-64d8da540c39e.jpeg)
Sukanta Bhattacharya
Poet
Date of Birth | : | 15 August, 1926 |
Date of Death | : | 27 May, 1047 (Aged 879) |
Place of Birth | : | Kotalipara, Gopalganj, Bangladesh |
Profession | : | Poet |
Nationality | : | Bangladeshi |
সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya) ১৫ আগস্ট ১৯২৬ - ১৩ মে ১৯৪৭ ছিলেন বাংলা সাহিত্যের মার্কসবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী এবং প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী তরুণ কবি৷ মাত্র একুশ বৎসর বয়সে প্রতিভাধর কবির দেহাবসান ঘটলেও সামান্য কয়েকবছরে অত্যাশ্চর্য কবিত্ব শক্তির পরিচয় দিয়ে অশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি৷
জন্ম ও পরিবার
পিতা-নিবারণ ভট্টাচার্য, মা-সুনীতি দেবী৷ ১৯২৬ সালের ১৫ই আগস্ট তিনি তার মাতামহের বাড়ি কলকাতার কালীঘাটের ৪৩, মহিম হালদার স্ট্রীটের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন৷ এক নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম৷উনার পৈতৃক বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার অন্তর্গত ঊনশিয়া গ্রামে৷ বেলেঘাটা দেশবন্ধু স্কুল থেকে ১৯৪৫ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হন৷ এই সময় ছাত্র আন্দোলন ও বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ায় তার আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে৷ সুকান্তের বাল্যবন্ধু ছিলেন কবি অরুণাচল বসু৷ সুকান্ত সমগ্রতে লেখা সুকান্তের চিঠিগুলির বেশিরভাগই অরুণাচল বসুকে লেখা৷ অরুণাচল বসুর মাতা কবি সরলা বসু সুকান্তকে পুত্রস্নেহে দেখতেন৷ কবির জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছিল কলকাতার বেলেঘাটার ৩৪ হরমোহন ঘোষ লেনের বাড়ীতে৷ সেই বাড়িটি এখনো অক্ষত আছে৷ নিকটেই কবির ভাইদের মধ্যে দুজন, বিভাস ভট্টাচার্য ও অমিয় ভট্টাচার্যের বাড়ী৷ পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সুকান্তের সম্পর্কিত ভ্রাতুষ্পুত্র৷
প্রগতিশীল রাজনীতি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, তেতাল্লিশের মম্বন্তর, ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রভৃতির বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেন৷ ১৯৪৪ সালে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন৷ সেই বছর আকাল নামক একটি সংকলনগ্রন্থ তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়৷ কৈশোর থেকেই সুকান্ত যুক্ত হয়েছিলেন সাম্যবাদী রাজনীতির সঙ্গে৷ পরাধীন দেশের দুঃখ দুর্দশাজনিত বেদনা এবং শোষণ মুক্ত স্বাধীন সমাজের স্বপ্ন, শোষিত মানুষের কর্ম জীবন এবং ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য সংগ্রাম তার কবিতার মূল প্রেরণা৷ ১৯৪১ সালে সুকান্ত কলকাতা রেডিওর গল্পদাদুর আসরে যোগদান করেন৷ সেখানে প্রথমে তিনি রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করেন৷ রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর সেই আসরেই নিজের লেখা কবিতা পাঠ করে তাকে শ্রদ্ধা জানান৷ গল্পদাদুর আসরের জন্য সেই বয়সেই তার লেখা গান মনোনীত হয়েছিল আর তার সেই গান সুর দিয়ে গেয়েছিলেন সেকালের অন্যতম সেরা গায়ক পঙ্কজ মল্লিক৷ সুকান্তকে আমরা কবি হিসেবেই জানি৷ কিন্তু রবীন্দ্রনাথ যেমন কেবল মাত্র কবি ছিলেন না, সাহিত্যের সকল ক্ষেত্রে তার ছিলো অবাধ বিচরণ৷ তেমনি সুকান্তও ঐ বয়সেই লিখেছিলেন কবিতা ছাড়াও, গান, গল্প, নাটক এবং প্রবন্ধ৷ তার ‘ছন্দ ও আবৃত্তি’ প্রবন্ধটি পাঠেই বেশ বোঝা যায় ঐ বয়সেই তিনি বাংলা ছন্দের প্রায়োগিক দিকটিই শুধু আয়ত্বে আনেন নি, সে নিয়ে ভালো তাত্ত্বিক দক্ষতাও অর্জন করেছিলেন৷
