ধৈর্য্য নিয়ে হাদিস

আব্বান ইবনে তাগলাব বলেছেন- “আমি এক মরুবাসী আরবকে বলতে শুনলাম যে সে বলছে, যখন কেউ অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য ধৈর্য ধরে তখন সর্বাপেক্ষা মহত্তম একটি গুণ প্রকাশিত হয়; তার ধৈর্য ও আশা তার উপর আশাপ্ৰদ (বঞ্চিত ও কাঙ্খিত) প্রভাবে ফেলে; এ যেন সে সদা নিজেকে সমস্যা থেকে রক্ষিত হতে দেখে; আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও তার সম্বন্ধে তার সুধারণার কারণে তার মানসিক অবস্থা এতটাই উচ্চমাত্রায় আশাপ্রদ (ও বাঞ্ছিত)। যখন কারো এসব গুণ থাকে তখন আল্লাহ তার হাজত (প্রয়োজন) পূর্ণ করে দিবেন ও তার জীবন থেকে সংকট (দুঃখ-কষ্ট-অভাব-অনটন ও সমস্যা) দূর করে দিবেন এ জন্য তাকে কখনও দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয় না। তিনি নিরাপদ থাকবেন এবং তার ধর্ম ও সম্মানও নিরাপদ থাকবে।”
ধৈর্য্য নিয়ে হাদিস
আল আসমায়ী বর্ণনা করেন যে, এক মরুবাসী আরব বলেছেন, “যখন আপনি নিজেকে ভালো অবস্থায় পান তখন আপনি ক্ষতির আশংকা করুন। যখন আপনি মন্দ অবস্থায় থাকেন তখন ভালোর আশা করুন। যারা মৃত্যুকে আকাঙ্ক্ষা করেছে এমন অনেকেই বেঁচে গেছেন আর যারা বাঁচতে চেয়েছে এমন অনেকেই মরে গেছে। ভয়ঙ্কর পথে চলার পরই অধিকাংশ সময় নিরাপত্তা আসে।”
কোন একজন জ্ঞানী লোক বলতেনঃ “জ্ঞানী ব্যক্তি সংকটে পড়লে নিজেকে দু’ভাবে সান্তনা দেন। প্রথমটি হলো- পরিতৃপ্ত হওয়া। দ্বিতীয়টি হলো- তার উপর যে মুসিবত এসেছে তা থেকে নিষ্কৃতির উপায়ের আশায় থাকা। মূৰ্খ লোক সংকটের সময় দু’ভাবে বিচলিত ও ভীত হয়। প্রথমটি হলো- যে সব লোকের কাছে সে সাহায্য চায় তাদের সংখ্যা। দ্বিতীয়টি হলো- তার উপর যে মুসিবত এসেছে তার চেয়ে আরো মন্দ অবস্থা সম্বন্ধে তার সদা ভয় ও আশংকা৷”
এবং আমি পূর্বে যেমনটি উল্লেখ করেছি, বর্ণিত হয়েছে যে, মহান আল্লাহ কঠিন সমস্যার মাধ্যমে আমাদেরকে শিক্ষা দেন। এমন শিক্ষা যা অন্তর, কর্ণ ও চক্ষুকে উন্মুক্ত করে। আল হাছান ইবনে সাহল বিপদাপদকে ভুলো মন লোকদের জন্য জাগরণী আহ্বান, ধৈর্যশীল লোকদের জন্য পুরস্কার লাভের উপায় এবং প্রত্যেকের জন্য কল্যাণের স্মারক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এবং আল্লাহর বিধান সর্বদাই উত্তম, বিশেষ করে তাদের জন্য
“তোমরা যদি কষ্ট ভোগ করতে থাক তবে তারাও তো তোমাদের মতো কষ্ট ভোগ করছে, অথচ তারা যা আশা করতে পারে না তোমরা আল্লাহর কাছ থেকে তা (জান্নাত) আশা করতে পার।” (৪-সূরা আন নিসাঃ আয়াত-১৬৪)
ঈমানদারদের জান্নাত প্রাপ্তির কারণ এ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সত্যিকারের ঈমানদার যখন দুর্দশাগ্রস্ত হয়, তখন তাদের উচ্চ পর্যায়ের ধৈর্য থাকে। সত্যিকার ঈমানদারের মাঝে যে সব গুণ পাওয়া যায় তা হলো ধৈর্য, অধ্যবসায়, অটলতা, সৌম্যতা এবং আল্লাহর বান্দা হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালনের খাঁটি ইচ্ছা। মা'কাল ইবনে ইয়াসার বর্ণনা করেন যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
يقول ربكم تبارك وتعالى يا ابن آدم تفرغ لعبادتي أملأ قلبك غنى وأملأ يديك رزقا يا ابن آدم لا تباعد مني فأملأ قلبك فقرا وأملأ يديك شغلا
ভাবাৰ্থঃ তোমাদের মোবারক, মহান প্রভু বলেন, “হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতে সময় ব্যয় কর, তাহলে আমি তোমাদের অন্তরকে সম্পদে ভরে দিব ও তোমার হাতকে রিযিকে ভরে দিব। হে আদম সন্তান! আমার থেকে দূর হয়ো না, তাহলে আমি তোমার অন্তরকে অভাবে ভরে দিব ও তোমার হাতকে (সমস্যা দ্বারা) ব্যস্ততায় ভরে দিব।”
দরিদ্র হওয়াতে দুঃখ করবেন না; কারণ
আলী (রাঃ) বলেছেন, “মানুষ যে ভালো কাজ করে তা অনুপাতেই তার (প্রকৃত) মূল্য নির্ধারণ করা হয়।” অতএব, এক জ্ঞানী, বিজ্ঞ, পণ্ডিত ও আলেম ব্যক্তির মূল্য তার জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়, তার জ্ঞান কি সীমিত না বিশাল এবং সে কী পরিমাণে তার জ্ঞানকে প্রসারিত করে তার ওপর ভিত্তি করে তার মূল্য নির্ধারিত হয়। অনুরূপভাবে কবির মূল্যায়ন হয় তার কবিতার মানের উপর এবং এ কারণে একথা প্রতিটি পেশার প্রতিটি লোকের জন্যই প্রযোজ্য। সে যে কাজ করে তার সৌন্দর্যের দ্বারাই জনগণের নিকট তার মূল্য নিরূপিত হয়। পেশা অনুসারে নয় বরং ধর্ম অনুসারে এবং সাধারণত জীবন অনুসারে প্রত্যেকেরই উচিত, ভালো কাজ করে, তাদের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার স্তর বৃদ্ধি করে, তাদের মনকে সংস্কৃতিসম্পন্ন ও সভ্যভব্য করে এবং তাদের ব্যক্তিত্বের মহান করা।