#Quote

শব্দের অর্থের ছন্দের স্বরের দ্বন্দ্বে রূপান্তর চাই, শব্দে শব্দে আপতিক ভেদাভেদ অতিক্রমে কবিতায় কবিতায় স্বাতন্ত্রের অনন্য ও অন্যোন্যের যােগাযােগে অর্থের বিন্যাস।

Facebook
Twitter
More Quotes by Bishnu Dey
আবার অন্যদিকে এমন অত্যুক্তিও করা চলে না যে কবি ও যোগী এক ও অভিজ্ঞ কাব্যরচনা ও যোগ-সাধনায় পার্থক্য নেই, কবির তবুও হল বাঙ্ময় জগৎ এবং সেটি মানসলোকের অন্তর্ভুক্ত। কবির যে অন্তরাত্মার জ্যোতি তা এই বাঙ্ময় মানসলোককে ভাস্বর, অধ্যাত্মপ্রবণ করে তোলে।
মহাকাব্যের যুগ চলিয়া গিয়াছে, আমরা আধুনিকেরা বলিয়া থাকি। কারণ দিই এই যে, বাহ্য ঘটনা-পরম্পরার দিকে শিল্পী আর মন দিতে পারেন না, আধুনিক শিল্প অন্তর্মুখী, তিনি বলিতে চাহেন ভিতরের জগতের রহস্যের কথা তাই আজকাল হইতেছে বিশেষভাবে গীতিকাব্যের যুগ। আরো একটা কারণ এই, মহাকাব্য রচনা করতে প্রয়োজন চিত্তের মধ্যে যে অবসর, যে স্থৈর্য-ধৈর্য, যে টানা দম তা আধুনিকের নাই।
সত্যের সাধক যিনি তাঁহাকে বলি ঋষি, সুন্দরের সাধক যিনি তাঁহাকে বলি কবি, আর শিবের বা মঙ্গলের সাধক যিনি তাঁহাকে বলি নবী। ঋষি সত্যের দ্রষ্টা, কবি সুন্দরের স্রষ্টা, নবী মঙ্গলের হোতা। ঋষির আছে জ্ঞানদৃষ্টি, কবির রসানুভূতি, আর নবীর তপঃশক্তির আকুতি। ঋষির আসন মস্তকে, কবির আসন প্রাণে, আর নবীর প্রতিষ্ঠা হৃদয়ে। অথবা আরো বলিতে পারি, ঋষি হইতেছেন সময় পুরুষ, নবী ইতেছেন চিন্ময় পুরুষ, আর কবি হইতেছেন আনন্দময় পুরুষ।
বিষয় হিসাবে, আমরা চাহিতেছি বটে জ্ঞান আরও জ্ঞান, কিন্তু জ্ঞানের বস্তু অপেক্ষা আমাদিগকে বেশি অনুপ্রাণিত করিতেছে অনুসন্ধান, অনুসন্ধানের আবেগ জ্ঞানের সাধক হইয়াও, এই উপলব্ধিটি, আমরা কখনোও ছাড়াইয়া উঠিতে পারি না যে, সকল জ্ঞানই পরিশেষে আপেক্ষিক, সকল জ্ঞানই সাময়িক এবং দেশিক ; তবুও চাহিয়াছি সেই জ্ঞান, একটা চির অতৃপ্তির জের টানিয়া ক্রমাগত চলিয়াছি এক জ্ঞান হইতে আরেক জ্ঞানে। জানি চিরন্তন অনন্ত সত্য কিছু নাই—আছে আজকার এখনকার সত্য, তাহার স্থানে আসিবে কালিকার ওখানকার সত্য—এইরকম সত্যের ক্ষণিকের কাহিনি হইল আর সত্য।
জীবনের ছন্দ এক, শিল্পের ছন্দ আর এক; শিল্পের মধ্যে জীবনকেই যদি মূর্ত করিয়া ধরিতে চাই, তবুও জীবনের গতিভঙ্গীকে হুবহু শিল্পের গতিভঙ্গীর মধ্যে তুলিয়া ধরিতে পারি না। জীবনকে শিল্পের মধ্যে তুলিয়া ধরিতে হইলেই দরকার একটা রূপান্তর পাশ্চাত্যে ইহার নাম দিয়াছে —এই রূপান্তরের অর্থই শিল্পগত সৌন্দর্য।
বন্ধুত্বের পারস্পরিকতায় যে কথা মুখে বলা যায়, সে কথা কাগজের শীতল প্রকাশ্যতায় লেখা অর্থহীন।
সভ্যতার আর একটি বড় প্রত্যয় হচ্ছে ব্যক্তিত্ববােধ। কি করে সমাজ ও ব্যক্তিতে দ্বন্দ্বাশ্রয়ী সম্বন্ধের দীর্ঘ ইতিহাসে এই ব্যক্তি স্বরূপ মর্যাদা পেতে লাগল, তার ব্যাখ্যা সভ্যতার ইতিহাস। বহির্জগতে বিরুদ্ধশক্তি, অন্ধপ্রকৃতি, জন্তু-জানােয়ার, হিংস্র-গােষ্ঠীর দলাদলি যতদিন না মানুষের শুভবুদ্ধি কর্তৃত্বে রূপান্তরিত হবার সম্ভাবনা পেয়েছে ততদিন ব্যক্তির এই মহিমা কবিদের মনেও আসেনি। বাল্মীকি বা হােমার গােষ্ঠীর রচনাই করছেন, রবীন্দ্রনাথই বলতে পেরেছেন স্বকীয়তার কথা।
কবিদের আদি অর্থ ছিল ঋষি। কিন্তু এখন কবিকে আবার ফিরে আর্য চেতনায় উঠতে হবে নবযুগের নব সৃষ্টির জন্য। জীবনের সাধনায় যে ঋষি ব্ৰহ্মবিৎ ব্ৰহ্মভূত শিল্পের রচনায় তিনিই হবেন পরম কবি।
লােকশিল্প বাস্তববিরােধী নয়, বাস্তব পরিপক্ক পরােক্ষ (আবস্ট্রাক্ট ফর্ম) আসলে তার লােকায়িত মুক্তিই।
সকল শিল্পের সত্য হইতেছে আত্মা, রস হইতেছে প্রাণ, আর রূপ হইতেছে দেহ।