রাতারগুল

রাতারগুল
Admin February 17, 2024 80

আসলামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক গণ আজ আমি আলোচনা করবো রাতারগুল নিয়ে, রাতারগুল কোথায় অবস্থিত, রাতারগুলে কি কি নিদর্শন রয়েছে তা তুলে ধরবো। চলুন জেনে নিয়ে যাক..

রাতারগুল (Ratargul)

রাতারগুল জলাধার সিলেটের গোয়াইনঘাটে অবস্থিত বাংলাদেশের একটি স্বাদুপানির জলাধার। এক সময় রাতারগুলকে বাংলাদেশের একমাত্র জলাভূমি মনে করা হতো। কিন্তু পরবর্তীতে বাংলাদেশে যুগীরকান্দি, মায়াবান, বুজির বন ও লক্ষ্মীবাওর জলাভূমি নামে বেশি জলাভূমি পাওয়া যায়। "রাতারগুল জালাবন" বিশ্বের মাত্র ২২টি মিঠা পানির জলাভূমির একটি। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এই জলাভূমির আয়তন ৩,৩২৫.৬১ একর। এটি রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট নামেও পরিচিত। এর ৫০৪ একর এলাকাকে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করে। এছাড়া ২০১৫ সালের ৩১ মে বাংলাদেশ বন বিভাগ ২০৪ দশমিক ২৫ হেক্টর বনভূমিকে বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। এই এলাকাটি বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা (রাতারগুল) নামেও পরিচিত।

এই চিরহরিৎ বনটি গোয়াইন নদীর তীরে অবস্থিত (গোয়াইন নদীর সাথে সারি গোয়াইন নদীর সঙ্গম) এবং এটি চেঙ্গির খালের সাথে সংযুক্ত করে। করাচ গাছ (বৈজ্ঞানিক নাম: Millettia pinnata) এখানে সবচেয়ে বেশি জন্মে। এখানকার গাছপালা বছরে ৪ থেকে ৭ মাস পানির নিচে থাকে। বর্ষাকালে এ বন ২০-৩০ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। বছরের বাকি সময় পানির স্তর থাকে প্রায় ১০ ফুট। বর্ষাকালে এই বন চার মাস জলাবদ্ধ থাকে। তখন ছোট ছোট খালগুলো ফুটপাত হয়ে যায়। আর সেই জল আশ্রয় হয় বন বিভাগের খোঁড়া বিলে। জলজ প্রাণীরা সেখানে আশ্রয় নেয়।

রাতারগুল কোথায় অবস্থিত:

বনটি সিলেট জেলার গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর ইউনিয়নে গোয়াইন নদীর দক্ষিণে অবস্থিত। বনের দক্ষিণ পাশে আবার দুটি হাওর: শিমুল বিল হার ও নেওয়া বিল হাওর। সিলেট শহর থেকে এর দূরত্ব ২৬ কিলোমিটার।

রাতারগুলের পর্যটন আকর্ষণ:

বিভিন্ন সময়ে, বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে পর্যটকরা এখানে ভিড় জমান বনের গাছগুলো পানিতে ডুবে থাকা বনের গাছগুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে। বনের মধ্যে ভ্রমণ করার জন্য নৌকা প্রয়োজন, কিন্তু তারা ডিঙি নৌকা হতে হবে  - একটি ডিঙি নৌকায় চড়ার সময় প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে পারেন। তবে বনে ভ্রমণের অনুমতি নিতে হবে রাতারগুল ফরেস্ট বিট অফিস থেকে।

রাতারগুল যাবেন যেভাবে:

ঢাকার গাবতলী, ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে সিলেটগামী বাস ছাড়ে। গ্রীন লাইন, সৌদিয়া, এস আলম, শ্যামলী, এনা ইত্যাদি। বাসভেদে জনপ্রতি এসি বাসের টিকিটের মূল্য ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা। আর নন এসি বাসের টিকিটের মূল্য জনপ্রতি ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা।

ঢাকা থেকে সিলেটগামী ট্রেনে আপনি কমলাপুর বা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত বা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনকে বেছে নিতে পারেন আপনার ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে। ঢাকা-সিলেট ট্রেনের ভাড়া শ্রেণি অনুযায়ী ৩২০ টাকা থেকে ৭৩৬ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে সিলেট যাওয়া যায়, সপ্তাহে ৬ দিন পাহাড়িকা ও উদয়ন এক্সপ্রেস নামে দুটি ট্রেন চলাচল করে।

ঢাকা থেকে দ্রুততম সময়ে ও আরামে যাওয়ার জন্য আকাশপথ বেছে নিতে পারবেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, নভো এয়ার ও ইউএস বাংলা এয়ার ঢাকা-সিলেট রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে।

সিলেট থেকে রাতারগুল যাওয়ার উপায়:

সিলেট শহর থেকে রাতারগুলের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। তাই সকালে সিলেট থেকে গিয়ে বিকেলে ফিরে আসতে পারেন। একসঙ্গে কয়েকজন থাকলে সারাদিনের জন্য সিএনজি বা লেগুনা ভাড়া করে যেতে পারেন। সারাদিনের ভাড়া পড়বে ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা। আপনি চাইলে রাতারগুল নিয়ে ভোলাগঞ্জ বা বিছনাকান্দি ঘুরে আসতে পারেন। সিএনজি রিজার্ভ করার জন্য দর কষাকষি করতে ভুলবেন না। রাতারগুলে ঢুকতে সরকারি ফি লাগে এবং বনে প্রবেশের জন্য ছোট ছোট জেলেদের নৌকা পাওয়া যায়। ছোট নৌকায় ৪-৫ জন বসতে পারে। নৌকার ভাড়া ৭৫০ টাকা।

রাতারগুলে কোথায় থাকবেন:

লালাবাজার এলাকা ও দরগা রোডে কম ভাড়ায় অনেক মানের আবাসিক হোটেল ও রেস্ট হাউজ রয়েছে যেখানে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিভিন্ন ধরনের রুম পেয়ে যাবেন। এছাড়া হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা, কায়কোবাদ ইত্যাদি হোটেলে আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুযায়ী থাকতে পারবেন।

ভাল সার্ভিসযুক্ত আবাসিক হোটেলগুলির মধ্যে রয়েছে হোটেল হলি গেট, হলি ইন, লা ভিস্তা হোটেল, পানসি ইন, হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল, ব্রিটানিয়া হোটেল ইত্যাদি। এসব হোটেলে থাকতে খরচ পড়বে ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। বিলাসবহুল হোটেল ও রিসোর্টের মধ্যে রয়েছে নির্ভানা ইন, হোটেল নূরজাহান গ্র্যান্ড, রোজ ভিউ হোটেল, নাজিমগড় রিসোর্ট, গ্র্যান্ড প্যালেস ইত্যাদি। প্রতি রাতের জন্য খরচ পড়বে ৮,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকার মধ্যে।

আশা করি আপনার ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি দূর করতে রাতারগুল দেখতে আসবেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ পুরো লেখাটি  ধর্য্যসহ কারে পড়ার জন্য।