কুটির শিল্প কি

কুটির শিল্প কি
Admin March 03, 2025 91
কুটির শিল্প হলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের এমন একটি শিল্প যা সাধারণত এক বা কয়েকটি পরিবারের সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত হয় এবং উৎপাদন কার্যক্রম ছোট আকারে স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে সম্পন্ন হয়। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প ব্যবস্থা, যা দেশের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকা থেকে শুরু করে শহুরে এলাকায়ও কুটির শিল্পের প্রসার ঘটেছে, যা কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়ন এবং দেশীয় সংস্কৃতির সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কুটির শিল্প কি এ বিষয়ে জানতে হলে এই আর্টিকেলটি বিস্তারিত পড়ুন।

কুটির শিল্প বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো এবং জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি মূলত ক্ষুদ্র পরিসরে ঘরোয়া পরিবেশে পরিচালিত হয় এবং স্বল্প পুঁজিতে বৃহত্তর প্রভাব তৈরি করে। কুটির শিল্পের বৈচিত্র্য এবং বহুমুখিতা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সৃজনশীলতা এবং উদ্যোক্তা ক্ষমতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ।

কুটির শিল্প কি

কুটির শিল্প হলো এমন একটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের উৎপাদনমূলক কার্যক্রম, যা পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে পরিচালিত হয় এবং উৎপাদন স্থানীয়ভাবে পাওয়া কাঁচামাল ব্যবহার করে করা হয়। কুটির শিল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর ক্ষুদ্র পরিসর, স্বল্প পুঁজির প্রয়োজন এবং পরিবারের একাধিক প্রজন্মের অংশগ্রহণ।

কুটির শিল্প সাধারণত গ্রামের ছোট ছোট এলাকায় গড়ে ওঠে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের নারীরাই এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। এটি স্থানীয় কাঁচামাল যেমন, কাপড়, মাটি, ধাতু, কাঠ এবং খাদ্যদ্রব্যের ওপর নির্ভর করে পরিচালিত হয়। এ ধরনের শিল্পের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর ছোট আকারে বিশাল সম্ভাবনা—ক্ষুদ্র পুঁজি এবং স্থানীয় জিনিসপত্র ব্যবহার করে কুটির শিল্প বড় আকারে বিকাশ লাভ করতে পারে।

মূল বৈশিষ্ট্যগুলো হল:

পরিবারভিত্তিক কার্যক্রম: কুটির শিল্পের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এটি পরিবারভিত্তিক কার্যক্রম, যেখানে পরিবারের সদস্যরা একসাথে কাজ করে উৎপাদন সম্পন্ন করে।

স্থানীয় কাঁচামাল: উৎপাদন প্রক্রিয়ায় স্থানীয় কাঁচামাল যেমন কাপড়, মাটি, কাঠ, ধাতু প্রভৃতি ব্যবহার করা হয়।

ক্ষুদ্র পরিসর: কুটির শিল্প সাধারণত ছোট পরিসরে পরিচালিত হয় এবং এতে খুব বেশি মূলধনের প্রয়োজন হয় না।

কুটির শিল্পের প্রভাব

আমাদের দেশে শুধু শিল্পক্ষেত্রেযেমনয়, সামাজিক সংবাদ জীবনেও কুটির শিল্পের অবদান অপরিসীম। কুটির শিল্পকে কেন্দ্র করে ফলে গড়ে উঠেছে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। তারা বংশানুক্রমে জীবিকা অর্জনের সর্বসা জন্যে শিল্পের নাম অনুসারে বংশ ও জাতি হিসেবে পরিচিত হয়েছে।
জনত কামার, কুমার, মিস্ত্রি, ছুতার ইত্যাদি জাতির উদ্ভব এভাবে।

কুটির শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে মানুষের প্রব মনের টান চিরন্তন। অনুভূতির স্পর্শ পেতে হলে কুটির শিল্পের দ্বারস্থ হতে হয়। কুটির শিল্পের সমস্যা যেমন রয়েছে, তেমনই সম্ভাবনাও প্রচুর। মূলত কুটির শিল্পকে উজ্জীবিত করার মাধ্যমে দেশীয় শিল্প চাঙ্গা করা যায়। এ শিল্পের মাধ্যমে বেকারদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আবার বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জিত হবে। কুটির শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা সম্ভব।

কুটির শিল্পের উদাহরণ

বাংলাদেশে কিছু কুটির শিল্প আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে এবং বিশ্ববাজারে একটি বিশেষ স্থান দখল করেছে। এই উদাহরণগুলো কুটির শিল্পের গুরুত্ব এবং সফলতার প্রতীক হিসেবে কাজ করছে।

নকশিকাঁথা:
বাংলাদেশের নকশিকাঁথা শুধুমাত্র একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প নয়, এটি আন্তর্জাতিক বাজারেও একটি উল্লেখযোগ্য অবস্থান অর্জন করেছে। স্থানীয় গ্রামীণ নারীরা হাতে তৈরি এই পণ্যটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে আসছেন।

জামদানি শাড়ি:
জামদানি শাড়ি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় এবং ঐতিহ্যবাহী বুননশিল্প। এই শাড়ি স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে খুবই জনপ্রিয়। জামদানি বর্তমানে ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা বাংলাদেশের কুটির শিল্পের জন্য একটি বড় সম্মান।

মিষ্টান্ন প্রক্রিয়াকরণ:
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানীয় মিষ্টান্ন প্রক্রিয়াকরণ শিল্প কুটির শিল্পের অংশ হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়। এই শিল্পে উৎপাদিত পণ্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমাদৃত হয়েছে। যেমন, বগুড়ার দই এবং নোয়াখালীর আচার।

মূলত কুটির শিল্পের লালন ও বর্ধনের জন্য সরকারের বলিষ্ঠ সহযোগিতা প্রয়োজন। যন্ত্রশিল্পের পাশাপাশি কুটির শিল্পের যথার্থ শ্রীবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধিতেই দেশের প্রকৃত শিল্পোন্নয়ন ও বেকার সমস্যার সমাধান সম্ভব। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ এবং ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে কুটির শিল্পের প্রতি জনগণকে আকৃষ্ট ও সচেতন করতে পারলে এ শিল্পের প্রসার অবশ্যম্ভাবী।

কুটির শিল্পের গুরুত্ব

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেশে বেশ কয়েক ধরনের কুটির শিল্প রয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, তাঁত শিল্প, মৃৎ শিল্প, কাঠ শিল্প ইত্যাদি।

ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের গুরুত্ব হচ্ছে;
দৈনন্দিন চাহিদা মেটানো – সারাদেশে শতশত বছর ধরে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা মিটিয়ে আসছে।

কর্মসংস্থান সৃষ্টি – ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের মাধ্যমে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। দারিদ্র্য ও বেকারত্ব কমাতে এ শিল্প ভূমিকা রাখছে।

বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন – কোনো কোনো পণ্য বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়।

সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশ – ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প আমাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতির সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত।