photo

Pelé

Former Minister of Sports of Brazil
Date of Birth : 23 Oct, 1940
Date of Death : 29 Dec, 2022
Place of Birth : State of Minas Gerais, Brazil
Profession : Football Player
Nationality : Brazilian
এদসোঁ আরাঁচ দু নাসিমেঁতু (Pele) ; ২৩ অক্টোবর ১৯৪০―২৯ ডিসেম্বর ২০২২), যিনি পেলে (পর্তুগিজ উচ্চারণ: [peˈlɛ]) নামে অধিক পরিচিত, একজন ব্রাজিলীয় পেশাদার ফুটবলার ছিলেন। পেলে আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে খেলতেন। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলারদের একজন হিসেবে বিবেচিত ছিলেন। ভক্তরা তাকে ফুটবলের সম্রাট বলে থাকে। ব্রাজিলের হয়ে তিনি ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৬৬ ও ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। তিনি ব্রাজিলের জাতীয় দলের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা ও তিনবার বিশ্বকাপজয়ী একমাত্র ফুটবলার।

প্রাথমিক জীবন
পেলে (জন্মনাম এদসোঁ আরাঁচ দু নাসিমেঁতু) ১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর ব্রাজিলের ত্রেস কোরাচয়, মিনাস জেরাইসে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম দন্দিনহো এবং মাতার নাম সেলেস্তে আরাস। তার পিতাও একজন ফুটবলার ছিলেন ও ফ্লুমিনেস ফুটবল ক্লাবে খেলতেন। পেলে দুই ভাই-বোনের মধ্যে বড় ছিলেন এবং মার্কিন উদ্ভাবক টমাস এডিসনের নামানুসারে তার নাম রাখা হয়েছিল। তার পিতামাতা এডিসন (Edison) থেকে "i" সরিয়ে তাকে "এদসোঁ" (Edson) বলে ডাকার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে বিভিন্ন সনদপত্রে ভুল করে তার নামের বানান "Edison" লিখতে দেখা যায়। পরিবারে তার ডাকনাম ছিল "জিকো"। বিদ্যালয়ে পড়াকালীন তিনি "পেলে" ডাকনামটি পান। এটি দাবি করা হয় যে, পেলে নিজেই তার ডাকনামটি দিয়েছিলেন, তার কাছে তার পছন্দের ডাকনাম চাওয়া হলে তিনি স্থানীয় ভাস্কো দা গামার গোলরক্ষক বিলের (Bilé) নাম উচ্চারণ করেন, তবে তিনি ভুলভাবে উচ্চারণ করেন, পরে পেলে অভিযোগ জানালেও বিদ্যালয়ে তার ডাকনাম পেলে রয়ে যায়। পেলে তার আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন যে নামটির অর্থ কী তা নিয়ে তার এবং তার পুরানো বন্ধুদের তখন কোনও ধারণা ছিল না। নামটি "বিলে" থেকে উদ্ভূত হয়েছে, এবং হিব্রু ভাষার এটির অর্থ "অলৌকিক" (פֶּ֫לֶא), এই দুইটি বিষয় ছাড়া পর্তুগিজ ভাষায় শব্দটির কোনও পরিচিত অর্থ নেই।

পেলে সাও পাওলো রাজ্যের বাউরুতে দারিদ্রের মাঝে বেড়ে ওঠেন। চাকর হিসেবে তিনি চায়ের দোকানে কাজ করে বাড়তি অর্থ উপার্জন করতেন। তার বাবা তাকে ফুটবল খেলা শেখান, তবে তার একটি ফুটবল কেনার সামর্থ্য ছিল না, ফলে তিনি মোজার ভিতর সংবাদপত্র, দড়ি বা আঙ্গুর ঢুকিয়ে বল বানিয়ে খেলতেন। পেলে তার যৌবনে বেশ কয়েকটি অপেশাদার দলের হয়ে খেলেছেন, যার মধ্যে রয়েছে সেট ডি সেতেমব্রো, ক্যান্টো দো রিও, সাও পাওলিনহো এবং আমিরিকুইনহা। পেলে দুটি সাও পাওলো রাজ্য যুব চ্যাম্পিয়নশিপে বাউরু অ্যাথলেটিক ক্লাব জুনিয়রের নেতৃত্ব দেন (তাদের প্রশিক্ষক ছিলেন ওয়ালডেমার ডি ব্রিটো)। পেলে তার মধ্য-কৈশোরে, রেডিয়াম নামক একটি ইনডোর ফুটবল দলের হয়ে খেলেন। সেই সময় বাউরুতে ইনডোর ফুটবল সবেমাত্র জনপ্রিয় হতে শুরু করে। তিনি এই অঞ্চলের প্রথম ফুটসাল (ইনডোর ফুটবল) প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। পেলে এবং তার দল প্রথম চ্যাম্পিয়নশিপ এবং আরও বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতা জিতে।

