রাসায়নিক পরিবর্তন কাকে বলে উদাহরণ দাও

রাসায়নিক পরিবর্তন কাকে বলে উদাহরণ দাও
Admin March 01, 2025 60
রাসায়নিক পরিবর্তন : যে পরিবর্তনের ফলে এক বা একাধিক বস্তু প্রত্যেকে তার নিজস্ব সত্তা হারিয়ে সম্পূর্ণ নতুন ধর্ম বিশিষ্ট এক বা একাধিক নতুন বস্তুতে পরিণত হয়, তাকে রাসায়নিক পরিবর্তন বলে। যেমন: লোহায় মরিচা ধরা, দুধকে ছানায় পরিণত করা, চাল সিদ্ধ করে ভাতে পরিণত করা ও দিয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বলানো।

রাসায়নিক পরিবর্তন কাকে বলে?

রাসায়নিক পরিবর্তন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে পদার্থের আণবিক বা রাসায়নিক গঠন পরিবর্তিত হয়ে সম্পূর্ণ নতুন পদার্থ সৃষ্টি হয়। এই পরিবর্তনে পদার্থের মূল বৈশিষ্ট্য যেমন রঙ, গন্ধ, গঠন বা স্বাদ স্থায়ীভাবে পরিবর্তিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, লোহায় মরিচা পড়া, ফল পাকা বা মোমবাতি জ্বালানোর সময় রাসায়নিক গঠন পরিবর্তন হয়ে নতুন পদার্থ উৎপন্ন হয়। আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে শিল্প ও কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি আমাদের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং বিভিন্ন প্রযুক্তিগত উন্নয়নে সাহায্য করে। এই নিবন্ধে, আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব রাসায়নিক পরিবর্তনের সংজ্ঞা, উদাহরণ, বৈশিষ্ট্য এবং এর গুরুত্ব নিয়ে। আপনি যদি জানতে চান “রাসায়নিক পরিবর্তন কাকে বলে” এবং এটি কীভাবে আমাদের জীবন ও পরিবেশকে প্রভাবিত করে, তাহলে পড়তে থাকুন।

রাসায়নিক পরিবর্তনের সংজ্ঞা

এই নিবন্ধে যা জানব
এটি এমন একটি পরিবর্তন যেখানে এক বা একাধিক পদার্থের আণবিক গঠন পরিবর্তিত হয়ে সম্পূর্ণ নতুন ধর্ম ও বৈশিষ্ট্যযুক্ত পদার্থের সৃষ্টি হয়। এ ধরনের পরিবর্তনে মূল পদার্থের রাসায়নিক বন্ধন ভেঙে নতুন বন্ধন গঠিত হয়, ফলে নতুন পদার্থের উৎপত্তি ঘটে।

উদাহরণ: লোহায় মরিচা পড়া একটি রাসায়নিক পরিবর্তন। এ ক্ষেত্রে লোহা (Fe) বাতাসের অক্সিজেন (O₂) ও জলীয় বাষ্পের সাথে বিক্রিয়া করে লৌহ অক্সাইড (Fe₂O₃) তৈরি করে, যা লালচে-বাদামী রঙের মরিচা হিসেবে পরিচিত।

রাসায়নিক পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্য
এই পরিবর্তনের কিছু প্রধান বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:

নতুন পদার্থের সৃষ্টি: মূল পদার্থের আণবিক গঠন পরিবর্তিত হয়ে সম্পূর্ণ নতুন পদার্থের সৃষ্টি হয়।
অপরিবর্তনীয়তা: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাসায়নিক পরিবর্তন পূর্বাবস্থায় ফেরানো যায় না।
শক্তির পরিবর্তন: এ ধরনের পরিবর্তনে তাপ, আলো বা শব্দের মতো শক্তির শোষণ বা নির্গমন ঘটে।
ধর্মের পরিবর্তন: পদার্থের রঙ, গন্ধ, স্বাদ বা ঘনত্বের মতো বৈশিষ্ট্য পরিবর্তিত হয়।
গ্যাসের নির্গমন: কিছু ক্ষেত্রে গ্যাসের উৎপত্তি হতে পারে, যা বুদবুদ আকারে দেখা যায়।
উদাহরণ: মোমবাতি জ্বালানোর সময় মোমের দহন ঘটে, যা একটি রাসায়নিক পরিবর্তন। এতে মোমের হাইড্রোকার্বন অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে কার্বন ডাই অক্সাইড  ও জলীয় বাষ্প (H₂O) তৈরি করে, যা মোমের মূল বৈশিষ্ট্য থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

