঙ্গুয়ার হাওরের মোট আয়তন ৬৯১২ একর। তবে বর্ষা মৌসুমে এই হাওরের আয়তন বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২০ হাজার একর। টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রায় ১৪০ প্রজাতির মাছ, ১২ প্রজাতির ব্যাঙ এবং দেড় শতাধিক প্রজাতির বেশি সরীসৃপের জীববৈচিত্র্য রয়েছে। শীতকালে প্রায় ২৫০ প্রজাতির অতিথি পাখি এখানে পরিযায়ী হয়।

টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে ভারতের মেঘালয়ের পর্বতমালা দেখা যায়। মেঘালয় থেকে প্রায় ৩০টি ছোট-বড় ঝর্ণা বা ঝর্ণা মিলিত হয়েছে টাঙ্গুয়ার হাওরে। এই হাওরে একটি ওয়াচ টাওয়ার আছে, এর চারপাশের পানি এতটাই স্বচ্ছ যে উপর থেকে হাওরের নিচ দেখা যায়। টাঙ্গুয়ার হাওরে ছোট-বড় দ্বীপ সদৃশ ভাসমান গ্রাম বা দ্বীপ গ্রাম রয়েছে প্রায় ৪৬টি। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে। আর ২০০০ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে রামসার সাইটের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

টাঙ্গুয়ার হাওর কোথায় অবস্থিত:

টাঙ্গুয়ার হাওর সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর ও তাহিরপুর উপজেলার মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত।

টাঙ্গুয়ার হাওরের ইতিহাস:

টাঙ্গুয়ার হাওর সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর ও তাহিরপুর উপজেলার মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। মেঘালয় পাহাড় থেকে ৩০টিরও বেশি ঝাড়া (জলপ্রপাত) এই হাওরে মিশেছে। জেলার সর্ববৃহৎ জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর, যার আয়তন ১২,৬৬৫ হেক্টর, যার আয়তন দুই উপজেলার ১৮টি মৌজার ৫১টি হাওর। ২৮ বর্গকিলোমিটার পানিবিত মূল হাওর আর বাকিটা আবাসিক ও কৃষি জমি। হাওর এলাকার ভেতরে ও তীরে ৮৮টি গ্রাম রয়েছে। এই হাওরটি এক সময় বৃক্ষ, মাছ-পাখি এবং প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যের আধার ছিল। দীর্ঘ ৬০ বছরের ইজারাদারের অবসান ঘটিয়ে ১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে 'পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা' ঘোষণা করা হয়।

২০০০ খ্রিস্টাব্দের ২০ জানুয়ারি হাওয়ারকে 'রামসার সাইট' ঘোষণা করা হয়। এ অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করছে আইসিইউএন। হাওর এলাকার জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন, সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০০১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ড সরকারের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ২০০৩ সালের ৯ নভেম্বর থেকে হাওরের নিয়ন্ত্রণ নেয় জেলা প্রশাসন। সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশন (এসডিসি) এবং আইসিইউএন ২০০৬ সালের ডিসেম্বর থেকে 'টাঙ্গুয়ারে হাউয়ের সামাজিক ভিত্তিক টেকসই ব্যবস্থাপনা' প্রকল্পটি পরিচালনা করছে।

শীত মৌসুমে পানি শুকিয়ে গেলে প্রায় ২৪ বিলের (স্থানীয় ভাষায় কান্দা) পাড় জেগে উঠলে শুধু কান্দার ভেতরের অংশে মূল বিল থাকে এবং স্থানীয় কৃষকরা শুকনো অংশে রবি ও বোরো ধান চাষ করেন। এই সময়ে অঞ্চলটি চারণভূমি হিসাবেও ব্যবহৃত হত। পরিযায়ী পাখিরা বর্ষাকালে জলাবদ্ধ হাওরের উঁচু ঢালে আশ্রয় নেয়- রোদ পোহা করে খায়। কান্দা এখন আর (২০১২) দেখা না যাওয়ায় স্থানীয় এনজিও ও সরকারি ব্যবস্থাপনায় সেখানে ছোট ছোট বাঁশ বা কাঠের বিশ্রামাগার মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে।

