মৃত ব্যক্তির গোসলের নিয়ম

Admin
October 17, 2024
394
মানুষের জন্ম-মৃত নির্ধারিত। কেউ চিরকাল এই পৃথিবীতে বসবাস করতে পারে না। মৃত্যুর মতো ধ্রুব সত্যকে আল্লাহতে বিশ্বাসী মুমিন যেমন চিরন্তন বিশ্বাস করে, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী এমনকি স্রষ্টাকে মানতে না চাওয়া অবিশ্বসীরাদেরও অস্বীকারের সুযোগ নেই। মৃত্যুর মাধ্যমেই একদিন এই রঙ-রসে ভরা পৃথিবীর মায়াজাল ছাড়তে হবে।
পবিত্র কোরআন
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই; যদিও তোমরা সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান কর।’ -(সুরা নিসা, আয়াত, ৭৮)
কোনও মুসলমান মারা গেলে অপর মুসলমানের ওপর মৃতের গোসল, কাফন, জানাজা, জানাজা বহন ও দাফন করার অবশ্যক হয়ে যায়। কেউ মারা গেলে দ্রুতই এই কাজগুলো সম্পাদন করতে হয়। হাদিসে এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আলী রা.-কে লক্ষ্য করে বলেন, ‘হে আলী! তিনটি জিনিসের ক্ষেত্রে বিলম্ব করবে না।
১। নামাজের যখন সময় আসবে তখন নামাজ আদায় করা থেকে দেরি করবে না। ২। মৃত ব্যক্তির জানাজা যখন উপস্থিত হবে তখন কাফন-দাফন সম্পন্ন করতে দেরি করবে না।
৩। কোন অবিবাহিতা মেয়ের জন্য যখন কোন উপযুক্ত পাত্র পাবে তখন তাকে পাত্রস্থ করা থেকে বিলম্ব করবে না।’ -(তিরমিজি ১/২০৬)
মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া ফরজে কিফায়া। কোনো শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপর যদি ইন্তিকাল করে, তাকেও গোসল দিতে হবে এবং এটা ফরজ। আর যদি মৃতাবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়, তাহলে গোসল দেওয়া ভালো; তবে ফরজ নয়। কোনো লাশ যদি লা-ওয়ারিস হয়, তাহলে তার গোসলের দায়িত্ব সব মুসলমানের। গোসল ছাড়া তার দাফন করা হলে, যারা জানে- তাদের সবাই গুনাহগার হবে।
মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার পদ্ধতি
মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়া ফরজে কিফায়া। এবং কেউ কেউ ওয়াজিব বলেছেন। যারা গোসল দিতে পারদর্শী তারাই মৃত ব্যক্তিকে গোসল দিবে। মৃত ব্যক্তিকে সঠিকভাবে গোসল দেয়ার পদ্ধতি তুলে ধরা হলো-
১। মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার সময় গোসলের খাটে শোয়াতে হয়। তারপর পরনের কাপড় সরিয়ে পুরুষ হলে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত একটা কাপড় রাখতে হয়।
২। প্রায় বসার মত করে মৃত ব্যক্তির মাথাকে উঁচু করে আলতোভাবে মৃত ব্যক্তির পেটকে চাপ দিয়ে বেশি করে পানি ঢেলে ময়লা বের করা।
৩। গোসলদাতার হাতে একটি নেকড়া পেঁচিয়ে বা হাত মোজা পরিধান করে নেয়া।
৪। অতপর গোসলের নিয়ত করে প্রথমে নামাজের অজুর ন্যায় মৃত ব্যক্তিকে অজু করানো। তবে মুখে ও নাকে পানি প্রবেশ করানো যাবে না। বরং ভিজা আঙ্গুলদ্বয় নাকে ও মুখে প্রবেশ করানো।
৫। গোসল ফরজ অবস্থায় এবং ঋতুস্রাব ও সন্তান প্রসব করার পর মারা গেলে মুখ ও নাকে পানি পৌছানো জরুরি।
৬। তুলা দিয়ে দাঁতের মাড়ি পরিষ্কার করে দেয়া।
৭। অতপর কুল (বড়ই) পাতা ও সাবান মিশ্রিত হালকা গরম পানি দ্বারা প্রথমে মৃত ব্যক্তির মাথা ও দাড়ি ধৌত করা।
৮। তারপর ঘাড় থেকে পা পর্যন্ত ডান পার্শ্ব ধৌত করে বাম পার্শ্বের উপর রেখে পিঠের ডান অংশ ধৌত করা।
৯। অনুরুপভাবে ডান পাশের নেয় বাম পাশও ধৌত করা।
১০। এভাবে তিনবার ধৌত করা। তারপরও যদি ময়লা থাকে তবে ময়লা পরিষ্কার হওয়া পর্যন্ত বেজোড় করে ধৌত করা।
১১। গোসলের শেষ বারের পানির সঙ্গে কার্ফুর, আতর মিশিয়ে সমগ্র শরীরে পানি ঢেলে দেয়া।
১২। মৃত ব্যক্তির মোচ বা নখ বেশি লম্বা হয় তবে কেটে ফেলা। (তবে এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে)
১৩। একটি পরিষ্কার কাপড় দ্বারা মৃত ব্যক্তির শরীরের পানি মুছে দেয়া।
১৪। মৃত ব্যক্তি মহিলা হলে চুলকে তিনটি বেণী করে পিছনের দিকে রাখা।
১৫। মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার পর দেহ থেকে ময়লা বের হলে, বের হওয়ার স্থান ধৌত করে তুলা দ্বারা বন্ধ করে দেয়া। এক্ষেত্রে কেউ বলেছেন, অজু ও গোসল পুনরায় করানো লাগবে না। আবার কেউ কেউ বলেছেন, অজু করাতে হবে। তবে অজু করানোই উত্তম।
এগুলো হচ্ছে মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর উত্তম পদ্ধতি। যারা মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাবে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে উত্তম পদ্ধতিতে মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।