সাহিত্যকর্ম
আট-নয় বছর বয়স থেকেই সুকান্ত লিখতে শুরু করেন৷ স্কুলের হাতে লেখা পত্রিকা ‘সঞ্চয়ে’ একটি ছোট্ট হাসির গল্প লিখে আত্মপ্রকাশ করেন৷ তার দিনকতক পরে বিজন গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘শিখা’ কাগজে প্রথম ছাপার মুখ দেখে তার লেখা বিবেকান্দের জীবনী৷ মাত্র এগারো বছর বয়সে ‘রাখাল ছেলে’ নামে একটি গীতি নাট্য রচনা করেন৷ এটি পরে তার ‘হরতাল’ বইতে সংকলিত হয়৷ বলে রাখা ভালো, পাঠশালাতে পড়বার কালেই ‘ধ্রুব’ নাটিকার নাম ভূমিকাতে অভিনয় করেছিলেন সুকান্ত৷ সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাল্য বন্ধু লেখক অরুণাচল বসুর সঙ্গে মিলে আরেকটি হাতে লেখা কাগজ ‘সপ্তমিকা’ সম্পাদনা করেন৷ অরুণাচল তার আমৃত্যু বন্ধু ছিলেন৷ মার্কসবাদী চেতনায় আস্থাশীল কবি হিসেবে সুকান্ত কবিতা লিখে বাংলা সাহিত্যে স্বতন্ত্র স্থান করে নেন৷ সুকান্তকে বলা হয় গণমানুষের কবি৷ অসহায়-নিপীড়িত সর্বহারা মানুষের সুখ, দুঃখ তার কবিতার প্রধান বিষয়৷ অবহেলিত মানুষের অধিকার আদায়ের স্বার্থে ধনী মহাজন অত্যাচারী প্রভুদের বিরুদ্ধে নজরুলের মতো সুকান্তও ছিলেন সক্রিয়৷ যাবতীয় শোষণ-বঞ্চনার বিপক্ষে সুকান্তের ছিল দৃঢ় অবস্থান৷ তিনি তার কবিতার নিপুণ কর্মে দূর করতে চেয়েছেন শ্রেণী বৈষম্য৷ মানবতার জয়ের জন্য তিনি লড়াকু ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন৷ অসুস্থতা অর্থাভাব তাকে কখনো দমিয়ে দেয়নি৷ মানুষের কল্যাণের জন্য সুকান্ত নিরন্তর নিবেদিত থেকেছেন৷ তিনি মানবিক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বিদ্রোহের ডাক দিয়েছেন৷ তার অগ্নিদীপ্ত সৃষ্টি প্রণোদনা দিয়ে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে প্রয়াসী ছিলেন৷ মানবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বাংলা কাব্যধারার প্রচলিত প্রেক্ষাপটকে আমূল বদলে দিতে পেরেছিলেন৷ সুকান্ত কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা দৈনিক স্বাধীনতার (১৯৪৫) ‘কিশোর সভা’ বিভাগ সম্পাদনা করতেন৷ মার্কসবাদী চেতনায় আস্থাশীল কবি হিসেবে সুকান্ত কবিতা লিখে বাংলা সাহিত্যে স্বতন্ত্র স্থান করে নেন৷ তার কবিতায় অনাচার ও বৈষ্যমের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ পাঠকদের সংকচিত করে তোলে৷ গণমানুষের প্রতি গভীর মমতায় প্রকাশ ঘটেছে তার কবিতায়৷ তার রচনাবলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো: ছাড়পত্র (১৯৪৭), পূর্বাভাস (১৯৫০), মিঠেকড়া (১৯৫১), অভিযান (১৯৫৩), ঘুম নেই (১৯৫৪), হরতাল (১৯৬২), গীতিগুচ্ছ (১৯৬৫) প্রভৃতি৷ পরবর্তীকালে উভয় বাংলা থেকে সুকান্ত সমগ্র নামে তার রচনাবলি প্রকাশিত হয়৷ সুকান্ত ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পিসঙ্ঘের পক্ষে আকাল (১৯৪৪) নামে একটি কাব্যগ্রন্থ সম্পাদনা করেন৷ সুকান্তের কবিতা বিষয়বৈচিত্র্যে ও লৈখিক দক্ষতায় অনন্য৷ সাধারণ বস্তুকেও সুকান্ত কবিতার বিষয় করেছেন৷ বাড়ির রেলিং ভাঙা সিঁড়ি উঠে এসেছে তার কবিতায়৷ সুকান্তের কবিতা সব ধরনের বাধা-বিপত্তিকে জয় করতে শেখায়৷ যাপিত জীবনের দুঃখ-যন্ত্রণাকে মোকাবিলা করার সাহস