কখন যাবেন টাঙ্গুয়ার হাওর, আর কি কি দেখবেন:বর্ষা ঋতু টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের সেরা সময়। বছরের অন্য সময় সাধারণত এর পানি খুব কম থাকে। তবে পাখি দেখতে হলে শীতকালেই যেতে হবে। টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের সাথে দেখার মতো অন্যান্য জিনিসের মধ্যে রয়েছে ছোট সোয়াম্প ফরেস্ট, শহীদ সিরাজ লেক (নীলাদ্রি লেক), বারিক টিলা, জাদুকরী নদী, লাউডার গড়, বিউটিফুল সানরাইজ ও সূর্যাস্ত।

কিভাবে যাবেন টাঙ্গুয়ার হাউরেতে:

ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ:

ঢাকার সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন মামুন ও শ্যামলী বাস সরাসরি সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং এনা বাস মহাখালী থেকে ছেড়ে যায়। এসব নন এসি বাসে জনপ্রতি ভাড়া ৮২০-৮৫০ টাকা এবং সুনামগঞ্জ পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ছয় ঘণ্টা।

সিলেট টু সুনামগঞ্জ:

সিলেটের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকে সুনামগঞ্জগামী লোকাল ও সিটিং বাস রয়েছে। বাস ভাড়া ১০০ টাকা, সুনামগঞ্জ যেতে সময় লাগবে প্রায় দুই ঘণ্টা। অথবা শাহজালাল মাজারের সামনে থেকে হালকা গাড়িতে ২০০ টাকায় সুনামগঞ্জ যেতে পারেন।

সুনামগঞ্জ থেকে টাঙ্গুয়া:

সুনামগঞ্জের পর সুরমা নদীর উপর নির্মিত বড় সেতুর কাছে লেগুনা/সিএনজি/বাইকে করে সহজেই তাহিরপুর যাওয়া যায়। তাহিরপুর নৌকার ঘাট থেকে আকার ও ধারণক্ষমতা অনুযায়ী নৌকা ভাড়া করে টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে রওনা দিন। তবে শীতে পানি কমে যাওয়ায় আপনাকে লেগুনা/সিএনজি/বাইক যোগব্যায়াম যেতে হবে। সেখান থেকে নৌকা ভাড়া করে যেতে পারেন। আর শীতকালে বেড়াতে গেলে চোখে পড়বে অতিথি পাখি।

টাঙ্গুয়ার হাওরে দিয়ে কোথায় থাকবেন:

টাঙ্গুয়া হাওরে থাকার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে নৌকায় রাত কাটাতে চাইলে নিরাপত্তার জন্য তীরের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করুন। আর বাসা ভাড়া চাইলে টেকেরঘাট এলাকায় হাওর বিলাশ নামে একটি কাঠের বাসায় কম দামে রুম ভাড়া নিতে পারেন। তবে টাঙ্গুয়ারে নৌকায় একটি রাত থাকার অবশ্যই মূল্য রয়েছে।

টাঙ্গুয়া ভ্রমণ সতর্কতা এবং টিপস:
  • ভ্রমণের সময় লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে নিতে ভুলবেন না।
  • হাওড়া যাওয়ার আগে তাহিরপুর থানায় জিডি করুন। যে কোনও কিছুর জন্য দর কষাকষি।
  • একসঙ্গে গ্রুপ করলে খরচ কমবে। ৪-৫ জনের বা ৮-১০ জনের গ্রুপ হলে ভালো হয়।
  • বজ্রপাত হলে নৌকার ছাউনির নিচে অবস্থান করুন।
  • উচ্ছিষ্ট/উচ্ছিষ্ট, প্যাকেট ইত্যাদি পানিতে ফেলে দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • জোরে মাইক্রোফোন বা যন্ত্র এড়িয়ে চলুন।
  • রাতে অতিরিক্ত উজ্জ্বল আলো উত্পাদন করবেন না।
  • টাংগুয়ার মাছ, বন্যপ্রাণী বা পাখি ধরা বা জীবন বিপন্ন করা থেকে বিরত থাকুন।
  • টাঙ্গুয়ার জলাভূমির যেন কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
অবশেষে:
আশা করি আপনার ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি দূর করতে টাঙ্গুয়ার হাওর দেখতে আসবেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ পুরো লেখাটি  ধর্য্যসহ কারে পড়ার জন্য।