মদিনার পূর্ব নাম কি

Admin
November 27, 2024
324
গভীর ইসলামী তাৎপর্যের শহর মদীনার ঐতিহাসিক নাম আবিষ্কার করুন। এর আসল নাম ইয়াথ্রিব সম্পর্কে জানুন এবং এর সমৃদ্ধ ইতিহাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, এবং সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য একটি আধ্যাত্মিক কেন্দ্রে রূপান্তরিত হওয়ার অন্বেষণ করুন। এই পবিত্র শহরের আকর্ষণীয় অতীতে ডুব দিন।
মদিনার পূর্ব নাম কি?
মক্কার প্রাচীন নাম ছিল বাক্কা, আর মদিনার আগের নাম ছিল ইয়াসরিব। কাবার প্রাথমিক গঠন নির্মাণ শেষে একজন ফেরেশতা তাঁর কাছে অপার্থিব 'সাদা' পাথর নিয়ে আসেন, যেটা কাছের আবু-কুবাইস পর্বতের উপর আকাশ থেকে পতিত হয়েছিল। সেটা কাবার পূর্ব কোণে স্থাপন করে দেয়া হয়।
বর্ণনা
কুরআন মদীনা শহরের কথা বলার সময় “মদীনা” শব্দটি বহুবার ব্যবহার করেছে। কিন্তু কুরআন মাত্র একবার “ ইয়াসরিব’ শব্দটি ব্যবহার করেছে। শুধুমাত্র সুরা আহযাবে, ব্যস! কুরআনের অন্য কোথাও “ইয়াসরিব ” শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি। দুটোই কিন্তু মদীনারই নাম।তর্কের খাতিরে ধরে নেয়া যেতে পারে, দুটোই তো একই জিনিস, তাই না? তাহলে আমি কেন ইয়াসরিব শব্দটি বদলে মদীনা লিখতে পারি না? অথবা মদীনার না বলে ইয়াসরিব বলি না? তোমরা বারবার বল, কুরআনের শব্দচয়ন পুরোপুরি পারফেক্ট। তোমরা তো জানই ইয়াসরিব আর মদীনা দুটোই একই জিনিস। তাহলে কেন ইয়াসরিবের বদলে মদীনা কিংবা মদীনার বদলে ইয়াসরিব ব্যবহার করা যাবে না? কতটুকুই আর হেরফের হবে তাতে? এই সামান্য পরিবর্তনে কি আসে যায়?এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে আমাদের ইতিহাসের দিকে একটু তাকাতে হবে। রাসুল (স) মদীনায় আসার আগে মদীনার নাম কি ছিল? ইয়াসরিব। রাসুল (স) আসার পর তাকে যখন সবাই একবাক্যে নেতা বলে ঘোষণা দিল, তখন শহরটার নাম হল “মদীনাতুন্নাবী” বা “নবীর (স) শহর”। সংক্ষেপে “শহর”। তাহলে মদীনা শব্দটি কিসের সংক্ষিপ্ত রূপ? “নবীর (স) শহর” শব্দটির। আর আসল নাম “ ইয়াসরিব”। অথবা আপনারা এভাবেও ভাবতে পারেন যে, রাসুল (স) আসার আগে শহরটির নাম ছিল ইয়াসরিব, আর তিনি আসার পর এর নাম হল মদীনা।
মজার ব্যাপার হল, সুরাতুল আহযাব, সুরা নম্বর ৩৩ এ আসলে মদীনা এবং ইয়াসরিব, দুটোই ব্যবহার করা হয়েছে, একই সুরাতে। আরও মজার ব্যাপার হল, সুরাতুল আহযাব একটি মাদানী সুরা। মাদানী সুরার ব্যাপারে আমরা কি জানি? রাসুল (স) সেসময় কোথায় ছিলেন? মদীনাতে। তাহলে তখন শহরটাকে কি বলা হত? মদীনা, কিন্তু এখানে আমরা “ইয়াসরিব ” শব্দটি দেখতে পাচ্ছি। ধাঁধাঁটা ধরতে পারছেন তো? ব্যাপারটা হল, মদীনা শব্দটি “মদীনাতুন্নাবী” বা “নবীর (স) শহর” এর সংক্ষিপ্ত রূপ। যখন মদীনাকে শত্রুরা চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলল, তখন কিছু ইহুদী গোত্র একসাথে হল।