গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ

গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ
Admin February 19, 2024 64

গর্ভবতী হয়ে ওঠা হল বিশ্বের বৃহত্তম আনন্দগুলির মধ্যে একটি অন্যতম আনন্দ বিশেষ।আমরা এখানে এর বিভিন্ন লক্ষণগুলি,সতর্কতাগুলি এবং পরিচর্যার পরামর্শগুলি সম্পর্কে আলোচনা করব যা আপনার গর্ভাবস্থার প্রথম মাস জুড়ে আপনাকে বয়ে চলার জন্য কার্যকর ভাবে সহায়তা করবে।

গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়গুলিতে আপনি যে অভিজ্ঞতা লাভ করে থাকেন

আমাদের দৈহিক গঠণতন্ত্র নিখুঁত এবং এর মধ্যে যা কিছুই পরিবর্তনগুলি ঘটে থাকে সেগুলি তাৎক্ষণিকভাবে অনুভব করা যেতে পারে।এই একই জিনিস গর্ভাবস্থার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যার অর্থ হল,আপনি গর্ভবতী হওয়ার সাথে সাথেই আপনার দেহও এই একইরকম ইঙ্গিতগুলি আপনাকে দিয়ে থাকে।এই লক্ষণগুলি হালকা ধরনের হতে পারে, যেমন স্তন বেদনা,অবসাদ,ক্লান্তি এবং অসুস্থতাবোধ করা।তবে সকল মহিলার মধ্যেই হয়ত তাদের গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়গুলিতে অবিশ্যম্ভাবীরূপে এই সকল উপসর্গগুলি দেখা দিতে নাও পারে।অধিকাংশ মহিলাদের ক্ষেত্রেই,গর্ভাবস্থার প্রথম মাসের মধ্যে মাসিক বাদ যাওয়া তাদের গর্ভবতী হয়ে ওঠার প্রথম লক্ষণ হয়ে থাকতে পারে।

প্রথম মাসে গর্ভাবস্থার লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি

যেহেতু আপনি আপনার গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে প্রবেশ করেছেন,আপনি হয়ত গর্ভাবস্থার বহু লক্ষণ এবং উপসর্গগুলিকে অনুভব করে থাকবেন।যদিও এগুলি প্রাক–মাসিকের লক্ষণগুলির মত আরও প্রদর্শিত হতে পারে এবং আপনাকে বিভ্রান্ত করে তুলতে পারে।
এখানে কিছু লক্ষণ দেওয়া হল যেগুলি আপনাকে বুঝতে সহায়তা করবে যে,গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে কি হয়ে থাকেঃ

১. মাসিক হয় নাঃ

মাসিক বাদ যাওয়া হল গর্ভাবস্থারে একটি বৃহৎ সংকেত।আপনি গর্ভধারণ করার সাথে সাথে,আপনার দেহ প্রোজেস্টেরণ হরমোন নিঃসরণ শুরু করে দেয়।আপনার মাসিক বন্ধ হওয়ার জন্য আবার এই হরমোনগুলিও দায়ী।

২. সামাণ্য রক্তপাত বা দাগায়িতকরণঃ

নিষিক্তকরণ প্রক্রিয়াটির সময় যখন ডিম্বাণুটি নিজেকে জরায়ুতে সংলগ্ন করে,সেই সময় সামাণ্য পরিমাণে রক্তপাত বা হালকা দাগ বা সংকচোন বা টান অনুভূত হয়ে থাকতে পারে।বিশেষত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি হয়ত লক্ষ্য করা যেতে পারে যখন আপনি আপনার যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করে ধোন বা মোছেন।যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে সামাণ্য রক্তপাত বা দাগায়িতকরণ স্বাভাবিক বলেই বিবেচিত হয়ে থাকে,তবে আপনি যদি রক্ত ক্ষরণে বা দাগায়িতকরণে কোনওরকম অস্বাভাবিক পরিমাণ লক্ষ্য করে থাকেন,সেক্ষেত্রে আপনার তৎক্ষণাৎ চিকিৎসাগত সহায়তা নেওয়া প্রয়োজন।

