সীতাকুণ্ড দর্শনীয় স্থান

সীতাকুণ্ড দর্শনীয় স্থান
Admin April 18, 2024 112
আসসালামু আলাইকুম আশা করি সকলে ভালো আছেন। আজ আমরা আলোচনা করব সীতাকুণ্ড দর্শনীয় স্থান নিয়ে। আশা করি সঙ্গেই থাকবেন। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড। ভ্রমণপিপাসুদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় গন্তব্য। এখানে অনেকগুলো সীতাকুণ্ড দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এই সীতাকুণ্ড দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- চন্দ্রনাথ পাহাড়, গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত, কুমিরা ঘাট, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত, ঝরঝরি ঝরনা ট্রেইল, কমলদহ ঝরনা ট্রেইল, সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক ইত্যাদি। 

সীতাকুণ্ড

সীতাকুণ্ড চট্টগ্রামের একটি উপজেলা যা বর্তমানে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। ঝর্ণা, পাহাড়, ঝিরি, মেঘের দেখা কি নেই সীতাকুণ্ড এ? আর এ কারণেই প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক সীতাকুণ্ড দর্শনীয় স্থান ভ্রমণে যাচ্ছেন। কেউ ক্যাম্পিং করছেন আবার কেউবা ট্রেকিং করে ঝর্ণায় গা ভিজিয়ে দিনে দিনেই ফিরে আসছেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা এসব জায়গা থেকে ডে ট্রিপ দিয়ে ফিরে আসা যায় বলে বর্তমানে আরও বেশী আকারে জনপ্রিয়তা পেয়েছে সীতাকুণ্ড। 

সীতাকুণ্ড দর্শনীয় স্থান এবং এর আশেপাশের সব দর্শনীয় স্থান দেখতে গেলে একজন ভ্রমণকারীকে অবশ্যই কয়েকদিন অবস্থান করতে হবে। কেউ যদি ফেনী থেকে ট্রেইল শুরু করেন তাহলে বড় কমলদহ, ছোট কমলদহ, নাপিত্তাছড়া, খৈয়াছড়া বেড়িয়ে সহস্রধারা আর সুপ্তধারার লাস্যময়ী ঝর্ণা দেখতেই তার ৩ দিন লাগবে। সীতাকুণ্ড এর কাছেই আছে বাঁশবাড়িয়া আর গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকত। এসবের পাশাপাশি হাজারিখিল বা বাড়ৈয়াঢালা বনে যদি আলাদা করে ট্রেকিং করতে চান তাহলে তো আরও সময় লাগবে, তাই না? পবিত্র চন্দ্রণাথের পাহাড়ও কিন্তু মিস করা মতো নয়।

চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দির, সীতাকুণ্ড দর্শনীয় স্থান এর একটি

চন্দ্রনাথ পাহাড় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান আর সুবিশাল সমুদ্র অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সীতাকুণ্ড কে করেছে অনন্য। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের অবস্থান সীতাকুণ্ড বাজার থেকে ৪ কিলোমিটার পূর্বে দিকে। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে পায়ে হেঁটে কিংবা রিকশায় করে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে নিচের গেটের কাছে যাওয়া যায়। তবে পায়ে হেঁটে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাবার পথে হিন্দুদের বেশ কিছু ধর্মীয় স্থাপনা ও তাদের জীবনযাত্রার চিত্র দেখতে পারবেন।

এছাড়াও পাহাড়ের একটু গভীরে গেলে চোখে পড়বে জুমক্ষেত এবং বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে চাষ করা ফুলের বাগান। চন্দ্রনাথ পাহাড় চূড়াতেই চন্দ্রনাথ মন্দির অবস্থিত। চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাবার পথে ছোট একটি ঝরনা দেখা যায়। এই ঝরনার কাছ থেকে পাহাড়ে ওঠার পথ দুই দিকে চলে গেছে। ডান দিকের পথটির পুরোটাতেই পাহাড়ে ওঠার জন্য সিঁড়ি তৈরি করা আর বাম পাশের পথটি সম্পূর্ণই পাহাড়ি। সাধারণত পাহাড়ি পথ দিয়ে উপরে ওঠা তুলনামূলক সহজ আর সিঁড়ির পথে নামতে সহজ হয়। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উচ্চতা ১১৫২ ফুট। হেঁটে উঠতে একটু পরিশ্রমের কাজ হলেও আপনার হাঁটার উপর নির্ভর করবে কতক্ষণ লাগবে। সাধারণত ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের মতো সময় লাগবে আস্তে-ধীরে উঠলে।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উপরেই চন্দ্রনাথ মন্দির অবস্থিত। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের মাঝামাঝি দূরত্বে এবং চূড়ায় মন্দিরের কাছে ছোট টং দোকান আছে, সেগুলিতে হালকা খাবার এবং হিন্দুদের জন্য পূজা দেওয়ার উপকরণ পাওয়া যায়। তবে ভালো হয় ওঠার সময় সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি ও কিছু শুকনো খাবার সঙ্গে রাখলে। প্রতি বছর মহাশিবরাত্রি উপলক্ষে প্রচুর হিন্দুধর্মাবলম্বী চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দিরে পুণ্যযাত্রায় আসেন।

সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক, সীতাকুণ্ড দর্শনীয় স্থান

সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। যা বর্তমানে অসাধারণ এক পর্যটন স্থান হিসাবে বিবেচিত হয়। এখানে সহস্র ধারা এবং সুপ্তধারা নামে দুইটি অনিন্দ্য সুন্দর ঝরনা রয়েছে। এছাড়া সীতাকুণ্ড ইকো পার্কে রয়েছে অসংখ্য দুর্লভ প্রজাতির গাছ, যা বৃক্ষ বিষয়ক জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়ক। বোটানিক্যাল গার্ডেনে রয়েছে অর্কিড হাউস, যেখানে প্রায় ৫০ ধরনের দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিড সংরক্ষিত। পাহাড়, বৃক্ষরাজি, বন্যপ্রাণী, ঝরনা, পাখির কলরব সীতাকুণ্ড ইকো পার্কটিকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।

উঁচুনিচু পাহাড়, বানর, খরগোশ এবং হনুমানসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর সমাহার। আছে অর্জুন, চাপালিশ, জারুল, তুন, তেলসুর, চুন্দুল সহ আরও অনেক ফুল, ফল ও ওষধি গাছ। সূর্য ডোবার সময় গোধূলির রক্তিম আভায় ইকো পার্কটিকে অপার্থিব মনে হয়।

ইকো পার্কে প্রবেশ করলে একটি বড় ডিসপ্লে চোখে পড়ে, এই ডিসপ্লেতে ইকো পার্কে আসা সমস্ত পর্যটকদের ইকো পার্ক সম্পর্কে ধারণা দেওয়া আছে। সীতাকুণ্ড ইকো পার্কে চাইলে পিকনিক করতে পারবেন। এখানে পর্যাপ্ত খাবার পানি, রেস্টহাউস, টয়লেট ইত্যাদির সুবিধাসহ পিকনিকের জন্য রয়েছে যাবতীয় আয়োজন।

ঝরঝরি ট্রেইল, সীতাকুণ্ড দর্শনীয় স্থান

সবুজ পাহাড়ে ঘেরা-শান্ত শীতল ঝিরিপথ ধরে প্রায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে হবে। ঝরনার কাছে পৌঁছলেই সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। ঝরঝরি ঝরনার পাশ দিয়ে পাহাড় বেয়ে উপড়ে উঠে গেলে বেশ কয়েকটি ক্যাসকেড ও ঝরনা আপনাকে আরও মুগ্ধ করবে। বিশেষ করে সিঁড়ি গুলো অনেক সুন্দর। এই ট্রেইলের শেষে রয়েছে মূর্তি ঝরনা। ঝরঝরি ঝরনা পর্যন্ত ট্রেইলটি খুব একটা কঠিন নয়, মহিলা ও শিশু ট্রাভেলাররা এখানে যেতে পারে।

গুলিয়াখালী বিচ, সীতাকুণ্ড দর্শনীয় স্থান

ইতোমধ্যে সরকার পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে এই বিচকে। অনেক সুন্দর এই বিচ। গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত স্থানীয় মানুষের কাছে  ‘মুরাদপুর বিচ’ নামেও সুপরিচিত। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে গুলিয়াখালি সি বিচের দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার। অনিন্দ্য সুন্দর গুলিয়াখালি সি বিচকে সাজাতে প্রকৃতি কোনও কার্পণ্য করেনি। একদিকে দিগন্তজোড়া সাগর জলরাশি আর অন্যদিকে কেওড়া বন এই সাগর সৈকতকে করেছে অনন্য। কেওড়া বনের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের চারদিকে কেওড়া গাছের শ্বাসমূল লক্ষ করা যায়। এই বন সমুদ্রের অনেকটা ভেতর পর্যন্ত চলে গেছে।