তারা এসে উহুদ যুদ্ধের পরাজয়ের পর কুরাইশদের বোঝাল মদীনার দিকে দল বেঁধে আবার আসতে। তারা ছোট ছোট গোত্রগুলোর সাথে জোট বেঁধে বিশাল এক সেনাবাহিনী তৈরি করে মদীনাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলল। প্রায় সপ্তাখানেক ধরে মদীনা শহরকে একরকম বন্দি করে রাখা হল।অবস্থা আরো খারাপের দিকে গেল ভেতরে থাকা কিছু মানুষের জন্য। ভেতরে কিছু মানুষ ছিল যারা শুধু নামেই মুসলিম ছিল, কিন্তু তাদের হৃদয়ে ইসলাম ছিল না। তাদেরকে কি বলা হয়? মুনাফিক বা ভন্ড, তাই না?রাসুল (স) আসার আগে মুনাফিকরা কোন শহরের নেতা ছিল? তারা ছিল ইয়াসরিবের নেতা। রাসুল (স) আসার পর তারা তাদের নেতৃত্ব ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল। কারণ স্বভাবতই মুসলিমদের নেতা কে? মুহাম্মদ (স)।এখন যখন মদীনাকে কাফেররা চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে, তখন তারা এটার সুযোগ নিয়ে বলল, দেখ সবাই, মুহাম্মদের নেতৃত্ব আমাদের কোথায় নিয়ে এসেছে। তাই তারা বলল, “ওয়া ক্বলু, ইয়া আহলা ইয়াসরিব লা মুক্বামা লাকুম”। মানে হল, “হে ইয়াসরিবের লোকজন, তোমাদের যাওয়ার আর কোন জায়গা বাকি নেই”। “ফারজি’য়ু” “চল আমরা ফিরে যাই”। কিসে ফিরে যাই? শহরটাকে আবার ইয়াসরিব করে ফেলি। রাসুল (স) নেতৃত্বে আসার আগে যেমনটা ছিল, ঠিক তেমনটায়।আপনারা কি বুঝতে পারছেন যে “ইয়াসরিব ” শব্দটা ব্যবহার করে তারা কি প্রকাশ করল? তাদের আসল আনুগত্য কাদের প্রতি। কারণ, যদি তারা রাসুল (স) কে তাদের নেতা বলে আসলেই মেনে নিত, তাহলে তারা কোন শব্দটা ব্যবহার করত? মদীনা। তাই, শুধুমাত্র এই একটা শব্দ ব্যবহার করে, আল্লাহ সেই শব্দটা ধরেছেন, কুরআনে সেটাকে প্রকাশ করেছেন এবং আমরা সেখান থেকে তাদের আসল উদ্দেশ্য কি সেটা বুঝতে পারি, যেটা হল, একদিন শহরটা আবার ইয়াসরিব হয়ে যাবে, মদীনা আর থাকবে না।এই ব্যাপারটা আরো স্পষ্ট আর পরিষ্কার হয়, যখন আমরা অন্য আরেকটি সুরায় যাই। সুরাতুল মুনাফিকুন, যে সুরাতে কাদের কথা বলা হয়েছে? মুনাফিকদের, ভন্ডদের। মুনাফিকদের নিয়ে সুরাটা অনেক ইন্টারেস্টিং। সুরাটা শুরু হয়েছে মুনাফিকদের রাসুল (স) এর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা দিয়ে। মুনাফিকরা তাদের স্বভাব থেকে সরে গিয়ে রাসুল (স) এর প্রতি আনুগত্য দেখানোর জন্য বলত, ইযা যাকাল মুনাফিকুন কালু নাশশাহাদা ইন্না কালা রাসূলুল্লাহ” -“মুনাফিকরা যখন আপনার কাছে আসে, তারা বলে, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, কোন সন্দেহ নেই আপনিই নিশ্চিতভাবে আল্লাহর রাসুল।