আপেক্ষিক তাপ কাকে বলে

তাপ, তাপমাত্রা এবং এর সাথে সম্পর্ক রয়েছে এ রকম অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলেও, একটা বস্তুর তাপমাত্রা কতটুকু বাড়াতে হলে সেখানে কতটুকু তাপ দিতে হবে সেটি এখানো আলোচনা করা হয়নি। তোমরা হয়তো লক্ষ করে থাকবে খানিকটা পানিকে উত্তপ্ত করতে বেশ অনেকক্ষণ চুলার ওপর রেখে সেটাতে তাপ দিতে হয়। প্রায় সমপরিমাণ ধাতব কোনো বস্তুকে সেই একই তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করতে কিন্তু মোটেও বেশি সময় উত্তপ্ত করতে হয় না। এর কারণ পানির আপেক্ষিক তাপ বেশি সেই তুলনায় ধাতব পদার্থের আপেক্ষিক তাপ অনেক কম। 1kg পদার্থের তাপমাত্রা 1K বাড়াতে যে পরিমাণ তাপের প্রয়োজন সেটি হচ্ছে ঐ পদার্থের আপেক্ষিক তাপ।
আপেক্ষিক তাপ কাকে বলে
আপেক্ষিক তাপ হলো নির্দিষ্ট কোনো পদার্থের তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বৃদ্ধি করার জন্য যে পরিমাণ তাপ প্রয়োজন, সেটি পদার্থটির ভরের উপর নির্ভর করে। আপেক্ষিক তাপ সাধারণত নির্দিষ্ট তাপের সাথে সম্পর্কিত হয় এবং এটি তাপের স্থানান্তরের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপেক্ষিক তাপ কাকে বলে, এই ধারণাটি বিজ্ঞানে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি পদার্থের তাপগত বৈশিষ্ট্যগুলো বুঝতে সাহায্য করে, যা তাপ পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ব্যাপক ভাবে কাজে আসে।
আপেক্ষিক তাপের সংজ্ঞা এবং একক (Definition of Relative Heat and Units)
আপেক্ষিক তাপ হলো নির্দিষ্ট একটি ভরের কোনো পদার্থের তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১ কেলভিন বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় তাপের পরিমাণ। এটি নির্ভর করে পদার্থটির তাপধারণ ক্ষমতা এবং ভরের উপর। আপেক্ষিক তাপের মূল ধারণা তাপের প্রবাহের সময় তাপমাত্রা পরিবর্তনকে বোঝায় এবং এটি পদার্থটির প্রকৃতির সাথে সম্পর্কিত।
আপেক্ষিক তাপের স্ট্যান্ডার্ড একক (Standard Unit of Relative Heat)
আপেক্ষিক তাপের পরিমাণ জুল (J) এককে প্রকাশ করা হয়, কারণ তাপ শক্তির স্ট্যান্ডার্ড একক হলো জুল। তবে আপেক্ষিক তাপের সূত্রে ব্যবহৃত অন্যান্য এককগুলো নিম্নরূপ:
তাপের পরিমাণ (Q): জুলে (J)
পদার্থের ভর (m): কিলোগ্রামে (kg)
আপেক্ষিক তাপধারণ ক্ষমতা (c): জুল প্রতি কিলোগ্রাম প্রতি ডিগ্রি সেলসিয়াস বা কেলভিন (J/kg°C বা J/kgK)
তাপমাত্রার পরিবর্তন (ΔT): ডিগ্রি সেলসিয়াস (°C) বা কেলভিনে (K)
আপেক্ষিক তাপের সূত্র:
Q = mcΔT
এখানে,
Q হলো তাপের পরিমাণ (J)
m হলো পদার্থের ভর (kg)
c হলো পদার্থটির আপেক্ষিক তাপধারণ ক্ষমতা (J/kg°C)
ΔT হলো তাপমাত্রার পরিবর্তন (°C)
গণিতের উদাহরণ:
