দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায়

দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায়
Admin February 17, 2024 134
পেটের সমস্যায় ভোগা মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং খারাপ খাদ্যাভ্যাসের কারণে ধীরে ধীরে আমাদের পরিপাকতন্ত্র দুর্বল হয়ে যায়। এ কারণে অনেকেই বদহজম, অ্যাসিডিটিসহ বিভিন্ন রকম পেটের সমস্যায় ভোগেন।

গ্যাসের সমস্যার কারণে পেট অনেক সময় ফুলে থাকে। এর মানে হলো অন্ত্র ও পেটে গ্যাস জমা হয়েছে। বাইরে থেকে বিভিন্ন রকমের ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া, মদ্যপান করা ও ধূমপানের কারণেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য ও বদহজমের মতো সমস্যা হতে পারে।

কথায় আছে, ‘পেট ঠান্ডা তো দুনিয়া ঠান্ডা।’ তাই পেটের যদি সমস্যা থাকে, তাহলে কোনো কাজ করেই শান্তি পাওয়া যায় না। পেটের সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এ ছাড়া চাইলেও ঘরোয়া উপায়ে এ সমস্যা দূর করা সম্ভব।


ঘরোয়া পদ্ধতিতে কীভাবে পেটের গ্যাস দূর করবেন—

পেটে ম্যাসাজ করা পেটের উপরিভাগে ম্যাসাজ করতে হবে। এতে গ্যাস অন্ত্রের নিচের দিকে চলে আসবে এবং পায়ুদ্বারের মাধ্যমে বেরিয়ে যাবে। এ জন্য ডান হাতটিকে ডানদিকে বুকে খাঁচার হাড়ের নিচের দিকে ধরুন। এরপর গোলভাবে ম্যাসাজ করুন। ফলে গ্যাসের সমস্যা দ্রুত কমে যাবে।

গরম পানিতে গোসল করা পেটের সমস্যা সমাধানের জন্য গরম পানির গোসল হতে পারে অন্যতম কার্যকর উপায়। দেখা গেছে, গরম পানি পেটে ব্যথা কমাতে পারে। সেই সঙ্গে দূর করতে পারে গ্যাসের সমস্যাও। এমনকি পেটে গ্যাসও হতে দেয় না। এ ছাড়া গরম পানি দিয়ে গোসল করলে অন্ত্রের ওপর চাপ কমে। এতে অন্ত্র ভালো থাকে।

ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া পেটের সমস্যায় খাবারের তালিকায় অবশ্যই বেশি বেশি ফাইবারযুক্ত খাবার যোগ করুন। এতে সমস্যা অনেকটাই কমে যেতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রে দিনে ২৫ ও পুরুষদের ক্ষেত্রে ৩৮ গ্রাম ফাইবার খাওয়া উচিত। সবজি ও হোল গ্রেইনে অনেকটা বেশি পরিমাণে ফাইবার থাকে।

কলা খাওয়া এমন অনেক খাবার রয়েছে, যেগুলো পেটের সমস্যা একদম কমিয়ে দিতে পারে। এসব খাবার মূলত সমস্যা হওয়ার সময় খেতে হয়, এর মধ্যে একটি হলো কলা। যা খেলে গ্যাসের সমস্যা অনেকটা কমে যায়।

পর্যাপ্ত পানি খাওয়া পেটের গ্যাসের সমস্যা সমাধানে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। এতে করে পেটের ভেতর থেকে গ্যাস বের হয়ে যায়। এর পাশাপাশি গ্রিন টি খেতে পারেন। এর ফলে পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলতে পারে।

হাঁটা ও ব্যায়াম করা নিয়মিত হাঁটাহাঁটি ও ব্যায়াম করলে পেটে গ্যাসের সমস্যা অনায়াসে কমে আসে। এমনকি অন্ত্র ঠিকমতো কাজ করতে পারে। এতে করে পেট থেকে গ্যাস বেরিয়ে যেতে থাকে। এ ছাড়া ব্যায়াম করলে নিজেকে অনেকটা হালকা মনে হয়।

এ ছাড়া কয়েকটি জিনিস পেটের গ্যাসের সমস্যা সমাধানে দারুণভাবে কাজ করে।

সেগুলো হলো—
ডাবের পানি ডাবের পানি খেলে পেটে গ্যাসের সমস্যা দূর হয়। কারণ, এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। সেই সঙ্গে এতে উপকারী মিনারেলসও পাওয়া যায়।

দই খাবার হজম করতে দই অনেকটা সহায়তা করে। প্রতিদিন নিয়মিত দই খেলে হজমশক্তি বেড়ে যায়। এ জন্য দুপুরের পরে অল্প টক দই খেতে পারেন। তবে এখানে চিনির বদলে অল্প লবণ ব্যবহার করতে পারেন।