৩. স্তনের নমনীয়তাঃ

আপনার স্তনে স্পর্শ করলেই তাতে ব্যথা অথবা নমনীয়তা অনুভূত হতে পারে।এটিতে আপনার প্রাক মাসিক লক্ষণগুলির সহিত বেশ মিল ঝুল রয়েছে।আপনার অ্যারিওলাটি হয়ত আরও গাঢ় হয়ে উঠতে পারে এবং আপনি আবার এমনকি আপনার স্তনের উপর হয়ত শিরাগুলিকেও লক্ষ্য করে থাকতে পারেন।

৪. মেজাজের পরিবর্তন হতে থাকেঃ

আপনার শরীরে হরমোনের মূখ্য পরিবর্তনগুলি হতে থাকার কারণে,আপনি হয়ত আপনার মেজাজের দ্রুত পরিবর্তনগুলিকে অনুভব করে থাকতে পারেন।এক মুহূর্তে আপনি হয়ত খুশ মেজাজে থেকে মনে প্রফুল্লতা অনুভব করে থাকতে পারেন,আবার ঠিক তার পরমুহূর্তেই হয়ত বা আবার আপনার মনে বিষাদ আর হতাশাবোধের ছায়া নেমে আসতে পারে।আপনি হয়ত অকারণেই নিজের মধ্যে একটা চাঞ্চল্য লক্ষ্য করতে পারেন।এই সকল কিছুই হল গর্ভাবস্থার খুব সাধারণ লক্ষণ।

৫. বারংবার শৌচাগারে গমনঃ

পরিবর্তিত হরমোনগুলি শ্রোণী অঞ্চলের চারপাশে আরও রক্ত ​​প্রবাহ পরিচালিত করে। এটি ভ্রূণের সর্বোত্তম বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য জরায়ু আস্তরণকে ঘন করতে সহায়তা করে।শরীরের বর্ধিত তরলগুলির সামাল দিতে কিডনির আরও বেশি কাজ করা প্রয়োজন।এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি আপনার জরায়ুটিকে হয়ত পূর্ণ বোধ করাতে পারে এবং যার ফলে ঘন ঘন শৌচালয়ে গমন করতে হতে পারে।

৬. ক্লান্তিবোধঃ

গর্ভাবস্থায়া আপনার দেহের ভিতরে অনেক কিছুই হয়ে থাকে।অতএব, আপনি হয়ত আপনার নিজের মধ্যে শক্তির অভাব বোধ করতে পারেন এবং স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ক্লান্তি অনুভব করতে পারেন।এই ক্লান্তিবোধ হওয়া এবং পরিশ্রান্ত হয়ে ওঠা আবার হয়ত বা আপনাকে নিদ্রাহীনতার দিকেও পরিচালিত করে থাকতে পারে।

৭. খাদ্যাভ্যাসগুলিতে পরিবর্তনঃ

বিশেষ কিছু খাদ্যের প্রতি আপনার আসক্তি হয়ত বেড়ে উঠতে পারে,এবং এর বিপরীতে আবার,কিছু খাদ্যের উপর আপনার বিতৃষ্ণাও জেগে উঠতে পারে।আপনার সবচেয়ে পছন্দের খাদ্যটির প্রতি বিরাগভাজন হয়ে ওঠা এবং আপনার সবচেয়ে অপছন্দের খাদ্যটির প্রতি তীব্র আসক্তি দেখা দেওয়া এই সময় আপনার ক্ষেত্রে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।

৮. প্রাতঃকালীন অসুস্থতাঃ

অধিকাংশ গর্ভবতী মহিলারাই তাদের গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়গুলিতে হয়ত গা গুলানো বমি বমি ভাব অথবা বমি করার অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে।এটি সম্ভবত গর্ভধারণের তিন সপ্তাহের মধ্যে অনুভূত হয়ে থাকতে পারে।কিছু মহিলা যখন প্রায় সারাটা দিন জুড়েই গা গুলিয়ে একটা বমি বমি ভাব অনুভব করে থাকেন তখন আবার অন্য কিছু গর্ভবতী মহিলা হয়ত দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়েই সেটি অনুভব করে থাকেন।

৯. হৃদয় জ্বলন বা গলা বুক জ্বালা অম্বলঃ

গর্ভাবস্থায় গলা বুক জ্বালা অম্বল হওয়া খুব সাধারণ।গর্ভাবস্থার সূচনায় শরীরের অভ্যন্তরে হওয়া বিভিন্ন পরিবর্তনগুলি অ্যাসিডের রিফ্লাক্স এবং গলা বুক জ্বালা অম্বলের জন্য দায়ী।আবার গর্ভাবস্থার পরবর্তী পর্যায়গুলিতেও যখন আপনার গর্ভস্থ ক্রম বর্ধিত শিশুটি অনবরত আপনার অন্ত্র এবং পাকস্থলীর উপর চাপ দেয়,সেই সময়েও আপনার গলা বুক জ্বালা অম্বল হওয়া বেশ সাধারণ ব্যাপার।

১০. তীব্র ঘ্রাণেন্দ্রিয়ঃ

গর্ভাবস্থায় বহু মহিলার মধ্যে আবার তীব্র ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের অনুভূতি লক্ষ্য করা যায়।আপনি হয়ত কয়েকটি নির্দিষ্ট গন্ধকে পছন্দ করে থাকতে পারেন যেগুলি আপনি সহজেই শণাক্ত করতে সক্ষম এবং আবার হয়ত বা অন্য কয়েকটির ক্ষেত্রে সেগুলিকে শণাক্ত করতে নাও করতে পারেন অথবা মোটেও পছন্দ করতে না পারেন।

১১. অনিয়মিত অন্ত্রের গতিবিধিঃ

শরীরে বর্ধিত প্রোজেস্টেরণের মাত্রা বিভিন্ন পেশীর কার্যকারিতার প্রক্রিয়াগুলিতে পরিবর্তন ঘটায়।এই পরিবর্তিত হরমোনের মাত্রা পেশীগুলির কার্যকারীতাগুলিকে ধীর করে দেয় এবং তার ফলে খাদ্যটি অন্ত্রের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে যায় যা অনিয়মিত অন্ত্রের গতিবিধি অথবা কোষ্ঠকাঠিণ্যের দিকে পরিচালিত করে।

১২. মাথা ঘোরাঃ

প্রোজেস্টেরণের উপস্থিতির কারণে আপনার রক্তচাপ কমে যেতে পারে যার ফলে আপনি হয়ত মাথা ঝিম ঝিম অথবা মাথা ঘোরা অনুভব করে থাকতে পারেন।

১৩. পিঠে যন্ত্রণাঃ

আপনার শ্রোণী অঞ্চল আবৃত করে রাখা লিগামেন্টগুলি আলগা হয়ে যায়।এটি দেহের প্রোজেস্টেরণ হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধির কারণে হয়ে থাকে।আপনার পশ্চাৎভাগের এই আলগা হয়ে যাওয়া লিগামেন্টগুলির কারণে হয়ত আবার আপনার পিঠে ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকতে পারে।

১৪. ক্ষুধা যন্ত্রণাঃ

গর্ভাবস্থায় ডায়েট একটা গুরুত্বপূরর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং আপনার শরীরও হয়ত আপনাকে এই একই দিকে পরিচালিত করে থাকতে পারে।স্বাভাবিকের তুলনায় আপনি হয়ত নিজেকে বেশি ক্ষুধার্থ হতে লক্ষ্য করতে পারেন এবং প্রায়শই আপনার খাওয়ার আকাঙ্খা দেখা দিতে পারে।

১৫. মাথা ধরাঃ

আপনার গর্ভাবস্থার যাত্রাপথের সূত্রপাতে,আপনার দেহের অভ্যন্তরে ব্যাপক পরিবর্তন হতে থাকে।বর্ধিত হরমোন,রক্তের পরিমাণ এবং চাপ,আপনার যথেচ্ছ মাথা ধরা বা মাথা যন্ত্রণার কারণ হয়ে উঠতে পারে।

এগুলি সবই হল প্রাথমিক লক্ষণ সমূহ যেগুলি আপনি হয়ত আপনার গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকের সূচনাতে অনুভব করে থাকতে পারেন।এই সকল লক্ষণগুলির পাশাপাশি আপনি আবার হয়ত আপনার দেহে বহুবিধ পরিবর্তনগুলিও সংঘটিত হয়ে থাকতে লক্ষ্য করবেন।

