আত্তাহিয়াতু সূরা বাংলা উচ্চারণ

আত্তাহিয়াতু সূরা বাংলা উচ্চারণ
Admin October 29, 2024 415
মুসলিম হিসেবে আমাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়েছে। এই নামাজ পড়তে আমাদের কিছু সুরা, দোয়া পড়তে হয়। আত্তাহিয়্যাতু বা তাশাহুদ তার মধ্যে অন্যতম। আত্তাহিয়্যাতু বা তাশাহুদ প্রতি নামাজের ২য় রাকাতে এই দোয়া পরতে হয়। তাশাহহুদ পড়া ওয়াজিব এবং আবশ্যক। এর গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক।

তাশাহুদ বা আত্তাহিয়াতু এর বাংলা উচ্চারণ, অর্থ

التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

বাংলা উচ্চারণ : আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস-সালাওয়াতু ওয়াত-ত্বায়্যিবাতু; আস-সালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ; আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিছ ছালিহীন; আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।

অর্থ : ‘সব মৌখিক ইবাদত আল্লাহর জন্য। হে নবি! আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও বরকত বর্ষিত হোক। শান্তি আমাদের ওপর এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের ওপর বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো মাবুদ বা উপাস্য নাই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসুল।

তাশাহুদ এর হাদিস

اللهِ وَبَرَكَاتُهُ السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ فَإِنَّهٗ إِذَا قَالَ ذلِكَ أَصَابَ كُلَّ عَبْدٍ صَالِحٍ فِي السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلهَ اِلَّا اللّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ ثُمَّ ليَتَخَيَّرْ مِنَ الدُّعَاءِ اَعْجَبَهٗ إِلَيْهِ فَيَدْعُوْهُ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সলাত আদায় করতাম তখন এ দুআ পাঠ করতাম, “আসসালা-মু আলাল্ল-হি ক্বাবলা ইবাদিহী, আসসালা-মু আলা-জিবরীলা, আসসালা-মু আলা- মীকায়ীলা, আসসালা-মু আলা- ফুলা-নিন” – (অর্থাৎ- আল্লাহর উপর সালাম তাঁর বান্দাদের উপর পাঠাবার আগে, জিবরাঈলের উপর সালাম, মীকায়ীল-এর উপর সালাম। সালাম অমুকের উপর)। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সলাত শেষ করলেন, আমাদের দিকে ফিরে বললেন, “আল্লাহর উপর সালাম” বল না। কারণ আল্লাহ তো নিজেই সালাম (শান্তিদাতা)।

অতএব তোমাদের কেউ সলাতে বসে বলবে, “আত্তাহিয়্যাতু লিল্লা-হি ওয়াসসালাওয়া-তু ওয়াততায়্যিবা-তু আসসালা-মু আলায়কা আইয়্যুহান নাবিইয়্যু ওয়ারাহমাতুল্ল-হি ওয়াবারাকা-তুহু আসসালা-মু আলায়না ওয়াআলা- ইবা-দিল্লা-হিস স-লিহীন” (অর্থাৎ সব সম্মান, ইবাদাত, উপসানা ও পবিত্রতা আল্লাহর জন্য। হে নাবী! আপনার উপর আল্লাহর সব নেক বান্দাদের উপর সালাম)। নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কোন ব্যক্তি এ কথাগুলো বললে এর বারাকাত আকাশ ও মাটির প্রত্যেক নেক বান্দার কাছে পৌছবে।

এরপর নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রসূলুহু”- (অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবূদ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মদ আল্লাহর বান্দা ও রসূল)। নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এরপর আল্লাহর বান্দার কাছে যে দু’আ ভাল লাগে সে দু’আ পাঠ করে আল্লাহর মহান দরবারে আকুতি মিনতি জানাবে।

বুখারী ৮৩৫, ৬২৩০, মুসলিম ৪০২, আবূ দাঊদ ৯৬৮, নাসায়ী ১২৯৮, ইবনু মাজাহ ৮৯৯, আহমাদ ৪১০১, মিশকাত ৯০৯।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

আত্তাহিয়াতু ঘটনা বা তাশাহুদ এর ইতিহাস

মিরাজ রজনীতে আত্তাহিয়াতু লাভ একটি বানোয়াট কাহিনী। আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত একটি কথা হলাে, রাসুলুল্লাহ (সা) মেরাজ রজনীতে আত্তাহিয়াতু লাভ করেন। এ বিষয়ে একটি গল্প প্রচলিত আছে। গল্পটির সারসংক্ষেপ হলো, রাসূলুল্লাহ (সা) মিরাজের রাত্রে যখন মহান আল্লাহর সর্বোচ্চ নৈকট্যে পৌছলেন, তখন তিনি মহান আল্লাহকে সম্বোধন করে বলেন “التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَات” মহান আল্লাহ এর জবাবে বলেন “السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ” তখন রাসূলুল্লাহ (সা) চান যে, তাঁর উম্মতের জন্যেও সালামের অংশ থাকুক।

এজন্য তিনি বলেন- “السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ” তখন জিবরাঈল (আ) সহ সকল আকাশবাসী বলেন “أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ কোন কোন গল্পকার বলেন উক্ত বাক্যটি ফেরেশতাগণ বলেছিলেন। এগুলোর কোন ভিত্তি আছে বলে জানা যায়নি। কোনো হাদীস গ্রন্থে সনদসহ এ ধরনের কোনো বর্ণনা আসেনি। সনদবিহীন ভাবে কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন। সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিম সহ অন্যান্য সকল হাদীস গ্রন্থে তাশাহুদ বা আত্তাহিয়াতু বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এ কথা কোথাও বলা হয়নি যে, এটি মেরাজ থেকে এসেছে।

ফজিলত

আত্তাহিয়াতু পড়ার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব, পবিত্রতা এবং গুণাবলি স্বীকার করি। এটি বান্দার সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ এবং আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্যের প্রকাশ। এতে নবী করিম (সা.)-এর প্রতি সালাম ও দোয়া পাঠ করা হয়, যা তাঁর প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা ও সম্মানের নিদর্শন।

আত্তাহিয়াতুতে শুধু নিজের জন্য নয়, বরং সমস্ত নেক বান্দার জন্য শান্তি ও কল্যাণ কামনা করা হয়, যা মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধকে তুলে ধরে। এতে কালেমা শাহাদাত উচ্চারণ করা হয়, যা একজন মুসলমানের ঈমানের অন্যতম স্তম্ভ। এটি আমাদের ঈমানের পুনর্জাগরণ ঘটায় এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।

নবী করিম (সা.) বলেছেন যে আত্তাহিয়াতু এমন একটি দোয়া, যা তিনি সরাসরি আল্লাহর কাছ থেকে শিখেছেন এবং এটি বান্দার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে (বুখারি ও মুসলিম)। আত্তাহিয়াতু ছাড়া নামাজ পূর্ণ হয় না, কারণ এটি নামাজের ফরজ ও সুন্নত উভয়েরই অপরিহার্য অংশ।

আত্তাহিয়াতু বা তাশাহুদ শুধু নামাজের একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি আমাদের ঈমান ও ইবাদতের মূল ভিত্তি। এই দোয়া আমাদের আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, নবী করিম (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা এবং সব মুসলমানের প্রতি দায়িত্ববোধ ও সহমর্মিতা শেখায়। নিয়মিতভাবে মনোযোগ ও বিনম্রতার সঙ্গে আত্তাহিয়াতু পাঠ করলে আমাদের আত্মিক উন্নতি ঘটে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথ সহজ হয়।