কবিতা কাকে বলে

Admin
November 30, 2024
406
ছন্দোবদ্ধ ভাষায়, অর্থাৎ পদ্যে, যা লিখিত হয় তাকেই আমরা ‘কবিতা’ বলে থাকি। কবিতা, কাব্য বা পদ্য হচ্ছে শব্দ প্রয়োগের ছান্দসিক কিংবা অনিবার্য ভাবার্থের বাক্য বিন্যাস — যা একজন কবির আবেগ-অনুভূতি, উপলব্ধি ও চিন্তা করার সংক্ষিপ্ত রূপ এবং তা অত্যাবশ্যকীয়ভাবে উপমা-উৎপ্রেক্ষা-চিত্রকল্পের সাহায্যে আন্দোলিত সৃষ্টির উদাহরণ।
কবিতা কি?
সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হল কবিতা। পৃথিবীর সব দেশে সব ভাষাতেই কবিতা লেখা হয়। এক কথায় কবিতার কোনো সংজ্ঞা দেওয়া যায় না। কয়েকটি বাক্যে কবিতার বৈশিষ্ট্য সব প্রকাশ করা যায়না । জগতের অধরা মাধুরী কবিতার মধ্যে খানিক প্রকাশ পায়। শ্রেষ্ঠ কবিতা তার বাচ্যার্থ ও লক্ষ্যণার্থকে অতিক্রম করে ব্যঞ্জনার্থে উন্নীত হয় এবং রসময়তা সষ্টি করে। কিন্তু কাব্য রস অপার্থিব । কবিতা অলৌকিক। কবিতা লোকোত্তর আনন্দ দান করে।
সাধারণ ভাবে কবিতা হল কবির উপলব্ধিজাত এক বিশেষ শিল্পভাবনা। কবিতা হল এক ধরনের সৃষ্টি । কবির মনে বা জগতে – যা আগে ভাবের মধ্যে ছিল,বস্তু হিসেবে ছিল না, কবি তাকেই রচনা প্রতিভার গুণে কবিতা হিসেবে নতুন রূপ দেন। কবিতা হল কবির সৌন্দর্য্যভাবনার বহিঃপ্রকাশ বা কবির বাস্তবতাবোধের উন্মোচন ঘটায়। পাশা পাশি কবিতা হল কবি মনে স্থিত ভাব ও ভা্লোবাসার জাগরণ। কবিতা হল এক ধরনের সদর্থক জীবনভাবনা – যা মানুষকে সতত প্রেরণা দেয়। কবিতা মানুষকে ভালবাসতে শেখায়, প্রতিবাদী হতে সাহায্য করে। কবিতা মানুষকে নির্মল আনন্দ দান করে।কবিতা কবির শিক্ষা, সংস্কৃতি, চেতনার পরিচয় প্রদান করে।কবিতা পাঠে মন-প্রাণ সমৃদ্ধ হয়।কবিতা রচনা করলে প্রজননের স্বাদ পাওয়া যায়।
কবিতা কি বা কাকে বলে :-
কবিতার সংজ্ঞায় ST Coleridge বলেন, Best words in best order. অর্থাৎ অপরিহার্য শব্দের অবশ্যম্ভাবী বাণী বিন্যাসকে কবিতা বলা যায়। নানাভাবে মনের ভাব কল্পনা যখন অনুভূতিরঞ্জিত, যথাবিহীত শব্দসম্ভারে বাস্তব সুষমামণ্ডিত ছন্দময়রূপ লাভ করে তখন তা কবিতা হয়ে ওঠে। ওয়ার্ডসওয়ার্থ কবিতা কাকে বলে এসম্পর্কে বলেছেন -
Poetry is the spontaneous overflow of powerful feelings; অর্থাৎ কবিতা দুর্নিবার আবেগের স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ।
কবিতার প্রকারভেদ :-
কবিতাকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন -
১ - মন্ময় কবিতা এবং
২ - তন্ময় কবিতা
মন্ময় কবিতা কি বা কাকে বলে :-
অলংকার শাস্ত্রে কবিকে প্রজাপতি ব্রহ্মার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। প্রজাপতি ব্রহ্মা যেমন বিশ্বজগৎকে আপন কল্পনা দিয়ে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন, তেমনি কবিগণ শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে এক বিচিত্র মায়ার জগৎ সৃষ্টি করেন।
কবি যখন একান্ত ব্যক্তিগত অনুভূতি, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, ভাবনা, চিন্তা তার কাব্যে সামগ্রিক রূপে গ্রহণ করে আত্মপ্রকাশ করেন তখন সেই অমর সৃষ্টিকে মন্ময় কবিতা বলে।
মন্ময় কবিতা ব্যক্তিনিষ্ঠ। কবির অন্তরের অনুভূতির দিকগুলো মন্ময় কবিতায় ধরা পড়ে। কাব্যতত্ত্ব, সাহিত্য, দর্শন, শিল্পকলা এবং রস সৌন্দর্যের বিচারে মন্ময় কবিতাই শ্রেষ্ঠ।
মন্ময় কবিতার শ্রেনীবিভাগ :-
মন্ময় কবিতা প্রধানত দুই প্রকার। যথা-
১ - গীতি কবিতা ও
২ - সনেট।
তন্ময় কবিতা কাকে বলে :-
আধুনিক গীতি কবিতার অন্যতম কবিতারূপ তন্ময় কবিতা। জগৎ-সংসার বা বস্তুবিশ্বের কোনো বিষয় যখন কবি হৃদয়ে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে কবির অনুভূতিতে আলোড়ন সৃষ্টি করে তখনই বিষয়গত গীতিকবিতার সৃষ্টি।
কবিতার বৈশিষ্ট্য :-
জীবনবোধ ও শৈলিমুখরতা- এই দুটি প্রভায়ের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন দিকের যথাযথ উপস্থাপনই কবিতার মৌলিক বৈশিষ্ট্য। এই পরিপ্রেক্ষিতে কবিতার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত নিম্নরূপ সিদ্ধান্তসমূহও বিবেচ্য-
১ - কবিতায় জীবনবোধের সুতীব্র প্রকাশ লক্ষ করা যায়।
২ - আঙ্গিক ও প্রকরণ নিয়ে কবিদের নিত্য-নতুন ভাবনা কবিতায় দৃশ্যমান থাকে। কবিদের এই প্রচেষ্টাই কবিতাকে ক্রমউৎকৃষ্টতা দান করে।
৩ - কবিতায় অবচেতনের চেতন প্রয়োগ প্রাধান্য পায়। অর্থাৎ কবিমনের অবচেতন অংশে প্রাধান্যবিস্তারকারী চিন্তা, অনুভূতি ও ইচ্ছাগুলো শোভন রূপে কবিতায় প্রকাশ করা হয়।
৪ - কখনও কখনও কবিতায় গভীরতাশ্রয়ী ভাব লক্ষ করা যায়। তখন শব্দের সুনির্দিষ্ট অর্থসীমা অতিক্রম করে কবিতা প্লিজমসদৃশ হয়ে ওঠে। পাঠকের কাছে তখন একই কবিতায় ভিন্ন ভিন্ন তাৎপর্য ধরা পরে।
৫ - কবিতা অলংকৃত। অষ্টপ্রহরই সে সুসজ্জিত থাকে। বিভিন্ন প্রকার হদ, অলংকার, ধ্বনিব্যন্দ্রনা, ভাব, রস কবিতাকে সমৃদ্ধ ও সৌন্দর্যমণ্ডিত করে রাখে।