সালাত কাকে বলে

সালাত কাকে বলে
Admin November 25, 2024 364

সালাত বা সালাহ (আরবি: صَلاة স্বলাহ্, স্বলাত্, আরবি: الصلاة আস-সালাত, অর্থ "প্রার্থনা", "দোয়া" বা "প্রশংসা") -এর আভিধানিক অর্থ দোয়া, রহমত, ক্ষমা প্রার্থনা করা ইত্যাদি। কোরআনে ইসলামী আনুষ্ঠানিক প্রার্থনা হিসেবে সালাত শব্দটিকেই ব্যবহার করা হয়েছে।

সালাত কখন ফরয হয়?

হিজরতের পূর্বে ইসরা তথা মি‘রাজের রাতে সালাত ফরয হয়। ইসলামে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাক্ষ্য প্রদানের পরের রুকন হলো সালাত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওহীদের পরে সালাতের শর্ত দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

«رَأْسُ الأَمْرِ الإِسْلَامُ، وَعَمُودُهُ الصَّلَاةُ، وَذِرْوَةُ سَنَامِهِ الجِهَادُ في سبيل اللّه »  “সব কিছুর মাথা হলো ইসলাম, বুনিয়াদ হলো সালাত আর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হলো আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ”।

শরী‘আতে সালাত বিধিবদ্ধ হওয়ার হিকমত:

আল্লাহ তাঁর বান্দাহর ওপর অসংখ্য যেসব নি‘আমত দান করেছেন সালাত হলো সেসব নি‘আমতের শুকরিয়া। এছাড়া সালাত আল্লাহর দাসত্বের উৎকৃষ্ট নমুনা। যেহেতু সালাতে বান্দা আল্লাহর প্রতি মনোযোগ দেয়, নতশির হয়, একনিষ্ঠ হয়ে তারই কাছে তিলাওয়াত, যিকর ও দো‘আর মাধ্যমে মুনাজাত করে। এমনিভাবে এতে রয়েছে এমন সম্পর্ক যা বান্দা ও তার রবের মধ্যে বন্ধন সৃষ্টি করে এবং পার্থিব জগতের উর্ধ্বে উঠে পরিচ্ছন্ন অন্তর ও প্রশান্তির জগতে নিয়ে যায়। মানুষ যখনই পার্থিব জীবনের মোহে ডুবে যায় তখন সালাত সেসব মায়া মুক্ত করে এবং তাকে বাস্তবতার সামনে দাঁড় করায় যার সম্পর্কে সে উদাসীন। সালাত তাকে স্মরণ করে দেয় যে, সে বাস্তবতা অনেক বড়। এ জীবন এত দৃঢ়ভাবে সৃষ্টি ও মানুষের জন্য সব কিছু অধিন্যস্ত করে দেওয়া শুধু জীবন যাপনের জন্য নয়; বরং এ জীবন থেকে অন্য জীবনের উদ্দেশ্যে সৃষ্টি।

বাচ্চাদের সালাতের নির্দেশ:

বাচ্চাদের সাত বছর বয়স হলে সালাতের আদেশ দিতে হবে। দশ বছর হলে সালাত আদায় না করলে মৃদু প্রহার করতে হবে। কেননা হাদীসে এসেছে,

«مُرُوا أَبْنَاءَكُمْ بِالصَّلَاةِ لِسَبْعِ سِنِينَ، وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا لِعَشْرِ سِنِينَ، وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِي الْمَضَاجِعِ».

তোমাদের সন্তানদের বয়স যখন সাত বছর হয়, তখন তাদেরকে সালাত পড়ার নির্দেশ দাও, যখন তাদের বয়স দশ বছর হবে তখন সালাত না পড়লে এ জন্য তাদের শাস্তি দাও এবং তাদের বিছানা আলাদা করে দাও

সালাত অস্বীকারকারীর হুকুম:

কেউ জেনেশুনে সালাত ফরয হওয়া অস্বীকার করলে সে কাফির, যদিও সে সালাত আদায় করে। কেননা সে আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও উম্মতের ইজমায় মিথ্যারোপ করল। এমনিভাবে যে ব্যক্তি অবজ্ঞা, অলসতা ও অবহেলা করে সালাত ত্যাগ করে, যদিও সে সালাত ফরয হওয়া স্বীকার করে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

فَٱقۡتُلُواْ ٱلۡمُشۡرِكِينَ حَيۡثُ وَجَدتُّمُوهُمۡ وَخُذُوهُمۡ وَٱحۡصُرُوهُمۡ وَٱقۡعُدُواْ لَهُمۡ كُلَّ مَرۡصَدٖۚ فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ فَخَلُّواْ سَبِيلَهُمۡۚ٥﴾ [التوب٥]

“তোমরা মুশরিকদেরকে যেখানেই পাও হত্যা কর এবং তাদেরকে পাকড়াও কর, তাদেরকে অবরোধ কর এবং তাদের জন্য প্রতিটি ঘাঁটিতে বসে থাক। তবে যদি তারা তাওবা করে এবং সালাত কায়েম করে, আর যাকাত দেয়, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও।” সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৫

জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِنَّ بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْكَ الصَّلَاةِ».

“বান্দা এবং শির্ক-কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সালাত পরিত্যাগ করা”।

যোহর সালাতের ওয়াক্ত:

সূর্য ঢলে পড়লে যোহর সালাতের ওয়াক্ত শুরু হয়। অর্থাৎ আকাশের মাঝামাঝি থেকে সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়লে যোহর সালাতের ওয়াক্ত আরম্ভ হয় এবং যোহর সালাতের ওয়াক্ত শেষ সময় হলো প্রতিটি জিনিসের ঢলে পড়া মূল ছায়া বাদে উক্ত জিনিসের ছায়া তার সমপরিমাণ হলে।

আসর সালাতের ওয়াক্ত:

প্রতিটি জিনিসের ঢলে পড়া ছায়া বাদে উক্ত জিনিসের ছায়া তার সমপরিমাণ হলে আসরের ওয়াক্ত আরম্ভ হয়। অর্থাৎ যোহরের সময় শেষ হলে আসরের সময় শুরু হয়। আর নির্ভরযোগ্য মতে আসরের শেষ সময় হলো, ঢলে পড়ার পরে প্রতিটি জিনিসের ছায়া তার দ্বিগুণ পরিমাণ হলে। বিশেষ প্রয়োজনে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময় বাকী থাকে।

মাগরিব সালাতের ওয়াক্ত:

সূর্যাস্তের সাথে সাথেই মাগরিবের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং মাগরিবের শেষ ওয়াক্ত হলো আকাশে যখন তারকা স্পষ্ট হয়। আর মাকরূহসহ মাগরিবের শেষ সময় হলো, পশ্চিমাকাশে লালিমা যখন দূরীভূত হয়।

ইশা সালাতের ওয়াক্ত:

পশ্চিমাকাশে লালিমা দূরীভূত হলে ইশার ওয়াক্ত শুরু হয়। আর ইশার শেষ সময় হলো মধ্যরাত।

ফজর সালাতের ওয়াক্ত:

পূর্বাকাশে ফজরে সানী (সুবহে সাদিক তথা শুভ্র আভা) উদিত হলে ফজরের সালাতের সময় শুরু হয়। আর ফজরের শেষ সময় হলো সূর্যোদয়।

১- যেসব দেশ ৪৫ ও ৪৮ ডিগ্রী উত্তর-দক্ষিণ অক্ষাংশ রেখায় অবস্থিত সেসব দেশে রাত-দিন যতই দীর্ঘ বা ছোট হোক দিন-রাতের সময়ের বিভাজনকারী ভৌগলিক রেখা স্পষ্ট বুঝা যায়।

২- আর যেসব দেশ ৪৮ ও ৬৬ ডিগ্রী উত্তর-দক্ষিণ অক্ষাংশ রেখায় অবস্থিত সেসব দেশে বছরের কিছুদিন দিন-রাতের সময়ের বিভাজনকারী ভৌগলিক রেখা বুঝা যায় না। যেমন লালিমা দূরীভূত হতে না হতেই ফজরের সময় এসে যায়।