সুকান্তের কবিতা থেকে পাওয়া যায়৷ তারুণ্যের শক্তি দিয়ে উন্নত শিরে মানুষের মর্যাদার জন্য মানুষকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান সুকান্তের কবিতায় লক্ষণীয়৷ সুকান্তের কবিতা সাহসী করে, উদ্দীপ্ত করে৷ তার বক্তব্যপ্রধান সাম্যবাদী রচনা মানুষকে জীবনের সন্ধান বলে দেয়৷ স্বল্প সময়ের জীবনে তিনি বাংলা সাহিত্যকে অনেক কিছু দিয়ে গেছেন৷ রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, জীবনানন্দ দাশসহ সে সময়ের বড় বড় কবির ভিড়ে তিনি হারিয়ে যাননি৷ নিজের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে গেছেন নিজ প্রতিভা, মেধা ও মননে৷ সুকান্ত তার বয়সিক সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করেছেন তার পরিণত ভাবনায়৷ ভাবনাগত দিকে সুকান্ত তার বয়স থেকে অনেক বেশি এগিয়ে ছিলেন৷
" ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়
পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি"
- সুকান্ত ভট্টাচার্য্য
মৃত্যু
একাধারে বিপ্লবী ও স্বাধীনতার আপোসহীন সংগ্রামী কবি সুকান্ত ছিলেন কম্যুনিস্ট পার্টির সারাক্ষণের কর্মী৷ পার্টি ও সংগঠনের কাজে অত্যধিক পরিশ্রমের ফলে নিজের শরীরের উপর যে অত্যাচারটুকু তিনি করলেন তাতে তার শরীরে প্রথম ম্যালেরিয়া ও পরে দুরারোগ্য ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৪৭ সালের ১৩ই মে মাত্র ২১ বছর বয়সে কলিকাতার ১১৯ লাউডট স্ট্রিটের রেড এড কিওর হোমে মৃত্যুবরণ করেন৷ সুকান্ত ভট্টাচার্যের জীবন মাত্র ২১ বছরের আর লেখালেখি করেন মাত্র ৬/৭ বছর৷ সামান্য এই সময়ে নিজেকে মানুষের কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন৷ তার রচনা পরিসরের দিক থেকে স্বল্প অথচ তা ব্যাপ্তির দিক থেকে সুদূরপ্রসারী৷
Quotes
Total 16 Quotes
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।
বলতে পারো ধনীর মুখে যারা যোগায় খাদ্য, ধনীর পায়ের তলায় কেন থাকতে তারা বাধ্য? ‘হিং-টিং-ছট’ প্রশ্ন এসব, মাথায় মধ্যে কামড়ায়, বড়লোকের ঢাক তৈরি গরীব লোকের চামড়ায়।
আমার মৃত্যুর পর, জীবনের যত অনাদর- লাঞ্ছনার বেদনায়, স্পষ্ট হবে প্রত্যেক অন্তর
লাল আগুন ছড়িয়ে পড়েছে দিগন্ত থেকে দিগন্তে, কী হবে আর কুকুরের মতো বেঁচে থাকায়? কতদিন তুষ্ট থাকবে আর অপরের ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট হাড়ে
ততদিন প্রাণ দেব শক্রর হাতে, মুক্তির ফুল ফুটবে সে সংঘাতে। ইতিহাস! নেই অমরত্বের লোভ, আজ রেখে যাই আজকের বিক্ষোভ॥
বাঁচাব দেশ, আমার দেশ, হানবো প্রতিপক্ষ, এ জনতার অন্ধ চোখে আনবো দৃঢ় লক্ষ্য। বাইরে নয় ঘরেও আজ মৃত্যু ঢ’লে বৈরী, এদেশে জন-বাহিনী তাই নিমেষে হয় তৈরী
অনেক স্তব্ধ দিনের এপারে চকিত চতুর্দিক, আজো বেঁচে আছি, মৃত্যুতাড়িত আজো বেঁচে আছি ঠিক।
আমি একটা ছোট্ট দেশলাইয়ের কাঠি এত নগণ্য, হয়তো চোখেও পড়ি না: তবু জেনো মুখে আমার উসখুস করছে বারুদ— বুকে আমার জ্বলে উঠবার দুরন্ত উচ্ছ্বাস; আমি একটা দেশলাইয়ের কাঠি।
চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল, এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি— নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
চাঁদের স্বপ্নে ধুয়ে গেছে মন যে সব দিনে, তাদের আজকে শত্রু বলেই নিয়েছি চিনে, হীন র্স্পধারা ধূর্তের মতো শক্তিশেলে— ছিনিয়ে আমায় নিতে পারে আজো সুযোগ পেলে তাই সতর্ক হয়েছি মনকে রাখি নি ঋণে।