চিরতা খাওয়ার অপকারিতা
-67c2f38faf7b5.jpg)
Admin
March 01, 2025
85
সংস্কৃতে যা ভুনিম্বা নামে পরিচিত বাংলায় তা চিরতা নামে পরিচিত যায় সোয়েরশিয়া চিরতা। চিরতা, Swertia chirata নামক গাছ থেকে পাওয়া ঔষধি গুণসমৃদ্ধ একটি ভেষজ। সারা ভারতে এটি পাওয়া গেলেও ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম ইউরোপে এটি আবিষ্কৃত হয়। এটি স্যালিসাইলিক সমৃদ্ধ যা অত্যন্ত তিক্ত স্বাদের জন্য পরিচিত ত্বকের সমস্যা, জ্বর এবং প্রদাহের চিকিৎসায় ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রশস্ত পাতার এই গাছের ফল সাদা রঙের হয় এবং প্রায় ২-৩ ফুট উচ্চতাযুক্ত হয়। আমাদের চারপাশে এমন অনেক ভেষজ রয়েছে, যা রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উপকারী। চিরতা তাদের একজন। তিক্ত স্বাদের কারণে অনেকেই চিরতা ব্যবহার করেন না।
চিরতা খাওয়ার অপকারিতা এবং উপকারিতা: জেনে নিন বিস্তারিত
চিরতা খাওয়ার অপকারিতা এবং উপকারিতা: চিরতা (বৈজ্ঞানিক নাম: Swertia chirata) একটি প্রাচীন ভেষজ উদ্ভিদ, যা স্বাস্থ্যকর গুণাগুণের জন্য পরিচিত। এটি মূলত ভারত, নেপাল এবং ভুটানের পাহাড়ি অঞ্চলে জন্মায় এবং বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। চিরতার স্বাদ অত্যন্ত তেতো হওয়ায় এটি “তিতো ওষুধ” হিসেবে পরিচিত এবং এর ব্যবহারে বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের কথা বলা হয়েছে। মূলত চিরতা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, হজম শক্তি উন্নয়ন এবং রক্ত পরিশোধনের জন্য প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাছাড়া এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও প্রদাহ-নাশক গুণ রয়েছে, যা লিভার এবং কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে বলে জানা যায়।
চিরতা খাওয়ার প্রধান উপকারিতা
বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা রয়েছে চিরতা খাওয়ার, যা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন ভেষজ চিকিৎসায় চিরতা ব্যবহৃত হয় কিছু নির্দিষ্ট রোগ নিরাময় ও প্রতিরোধে।
চিরতা খাওয়ার কয়েকটি উপকারিতা:
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণ: চিরতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যাল দূর করতে সহায়ক। এটি ক্যান্সার এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক: চিরতা হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং পেটের সমস্যাগুলোর উপশমে কার্যকর ভূমিকা রাখে। গ্যাস্ট্রিক ও পেট ফাঁপা সমস্যায় চিরতার সেবন উপকারী বলে ধরা হয়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: চিরতা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে কার্যকর। তবে এটি অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শক্রমে সেবন করা উচিত।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে চিরতা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক বলে জানা যায় এবং এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
চিরতা খাওয়ার অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতা
চিরতা শুধুমাত্র পেটের সমস্যা বা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেই সহায়ক নয়, এর আরো কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এই উপকারিতাগুলো সাধারণ রোগ প্রতিরোধ থেকে শুরু করে ত্বক এবং লিভার সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
অতিরিক্ত স্বাস্থ্য উপকারিতা:
ত্বকের পরিচর্যা: চিরতা ত্বকের সমস্যা যেমন ব্রণ, এবং ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ ত্বককে সংক্রমণমুক্ত রাখতে সহায়ক।
জ্বর এবং ঠান্ডা সমস্যা: আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় চিরতা জ্বর এবং সাধারণ ঠান্ডা নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। এটি দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সহায়ক।
লিভার ও কিডনি সুরক্ষায় সহায়ক: চিরতার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণ লিভার এবং কিডনির সুস্থ কার্যকারিতায় সহায়ক। এটি লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করতে এবং শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে।
চিরতা খাওয়ার অপকারিতা: স্বাস্থ্যগত সতর্কতা
যদিও চিরতা খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে, তবে অতিরিক্ত সেবনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদে বা অতিরিক্ত মাত্রায় সেবন করলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
চিরতার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
বমি বমি ভাব এবং অতিরিক্ত পিত্ত: চিরতা পিত্তের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়, যা হজমে সহায়ক হলেও অতিরিক্ত সেবনে বমি বমি ভাব বা পিত্তজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গ্যাস্ট্রিক এবং পেটের সমস্যার সম্ভাবনা: চিরতার তিক্ত স্বাদ এবং প্রাকৃতিক গুণাগুণ গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড বাড়াতে পারে, যা অতিরিক্ত মাত্রায় সেবনে পেটের সমস্যা বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
মাথাব্যথা এবং ক্লান্তি: চিরতার অত্যধিক সেবনে কিছু ব্যবহারকারীর মাথাব্যথা এবং ক্লান্তি অনুভব করতে পারেন, যা সাধারণত অতিরিক্ত মাত্রার কারণে ঘটে।
এ কারণে চিরতা সেবনের আগে সঠিক পরিমাণ এবং ব্যবহারের পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। গর্ভবতী মহিলা ও শিশুর জন্য চিরতা খাওয়ার ঝুঁকি চিরতা সেবন থেকে গর্ভবতী মহিলা ও শিশুরা বিরত থাকা উচিত, কারণ এর কিছু উপাদান তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
গর্ভবতী মহিলার জন্য ঝুঁকি:
গর্ভপাতের আশঙ্কা: চিরতার কিছু উপাদান গর্ভাশয়ের সংকোচন ঘটাতে পারে, যা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই গর্ভাবস্থায় চিরতা খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।
শিশুর জন্য অপকারিতা: শিশুদের শরীর চিরতার তিক্ততার জন্য সহনশীল নয় এবং এটি হজমে সমস্যা, বমি, বা এলার্জির সমস্যা তৈরি করতে পারে।
গর্ভবতী মহিলা ও শিশুদের জন্য চিরতা সেবনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমে এবং নিরাপদ ব্যবহারের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়।
দীর্ঘমেয়াদে চিরতা খাওয়ার বিপদ এবং শরীরে প্রভাব
চিরতা দীর্ঘমেয়াদে সেবন করলে শরীরে বেশ কিছু নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিতে পারে। চিরতার নির্দিষ্ট উপাদান শরীরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ওপর দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদে চিরতা খাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাব:
লিভার ও কিডনির ওপর প্রভাব: চিরতার অতিরিক্ত সেবন লিভার এবং কিডনিতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে এবং এটি দীর্ঘমেয়াদে অঙ্গগুলোতে ক্ষতি করতে পারে।