এখানে পাওয়া যাবে সোয়াম্প ফরেস্ট ও ম্যানগ্রোভ বনের মতো পরিবেশ। গুলিয়াখালি সৈকতকে ভিন্নতা দিয়েছে সবুজ গালিচার বিস্তৃত ঘাস। সাগরের পাশে সবুজ ঘাসের উন্মুক্ত প্রান্তর নিশ্চিতভাবেই আপনার চোখ জুড়াবে। বিচের পাশে সবুজ ঘাসের এই মাঠে প্রাকৃতিকভাবেই জেগে উঠেছে আঁকাবাঁকা নালা। এইসব নালায় জোয়ারের সময় পানি ভরে ওঠে। চারপাশে সবুজ ঘাস আর তারই মধ্যে ছোট ছোট নালায় পানি পূর্ণ এই দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। সাগরের এত ঢেউ বা গর্জন না থাকলেও এই নিরিবিলি পরিবেশের গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকত আপনার কাছে ধরা দেবে ভিন্নভাবেই। চাইলে জেলেদের বোটে সমুদ্রে ঘুরে আসতে পারেন। এক্ষেত্রে বোট ঠিক করতে দরদাম করে করে নিতে হবে।

কমলদহ ট্রেইল, সীতাকুণ্ড দর্শনীয় স্থান

বড় দারোগার হাট থেকে অল্প সামনে গিয়ে ডান দিকে ইটভাটার পাশ দিয়ে রাস্তা ধরে হেঁটে রেললাইন পার হয়েই এই ট্রেইলের শুরু। ট্রেইলের প্রথম ঝরনাটি হল রূপসী। এর উপরে উঠে ঝিরিপথ ধরে হাঁটলে সামনে দুইটি রাস্তা পরে। একটি সোজা আরেকটি বাম দিকে চলে যায়। প্রথমে সোজা পথ ধরে বিশ মিনিট হাঁটলে একটি ঝরনা পাবেন। ঝরনাটির একটু আগে একটি পাথরের পাশে উপরে ওঠার পথ আছে, ঐ পথে ঝরনার উঠে ঝিরি পথ ধরে অসংখ্য ছোট মাঝারি ঝরনা পার হয়ে সর্বশেষ ছুরিকাটা ঝরনা। আবার একি পথে ফিরে আসতে হবে।

বাঁশবাড়িয়া সি বিচ, সীতাকুণ্ড দর্শনীয় স্থান

অন্যরকম সুন্দর এক সি বিচ। বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের জন্য একটা আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এই সৈকত থেকে শুরু হয়ে লোহার ব্রিজ চলে গেছে সমুদ্রের মাঝে। ব্রিজে দাঁড়িয়ে থেকে জোয়ারের স্রোতের আওয়াজ মনকে উজাড় করে দেয়। ঝাউ গাছের সারি, খোলামেলা পরিবেশ, জেগে ওঠা সবুজ ঘাসের চর, আছে পিকনিক স্পট, সব মিলিয়ে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত অপূর্ব সৌন্দর্য নিয়ে অপেক্ষা করছে দর্শনার্থীদের জন্য। বাঁশবাড়িয়া সৈকতের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে সেখানকার সূর্যাস্ত দেখা। তাই দুপুরের পর সেখানে যেতে পারবেন। এছাড়া চাইলে স্পিডবোটে করে ঘুরে দেখতে পারবেন চারপাশ। আর সন্ধ্যার পর পরই ফিরে আসা উচিত, কারণ পরবর্তীতে ফিরে আসার সিএনজি পেতে সমস্যা হতে পারে আপনাদের। সবচেয়ে ভালো হয় সিএনজি রাত কয়টা পর্যন্ত চলাচল করে সেটা জেনে নেওয়া ঘুরতে যাওয়া।

সহস্রধারা ঝরনা, সীতাকুণ্ড দর্শনীয় স্থান

সীতাকুণ্ড উপজেলার চন্দ্রনাথ রির্জাভ ফরেস্ট ব্লকের চিরসবুজ বনাঞ্চল সমৃদ্ধ সীতাকুণ্ড ইকো পার্কে সহস্রধারা ঝরনাটি অবস্থিত।সীতাকুণ্ড ইকো পার্কটি চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩৫ কি.মি. উত্তরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং রেলপথের পূর্ব পাশে অবস্থিত। বর্ষাকাল ব্যতীত বছরের অন্যান্য সময় এই ঝরনায় পানি কম থাকে।সীতাকুণ্ড ইকো পার্কের মূল গেট থেকে ইটবিছানো পথ ধরে পাঁচ কিলোমিটার গেলে ঝরনাটির দেখা মেলে।

