মুখের ব্রণ দূর করার উপায়

Admin
October 15, 2024
486
ব্রণ ত্বকের উজ্জ্বলতা ও সৌন্দর্য নষ্ট করে। আমাদের ত্বকের সেবেসিয়াস গ্রন্থিগুলি যখন ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয়, তখন সেগুলি বড় হয়ে যায় এবং তাদের ভিতরে পুঁজ জমে যা ধীরে ধীরে ব্রণে পরিণত হয়। কিশোরী মেয়েরা সাধারণত ব্রণ এবং ব্রণের দাগের জন্য বেশি প্রবণ হয়। ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু উপায় এখানে দেওয়া হল। বাজারের দামি প্রসাধনীর পরিবর্তে আপনি কিছু ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করতে পারেন যা আপনাকে সহজেই ব্রণ কমাতে সাহায্য করবে। এবং ঘরে তৈরি, প্রাকৃতিক এবং জৈব পণ্যগুলি সেরা এবং নিরাপদ। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয় নেই।
ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করার সহজ ও ঘরোয়া উপায়সমূহ
১) মুলতানি মাটি
ত্বকে অতিরিক্ত তেলতেলে ভাবের ফলে ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। এ ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে মুখে মুলতানি মাটি পানি দিয়ে পেস্ট করে লাগাতে পারেন। মুলতানি মাটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ বন্ধ করে সাহায্য করে।
২) শশার রস
শশার রস তৈলাক্ততা দূর করতে খুবই কার্যকর। প্রতিদিন বাইরে থেকে এসে শশার রস দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে পারেন। কিংবা আইস কিউব করে রেখেও ইউজ করতে পারেন, এতে ওপেন পোরসের প্রবলেমও সল্ভ হবে অনেকটা।
৩) শশার রস, চালের গুঁড়া ও মধু
শশার রস মুখে ব্রণ দূর করতে খুবই কার্যকর। এ ছাড়া স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলে এর সঙ্গে চালের গুঁড়া মিশিয়ে নিলেই হবে। যাদের মধুতে অ্যালার্জি নেই, তারা সামান্য মধুও মিশিয়ে নিতে পারেন এই মিশ্রণে। সপ্তাহে দুই দিন এই প্যাক ব্যবহার করলে ত্বক পরিষ্কার হবে। ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস দূর হয়ে যাবে। খেয়াল রাখতে হবে, ব্রণ থাকলে স্ক্রাব করা যাবে না।
৪) কাঁচা হলুদ এবং চন্দনকাঠের গুঁড়ো
কাঁচা হলুদ এবং চন্দনকাঠের গুঁড়ো ব্রণের জন্য খুবই কার্যকর দুটো উপাদান। সমপরিমাণ বাটা কাঁচা হলুদ এবংচন্দন কাঠের গুঁড়ো একত্রে নিয়ে এতে পরিমাণ মত পানি মিশিয়ে পেষ্ট তৈরি করতে হবে। মিশ্রণটি এরপর ব্রণ আক্রান্ত জায়গায় লাগিয়ে রেখে কিছুক্ষণ পর শুকিয়ে গেলে মুখঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই মিশ্রণটি শুধুমাত্র ব্রণদূর করার কাজ করে না বরং ব্রণের দাগ দূর করতেও সাহায্য করে।
৫) আপেল এবং মধুর মিশ্রণ
আপেল এবং মধুর মিশ্রণ হচ্ছে ব্রণের দাগ দূর করার সবচেয়ে জনপ্রিয় ঘরোয়া পদ্ধতি। প্রথমে আপেলের পেষ্ট তৈরি করে তাতে ৪-৬ ফোঁটা মধু মিশাতে হবে। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করেএরপর মুখ ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি ত্বকের টানটান ভাব বজায় রাখে এবং গায়ের রঙ হালকা করে। সপ্তাহে ৫-৬ বার এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনি কয়েকদিনের মধ্যে পরিবর্তনটা অনুভব করতে পারবেন।
৬) তুলসি পাতার রস
ব্রণের জন্য তুলসি পাতার রস খুব উপকারী। কারণ তুলসি পাতায় আছে আয়ূরবেদিক গুণ। শুধুমাত্র তুলসি পাতার রস ব্রণ আক্রান্ত অংশে লাগিয়ে রেখে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
৭) চন্দন কাঠের গুড়োঁ, গোলাপ জল ও লেবুর রস
প্রথমে চন্দন কাঠের গুড়োঁর সাথে গোলাপ জল মিশিয়ে পেষ্ট তৈরি করুন। এরপর এতে ২-৩ ফোঁটা লেবুর রস মিশাণ। গোলাপজল অনেকের ত্বকের সাথে এডজাষ্ট হয় না। তারা সেই ক্ষেত্রে গোলাপ জলের পরিবর্তে মধু ব্যবহার করতে পারেন। এই মিশ্রণ আপনার ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করবে। সপ্তাহে ৩-৪দিন ব্যবহার করতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
