শ্রেষ্ঠ সাহাবীদের নাম

Admin
November 02, 2024
406
সাহাবি মানে সঙ্গী, সাথী, বন্ধু। ইসলামে, নবী মুহাম্মদ (সা.) এর সঙ্গীদের সাহাবি বলা হয়। কে সাহাবি, এ ব্যাপারে বিভিন্ন মত আছে। ইবনে হাজার বলেন, যিনি ঈমান সহকারে নবীজি (সা.)-কে দেখেছেন এবং ইসলাম ধর্মে মারা গেছেন, তিনিই সাহাবি। অন্যরা বলেন, নবীজি (সা.)-এর সাথে কিছুদিন থাকা বা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেই সাহাবি হওয়া যায়। আবার কারও মতে, নবীজি (সা.)-এর সাথে দীর্ঘ সময় কাটানো এবং তাঁর সুন্নত অনুসরণ করলে সাহাবি হওয়া যায়। কেউ কেউ বলেছেন, নবীজি (সা.)-কে দেখার সময় বয়স্ক হতে হবে। আর কারও মতে, শিশুকালে দেখলেও সাহাবি।
সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সাহাবি হলেন চার খলিফা: ১. আবু বকর (রা.), ২. উমর (রা.), ৩. উসমান (রা.) এবং ৪. আলী (রা.)।
এছাড়া দশজন সাহাবিকে জীবিত অবস্থায় জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছিল।
শ্রেষ্ঠ সাহাবীদের নামের তালিকা
হযরত আবু বকর (রা.)
পূর্ণ নাম আবদুল্লাহ ইবনে আবি কুহাফা। তিনি আবু বকর সিদ্দিক (রা.) নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন নবী মুহাম্মদ (সা.) এর একজন প্রধান সাহাবি, ইসলামের সর্বপ্রথম খলিফা ও প্রথম মুসলিমদের মধ্যে একজন। এছাড়াও আবু বকর সিদ্দিক (রা.) নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর শ্বশুর ছিলেন।
উম্মুল মুমিনিন আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) এর পিতা আবু বকর সিদ্দিক (রা.)। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি সন্দেহাতীত অগাধ বিশ্বাসের জন্য তাঁকে সিদ্দিক (বিশ্বস্ত) উপাধি দেওয়া হয়। হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) মৃত্যুবরণ করার পর উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) এর ঘরে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পাশে তাঁকে কবর দেওয়া হয়। যার ফলে আবু বকর (রা.) রাসুলের কবরের সঙ্গী হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেন।
হযরত ওমর (রা.)
পূর্ণ নাম ওমর ইবনুল খাত্তাব। তিনি ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ও প্রধান সাহাবিদের অন্যতম। ওমর (রা.) ছিলেন ইসলামি আইনের একজন অভিজ্ঞ আইনজ্ঞ। তিনি সব সময় ন্যায়ের পক্ষাবলম্বন করার কারণে ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-কে ‘আল ফারুক’ (সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী) উপাধি দেওয়া হয়। আমিরুল মুমিনিন উপাধিটি সর্বপ্রথম তাঁর ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়।
এছাড়াও ওমর (রা.) ছিলেন নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর শ্বশুর ও উম্মুল মুমিনিন হাফসা (রা.)-এর পিতা। হযরত হাফসা (রা.) প্রথম স্বামীর থেকে তালাকপ্রাপ্তা হলে পিতা ওমর (রা.) ইদ্দত শেষ হওয়ার পর আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সাথে বিবাহ দেন।
হযরত উসমান (রা.)
পূর্ণ নাম উসমান ইবনে আফফান। তিনি ছিলেন ইসলামের তৃতীয় খলিফা ও প্রথম দিকের ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে অন্যতম। ইসলাম গ্রহণের পর রাসুল (সা.) কন্যা রুকাইয়্যার সাথে উসমান (রা.)-এর বিবাহ দেন। হিজরির দ্বিতীয় সনে বদর যুদ্ধের পরপর মদিনায় রুকাইয়্যা মারা যান। এরপর মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর দ্বিতীয় মেয়ে উম্মে কুলসুমের সাথে উসমান (রা.)-কে বিবাহ দেন। আর এ কারণেই উসমান (রা.) মুসলিমদের নিকট জুন-নুরাইন বা দুই জ্যোতির অধিকারী হিসেবে খ্যাত ছিলেন।
হযরত আলী (রা.)
আলী ইবনে আবি তালিব। তিনি ছিলেন নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর চাচাতো ভাই ও জামাতা এবং ইসলামের চতুর্থ ন্যায়নিষ্ঠ খলিফা। হযরত আলী (রা.) মাত্র নয় বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম পুরুষ যিনি খাদিজাতুল কোবরা (রা.) ইসলাম গ্রহণের পরেই দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
হযরত তালহা (রা.)
তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ। তিনি ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম আটজন ব্যক্তির অন্যতম এবং তিনি রাসুলের ঘনিষ্ঠ সাহাবি ছিলেন। তিনি উহুদের যুদ্ধ ও উটের যুদ্ধে অংশগ্রহণের কারণে অধিক পরিচিত ছিলেন। মাত্র পনেরো বছর বয়সে তালহা (রা.) আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর আহ্বানে ইসলাম গ্রহণ করেন।
হযরত যুবাইর (রা.)
হযরত জুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা.)। তিনি ইসলামের প্রথম যুগের মুসলমান ও নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সাহাবী ছিলেন। তিনি একাধারে রাসুল (সা.)-এর ফুফাতো ভাই ও ভায়রা ছিলেন। তিনি মাত্র ১৬ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন।
তিনি ইসলাম গ্রহণের পর গুজব ছড়ালো যে, অমুসলিমরা নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে হত্যা বা বন্দী করে ফেলেছে। এটা শুনে উন্মুক্ত তরবারি সঙ্গে নিয়ে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য যুবাইর (রা.) সাথে সাথেই নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর বাড়িতে যান। রাসুল (সা.)-এর সীরাত লেখকদের মতে, এটি হলো প্রথম তলোয়ার যা নিজেকে উৎসর্গ করার জন্য একজন বালক উন্মুক্ত করেছিল। তিনি ইসলাম গ্রহণের কারণে অনেক অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।
হযরত আবদুর রহমান (রা.)
হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.)। তার ইসলাম গ্রহণের পূর্বের নাম ছিল আবদুল আমর (আমরের দাস)। ইসলাম গ্রহণের পরে রাসুল (সা.) তার নাম রাখেন আবদুর রহমান (সবচেয়ে দয়াবানের দাস)। আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) ইসলাম গ্রহণকারী আটজন ব্যক্তির অন্যতম এবং তিনি আবিসিনিয়ায় হিজরত করা পনেরো জন মুসলিমের অন্যতম ছিলেন।
হযরত সাদ (রা.)
হযরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.)। তিনি ছিলেন মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর অন্যতম প্রধান সাহাবী। তিনি ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে ১৭তম ব্যক্তি ছিলেন। ৬৩৬ সালে পারস্য বিজয়ের নেতৃত্ব ও শাসনের জন্য তিনি অধিক পরিচিত পেয়েছিলেন।
হযরত সাইদ (রা.)
হযরত সাইদ ইবনে যায়িদ (রা.)। তিনি ছিলেন খলিফা উমর (রা.)-এর ভগ্নিপতি অর্থাৎ উমর (রা.)-এর বোন ফাতিমা বিনতে খাত্তাবের স্বামী। সাইদ ইবনে যায়িদ (রা.) ছিলেন প্রাথমিক পর্যায়ের ইসলাম গ্রহণকারী সাহাবীদের মাঝে একজন। দুনিয়াতে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত জান্নাতি যাদের বলা হয় আশারায়ে মুবাশশারা। তাঁরা নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কাছ থেকে জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন হযরত আবু বকর (রাঃ), উমার (রাঃ), উসমান (রাঃ), আলী (রাঃ), তালহা (রাঃ), জুবাইর (রাঃ), আব্দুর রহমান (রাঃ), সা’দ (রাঃ), আবু উবাইদা (রাঃ) এবং সাঈদ ইবনে যায়িদ (রাঃ)।
হযরত আবু উবাইদা (রা.)
হযরত আবু উবাইদা আমর ইবনে আবদিল্লাহ ইবনুল জাররাহ (রা.)। তিনি ছিলেন রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর একজন সাহাবী ও খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাবের সময় তিনি রাশিদুন সেনাবাহিনীর একজন সেনাপতি ছিলেন। রাসুল (সা.) ইসলাম প্রচারের শুরুতে নিজের কাছের সঙ্গীদের প্রথম ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানান। তখন আবু উবাইদা (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেন।
এছাড়াও সবচেয়ে বেশি হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবীদের মধ্যে অন্যতম, হযরত আবু হুরায়রা (রা.)। প্রকৃত নাম আবদুর রহমান। ৫৭ হিজরিতে তিনি ৭৮ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তিনি মোট ৫৩৭৪টি হাদিস বর্ণনা করেছেন।
এরপর সবচেয়ে বেশি হাদিস বর্ণনা করেছেন, উম্মুল মুমিনিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)। তিনি ৫৮ হিজরিতে ৬৭ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তিনি ২২১০টি হাদিস বর্ণনা করেছেন।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)। তিনি ৬৮ হিজরিতে ৭১ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তিনিও বেশি হাদিস বর্ণনাকারী শ্রেষ্ঠ সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি ১৬৬০টি হাদিস বর্ণনা করেন।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.)। তিনি ৭০ হিজরিতে ৮৪ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তিনি সর্বমোট ১৬৩০টি হাদিস বর্ণনা করেন। হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.)। তিনিও হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবীদের মধ্যে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি ৭৪ হিজরিতে ৯৪ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তিনি ১৫৪০টি হাদিস বর্ণনা করেন।