শ্রেণিবিন্যাস কাকে বলে

শ্রেণিবিন্যাস কাকে বলে
Admin February 28, 2025 76
শ্রেণিবিন্যাস হল পৃথিবীর সমস্ত জীবকে একত্রে এবং আলাদা আলাদা শ্রেণীতে ভাগ করার প্রক্রিয়া। এটি জীবজগতের বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যের ভিত্তিতে ধাপে ধাপে জীবগুলোকে শ্রেণীবদ্ধ করার একটি বৈজ্ঞানিক পদ্বতি। সহজভাবে বললে, শ্রেণিবিন্যাস হলো জীবজগতের একধরনের সিস্টেম্যাটিক অর্গানাইজেশন, যা জীবের চরিত্র, গঠন এবং তাদের সম্পর্ক অনুযায়ী শ্রেণীবদ্ধ করে। উদাহরণস্বরূপ, মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীদের শ্রেণীবিন্যাসের মাধ্যমে আমরা তাদের মধ্যে পার্থক্য এবং সাদৃশ্য সহজেই বুঝতে পারি।

প্রাণীর শ্রেণীবিন্যাস কাকে বলে

প্রাণীদের আকৃতি ও প্রকৃতিগত বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যাবলির সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন বিভাগ, শ্রেণী, বর্গ, গোত্র, গণ, প্রজাতি প্রভৃতি স্তরে বিন্যস্ত করার পদ্ধতিকে প্রাণীর শ্রেণীবিন্যাস (Animal Classification) বলে।

দেহের আকার (Body shape)

  • অণুবীক্ষণিক প্রাণী (Macro-animal): এসব প্রাণী এত ক্ষুদ্র যে অণুবীক্ষণযন্ত্র ছাড়া দেখা যায় না। যেমন- মাছের ফুলকার প্রোটিস্টার জীবাণু Trichodina anabasi.
  • বৃহত্তর প্রাণী (Macro-animal): এসব প্রাণী আকারে বড় এবং খালি চোখে ভালোভাবে দেখা যায়। যেমন- Cavia porecellus (গিনিপিগ)।

সংগঠন ক্রমমাত্রা (Grades of organization)

  • কোষীয় মাত্রার গঠন (Cellular grade of organization) : যে দেহগঠনে কিছু কোষ সম্মিলিত হয়ে নির্দিষ্ট কাজ করে সে ধরণের দেহগঠনকে কোষীয় মাত্রার গঠন বলে। এক্ষেত্রে এক ধরণের শ্রম বিভাজন দেখা যায়, যেমন কিছু কোষ জনন কাজে, অন্য কোষগুলো পুষ্টি সংক্রান্ত কাজে ব্যস্ত থাকে। Porifera পর্বভুক্ত প্রাণী এ ধরনের গঠন সম্বলিত সদস্য। 
  • কোষ টিস্যু মাত্রার গঠন (cell-tissue grade of organization) : সদৃশ কোষগুলো যখন একটি অভিন্ন কাজ সম্পন্নের জন্য সুনির্দিষ্ট প্যাটার্ন বা স্তরে গোষ্ঠীবদ্ধ বিন্যস্ত হয়ে টিস্যু নির্মাণ করে সে ধরণের গড়নকে কোষ-টিস্যু মাত্রার গঠন বলে।
  • টিস্যু-অঙ্গ মাত্রার গঠন (Tissue-organ grade of organization) : স্বচ্ছন্দ জীবনযাপনের জন্য যখন একাধিক টিস্যু-নির্মিত বিভিন্ন অঙ্গের সমাহার ঘটে তখন সে গঠনকে টিস্যু-অঙ্গ মাত্রার গঠন বলে। Platyhelminthes পর্বভুক্ত প্রাণীদেহে এ গঠন মাত্রা সর্বপ্রথম আবির্ভূত হয়েছে। এক্ষেত্রে চক্ষুবিন্দু, প্রোবোসিস, জননাঙ্গ ইত্যাদি টিস্যু-অঙ্গ মাত্রার গঠনের উদাহরণ।

