photo

Tareque Masud

Bangladeshi film director
Date of Birth : 06 Dec, 1956
Date of Death : 13 Aug, 2011
Place of Birth : Bhanga Upazila, Bangladesh
Profession : Bangladeshi Film Director
Nationality : Bangladeshi
আবু তারেক মাসুদ (Tareque Masud) (যিনি তারেক মাসুদ নামেই পরিচিত) (ডিসেম্বর ৬, ১৯৫৬ - আগস্ট ১৩, ২০১১) ছিলেন একজন বাংলাদেশি স্বাধীন চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, লেখক এবং গীতিকার। মাটির ময়না (২০০২) তার প্রথম ফিচার চলচ্চিত্র যার জন্য তিনি ২০০২-এর কান চলচ্চিত্র উৎসবে ডিরেক্টরস ফোর্টনাইটসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন এবং এটি প্রথম বাংলাদেশি বাংলা চলচ্চিত্র হিসেবে সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র হিসেবে একাডেমি পুরস্কারের জন্য বাংলাদেশী নিবেদন করা হয়েছিল।

তারেক মাসুদের পরিচালিত প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র সোনার বেড়ি (১৯৮৫) এবং সর্বশেষ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র রানওয়ে (২০১০)। চলচ্চিত্রে তার অবদানের জন্য ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত করে। ২০১৩ সালে নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়ান/প্যাসিফিক/আমেরিকান ইন্সটিটিউট এবং দক্ষিণ এশিয়া সলিডারিটি ইনিশিয়েটিভ তার চলচ্চিত্রের প্রথম উত্তর আমেরিকান 'ফিরে দেখা' অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

প্রাথমিক জীবন
মাসুদ ১৯৫৬ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার নূরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার মায়ের নাম নুরুন নাহার মাসুদ ও বাবার নাম মশিউর রহমান মাসুদ। ভাঙ্গা ঈদগা মাদ্রাসায় প্রথম পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তীতে ঢাকার লালবাগের একটি মাদ্রাসা থেকে মৌলানা পাস করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার মাদ্রাসা শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। যুদ্ধের পর তিনি ফরিদপুরের ভাঙ্গা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রাইভেটে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় অংশ নেন এবং প্রথম বিভাগে পাশ করেন। এরপর আইএ পাশ করেন আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে। গ্র্যাজুয়েশনের জন্য প্রথমে নটর ডেম কলেজে ভর্তি হলেও পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। জীবনের প্রথম প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করতে গিয়ে তার আর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করা হয়ে ওঠেনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় তাকে বেশিরভাগ সময়েই ঢাকা আর্ট কলেজে (বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ) কাটাতে দেখা যেত। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়-জীবন থেকেই লেখক শিবির, বাম আন্দোলন এবং বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকেছেন। চলচ্চিত্র আন্দোলনের মাধ্যমে তার পরিচয় হয় মোরশেদুল ইসলাম, তানভীর মোকাম্মেল, শামীম আখতারদের সাথে।

চলচ্চিত্র জীবন
১৯৮২ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ থেকে ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স শেষ করে তিনি তার প্রথম প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন। এটি নির্মাণ করতে লেগেছিল সাত বছর। ১৯৮৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আদম সুরত প্রামাণ্যচিত্রটি ছিল প্রখ্যাত বাংলাদেশী শিল্পী এস এম সুলতানের জীবনের উপর। এরপর থেকে তিনি বেশ কিছু ডকুমেন্টারি, অ্যানিমেশন এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ১৯৯৬ সালে নির্মাণ করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় একটি ভ্রাম্যমাণ গানের দলকে নিয়ে মুক্তির গান। ১৯৭১ সালে মার্কিন নির্মাতা লিয়ার লেভিনের ক্যামেরাবন্দী ফুটেজের সাথে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংরক্ষণাগার থেকে নেয়া ফুটেজ জুড়ে দিয়ে এই ছবিটি নির্মাণ করা হয়। প্রামাণ্যচিত্রটির জন্য তিনি ১৯তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্রের পুরস্কার লাভ করেন।

২০০২ সালে তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র মাটির ময়না মুক্তি পায়। ছবিটি তার শৈশবে মাদ্রাসা জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে নির্মিত। ছবিটি বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং মাসুদ দেশে-বিদেশে বিশেষ প্রশংসা অর্জন করে। চলচ্চিত্রটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং "একটি দেশের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামের হৃদয়স্পর্শী ও স্বচ্ছ উপস্থাপনা"র জন্য মাসুদ ডিরেক্টরস ফোর্টনাইট লাভ করেন। এই ছবির জন্য তিনি ২৭তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকারের পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া মারাকেচ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে ক্যাথরিন মাসুদের সাথে যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যের পুরস্কার লাভ করেন ও গোল্ডেন স্টারের মনোনয়ন লাভ করেন এবং কেরালা চলচ্চিত্র উৎসবে গোল্ডেন ক্রো ফিজেন্ট পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। এছাড়া ছবিটি বাংলাদেশ থেকে সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র হিসেবে একাডেমি পুরস্কারের জন্য বাংলাদেশী নিবেদন করা হয়েছিল। এটি বাংলাদেশ থেকে অস্কারের বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র শাখায় নিবেদন করা দ্বিতীয় বাংলাদেশী চলচ্চিত্র (প্রথমটি জাগো হুয়া সাভেরা) এবং প্রথম বাংলাদেশী বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র।

তার পরবর্তী চলচ্চিত্র অন্তর্যাত্রা (২০০৬) দুটি প্রজন্মকে তুলে ধরেছে, যারা বাংলাদেশ থেকে লন্ডন চলে যায় এবং পুনরায় বাংলাদেশে ফিরে আসে। ২০১০ সালে তিনি দেশে ছড়িয়ে পরা জঙ্গিবাদ ও এর প্রভাব নিয়ে নির্মাণ করেন রানওয়ে। এতে দেখানো হয় এক যুবককে ইসলামী শিক্ষার আড়ালে জঙ্গিবাদে উদ্ধুদ্ধ করার গল্প। ছবিটির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য মেরিল-প্রথম আলো সমালোচক পুরস্কার লাভ করেন। মাসুদের শেষ অসম্পূর্ণ কাজ কাগজের ফুল। ছবিটি ভারত বিভাগের গল্প নিয়ে। এটি মাটির ময়নার পূর্ববর্তী পর্ব।

বাংলাদেশের বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সংগঠন শর্ট ফিল্ম ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি। ১৯৮৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবের কো-অডিঁনেটর হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দেয়ার পাশাপাশি কয়েকটি সাময়িকী ও পত্রিকায় চলচ্চিত্র বিষয়ে লেখালেখি করতেন।

ব্যক্তিগত জীবন
তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ একজন মার্কিন নাগরিক। ক্যাথরিন এবং তারেক মিলে ঢাকায় একটি চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন যার নাম অডিওভিশন। চলচ্চিত্র নির্মাণ ছাড়া তারেক মাসুদের আগ্রহের বিষয় ছিল লোকসঙ্গীত এবং লোকজ ধারা। এই দম্পতির 'বিংহাম পুত্রা মাসুদ নিশাদ' নামে এক ছেলে আছে। তারেক মাসুদের ভাগিনেয় ভাই নজরুলগীতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। তারেক মাসুদের চাচাত বোন তাহমিনা রাব্বানি শাম্মি ও ছোটো ভাই হচ্ছেন নাহিদ মাসুদ।

Quotes

Total 0 Quotes
Quotes not found.