জানাজার নামাজের দোয়া

জানাজার নামাজের দোয়া
Admin October 19, 2024 369
জানাজা। আরবি শব্দ। অর্থ মৃতদেহ বা লাশ। আর জানাজার নামাজ অর্থ মৃতদেহের নামাজ। এজন্য কোনো মুসলমান মারা গেলে তার মাগফেরাতের জন্য তার মৃতদেহ সামনে নিয়ে বিশেষ নিয়মে যে দোয়া করা হয়, তার নাম জানাজার নামাজ। এই নামাজ মহল্লার দু-একজন আদায় করলেই আদায় হয়ে যায়। তবে কেউই যদি আদায় না করে, তাহলে সবাই গোনাহগার হবে।

জানাজার নামাজের দোয়া

আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ ও মিশকাত শরিফের একটি হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, যখন তোমরা জানাজার নামাজ আদায় করবে, তখন মাইয়াতের জন্য খালেস অন্তরে দোয়া করবে।’ সুতরাং মৃত ব্যক্তি ভালোমন্দ যেমনই হোক না কেনো, তার জন্য দোয়া করতে হবে।
প্রাপ্তবয়স্কদের জানাজার দোয়া

মৃত ব্যক্তি প্রাপ্তবয়স্ক হলে এই দোয়া পড়তে হয়—

اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِ نَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَاُنْثَنَا اَللّٰهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَاَحْيِهِ عَلٰى الْاِسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلٰى الْاِيْمَانِ উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগ ফিরলি হায়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িবিনা ওয়া সাগিরিনা ওয়া কাবিরিনা ওয়া জাকারিনা ওয়া উনছানা। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াহতাহু মিন্না, ফাআহয়িহি আলাল ইসলামি ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহ আলাল ইমান। অর্থ : ‘হে আল্লাহ, আমাদের জীবিত ও মৃত, উপস্থিত ও অনুপস্থিত, ছোট ও বড় এবং পুরুষ ও নারী সবাইকে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের মধ্য থেকে যাদের জীবিত রেখেছেন ইসলামের ওপর জীবিত রাখুন আর যাদের মৃত্যুদান করেছেন তাদের ঈমানের সঙ্গেই মৃত্যুদান করুন।’

অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুর জানাজার দোয়া

আর জানাজা অপ্রাপ্তবয়স্ক কারও হলে নিচের দোয়াটি পড়তে হবে। যেমন –

اَللّٰهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرَطًا وَّاجْعَلْهُ لَنَا اَجْرً ا وَّاجْعَلْهُ لَنَا شَافِعًا وَّمُشَفِّعًا

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাজ আলহু লানা ফারাতাও ওয়াজ আলহু লানা আজরাও ওয়াজ আলহু লানা শাফিআও ওয়া মুশাফফাআ। অর্থ : ‘হে আল্লাহ, আপনি তাকে আমাদের জন্য অগ্রবর্তী হিসেবে কবুল করুন, তাকে আমাদের জন্য প্রতিদানস্বরূপ করুন এবং তাকে আমাদের জন্য সুপারিশকারী বানান, যার সুপারিশ কবুল করা হবে।’তবে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মরদেহ মেয়ের হলে ‘হু’(هُ) স্থানে ‘হা’(هَا) বলতে হবে।
জানাজা নামাজের আগে বক্তৃতার রীতি

জানাজা সামনে রেখে ভাষণ দেওয়ার প্রচলন দিন দিন বাড়ছে। প্রায়ই দেখা যায়, সমাজের গুরুত্বপূর্ণ কারও লাশ সামনে রেখে দীর্ঘ সময় ধরে নানা স্তরের লোকজন পালা করে বক্তৃতা করে যাচ্ছেন। অথচ আমরা ভুলেই যাই, কারও মৃত্যু হলে গোসল দিয়ে কাফন পরিয়ে দ্রুত জানাজার নামাজ পড়ে দাফন করতে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন।

একাধিক হাদিসে মৃত্যুর পর থেকে দাফন পর্যন্ত সব কাজ দ্রুত আঞ্জাম দেওয়ার কথা বলা হয়েছে এবং বিলম্ব করতে নিষেধ করা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, আমি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তোমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তোমরা তাকে আটকে রেখো না। তাকে দ্রুত দাফন করে দিয়ো। -আল মুজামুল কাবির, তাবারানি : ১৩৬১৩

লাশ সামনে রেখে নবীজি (সা.) কী বলতেন?