রাসায়নিক পরিবর্তনের উদাহরণ

নিম্নে কিছু সাধারণ রাসায়নিক পরিবর্তনের উদাহরণ উল্লেখ করা হলো:

খাদ্য হজম: আমাদের দেহে খাদ্য গ্রহণের পর এনজাইমের মাধ্যমে জটিল খাদ্য উপাদানগুলি ভেঙে সহজ পদার্থে রূপান্তরিত হয়, যা দেহের জন্য পুষ্টি সরবরাহ করে।
কাগজ পোড়ানো: কাগজ জ্বালানোর সময় তা কার্বন ডাই অক্সাইড, জলীয় বাষ্প ও ছাইয়ে পরিণত হয়, যা মূল কাগজের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন পদার্থ।
ফল পাকা ও পচা: ফল পাকার সময় এথিলিন গ্যাসের প্রভাবে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে, যা ফলের রঙ, স্বাদ ও গন্ধ পরিবর্তন করে। পচনের সময় মাইক্রোঅর্গানিজমের ক্রিয়ায় ফলের রাসায়নিক গঠন ভেঙে নতুন পদার্থের সৃষ্টি হয়।
সালোকসংশ্লেষণ: গাছপালা সূর্যালোকের উপস্থিতিতে কার্বন ডাই অক্সাইড ও জলকে গ্লুকোজ ও অক্সিজেনে রূপান্তরিত করে, যা একটি জটিল রাসায়নিক পরিবর্তন।
দুধ টক হওয়া: দুধে থাকা ল্যাকটোজ ব্যাকটেরিয়ার ক্রিয়ায় ল্যাকটিক অ্যাসিডে পরিণত হয়, যা দুধের স্বাদ ও গন্ধ পরিবর্তন করে।
রাসায়নিক পরিবর্তন বনাম ভৌত পরিবর্তন: মূল পার্থক্যসমূহ

রাসায়নিক পরিবর্তন এবং ভৌত পরিবর্তন উভয়ই পদার্থের পরিবর্তনের প্রক্রিয়া, তবে তাদের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে:

বৈশিষ্ট্য রাসায়নিক পরিবর্তন ভৌত পরিবর্তন সংজ্ঞা: যে পরিবর্তনের ফলে পদার্থের রাসায়নিক গঠন পরিবর্তিত হয়ে নতুন পদার্থের সৃষ্টি হয়। যে পরিবর্তনের ফলে পদার্থের অবস্থার বা আকার-আকৃতির পরিবর্তন হয়, কিন্তু নতুন কোনো পদার্থ উৎপন্ন হয় না। গঠন পরিবর্তন পদার্থের আণবিক গঠন পরিবর্তিত হয়। আণবিক গঠন অপরিবর্তিত থাকে।
স্থায়িত্ব সাধারণত স্থায়ী পরিবর্তন; পূর্বাবস্থায় ফেরা কঠিন। সাধারণত অস্থায়ী; পূর্বাবস্থায় ফেরা সহজ। শক্তির পরিবর্তন তাপ,আলো বা অন্যান্য শক্তির শোষণ বা নির্গমন ঘটে। শক্তির শোষণ বা নির্গমন ঘটতে পারে, নাও পারে।
নতুন পদার্থের সৃষ্টি নতুন পদার্থের সৃষ্টি হয়। নতুন পদার্থের সৃষ্টি হয় না।