৩- অন্যদিকে যেসব দেশ ৬৬ ডিগ্রীরও বেশি উত্তর-দক্ষিণ অক্ষাংশ রেখায় অবস্থিত সেসব দেশে বছরের দীর্ঘ সময় ধরে দিন-রাতের সময়ের বিভাজনকারী ভৌগলিক রেখা স্পষ্ট বুঝা যায় না।

প্রত্যেক প্রকারের হুকুম:

প্রথম প্রকারের অঞ্চলের লোকেরা পূর্বোল্লিখিত সময় অনুযায়ী সালাত আদায় করবে। আর তৃতীয় প্রকারের অঞ্চলের বাসীন্দারা সালাতের সময় নির্ধারণ করে নিবে। এতে কোনো মতানৈক্য নেই। দাজ্জাল সম্পর্কিত হাদীস থেকে এ ধরণের স্থানে সালাতের সময় নির্ধারণ করে নিতে বলা হয়েছে। এ হাদীসে এসেছে,

«قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللهِ وَمَا لَبْثُهُ فِي الْأَرْضِ؟ قَالَ: «أَرْبَعُونَ يَوْمًا، يَوْمٌ كَسَنَةٍ، وَيَوْمٌ كَشَهْرٍ، وَيَوْمٌ كَجُمُعَةٍ، وَسَائِرُ أَيَّامِهِ كَأَيَّامِكُمْ» قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللهِ فَذَلِكَ الْيَوْمُ الَّذِي كَسَنَةٍ، أَتَكْفِينَا فِيهِ صَلَاةُ يَوْمٍ؟ قَالَ: «لَا، اقْدُرُوا لَهُ قَدْرَهُ».

“সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, দাজ্জাল পৃথিবীতে কত দিন অবস্থান করবে? তিনি বললেন, চল্লিশ দিন। প্রথম দিনটি হবে এক বছরের সমান। দ্বিতীয় দিনটি হবে এক মাসের সমান। তৃতীয় দিনটি হবে এক সপ্তাহের সমান। আর বাকী দিনগুলো হবে তোমাদের এদিনগুলোর মতো। তখন সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! যে দিনটি এক বছরের সমান হবে তাতে একদিনের সালাত পড়া কি আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে? তিনি বললেন, না। এদিনটিকে সাধারণ দিনের সমান অনুমান করে নিও।”

সেসব স্থানের সময় কীভাবে নির্ধারিত করতে হবে সে ব্যাপারে আলেমগণ কয়েকটি মত ব্যক্ত করেছেন। কতিপয় আলেমের অভিমত হলো: ঐ স্থানে নিকটতম দেশে যেখানে দিন-রাত পার্থক্য করা যায় এবং শরী‘আত নির্ধারিত সময় অনুযায়ী সালাতের সময় নির্ধারণ করা যায় সে স্থানের সময় অনুযায়ী সালাতের সময় নির্ধারণ করতে হবে। এ উক্তিটি অধিকতর গ্রহণযোগ্য।

আবার কেউ কেউ বলেছেন, স্বাভাবিক সময় হিসেবে সালাতের সময় নির্ধারণ করতে হবে। বার ঘন্টা দিন ধরতে হবে। তেমনিভাবে বার ঘন্টা রাত ধরতে হবে। কেউ কেউ আবার মক্কা বা মদীনার সময় অনুযায়ী সালাতের সময় নির্ধারণ করার পক্ষে মত দিয়েছেন। দ্বিতীয় প্রকারের অঞ্চলে ইশা ও ফজরের সময় ব্যতীত অন্যান্য ওয়াক্তের সময় প্রথম প্রকারের সময় অনুযায়ী হবে। আর ফজর ও ইশা তৃতীয় প্রকার অঞ্চলের মতো নির্ধারণ করে নিতে হবে।