নবী করিম (সা.) এর অভ্যাস ছিল কোনো জানাজা সামনে এলে জিজ্ঞেস করতেন তার ঋণ রয়েছে কি? যদি জবাব হতো ঋণ নেই। তাহলে জানাজা পড়িয়ে দিতেন। অন্যথায় পড়াতেন না। কোনো এক সাহাবির লাশ সামনে রেখে নবী করিম (সা.) প্রশ্ন করেছিলেন, তার কোনো ঋণ আছে কি না? জবাবে সাহাবিরা বলেছিলেন ঋণ রয়েছে। নবী করিম (সা.) বললেন, তোমরা তার জানাজার নামাজ পড়ে নাও, আমি তার ঋণ থাকাবস্থায় জানাজার নামাজ পড়াব না। সাহাবিরা বললেন, আমরা ঋণের জিম্মাদার হয়ে গেলাম। তখন নবী করিম (সা.) জানাজার নামাজ পড়ালেন। -সহিহ বোখারি : ২২৮৯

জানাজা পড়ানোর যোগ্যতা

জানাজা পড়ানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যোগ্য কে? মৃতের আত্মীয়স্বজন নাকি এলাকার ইমাম?

মৃতব্যক্তির জানাজায় কারা উপস্থিত থাকছেন সেটা লক্ষণীয়। মৃতের আত্মীয়স্বজন ও এলাকার ইমাম– উভয়ে-ই যদি উপস্থিত থাকেন আর ইমাম ইলম ও আমলে মৃতের আত্মীয়ের চেয়ে বেশি যোগ্য হন, তাহলে জানাজা পড়ানোর বেশি যোগ্য ওই ইমাম। প্রখ্যাত তাবেয়ি ইবরাহিম আন-নাখায়ি (রহ.) বলেন, ‘জানাজা পড়াবেন মসজিদের ইমামরা। তোমরা তাদের পেছনে ফরজ নামাজ পড়ত রাজি। কিন্তু জানাজা পড়তে রাজি না (এটা কেমন কথা)! (কিতাবুল আসার, হাদিস : ২৩৭)

অন্য বর্ণনায় তাবেয়ি সালেম (রহ.), তাউস (রহ.), কায়েস (রহ.), মুজাহিদ (রহ.) ও আতা (রহ.) প্রমুখ আলেমরা ইমাম সাহেবকে জানাজা পড়ানোর জন্য আগে বাড়িয়ে দিতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ১১৪৩২)

পক্ষান্তরে মৃতের আত্মীয়রা যদি এলাকার ইমামের চেয়ে বেশি যোগ্য ও বড় আলেম হন, তাহলে অবশ্যই তারা বেশি হকদার।

তথ্যসূত্র: আল-বাহরুর রায়েক : ২/১৮০; আদ্দুররুল মুখতার : ২/২১৯; কিতাবুল আছল : ১/৩৪৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া : ১/২২২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/১৬৩।

জুতা পায়ে জানাজার নামাজ

জুতায় নাপাক লেগে না থাকলে জানাজার নামাজের সময় জুতা পায়ে রাখতে অথবা জুতার ওপর দাঁড়াতে অসুবিধা নেই। তবে জুতা পরা অবস্থায় থাকলে দাঁড়ানোর স্থানও পবিত্র হওয়া জরুরি। আর জুতার নিচের অংশে নাপাকি থাকলে পা থেকে খুলে জুতার ওপর দাঁড়াবেন। এ ক্ষেত্রে জুতা পরে জানাজার নামাজ পড়া যাবে না।

সূত্র : আল-মুহিতুল বুরহানি : ২/২০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ২/৩১; আল-বাহরুর রায়িক : ২/১৭৯; হাশিয়াতুত তাহতাবি আলাল মারাকি, পৃষ্ঠা ৩১৯; রদ্দুল মুহতার : ১/৪০২)