সুপ্তধারা ঝরনা, সীতাকুণ্ড দর্শনীয় স্থান

সীতাকুণ্ড উপজেলার চন্দ্রনাথ রির্জাভ ফরেস্ট ব্লকের চিরসবুজ বনাঞ্চল সমৃদ্ধ সীতাকুণ্ড ইকো পার্কে সুপ্তধারা ঝরনাটি অবস্থিত।সীতাকুণ্ড ইকো পার্কটি চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩৫ কি.মি. উত্তরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং রেলপথের পূর্ব পাশে অবস্থিত।

কুমিরা ঘাট, সীতাকুণ্ড দর্শনীয় স্থান

সীতাকুণ্ড উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ইউনিয়নের নাম কুমিরা। এখানে চট্টগ্রাম থেকে সন্দীপ যাওয়া আসার জন্য রয়েছে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ কুমিরা-সন্দীপ ফেরিঘাট বা কুমিরা ঘাট। সম্প্রতি এ ফেরিঘাটের যাত্রীদের যাতায়াতে সুবিধার জন্য গড়ে উঠেছে প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ জেটি, যা স্থানীয় মানুষের কাছে কুমিরা-সন্দ্বীপ ফেরিঘাট ব্রিজ, ঘাটঘর ব্রিজ ও কুমিরা ব্রিজ ইত্যাদি বিভিন্ন নামে পরিচিত। এখানে তীর থেকে সমুদ্রের অভ্যন্তরের দিকে ছুটে চলা দৃষ্টিনন্দন এ জেটি ব্রিজের একেবারে পশ্চিম প্রান্তে পৌঁছালে সমুদ্রের মাঝখানে আছেন বলে ভ্রম হবে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে সীতাকুণ্ড এর সুউচ্চ পাহাড়গুলো এখান থেকে স্পষ্ট দেখা যায়। সমুদ্রের বুকে দাঁড়িয়ে পাহাড় দেখার অভিজ্ঞতা এক কথায় অসাধারণ। কুমিরা ব্রিজ থেকে বিশাল বিশাল জাহাজের সারি দৃষ্টি এড়াবে না কিছুতেই। এখানে বাড়তি পাওনা হিসাবে দেখতে পাবেন সন্ধ্যায় মাছ ধরে জেলেদের ঘাটে ফেরা, যাত্রীদের আগমন-প্রস্থান, জেলে পল্লী ও শিপ ইয়ার্ড শ্রমিকদের কর্ম তৎপরতা।

সমুদ্রের আরও গভীরে যেতে চাইলে অথবা বিশাল বিশাল জাহাজগুলো খুব কাছ থেকে দেখতে বোট ভাড়া করতে পারবেন আপনারা। মাছ ধরার কাজে ব্যবহৃত হয় তাই সবসময় বোট পাওয়া যায় না। তবে বন্ধের দিনগুলো দর্শনার্থীদের চাপ বেশি থাকে বলে পর্যাপ্ত বোট ঘাটে মওজুদ রাখা হয়। এছাড়া কুমিরা ঘাট থেকে প্রায় ২৫০-৩০০ টাকা জনপ্রতি স্পিডবোট ভাড়ায় ৩০ মিনিটেই সন্দ্বীপ চ্যানেল পার হয়ে সন্দ্বীপ চলে যেতে পারবেন। সন্দ্বীপ ঘাট থেকে সন্দ্বীপের মূল শহরে যেতে প্রায় ২০০-২৫০ টাকা রিজার্ভ সিএনজি নিয়ে যাওয়া যায়। অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় হলে স্পিডবোটের এই চ্যানেল পাড়ি দেওয়া আপনার মনে গেঁথে থাকবে অনেকদিন। সাধারণত আসরের পর কুমিরা ঘাটে যাওয়াই সবচেয়ে উত্তম সময়। তাহলে সন্ধ্যা নামার পর ফিরে আসার সময় ইয়ার্ডের সোডিয়াম লাইটগুলো জ্বলে ওঠার পর যে অপার্থিব সৌন্দর্যের দেখা মেলে, তা চোখে লেগে থাকবে অনেক দিন। আর মাসের যে সময়টাতে বিকেলে জোয়ার ওঠে, সে সময়টাতেই কুমিরা ঘাট বেশি পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে রূপে-সৌন্দর্যে ও সৌকর্যে।

অন্যান্য সীতাকুণ্ড দর্শনীয় স্থান

সীতাকুণ্ড এ দেখার মতো অনেক দর্শনীয় জায়গা আছে। সীতাকুণ্ড এর পাশেই মিরেরসরাই ও ভাটিয়ারিতেও আছে অনেক দর্শনীয় স্থান। শুধু সীতাকুণ্ড এই আছে দেখার মতো অনেক ঝরনা-ঝিরি ও পাহাড়-লেক। আপনার সুযোগ অনুযায়ী সাজিয়ে নিতে পারেন আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা।

কীভাবে যাবেন সীতাকুণ্ড দর্শনীয় স্থান গুলো ঘুরতে

ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম গামী যেকোনও বাসে করেই যেতে পারবেন সীতাকুণ্ড। এসি ও নন এসি এইসব বাসের ভাড়া প্রায় ৪২০-১০০০ টাকা। প্রয়োজন হলে বাসের সুপারভাইজারকে আগেই বলে রাখবেন সীতাকুণ্ড নামিয়ে দিতে। ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ড মেইল ট্রেনে করে সীতাকুণ্ড আসতে পারেন।

থাকা-খাওয়া সীতাকুণ্ড দর্শনীয় স্থান গুলো ঘুরতে

সীতাকুণ্ড এ কিছু সাধারণ মানের হোটেল পাবেন। সীতাকুণ্ড বাজারে হোটেল সাইমুন নামে একটি হোটেল আছে, যেখানে প্রায় ৩০০ থেকে ৭০০ টাকায় রুম পাবেন। সীতাকুণ্ড পৌরসভার ডি টি রোডে হোটেল সৌদিয়া নামে একটি আবাসিক হোটেল আছে। হোটেলটিতে প্রায় ৮০০ থেকে ১৬০০ টাকায় কয়েক ধরনের রুম পাওয়া যায়। আরও ভালো কোথাও থাকতে চাইলে আপনাকে চট্টগ্রাম শহরে চলে যেতে হবে।

এছাড়া নয়দুয়ারি বাজারে খুঁজলে মধ্যম মানের কিছু হোটেল পাবেন। সীতাকুণ্ড এ খাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি হোটেল আছে। এদের মধ্যে আল আমীন হোটেলের খাবার মোটামুটি ভালো মানের। আর যদি চট্টগ্রাম যান, তবে এখানে সব ধরনের খাবার রেস্টুরেন্ট পাবেন।

সীতাকুণ্ড দর্শনীয় স্থান ঘুরতে সতর্কতা

সীতাকুণ্ড দর্শনীয় স্থান ভ্রমণকে নিরাপদ করতে প্রয়োজনে ট্যুরিস্ট পুলিশের সাহায্য নিন। সীতাকুণ্ড দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করতে স্থান গুলোকে ময়লা ফেলে নোংরা করবেন না। নিজে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বেপারে সচেতন হোন এবং অন্যকে সচেতন করার চেষ্টা করুন। জোয়ার ভাটার সময় জেনে নিন। জোয়ারের সময় হলে বিচের কাছে না থাকাই ভালো। পানির ঢেউ যখন বাড়বে, বিচ থেকে চলে আসবেন। আর জোয়ারের সময় পানি উঠে নালা গুলো পূর্ণ হয়ে যায়। তখন পারাপার হতে সমস্যা হতে পারে। আর যেহেতু এটা পর্যটক বান্ধব বিচ নয়, তাই সমুদ্রে নামার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। সাঁতার না জানলে বেশি দূরে যাবেন না। এ অঞ্চলের ঝরনা, ঝিরির পানিতে ও পাহাড়ে কখনোই অপচনশীল দ্রব্য বিশেষ করে পলিথিন ও প্লাস্টিক জাতীয় বস্তু ফেলবেন না। প্রয়োজনে নিজেদের ব্যাগে করে নিয়ে এসে শহরে বা বাজারের ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থানে ফেলবেন।

সীতাকুণ্ড দর্শনীয় স্থান ভ্রমণে আরও কিছু পরামর্শ

  • সিএনজিতে অবশ্যই দামাদামি করে উঠবেন।
  • খাওয়ার সময় দাম জেনে এর পর অর্ডার করবেন আপনারা।
  • পাহাড়ে ওঠার সময় লাঠি নিয়ে উঠবেন। তেমন কাজে না লাগলেও মনে সাহস পাবেন।
  • চন্দ্রনাথে ওঠার সময় অবশ্যই বাম পথ দিয়ে উঠবেন এবং ডানের সিঁড়ি দিয়ে নামবেন।
  • গুলিয়াখালী বিচে যাওয়ার সময় জোয়ার ভাটার খোঁজ নিয়ে যাবেন। সাধারণত দুপুর ১-২টার দিকে জোয়ার থাকে।
  • গুলিয়াখালীতে নৌকা ভাড়া করে ঘোরা যায়।