চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কি

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কি
Admin November 29, 2024 214

তিনি ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বা স্থায়ী ভূমি ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। ঐ বছর ২২শে মার্চ নির্দিষ্ট রাজস্ব পরিশোধের বিনিময়ে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার জমিদারদের নিজ নিজ জমির ওপর স্থায়ী মালিকানা দান করে যে বন্দোবস্ত চালু করা হয়, তাকেই 'চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বলা হয়।


চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত


বক্সারের যুদ্ধোত্তর বাংলায় দ্বৈতশাসনের প্রকোপে ১৭৭০ সালের দুর্ভিক্ষের প্রচণ্ডতার জন্য আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছিল। এসময় কোম্পানি বাংলায় প্রত্যক্ষ শাসন কায়েম করেন। বাংলার শাসনক্ষমতা গ্রহণ করে ওয়ারেন হেস্টিংস বিধ্বস্ত অর্থনীতির পুনর্গঠন ও রাজস্ব আদায়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নিলামি ব্যবস্থায় পুনরায় সর্বোচ্চ ডাককারীকে পঞ্চসালা ভূমি বন্দোবস্ত দেয়। কিন্তু এ পঞ্চসালা ব্যবস্থা কার্যকরী হয় নি। এভাবে এক পর্যায়ে Court of Director ওয়ারেন হেস্টিংসকে বাৎসরিক মেয়াদে ভূমি বন্দোবস্ত প্রদানের নির্দেশ দেন।


চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফল


১. জমির স্বত্ব দান: জমির ওপর জমিদারদের স্বত্ব দান করায় জমিদাররা আরও বেশি করে কৃষিব্যবস্থায় মূলধন বিনিয়ােগ করে কৃষিকাজের সম্প্রসারণ ঘটানাের চেষ্টা করে।

২. কৃষকবিদ্রোহ: বিভিন্ন মধ্যস্বত্ব ও উপস্বত্বভােগীরা অধিক খাজনা আদায়ের লক্ষ্যে কৃষক শােষণের মাত্রা বাড়ায়। এরা নির্ধারিত খাজনা ছাড়াও বিভিন্ন বেআইনি কাজ থেকে খাজনা আদায় করে। এসবের ফলে কৃষক সমাজে যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ জন্মায় তারই অনিবার্য পরিণতি উনিশ শতকে সংঘটিত একের পর এক কৃষকবিদ্রোহ।

৩. জমিদারি অবসান: বছরের শেষে চড়া রাজস্ব শােধ করা অনেক জমিদারের পক্ষেই সম্ভব হত না। ফলে, সূর্যাস্ত আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট দিন অতিক্রান্ত হওয়ায় বহু জমিদার তাদের জমিদারি হারান। এইভাবেই রাজশাহী, দিনাজপুর, নদিয়া, বীরভূমের জমিদারির অবসান ঘটে।

৪. মধ্য ও উপস্বত্বভােগীর উদ্ভব: চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বিভিন্ন পর্যায়ে ইজারাদার, দর ইজারাদার পত্তনিদার প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের মধ্যস্বত্বভােগীর উদ্ভব ঘটে। কোম্পানির সঙ্গে জমিদারের যেমন চুক্তি হত, তেমন জমিদারদের সঙ্গেও মধ্যস্বত্বভােগীদের চুক্তি সম্পাদিত হত।

৫. কৃষকদের দূরবস্থা: চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে সবথেকে বেশি ক্ষতি হয়েছিল কৃষকদের। কারণ জমির ওপর জমিদাররা মালিকানা স্বত্ব পেলেও কৃষকরা তা পায়নি। জমিদার খেয়ালখুশি মতাে কৃষক প্রজাকে তার জমি থেকে উৎখাত করতে পারতেন।

৬. গ্রামীণ পরিকাঠামাের ভাঙন: চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়ে। মধ্যস্বত্বভােগী সুদখাের ও মহাজনরা মিলে গ্রামীণ কৃষিজ অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেয়।

৭. মহাজনশ্রেণির আবির্ভাব: মধ্যস্বত্বভােগীরা রাজস্ব আদায়ের নামে কৃষক প্রজাদের ওপর ব্যাপক অত্যাচার শুরু করে। কৃষকরা বাধ্য হয় মহাজনশ্রেণির কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে। সুদ ও আসল মিলিয়ে মােট দেনার পরিমাণ যা দাঁড়াত তা কখনােই কৃষক প্রজারা শােধ করতে পারত না। ফলে মহাজনরা তাদের সর্বস্ব গ্রাস করে নিত।

৮ব্রিটিশ অনুগত সম্প্রদায়ের উদ্ভব: সূর্যাস্ত আইনের শিকার হয়ে যেসব জমিদার জমিদারি হারান, তাদের জমিদারি ক্রয় করে নতুন এক জমিদার শ্রেণির উত্থান ঘটে। এর মধ্যে অন্যতম ছিলেন ঢাকার নবাব পরিবার, রানাঘাটের পালচৌধুরী পরিবার, কাশিমবাজারের নন্দী পরিবার, শােভাবাজারের দেব পরিবার প্রভৃতি।