৮) দারুচিনি গুঁড়ার ও গোলাপজল
গোলাপজলের নিয়মিত ব্যবহারে ব্রণের দাগ কমে যায়। দারুচিনি গুঁড়ার সাথে গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট ব্রণের ওপর লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এতে ব্রণের সংক্রমণ, চুলকানি এবং ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে।
৯) ডিমের সাদা অংশ
রাতে শোয়ার আগে ডিমের সাদা অংশ ব্রণ আক্রান্ত জায়গায় ম্যাসেজ করে সারারাত রাখতে পারেন। এটি আপনার ত্বকের খসখসে ভাব দূর করে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি এর সাথে লেবুর রস যোগ করা যায়। আপনি এটি আধ ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলতে পারেন।
১০) পেঁপে ও চালের গুঁড়ো
ব্রণ হবার একটি অন্যতম কারণ হলো অপরিষ্কার ত্বক। তাই ত্বক রাখতে হবে পরিষ্কার। নিয়মিত স্ক্রাবিং ত্বককে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। পাকা পেঁপে চটকে নিন এক কাপ। এর সাথে মেশা এক টেবিল চামচ পাতিলেবুর রস এবং প্রয়োজন অনুযায়ী চালের গুঁড়ো। মিশ্রণটি মুখসহ পুরো শরীরে লাগান। ২০-২৫ মিনিট মাসাজ করে গোসল করে ফেলুন। পেঁপে ছাড়াও ব্যবহার করতে পারেন ঘৃতকুমারীর রস।
১১) মুলতানি মাটি ও নিম পাতা
চার-পাঁচটা নিম পাতা ভালো করে ধুয়ে পিষে নিন। এর মধ্যে এক চামচ মুলতানি মাটি, অল্প গোলাপ জল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। প্যাকটা যদি গাঢ় হয়ে যায় তাহলে এর মধ্যে গোলাপ জল মিশিয়ে নিন। মুখে লাগিয়ে বেশ কিছুক্ষণ রেখে দিন। প্যাকটা মুখে শুকিয়ে গেলে হালকা পানি দিয়ে মুখটা ধুয়ে ফেলুন।
১২) পুদিনা পাতা
অতিরিক্ত গরমের কারণে ত্বকে যেসব ফুসকুড়ি এবং ব্রণ হয় সেগুলো দূর করতেও পুদিনা পাতা উপকারী। টাটকা পুদিনা পাতা বেটে ব্রণের ওপর লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট এরপর ধুয়ে ফেলুন।
১৩) স্পেশাল প্যাক
রক্ত চন্দন পাউডার এবং আনারের খোসার গুঁড়ো মিশিয়ে ভালো করে মিলিয়ে নিন। এই মিশ্রণের মধ্যে দুই চামচ দুধ বা টকদই দিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রাখার পর ধুয়ে নিন। এই প্যাকটা নিয়মিত মুখে লাগান। ত্বকের জেল্লা বাড়বে। ব্রণের দাগও দূর হয়ে যাবে।
ব্রণ ও ব্রণের দাগ থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু টিপস
১) দিনে ৯ থেকে ১০ গ্লাস জল পান করুন।
২) প্রতিদিন রাতের খাবারের পর যেকোনো ধরনের মৌসুমি ফল খান। এটি আপনার ত্বককে সতেজ রাখবে। যতটা সম্ভব তৈলাক্ত বা ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলুন।
৩) বাইরে থেকে আসার পর সবসময় ফেসিয়াল ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। গরম পানির ভাপও নিতে পারেন। এতে ত্বকে জমে থাকা ধুলাবালি পরিষ্কার হবে।
৪) আমাদের অনেকেরই নখ দিয়ে ব্রণ তোলার বদ অভ্যাস আছে। আমাদের বুঝতে হবে এটা কোনো সমাধান নয়। বিপরীতে, এটি ব্রণের অবস্থাকে আরও খারাপ করে তুলবে। এতে ব্রণ লাল হয়ে যাবে। এমনকি এটি ফেটে যাবে এবং মুখে দাগ পড়বে। ব্রণ চলে না যাওয়া পর্যন্ত কোনো মেকআপ ব্যবহার করা উচিত নয়। তেল-মুক্ত ক্লিনজার দিয়ে দিনে অন্তত দুবার মুখ ধুয়ে নিন।
যারা দীর্ঘদিন ধরে ব্রণ ও ব্রণের দাগের সমস্যায় ভুগছেন এবং কোনো কাজ হচ্ছে না তাদের দেরি না করে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া উচিত। তবে প্রথমে আপনি ব্রণ এবং ব্রণের দাগ থেকে মুক্তি পেতে উপরে উল্লিখিত টিপস এবং ঘরোয়া প্রতিকারগুলি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।