ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ?

ডায়াবেটিস 'নীরব ঘাতক'? ভয় পাবেন ? সব খাওয়া দাওয়া ছাড়তে হবে? নেই কোনও বাঁচার উপায় ?
এই রকম নানাবিধ প্রশ্ন এসেছে আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে ও ইনবক্সে। দর্শক ও পাঠকদের পাঠানো বহু প্রশ্নের মধ্যে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. সুমন মিত্র (Consultant, Code Wellness, CMRI Kolkata, CK Birla Hospitals )।
ডায়াবেটিসের মাত্রা কত হলে বিপজ্জনক?
তার মধ্য়ে একটি প্রশ্ন খুবই সাধারণ। অনেকেই নিজেদের ডায়াবেটিসের ( Diabetes) মাত্রা উল্লেখ করে লিখেছেন, তাঁরা কি খুব বিপজ্জনক জায়গায় আছেন?
কোন পর্যায়ে গেলে ওষুধ খাওয়া শুরু করতে হবে? আর ডায়াবেটিস কোন পর্যায়ে থাকলে, তা লাইফস্টাইল মডিফিকেশনের ( Manage Blood Sugar )মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় । চিকিৎসক জানাচ্ছেন, ডায়াবেটিসের মাত্রা ঠিক কতয় পৌঁছলে ভাবনা চিন্তা শুরু করতে হবে, তা মানুষ বিশেষে আলাদা। যিনি নতুন ডায়াবেটিক, তাঁদের ক্ষেত্রে একরকম মাপকাঠি। আর যাঁরা ডায়াবেটিসের পুরনো রোগী তাঁদের ক্ষেত্রে মাপকাঠিটা আলাদা। খালি পেটে সুগারের লেভেল ( Fasting blood sugar - FBS )যদি ৮০ থেকে ১০০র মধ্যে থাকে, আর খাবার ২ ঘণ্টা পরে (Postprandial ) সুগারের মাত্রা যদি ১৪০ এর আশেপাশে থাকে, তাহলে চিন্তা করার বড় কোনও কারণ নেই। সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে, এই মাত্রাটুকু মেপে রাখাই যথেষ্ট নয়। আরও কতকগুলি বিষয় মাথায় রাখতেই হবে। যাঁরা বহুদিন ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাঁদের বাড়িতে একটি গ্লুকোমিটার থাকা আবশ্যক। এতে নিজেদের সুগারের মাত্রা নিজেরাই মাপতে পারবেন। চিকিৎসক সুমন মিত্রর পরামর্শ, সারাদিনে কয়েকবার সুগারের মাত্রাটা মাপতে হবে। দেখতে হবে, সেই মাত্রাটার মধ্যে ব্যবধান কতটা। এবার এই ব্যবধানটা যদি বিরাট হয়, তাহলে চিন্তার বিষয় বইকি ! যদি দেখা যায় কারও খালি পেটে সুগারের মাত্রা ৭০, আর ভরা পেটে সুগারের মাত্রা ৪৭০, তাহলে মনে করতে হবে তাঁর ডায়াবেটিস কন্ট্রোলটা ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু যদি দেখা যায়, কারও খালি পেটে সুগারের মাত্রা ১২০ আর ভরা পেটে ১৮০ ! তাতে বরং আমরা খুশি হই। ব্যবধানটা কম। এঁদের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসটা ঠিকভাবে ম্যানেজ হচ্ছে বলেই মনে করা হয়। তাই ডাক্তারবাবু পরামর্শ, একটা মাত্রা নিয়ে পড়ে থাকবেন না। খালি পেটে ও খাবার ২ ঘণ্টা পরে সুগারের মাত্রাটা মেপে নিয়ে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিন। তিনিই বলে দিতে পারবেন, আপনার সুগারের মাত্রা কপালে ভাঁজ ফেলার মতো কি না। তবে সাধারণ ভাবে বলতে গেলে, খালি পেটে সুগারের লেভেল ৮০ থেকে ৯০ আর ভরা পেটে সুগারের মাত্রা ১৩০ থেকে ১৪০ বা ১৫০ এর মধ্যে থাকলে চিন্তার বড় একটা কারণ নেই বলেই মনে করা হয়।
