কোনো মৃত মুসলমানকে কবর দেওয়ার পূর্বে অনুষ্ঠিত বিশেষ প্রার্থনাকে জানাজা বলা হয়। সাধারণত এটি জানাজার নামাজ নামে অভিহিত হয়। মুসলমান অর্থাৎ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য এটি ফরজে কিফায়া বা সমাজের জন্য আবশ্যকীয় দায়িত্ব। অর্থাৎ কোনো মুসলমানের মৃত্যু হলে মুসলমান সমাজের পক্ষ থেকে অবশ্যই জানাজার নামাজ পড়তে হবে। তবে কোনো এলাকা বা গোত্রের পক্ষ থেকে একজন আদায় করলে সকলের পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যায়।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে মুসলিম মৃত ব্যক্তির জানাজার নামাজে আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করে নাই, এমন ৪০ জন লোক নামাজ আদায় করবে, তবে মৃত ব্যক্তির ব্যাপারে তাদের সুপারিশ আল্লাহ তাআলা কবুল করবেন।’ (মুসলিম)

জানাজার জন্য লাশ কিবলার দিকে রাখতে হবে। লাশ যদি পুরুষ হয়, তবে মাথার পাশ বরাবর ইমাম সাহেব দাঁড়াবেন। আর মহিলা হলে মধ্যবর্তী স্থানে দাঁড়াবেন, এটাই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত।

জানাজার নামাজ একজন ইমামের নেতৃত্বে জামাতের সাথে বা দলবদ্ধভাবে অনুষ্ঠিত হয়। অংশগ্রহণকারীরা বিজোড় সংখ্যক কাতারে বা সারিতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে এই নামাজ আদায় করেন। এটি চার তাকবিরের নামাজ। দাঁড়িয়ে এই নামাজ আদায় করতে হয় এবং সালাম ফেরানোর মধ্য দিয়ে এই নামাজ শেষ হয়। সাধারণত জানাজার নামাজের শেষে মুনাজাত বা দোয়া করতে হয় না কারণ ইসলামের প্রতিষ্ঠিত বিধান অনুযায়ী এই নামাজের মাধ্যমেই মৃতের জন্য দোয়া করা হয়। জানাজা শেষে মৃত ব্যক্তিকে অবিলম্বে গোরস্থানে নিয়ে যেতে হয় এবং ইসলামী রীতিতে কবর তৈরি করে মাটিতে দাফন করতে হয়।

চার তাকবিরের সঙ্গে জানাজার নামাজ আদায় করতে হয়। ঈদের নামাজে তাকবীর দেওয়ার সময় হাত তুলতে হয়, কিন্তু জানাজার নামাজে তাকবীর দেওয়ার সময় হাত তোলার প্রয়োজন পড়ে না।

নিয়তের বাংলা উচ্চারণ: “নাওয়াইতু আন উয়াদ্দিয়া লিল্লাহি তাআলা আরবা'আ তাকবিরা'তি ছালাতিল জানাযাতি ফারজুল কিফায়াহ্‌ আচ্ছানা'উ লিল্লাহি তাআলা ওয়াচ্ছালা'তু আলান-নাবিয়্যি ওয়া'দ-দু'আ'উ লিহাযাল মাইয়্যিতি/লিহাযিহিল মাইয়্যিতি এক্‌তেদায়িতু বিহাযাল ইমাম মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারিফাতি। আল্লাহু আকবার।”

এখানে নিয়তে ‘লিহাযাল মাইয়্যিতি’ পুরুষ/ছেলে লাশ হলে পড়তে হবে, আর লাশ নারী/মেয়ে হলে ‘লিহাযিহিল মাইয়্যিতি’ বলতে হবে।

নিয়ত আরবিতে করতে না পারলে বাংলায় করলেও চলবে, ‘আমি চার তাকবীরের সহিত ফরজে কিফায়া জানাজার নামাজ কিবলামুখী হয়ে ইমামের পিছনে দাঁড়িয়ে মৃত ব্যক্তির (পুরুষ/মহিলার) জন্য দোয়া করার উদ্দেশ্যে আদায় করছি। আল্লাহু আকবার।’

জানাজার নামাজে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও রাসুলের উপর দরূদ পাঠ করা হয়। বাংলায় নিয়ত করলে তা বাংলায় বলে অথবা মনে মনে নিয়ত করলেও চলবে।

নিয়তে তাকবীরে তাহরিমা অর্থাৎ, আল্লাহু আকবার বলার পর হাত তুলে তারপর অন্যান্য নামাজের মতো হাত বেঁধে নিতে হবে। হাত বেঁধে সানা পড়তে হবে।

সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তায়ালা জাদ্দুকা, ওয়া জাল্লা ছানাউকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।

সানা পড়ার পরে তাকবীর বলে দরুদ শরীফ পড়তে হবে যেটা সাধারণ নামাজে তাশাহুদের পর পড়া হয়।

আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন। কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিম। ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন। কামা বারাকতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিম। ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।

দরুদ শরিফ পড়ার পর তৃতীয় তাকবীর আদায় করে জানাজার দোয়া পড়তে হয়।

আল্লাহুম্মাগফিরলি হাইয়্যেনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িইবিনা ও ছাগীরিনা ও কাবীরিনা ও যাকারিনা ও উনছানা। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলামী ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ ফাহু আলাল ঈমান বেরাহমাতিকা ইয়া আর হামার রাহীমিন।

তবে নাবালক ছেলের ক্ষেত্রে জানাযার দোয়া পড়তে হবে,

আল্লাহুম্মাজ আল হুলানা ফারতাও ওয়াজ আল হুলানা আজরাও ওয়া যুখরাঁও ওয়াজ আলহুলানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফায়ান।