ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নানা উপকারিতা রয়েছে। কিন্তু সকালে খালি পেটে এটি খাওয়ার অভ্যাসে এটি আরও বেশি কার্যকরী হওয়ার সুযোগ পায় শরীরে। যা কয়েকটি রোগের প্রতিরোধী হিসেবে শরীরের রক্ষা কবচ তৈরি করে। কিন্তু খাওয়ার আগে জানতে হবে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার সঠিক নিয়ম। খাওয়ার আগে জানতে হবে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার সঠিক নিয়ম।
পুষ্টিবিদরা বলছেন, ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নানা উপকারিতা রয়েছে। কিন্তু সকালে খালি পেটে এটি খাওয়ার অভ্যাসে এটি আরও বেশি কার্যকরী হওয়ার সুযোগ পায় শরীরে। যা কয়েকটি রোগের প্রতিরোধী হিসেবে শরীরের রক্ষা কবচ তৈরি করে। আসুন, সেগুলো সম্পর্কে একে একে জেনে নিই
ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম
প্রতিদিন ইসবগুল খাওয়ার বিষয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, দিনে এক থেকে দুই চা চামচ পর্যন্ত ইসবগুল খাওয়া যেতে পারে।আপনাকে ২৪০ মিলিলিটার পানি, অর্থাৎ বড় এক গ্লাস পানির মধ্যে খুব ভালো করে এটি মিলিয়ে এটি খেতে হয়।ইসবগুল একধরনের ডায়েটারি ফাইবার, যার কিছু পানিতে দ্রবীভূত হয়, কিছু হয় না। অন্ত্রের ভেতরে থাকাকালীন ইসবগুলের ভুসি প্রচুর পরিমাণ পানি শোষণ করে, কোনো কিছুর সঙ্গে বিক্রিয়া করে বিষ তৈরি করে না এবং অন্ত্রের দেয়াল পিচ্ছিল করে দেয়।যেহেতু এটা কার্যকারিতার জন্য অন্ত্র থেকে পানি শোষণ করে, তাই দুই চা-চামচ ভুসি, পানি বা দুধে গুলিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই খেয়ে ফেলা ভালো। দীর্ঘক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে এটা বাইরে থেকেই পানি শোষণ করে নেবে, অতএব কার্যকারিতাও কমে যাবে।ওজন কমানোর জন্য ২ চামচ ইসবগুল ২৪০ মিলিলিটার পানি ও ১-২ চামচ লেবুর রস দিয়ে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেতে হবে। এর ফলে বেশ খানিকক্ষণ পেট ভরা থাকে। ইসবগুল খাদ্যনালি পরিষ্কার করে ও শরীরে চর্বি কমায়।
জেনে নিন ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা ও সঠিক নিয়ম সম্পর্কে-
১. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পাইলসের সৃষ্টি হয়। পাইলস রোগীদের সারা বছর ইসবগুলের শরবত খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। কারণ এটি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ৫ থেকে ১০ গ্রাম ইসবগুল এক কাপ হালকা ঠান্ডা বা হালকা গরম পানিতে আধঘণ্টা ভিজিয়ে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিংবা সকালে খালি পেটে খেয়ে নিলে উপকার পাওয়া যায়।
২. উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস: উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ইসবগুলের শরবত খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ইসবগুলের শরবত দারুণ পথ্য হিসেবে বিবেচিত।প্রাকৃতিক ভাবে দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় খাদ্যআঁশে ভরপুর ইসবগুলের ভুষি যারা পায়ুপথে ফাটল এবং পাইলসের মত বেদনাদায়ক সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য উত্তম। এটা শুধু পেট পরিষ্কার করতেই সাহায্য করেনা মলকে নরম করতে সাহায্য করে অন্ত্রের পানিকে শোষণ করার মাধ্যমে এবং ব্যাথামুক্ত অবস্থায় তা দেহ থেকে বের হতেও সাহায্য করে। এটি প্রদাহের ক্ষত সারাতেও সাহায্য করে। ২ চামচ ইসবগুল কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে ঘুমাতে যাবার আগে পান করুন।
৩. ডায়রিয়া উপশমে: দিনে দুবার ৭ থেকে ২০ গ্রাম ইসবগুলের ভুসি খেলে ডায়রিয়া উপশম হয়। রোগীকে ইসবগুলের শরবত খাওয়ালে মিলবে উপকার। ডায়রিয়া থেকে সুরক্ষার জন্য স্বাস্থ্যসচেতন ব্যক্তিরা সবসময় ইসবগুলের শরবত খান।যদিও শুনলে অবাক লাগে, ইসবগুল একই সাথে ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য দুটিই প্রতিরোধ করতে সক্ষম। ডায়রিয়া প্রতিরোধে ইসবগুল দইয়ের সাথে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। কারণ দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক পাকস্থলীর ইনফেকশন সারায় এবং ইসবগুল তরল মলকে শক্ত করতে সাহায্য করে খুব কম সময়ের মাঝে ডায়রিয়া ভালো করতে পারে। ডায়রিয়া প্রতিরোধে ২ চামচ ইসবগুল ৩ চামচ টাটকা দইয়ের সাথে মিশিয়ে খাবার পর খেতে হবে। এভাবে দিনে ২ বার খেলে বেশ কার্যকরী ফলাফল পাওয়া সম্ভব।
৪. হজমে সাহায্য করে: হজম প্রক্রিয়ায় অস্বাভাবিকতা দূর করতেও ইসবগুলের ভুসি দারুণ কাজ করে। ভাজাপোড়া খাওয়ার কারণে হজমের সমস্যা দেখা দিলেও ইসবগুলের শরবত কাজে আসে। পাকস্থলী পরিষ্কার রাখতেও রোজ সকালে খালি পেটে এটি খেতে পারেন।