পেলের মতে, ফুটসাল (ইনডোর ফুটবল) কঠিন চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করেছিল: তিনি বলেন এটি ঘাসের উপর ফুটবল খেলার চেয়ে অনেক দ্রুত ছিল এবং পিচে প্রত্যেকেই একে অপরের কাছাকাছি থাকায় খেলোয়াড়দের দ্রুত চিন্তা করতে হত। পেলে, ক্রীড়ায় আরও ভাল ভাবে চিন্তা করতে সহায়তা করার জন্য ফুটসালকে কৃতিত্ব দেন। উপরন্তু, ফুটসালের কারণে তিনি ১৪ বছর বয়সে প্রাপ্তবয়স্কদের সাথে খেলতে পেরেছিলেন। তিনি যে টুর্নামেন্টগুলিতে অংশ নিয়েছিলেন তার মধ্যে একটি টুর্নামেন্টে, প্রথমে তাকে খেলার জন্য খুব কম বয়সী বলে ভাবা হয়েছিল, তবে পেলে শেষ পর্যন্ত ১৪ বা ১৫টি গোল করে শীর্ষ গোলদাতা হিসাবে উক্ত টুর্নামেন্ট শেষ করেন। পেলে বলেন, "এটি আমাকে অনেক আত্মবিশ্বাস দিয়েছিল", "আমি তখন জানতাম যে যাই ঘটুক না কেন ভয় পেয়ো না"।

ক্লাব কর্মজীবন
সান্তোস
১৯৬২ সালে পেলে, সেই সময়ে তাকে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় আখ্যা দেওয়া হত
১৯৫৬ সালে, পেশাদার ক্লাব সান্তোস এফসিতে খেলার জন্য ডি ব্রিটো পেলেকে সাও পাওলোর কাছে অবস্থিত শিল্প ও বন্দর শহর সান্তোসে নিয়ে যান। তিনি পেলেকে দেখিয়ে সান্তোসের পরিচালকদের বলেন যে এই ১৫ বছর বয়সী ছেলে একদিন "বিশ্বের সেরা ফুটবল খেলোয়াড়" হবে। পেলে এস্তাদিও ভিলা বেলমিরোতে ট্রায়ালের সময় সান্তোসের কোচ লুলাকে মুগ্ধ করেন। ১৯৫৬ সালের জুনে পেলে সান্তোস ক্লাবে খেলতে ক্লাবটির সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। সেই সময় স্থানীয় গণমাধ্যমে পেলেকে ভবিষ্যতের সুপারস্টার আখ্যা দিয়ে বেশ প্রচার করা হয়। ১৯৫৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর করিন্থিয়ান্স দে সান্তো আন্দ্রে'র বিপক্ষে ১৫ বছর বয়সে পেলের অভিষেক ঘটে এবং ৭-১ ব্যবধানের জয়ে তিনি আকর্ষণীয় পারফরম্যান্স করেন। এই ম্যাচেই পেলে তার দীর্ঘ ও প্রফুল্ল কর্মজীবনের প্রথম গোলটি করেন।

আন্তর্জাতিক কর্মজীবন
পেলে ১৯৫৭ সালের ৭ জুলাই মারাকানা স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন। ২-১ ব্যবধানে হারা সেই ম্যাচে ১৬ বছর ৯ মাস বয়সে ব্রাজিলের পক্ষে প্রথম গোল করে পেলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতার স্থান দখল করেন।

১৯৫৮ ফিফা বিশ্বকাপ
সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে পেলে তার প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলেন। ১৯৫৮ সালের ফিফা বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডের সেই ম্যাচটা ছিল প্রতিযোগিতার তৃতীয় খেলা। সেই বিশ্বকাপের সর্বকনিষ্ঠ (এবং তখন পর্যন্ত যেকোন বিশ্বকাপ খেলায় সর্বকনিষ্ঠ) খেলোয়াড় পেলের সতীর্থ ছিলেন গ্যারিঞ্চা, যিতো এবং ভাভা। ওয়েলসের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে করা গোলটি ছিল প্রতিযোগিতায় পেলের প্রথম এবং সেই ম্যাচের একমাত্র গোল, যার সাহায্যে ব্রাজিল সেমিফাইনালে উত্তীর্ণ হয়। ম্যাচের সময় পেলের বয়স ছিল ১৭ বছর ২৩৯ দিন, বিশ্বকাপের গোলদাতাদের মধ্যে সবচেয়ে কম।