রসুন পরিপাকতন্ত্রের জন্য উপকারী উপাদান হলো রসুন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক কোয়া কাঁচা রসুন খেতে পারেন। এ ছাড়া দুপুরে ভাতের সঙ্গেও এক কোয়া রসুন খেতে পারেন। এভাবে সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিন দিন খান; সমস্যা অনেকটা সমাধান হয়ে যাবে।


পাশাপাশি পেটে গ্যাসের সমস্যা সমাধানে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা জরুরি

সেগুলো হলো—
তবে কী গাদা গাদা গ্যাসের ওষুধে এ সমস্যা দূর হয়! কিন্তু ঘরোয় কিছু উপায় আছে যেগুলি প্রয়োগ করলে গ্যাস, বুক জ্বালা থেকে সহজেই বাঁচা যায়।
১. শসা : শসা পেট ঠাণ্ডা রাখতে অনেক বেশি কার্যকরী খাদ্য। এতে রয়েছে ফ্লেভানয়েড ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা পেটে গ্যাসের উদ্রেক কমায়।

২. দই : দই আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

এতে করে দ্রুত খাবার হজম হয়, ফলে পেটে গ্যাস হওয়ার ঝামেলা দূর হয়।
৩. পেঁপে : পেঁপেতে রয়েছে পাপায়া নামক এনজাইম যা হজমশক্তি বাড়ায়। নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করলেও গ্যাসের সমস্যা কমে।

৪. কলা ও কমলা : কলা ও কমলা পাকস্থলির অতিরিক্ত সোডিয়াম দূর করতে সহায়তা করে।

এতে করে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এ ছাড়াও কলার সলুবল ফাইবারের কারণে কলা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ক্ষমতা রাখে। সারাদিনে অন্তত দুটি কলা খান। পেট পরিষ্কার রাখতে কলার জুড়ি মেলা ভার।
৫. আদা : আদা সবচাইতে কার্যকরী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানসমৃদ্ধ খাবার।

পেট ফাঁপা এবং পেটে গ্যাস হলে আদা কুচি করে লবণ দিয়ে কাঁচা খান, দেখবেন গ্যাসের সমস্যা সমাধান হবে।
৬. ঠাণ্ডা দুধ : পাকস্থলির গ্যাসট্রিক এসিডকে নিয়ন্ত্রণ করে অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি দেয় ঠাণ্ডা দুধ। এক গ্লাস ঠাণ্ডা দুধ পান করলে অ্যাসিডিটি দূরে থাকে।

৭. দারুচিনি : হজমের জন্য খুবই ভালো। এক গ্লাস পানিতে আধ চামচ দারুচিনির গুঁড়ো দিয়ে ফুটিয়ে দিনে ২ থেকে ৩ বার খেলে গ্যাস দূরে থাকবে।

৮. জিরা : জিরা পেটের গ্যাস, বমি, পায়খানা, রক্তবিকার প্রভৃতিতে অত্যন্ত ফলপ্রদ। জ্বর হলে ৫০ গ্রাম জিরা আখের গুড়ের মধ্যে ভালো করে মিশিয়ে ১০ গ্রাম করে পাঁচটি বড়ি তৈরি করতে হবে। দিনে তিনবার এর একটি করে বড়ি খেলে ঘাম দিয়ে জ্বর সেরে যাবে।

৯. লবঙ্গ : ২/৩টি লবঙ্গ মুখে দিয়ে চুষলে একদিকে বুক জ্বালা, বমিবমিভাব, গ্যাস দূর হয়। সঙ্গে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।

১০. এলাচ : লবঙ্গের মতো এলাচ গুঁড়ো খেলে অম্বল দূরে থাকে।

১১. পুদিনা পাতার পানি : এক কাপ পানিতে ৫টা পুদিনা পাতা দিয়ে ফুটিয়ে খান। পেট ফাঁপা, বমিভাব দূরে রাখতে এর বিকল্প নেই।

১২. মৌরির পানি : মৌরি ভিজিয়ে সেই পানি খেলে গ্যাস থাকে না।

এ ছাড়াও খাবারে সরষে যোগ করুন : সরষে গ্যাস সারাতে করতে সাহায্য করে। বিভিন্ন খাবারের সাথে সরষে যোগ করা হয় যাতে সেইসব খাবার পেটে গ্যাস সৃষ্টি করতে না পারে। নজর রাখতে হবে নিজের খাওয়া-দাওয়ার প্রতি। জেনে নিতে হবে কোনটি খাওয়া উচিত হবে কোনটি হবে না।