গর্ভাবস্থার প্রাথমিক মাসে দৈহিক পরিবর্তনগুলি

যদিও আপনার গর্ভবস্থার প্রথম মসে, আপনি হয়ত কোনও সুস্পষ্ট চাক্ষুষ শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ্য করতে নাও পারেন,তবে নিম্নলিখিত শরীরিক পরিবর্তনগুলি হয়ত আপনি দেখতে পাবেনঃ

  • বর্ধিত নিঃসরণের কারণে আপনার স্তনের আকার হয়ত বেড়ে উঠতে পারে।
  • আপনি হয়ত কিছুটা ফোলাভাব অনুভব করতে পারেন এবং আপনার কোমরের কাছে আপনার পোশশাকগুলি সামাণ্য টাইট অনুভূত হতে পারে।
  • আপনার স্তনবৃন্তগুলি এবং অ্যারিওলা অঞ্চলগুলি আরও বড় এবং গাঢ়তে রূপান্তরিত হতে পারে।
  • আপনি হয়ত আপনার যোনি স্রাব বেড়ে যাওয়াটা অনুভব করতে পারেন।
  • আপনার হয়ত আকস্মিকভাবে সামাণ্য রক্তপাত বা দাগায়িতকরণের অভিজ্ঞতা হয়ে থাকতে পারে(তবে সকল গর্ভবতী মহিলার মধ্যে এই অভিজ্ঞতা হয় না)
  • আপনি আবার হয়ত বা মাথা ঘোরা বা মাথা ঝিম ঝিম করা অনুভব করে থাকতে পারেন।
  • আপনি ক্লান্তি এবং অবসন্নবোধ করতে পারেন।

গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে আপনার গর্ভস্থ শিশুর বিকাশ

আপনি যখন গর্ভবতী হয়ে ওঠেন,আপনার গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে আপনার গর্ভস্থ শিশুটির বিকাশ যে ভাবে হয়ে থাকেঃ

১. নিষিক্তকরণের প্রক্রিয়াটিঃ

যৌন মিলনের ৪৮-৭২ ঘন্টার যেকোনও সময়ের মধ্যে নিষিক্তকরণ প্রক্রিয়াটি ঘটে থাকতে পারে।ডিম্বাণু এবং শুক্রাণু একে অপরের সাথে একত্রিত হওয়ার সাথে সাথে আপনার সন্তানটি জীবনের অস্তিত্বের মধ্যে আসে।এই পর্যায়ে, আপনার শিশুটিকে যথাযোগ্যভাবে জাইগোট হিসাবে ডাকা যেতে পারে। জাইগোটটি খুব দ্রুত গুণে বিকাশ পেতে থাকে এবং তার ফলে আপনার অনাগত শিশুটির বৃদ্ধি এবং বিকাশ শুরু হয়।

২. রোপণ বা প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়াঃ

এইভাবে গঠিত জাইগোটটি ফ্যালোপিয়ান টিউবের মধ্য দিয়ে জরায়ুর দিকে যাত্রা শুরু করে।এরপর জাইগোটটি মরুলায় বিভক্ত হয়–প্রায় চতুর্থ দিনের মধ্যে এক গুচ্ছ দৃঢ় কোষে।এর পরবর্তী কয়েক দিনের মধ্যে,মরুলা ব্ল্যাস্টোসিস্টে বিভক্ত হয়ে যায় এবং পুষ্টির জন্য নিজেকে জরায়ুর প্রাচীরে সংলগ্ন করার চেষ্টা করে।এটি নিজেকে প্রতিস্থাপিত করার কারণে,অমরা গঠিত না হওয়া পর্যন্ত ভ্রূণটি পুষ্টি লাভের জন্য কুসুম থলি এবং কয়েকটি রক্তবাহের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়।

৩. বিকাশের প্রক্রিয়াঃ

তৃতীয় থেকে চতুর্থ সপ্তাহের মধ্যে আপনার সন্তানের হৃদপিণ্ডের স্পন্দন শুরু হবে।যদিও আপনার সন্তানটি কেবলমাত্র একটি মটরশুঁটির আকারেরই হবে,তবে তার বাহু,পা এবং ফুসফুস গঠিত হতে শুরু হবে।শিশুর মুখমন্ডলটিও গঠিত হওয়া শুরু হয়,যার মধ্যে আবার তার কানগুলি,চোখ,মুখ এবং নাকও অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।