৫. আমাশয় থেকে রক্ষা করে: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসবগুল আমাশয় রোগের জীবাণু নষ্ট করতে পারে না। তবে আমাশয়ের জীবাণু পেট থেকে বের করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে।
সতর্কতা
ইসবগুল কেনার সময় দেখে নিন
ইসবগুলের ভুষি আমাদের দেশে বাজার থেকে শুরু করে সুপার মার্কেট সব জায়গাতেই বেশ সহজলভ্য। তবে কেনার আগে কিছু ব্যাপার অবশ্যই খেয়াল রাখবেন।
প্যাকেটজাত ইসবগুল কিনুন
কখনোই খোলা ইসবগুল কিনবেন না সেগুলো নষ্ট ও ভেজাল থাকতে পারে যার ফলে এটি খেয়ে হয়তো ভালো ফলাফল নাও পেতে পারেন। আজকাল প্যাকেটজাত বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম স্বাদের ইসবগুলের ভুষিপাওয়া যায়। তবে ভালো ফলাফল পেতে গেলে এসব কৃত্রিম স্বাদের ইসবগুল না খেয়ে সাধারণ ইসবগুল খান।বিভিন্ন দোকানে সাধারন ইসবগুলে কৃত্রিম স্বাদ ও রঙ যোগ করে বিশেষ কার্যকারিতার কথা বলে তা বিক্রয় করা হয় যা মূলত স্বাস্থ্যের জন্য খুবই খারাপ। তাই সাধারণ ইসবগুলের ভুষি খাওয়াই সবচেয়ে উত্তম।
ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা
ইসুবগুলের ভুসি আমাদের সবার কাছেই পরিচিত। এর উপকারিতাও অনেক। উপকারী এই খাবার আমরা খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে খেতে চাই না। অথচ এটি আমাদের সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে বেশ ভালোভাবে কাজ করে। ছোট-বড় অনেক অসুখেরই সমাধান মেলে নিয়মিত ইসুবগুল খেলে। এর উপকারিতার কথা মাথায় রাখলে আপনিও নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করবেন।
ইসবগুলের পুষ্টিগুণ
ইসুবগুলে রয়েছে অনেকগুলো পুষ্টি উপাদান। সেসব উপাদান শরীরের বিভিন্ন উপকার করে থাকে। ১ টেবিল চামচ ইসবগুলে থাকে ৫৩% ক্যালোরি, ০% ফ্যাট, ১৫ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ১৫ গ্রাম শর্করা, ৩০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৯ মিলিগ্রাম আয়রন।
প্রতিদিন কতটুকু ইসুবগুলের ভুসি খেতে পারবেন
বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই ইসুবগুল খাওয়ার কারণে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হতে দেখা যায় না। ইসুবগুল প্রতিদিন ১ টেবিল চামচ করে ৩ বার খেতে পারবেন। তবে এটি অবশ্যই পানিতে গুলিয়ে খেতে হবে। সেইসঙ্গে সারাদিন পর্যাপ্ত পানি পানও করতে হবে। এবার তবে জেনে নিন ইসুবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা
প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করে
প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সমস্যা থাকে অনেকের। তাদের ক্ষেত্রে উপকারী একটি খাবার হলো ইসুবগুলের ভুসি। এটি নিয়মিত খেলে কমবে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সমস্যা। এই সমস্যা দূর করতে আখের গুড়ের সঙ্গে ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন। এটি সকাল ও বিকালে খেতে পারেন। এভাবে এক সপ্তাহ খেলে উপকার পাবেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
কোষ্ঠকাঠিন্য এক কঠিন অসুখ। কারণ এই সমস্যাকে সাধারণ মনে হলেও আসলে তা নয়। কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে শরীরের ভেতরের স্বাভাবিক নানা ক্রিয়া বাঁধাগ্রস্ত হয়। ফলে তার বিরূপ প্রভাব পড়ে পুরো শরীরেই। এই সমস্যার সমাধানে খেতে পারেন ইসুবগুলের ভুসি। এটি প্রথমে পাকস্থলীতে যায় এরপর ফুলে ভেতরের সব বর্জ্য বের করে দিতে সাহায্য করে। প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস হালকা গরম দুধের সঙ্গে দুই চা চামচ ইসুবগুলের ভুসি গুলিয়ে খান। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে।
ডায়রিয়া প্রতিরোধ করে
ডায়রিয়া প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে ইসুবগুল। এটি দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে ডায়রিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। দইয়ে থাকে প্রোবায়োটিক যা পাকস্থলীর ইনফেকশন সারাতে কাজ করে। এদিকে ইসবগুল তরল মলকে শক্ত করতে সাহায্য করে। ফলে ডায়রিয়া দ্রুতই সেরে ওঠে। ডায়রিয়া হলে দিনে দুইবার ভরা পেটে তিন টেবিল চামচ দই ও দুই চা চামচ ইসুবগুলের ভুসি মিশিয়ে খাবেন। ইসুবগুলের ভুসি খেলে তা আমাশয় থেকেও আপনাকে মুক্তি দেবে।
হার্ট ভালো রাখে
হার্ট ভালো রাখার জন্য নিয়মিত ইসুবগুলের ভুসি খাওয়ার অভ্যাস করুন। কারণ এতে থাকা খাদ্যআঁশ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগ থেকে দূরে রাখে। এটি পাকস্থলীর দেয়ালে এক ধরনের পাতলা স্তর সৃষ্টি করে। যা খাদ্য হতে কোলেস্টেরল শোষণে বাধা দেয়; বিশেষ করে রক্তের সিরাম কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। এছাড়াও এটি রক্তের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল সরিয়ে দিতে কাজ করে। ফলে ধমনীতে ব্লক সৃষ্টির ভয় থাকে না।