ফেরাউনের লাশ কত লম্বা

ফেরাউনের লাশ কত লম্বা
Admin November 27, 2024 575

আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি ফেরাউন নাকি ৬০ হাত বা ৬০ ফিট ছিলো। অনেক বয়স্ক লোক বলতো নিল নদের পানি নাকি ফেরাউনের কোমর পর্যন্ত হত, এমন হাজারো কাহিনি। ২০০৪-২০০৫ সালের দিকে ছোটবেলা থেকে লালিত আমার বিশ্বাসে প্রথম ধাক্কা লাগে, যখন একজনের মোবাইল ভিডিওতে দেখলাম যে ফেরাউনের মমির উচ্চতা খুব বেশি নয়। প্রথমে জানা উচিত ফেরাউন কারো নাম নয়,এটা ১টি বংশের নাম। মুসা (আঃ) কে তাড়া করা ফারাউর নাম ২য় রামসিস বলে গবেষকরা বের করেছেন। কায়রোর তাহারির জাদুঘরে রাখা আছে তার মমিটা যার উচ্চতা মাত্র ৫ ফুট ৭ইঞ্চি।

ফেরাউন কে?

প্রথমেই আমাদের জানা থাকা জরুরি যে, ফেরাউন কে বা কী। ফেরাউন বা ফারাওন কোন একক ব্যক্তি নয়। ফারাও হলো গ্রিক-রোমান কর্তৃক বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত প্রাচীন মিশরীয় রাজবংশের রাজাদের প্রচলিত উপাধি। পুরুষ রাজা, এমনকি ফেরাউন শব্দটা মহিলা শাসকদের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হত। তাই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, ফেরাউন কোন লোক নয়, একটা উপাধি। আমাদের দেশে যেমন এখন রাষ্ট্রপতি। ফেরাউন বা ফারাও শব্দটির আক্ষরিক অর্থ “মহান ঘর” বা “great house”। মিশরের প্রাচীন শাসকদের ফারাও বলা হত।

মমি কী?

মমি হলো একটি মৃতদেহ যা জীবের শরীরের নরম কোষসমষ্টিকে পচে গলে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। প্রাচীন মিশরে, উত্তর চিলিতে এবং দক্ষিণ পেরুতে মানুষ মৃতদেহ মমি করার কৌশল জানতো। মিশরের রয়াল জাদুঘরে মোট ২২টি মমি রয়েছে, যেখানে ১৮টি ফারাও, এবং ৪টি অন্য অভিজাতের মমি রয়েছে। এই পর্যন্ত প্রত্নতত্ত্ববিদদের দ্বরা আবিষ্কৃত অনেকগুলো মমিকে অক্ষত বলার কোন উপায় নেই।

কার মমির কথা বলা হচ্ছে?

১৮৮১ সালে যেই মমিটি পাওয়া যায়, সেই মমিটি দ্বিতীয় রামিসেসের। এই ফেরাউনের জন্ম (প্রায়) খ্রিস্টপূর্ব ১৩০৩; মৃত্যু জুলাই বা আগস্ট ১২১৩ খ্রিস্টপূর্ব; শাসনকাল হচ্ছে, ১২৭৯–১২১৩ খ্রিস্টপূর্ব। উনাকে রামিসেস দ্য গ্রেট বা মহান রামিসেসও বলা হতো। তিনি ছিলেন মিশরের উনবিংশতম রাজবংশের তৃতীয় ফারাও রাজা। ইসলামিস্টদের তৈরি ভিডিওটি খুব ভালভাবে শুনলে দেখবেন, ভিডিওগুলোতে দাবী করা হচ্ছে, এই মমিটি নাকি আবিষ্কার করা হয়েছে সমুদ্র থেকে। যা ডাঁহা মিথ্যা কথা।

বলা হচ্ছে, ফেরাউনের লাশ, যা ১২৩৫ খ্রিস্টপূর্বে সমুদ্রে ডুবে গিয়েছিল, ৩১১৬ বছর সমুদ্রের ভেতরে থাকবার পরেও আল্লাহর কুদরতে লাশটি অক্ষত রয়ে গেছে! এটা ডাঁহা মিথ্যাচার। সত্য হচ্ছে, ৯০ বা ৯১ বছর বয়সে মৃত্যুর পরে এই ফেরাউনের মমি তৈরি করে তা ভ্যালি অব দ্য কিংসের একটি সমাধিতে কবরস্থ করা হয়; পরবর্তীতে তার দেহকে একটি রাজ সংগ্রহশালায় স্থানান্তর করা হয়, যেখানে ১৮৮১ সালে তা আবিষ্কৃত হয়, এবং বর্তমানে এটি কায়রো জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। সত্য হচ্ছে, এই ফেরাউনের এই মমিটি কখনোই সমুদ্রের তলদেশে ছিল না। ইসলামের সাথে মেলাবার জন্য খুব কৌশলে তথ্য বিকৃত করা হয়েছে।