পরম শূন্য তাপমাত্রা কাকে বলে

0 কেলভিন বা -273 ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ তাপমাত্রায় সকল পদার্থের অণু সমূহের গতিশক্তি 0। তবে তা আধুনিক তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যায় সম্ভব নয়, বাস্তবিক ভাবে তো নয়ই! কারণ, হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি হতে আমরা জানি, কখনোই একই সাথে কোনো বস্তুর ভরবেগ এবং অবস্থান নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না। যখন গতি 0 তখন ভরবেগও 0 আর অবস্থান নির্দিষ্ট। কোয়ান্টাম ফিজিক্স এটা হতে দেবে না। তাই বিজ্ঞানীরা নতুনভাবে বলছেন যে তাপমাত্রায় পদার্থে অণু সমূহ 'সর্বনিম্ন' গতিশক্তি সম্পন্ন থাকে তাই পরম শূণ্য তাপমাত্রা। তবে এখানে সর্বনিম্ন বলতে শূণ্যের কাছাকাছি(tends to Zero) বুঝাচ্ছে। তাই আপনি যত ইচ্ছা ঠান্ডা হতে বা করতে পারেন। কিন্তু পরম শূণ্য তাপমাত্রায় পৌঁছাতে পারবেন না। তাই অসীম পানে চেয়ে শুধু হেঁটে যেতে হবে!
তাপ ও তাপমাত্রার ১০টি পার্থক্য;
১। তাপ হলো এক প্রকার শক্তি যা ঠান্ডা বা গরমের অনুভূতি যোগায়।
২। তাপের প্রবাহ তাপের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে না।
৩। তাপ হলো তাপমাত্রার কারণ।
৪। তাপ পরিমাপের একক জুল।
৫। দুটি বস্তুর তাপমাত্রা এক হলেও এদের তাপের পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে।
৬। তাপ বস্তুস্হিত অনুর শক্তির সমানুপাতিক।
৭। তাপ পরিমাপক যন্ত্রের নাম ক্যালরিমিটার।
৮। অবস্থার পরিবর্তন না হলে তাপ গ্রহণে বস্তুর উষ্ণতা বাড়ে এবং তাপ বর্জনে বস্তুর উষ্ণতা কমে।
৯। অবস্থার পরিবর্তনের সময় বস্তুর মোট তাপের পরিবর্তন হয়।
১০। কোন বস্তুর মোট তাপকে পাত্রে রাখা তরলের সাথে তুলনা করা যেতে পারে।
বিস্তারিতঃ
জার্মানির মুনশেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন পদার্থবিদ একটি পরীক্ষা চালান, যেখানে উচ্চ গতি এবং নিম্ন গতিসম্পন্ন পরমাণু ব্যবহার করে তারা পরম শূন্যের নিচের তাপমাত্রা পেতে সক্ষম হয়েছেন। একে বলা হয় ঋণাত্মক তাপমাত্রা সিস্টেম। পাহাড় এবং উপত্যকার উচ্চতার তারতম্যের ধারণা ব্যবহার করে গবেষকরা এই ঘটনাটিকে ব্যাখ্যা করেন। কল্পনা করে দেখুন, শক্তির উচ্চ অবস্থা হলো পাহাড়ের চূড়া এবং নিম্ন অবস্থা হল উপত্যকা, এর মাঝে রয়েছে পাহাড়ের ঢাল যাতে ক্রমশ উপর থেকে নিচে কমতে থাকে শক্তি। পরম শূন্য তাপমাত্রায় একদল নিশ্চল পরমাণু যাদের কোনো শক্তি নেই, তারা থাকে উপত্যকার একেবারেই নিচু স্থানটিতে। তাপমাত্রা চরম শূন্য থেকে বাড়ানো শুরু করলে কিছু পরমাণু হঠাৎ করে খুব বেশি শক্তি গ্রহণ করে আবার কতগুলো পরমাণু কম শক্তি গ্রহণ করে। এমন অবস্থায় দেখা যায়, শক্তির বিচারে পাহাড়ের চূড়া থেকে উপত্যকা পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে পরমাণুগুলো। এমন অবস্থায় ধনাত্মক তাপমাত্রা স্কেলে যদি আরো বেশি শক্তি সরবরাহ করা হয়, তবে এই সিস্টেমটিতে এর এনট্রপি আরো কমে যাবে। ধনাত্মক তাপমাত্রা স্কেলে পাহাড়ের চূড়ার চাইতে বেশি পরিমাণে পরমাণু থাকে উপত্যকায়। তাই ঐ বিজ্ঞানীরা ঋণাত্মক তাপমাত্রা স্কেল নিয়ে আসার জন্য এই অবস্থাটিকে উল্টে দেন, অর্থাৎ উচ্চ শক্তির বেশি পরিমাণ পরমাণু স্থাপন করেন পাহাড়ের ওপরে। এর ফলাফলটি হয় অসাধারণ। এই সিস্টেমে যে থার্মোমিটার তৈরি হয়, তার উচ্চ মাত্রা হলো অসীম এবং নিম্ন মাত্রা হয় ঋণাত্মক পরম শূন্য। বলাই বাহুল্য যে, পৃথিবীতে প্রাকৃতিকভাবে এই তাপমাত্রা পাওয়া সম্ভব নয়। বিজ্ঞানীরা এর জন্য পরম শূন্যের একটু ওপরের তাপমাত্রায় একটি শূন্যস্থানে রাখেন পরমাণুগুলোকে, যাদের বেশিরভাগই ছিল কম শক্তি মাত্রায়। এরপর লেজার ব্যবহার করে বেশিরভাগ পরমাণুকে উচ্চ শক্তির দশায় নিয়ে যাওয়া হয়। এভাবেই তৈরি হয় একটি ঋণাত্মক তাপমাত্রা সিস্টেম। শুধুমাত্র পরম শূন্যের ধারণা ভাঙতে সক্ষম হয়েছে বলে নয়; বরং আবিষ্কারটির রয়েছে বিভিন্ন প্রয়োগ। একে ব্যবহার করা যাবে কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার সে সব গবেষণা চালাতে, যেগুলো সাধারণ তাপমাত্রায় করা সম্ভব নয়। এছাড়া পরমাণু এবং প্রতি-পরমাণু নিয়ে গবেষণায়ও এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।