খালি পেটে ডায়াবেটিস কত থাকে?:
খালি পেটে আপনার রক্তে সুগারের মাত্রা ৫.৫ পয়েন্টের (mmol/l) আশেপাশে থাকা ভালো। যদি ৫.৫ থেকে ৬.৯ পয়েন্টের মধ্যে থাকে, এই অবস্থাকে বলে প্রি-ডায়াবেটিস। যদি ৭ পয়েন্টের উপরে চলে যায়, আমরা তাকে ডায়াবেটিস বলি।
ডায়াবেটিস নির্ণয়: মানুষের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ সাধারণত ৩.৩ থেকে ৬.৯ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর <৭.৮ মিলি.মোল/লি। কিন্তু যদি গ্লুকোজের পরিমাণ অভুক্ত অবস্থায় ৭ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর >১১ মিলি.মোল/লি পাওয়া যায়, তবে তার ডায়াবেটিস আছে বলে ধরে নেওয়া হয়।
ধরন: বহুমূত্র রোগ বা ডায়াবেটিস বললে সাধারাণতঃ ডায়াবেটিস মেলিটাস বোঝায়। তবে ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস নামে আরেকটি রোগ আছে যাতে মূত্র উৎপাদন বেশি হয় কিন্তু তা ADH অ্যান্টি ডাইইউরেটিক হরমোন নামে অন্য একটি হর্মোনের উৎপাদনের অভাব বা ক্রিয়ার অভাবে হয়ে থাকে এবং মূত্রাধিক্য এবং তার জন্য অতিতৃষ্ণা এই দুটি উপসর্গের মিল ছাড়া এই রোগটির সঙ্গে "ডায়াবেটিস মেলাইটাস"-এর কোন সম্পর্ক নেই। এ দুটির মধ্যে ডায়াবেটিস মেলাইটাসের প্রকোপ অনেক বেশি। ডায়াবেটিস মেলাইটাস আবার দু'রকম হতে পারে। যথাঃ টাইপ-১ বা ইনস্যুলিন নির্ভরশীল এবং টাইপ-২ বা ইনস্যুলিন নিরপেক্ষ ডায়াবেটিস।
ডায়াবেটিসের সাধারণ লক্ষণাদি:
- ঘন ঘন প্রস্রাব। এ কারণে এ রোগটির নাম বহুমূত্র রোগ ;
- অধিক তৃষ্ণা এবং মুখ শুকিয়ে যাওয়া ;
- অতিশয় দুর্বলতা ;
- সার্বক্ষণিক ক্ষুধা ;
- স্বল্প সময়ে দেহের ওজন হ্রাস ;
- চোখে ঝাপসা দেখা ;
- ঘন ঘন সংক্রমণ।
ডায়াবেটিসের বৈশিষ্ট্য ও বিভিন্ন জটিলতা
- অতিরিক্ত মেদ এ রোগের অন্যতম কারণ ;
- উপসর্গহীনতা বা অসচেতনতার কারণে চিকিৎসার অভাব ;
- কিডনি বা বৃক্কের অক্ষমতার অন্যতম মূল কারণ ডায়াবেটিস ;
- অন্ধত্ব বা দৃষ্টিবিচ্যূতির অন্যতম মূল কারণ ডায়াবেটিস ;
- বিনা দুর্ঘটনায় অঙ্গচ্ছেদের অন্যতম মূল কারণ ডায়াবেটিস।
ডায়াবেটিসের চিকিৎসা:
- ইনসুলিন
- অ্যান্টিডায়াবেটিক ওষুধ ( মুখে খাওয়ার ওষুধ )
- জীবনধারার পরিবর্তন: নিয়মিত ব্যায়াম, খাদ্য গ্রহণে সচেতনতা, অসুখ সম্বন্ধে রোগীর প্রয়োজনীয় ধারণা।