জীবন পদ্ধতি (way of living)

  • মুক্তজীবী (Free living) : এসব প্রাণী স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায় এবং এরা পারস্পরিক সহযোগিতা বা সাহচর্যে বাস করে না। যেমন- কবুতর (Columba livia) 
  • পরজীবি (Parasite) : এসব প্রাণী খাদ্যের জন্য অন্য প্রাণীর দেহে আশ্রয় গ্রহণ করে এবং আশ্রয়দাতার দেহ থেকে খাদ্য শোষণ করে বেঁচে থাকে। যেমন- যকৃত কৃমি (Fasciola hepatica)।

ক্লিভেজ ও ভ্রূণীয় বিকাশ (Cleavage and Development)

যে প্রক্রিয়ায় যৌন জননকারী প্রাণীর এককোষী জাইগোট মাইটোসিস কোষ বিভক্তির মাধ্যমে বিভাজিত হয়ে অসংখ্য বহুকোষী ভ্রূণ সৃষ্টি করে তাকে ক্লিভেজ বা সম্ভেদ বলে। ডিমে কুসুমের পরিমাণের ভিত্তিতে ক্লিভেজ সম্পূর্ণ বা হলোব্লাস্টিক (holoblastic) কিংবা আংশিক বা মেরোব্লাসটিক (meroblastic) হতে পারে। 

বিভাজন তলের উপর ভিত্তি করে ক্লিভেজ নিচে বর্ণিত তিন ধরনের –

  • অরীয় ক্লিভেজ (Radial cleavage) : এ ধরনের ক্লিভেজে বিভাজন তলগুলো জাইগোটকে সবসময় সুষম ও অরীয়ভাবে ভাগ করে। এর ফলে উৎপন্ন ব্লাস্টোমিয়ারগুলো সুষম আকৃতির ও অরীয়ভাবে সাজানো হয়। উদাহরণ Arthropoda পর্বের প্রাণীদের ক্লিভেজ।
  • দ্বিপার্শ্বীয় ক্লিভেজ (Bilateral cleavage) : এ ধরনের ক্লিভেজে দ্বিতীয় বিভাজন পর্যন্ত অরীয় ক্লিভেজ ঘটে কিন্তু তৃতীয় বিভাজন হতে মধ্য রেখা বরাবর অনুপ্রস্থভাবে ক্লিভেজ সম্পন্ন হয়। এর ফলে চারটি করে দুই সারি কোষ সৃষ্টি হওয়ায় দ্বি-পার্শ্বীয় প্রতিসাম্যতা দেখা দেয়। উদাহরণ  Chordata পর্বের প্রাণীদের ক্লিভেজ।

ভ্রূণস্তর (Germ layers)

 দ্বিস্তরী বা দ্বিভ্রূণস্তরী প্রাণী (Diploblastic animal) : যেসব প্রাণীর ভ্রূণের গ্যাস্ট্রুলা পর্যায়েকোষগুলো এক্টোডার্ম ও এন্ডোডার্ম নামক দুটি স্তরে বিন্যস্ত থাকে। স্তরদুটির মাঝে থাকে আঠালো জেলির মতো অকোষীয় মেসোগ্লিয়া (mesoglea)। Cnidaria পর্বের প্রাণীরা দ্বিস্তরী (যেমন- Hydra)
ত্রিস্তরী বা ত্রিভ্রূণস্তরী প্রাণী (Triploblastic animal) : ভ্রূণে গ্যাস্ট্রুলা পর্যায়ে কোষগুলো তিনটি কোষীয় স্তরে বিন্যাস্ত থাকে। তিনটি স্তরের মধ্যে বাইরের স্তরটিকে এক্টোডার্ম (ectoderm), মাঝেরটিকে মেসোডার্ম (mesoderm) এবং ভিতরেরটিকে এন্ডোডার্ম (endoderm) বলে। Platyhelminthes (ফিতাকৃমি- Taenia solium) থেকে শুরু করে Chordata (মানুষ – Homo sapiens) পর্ব পর্যন্ত প্রাণী সকল প্রাণী ত্রিস্তরী।