ধরা যাক, একটি ধাতুর ৫ কেজি ভর আছে এবং এর তাপমাত্রা ২৫°C থেকে ১০০°C পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে হবে। যদি ধাতুর আপেক্ষিক তাপধারণ ক্ষমতা ৪৫০ J/kg°C হয়, তাহলে প্রয়োজনীয় তাপের পরিমাণ গণনা করা যায়।
Q = mcΔT
Q = ৫ কেজি × ৪৫০ J/kg°C × (১০০°C – ২৫°C)
Q = ৫ × ৪৫০ × ৭৫
Q = ১৬৮,৭৫০ জুল
অর্থাৎ, ৫ কেজি ধাতুর তাপমাত্রা ২৫°C থেকে ১০০°C পর্যন্ত বাড়াতে প্রায় ১৬৮,৭৫০ জুল তাপ প্রয়োজন হবে।
আপেক্ষিক তাপের বাস্তব জীবনের উদাহরণ:
গরম চা ঠান্ডা হতে ধীরগতিতে সময় নেয়: চা বা পানির আপেক্ষিক তাপধারণ ক্ষমতা বেশি হওয়ায় এটি ধীরে ধীরে তাপ ছাড়ে। তাই গরম চা ঠান্ডা হতে সময় নেয়।
ধাতু দ্রুত গরম হয় এবং ঠান্ডা হয়ে যায়: ধাতুর আপেক্ষিক তাপধারণ ক্ষমতা কম, ফলে এটি তাপ দ্রুত শোষণ করে এবং দ্রুত ছাড়ে। তাই ধাতব চামচ খুব তাড়াতাড়ি গরম হয় এবং ঠান্ডা হয়ে যায়।
আপেক্ষিক তাপ ও নির্দিষ্ট তাপের মধ্যে পার্থক্য (Difference Between Relative Heat and Specific Heat)
আপেক্ষিক তাপ এবং নির্দিষ্ট তাপ প্রায় একইরকম মনে হতে পারে, কিন্তু তাদের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য আছে। নির্দিষ্ট তাপ হলো সেই পরিমাণ তাপ যা কোনো নির্দিষ্ট ভরের পদার্থের তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বাড়াতে প্রয়োজন হয়। আপেক্ষিক তাপের ক্ষেত্রে এটি পদার্থের মোট ভরের উপর নির্ভরশীল। আপেক্ষিক তাপ সাধারণত বৃহত্তর পদার্থের ক্ষেত্রে গণনা করা হয়, যেখানে নির্দিষ্ট তাপ হলো একক ভরের পদার্থের ক্ষেত্রে।
উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা: আপেক্ষিক তাপ: যদি আমাদের ১০০ গ্রাম লোহা থাকে, তার তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি থেকে ২৫ ডিগ্রি বাড়ানোর জন্য যে তাপ প্রয়োজন, সেটি আপেক্ষিক তাপ।
নির্দিষ্ট তাপ: এক গ্রাম লোহার তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি বাড়াতে যে তাপ প্রয়োজন, সেটি নির্দিষ্ট তাপ। তাপমাত্রা এবং তাপধারণ ক্ষমতার ভূমিকা (Role of Temperature and Heat Capacity) তাপমাত্রা এবং তাপধারণ ক্ষমতা আপেক্ষিক তাপ বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাপমাত্রা হলো কোনো পদার্থের উষ্ণতা বা শীতলতা পরিমাপের মাপকাঠি। এটি পদার্থের তাপগত অবস্থার বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।
তাপধারণ ক্ষমতার উদাহরণ: সাধারণত পানি এবং ধাতুর মধ্যে তুলনা করলে দেখা যায় যে, ধাতুর তুলনায় পানির তাপধারণ ক্ষমতা অনেক বেশি হয়ে থাকে। এজন্য পানি ধীরে ধীরে গরম হয় এবং ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়, যেখানে ধাতু দ্রুত গরম এবং দ্রুত ঠান্ডা হয়ে থাকে।