পরিবার
পেলের তিনজন স্ত্রীর মোট ৭ জন সন্তান ছিল। ১৯৬৬ সালে রোসেমেরি ডস রেইস চোলবিকে বিবাহ করেন। তার ঔরশে ২ কন্য ও ১ ছেলে জন্মগ্রহণ করে। ১৯৮২ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। ১৯৯৪ সালে মনোবিজ্ঞানী ও গসপেল গায়ক অ্যাসিরিয়া লেমোস সেক্সাসকে বিয়ে করেন। তার ঔরশে যমজ জোশুয়া এবং সেলেস্টের জন্ম হয়। ২০০৮ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। ১৯৬৪ সালে গৃহপরিচারিকা আনিজিয়া মাচাদোর সাথে সম্পর্কের কারণে ২ সন্তান জন্মগ্রহণ করে। সান্দ্রা মাচাডো নামের সন্তানটি আদলতের মাধ্যমে ডিএনএ পরীক্ষায় প্রমাণিত হলে সন্তানের স্বীকৃতি দেন। এরপর ৭৩ বছর বয়সে ৪১ বছর বয়সী মার্সিয়া আওকিকে বিয়ে করেন। পেলের অন্যতম সন্তান এডসন চলবি দো নাসিমেন্টো 'এডিনহো' একজন ফুটবলার ছিলেন। তিনি মূলত গোলরক্ষকের ভূমিকায় খেলতেন। ২০০৫ সালে মাদকদ্রব্য পাচারসংক্রান্ত অভিযোগে জড়িয়ে তিনি গ্রেফতার হন।

জীবনী নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র
২০১৬ সালে পেলের জীবন কাহিনী নিয়ে পেলে: বার্থ অব অ্যা লিজেন্ড নামক একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়।  এই চলচ্চিত্রে তার জীবনের উত্থান-পতন ও সকল অর্জনগুলো তুলে ধরা হয়েছে।

ব্যক্তিগত জীবন
সম্পর্ক ও সন্তান
সন্তানাদি
পেলে বিয়ে করেছেন তিনবার, সম্পর্কে জড়িয়েছেন একাধিকবার, এবং সব মিলিয়ে কমপক্ষে ৭টি সন্তানের বাবা হয়েছিলেন।

১৯৬৬ সালে পেলে হোসেমেরি দুস রেইস চোলবিকে বিয়ে করেন। এই ঘরে তাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়েরা ছিলেন কেলি ক্রিস্তিনা (১৩ জানুয়ারি ১৯৬৭-এ জন্ম) যিনি আর্থার দেলুকাকে বিয়ে করেছিলেন, এবং জেনিফার (১৯৭৮-এ জন্ম)। ২৭ আগস্ট ১৯৭০-এ তাদের ছেলে এদসোঁর (পর্তুগিজ ভাষায় ‘এদিনিয়ো’) জন্ম গ্রহণ করে। ১৯৮২ সালে এই দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। ২০১৪ সালের মে মাসে মাদক পাচার ও অর্থ পাচারের অপরাধে এদিনিয়ো ৩৩ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন।পরবর্তীতে আপিলে তার শাস্তি কমে ১২ বছর ১০ মাসে নেমে আসে।

১৯৮১ থেকে ১৮৮৬ পর্যন্ত পেলে ব্রাজিলীয় টিভি উপস্থাপক শুশার সাথে প্রেমের সম্পর্ক থাকার ইঙ্গিত পাওয়া যায় যা তার পেশাগত উত্থানের প্রভাব রেখেছিলো। প্রেম শুরুর সময় তার বয়স ছিলো ১৭ বছর। ১৯৯৪ সালে পেলে মনস্তত্ত্ববিদ ও গসপেল গায়িকা আসিরিয়া লেমোস সেইশাসের সাথে বিবাহ বন্ধনের আবদ্ধ হন। বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসার মাধ্যমে ১৯৯৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি জোশুয়া ও সেলেশ্চি নামের দুই জমজের জন্ম দেন। ২০০৮ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।

বৈবাহিক সম্পর্ক ছাড়াও প্রেমের সম্পর্কের মাধ্যমে পেলের কমপক্ষে দুই জন সন্তান ছিলো। ১৯৬৪ সালে পেলের গৃহপরিচারিকা আনিসিয়া মাশাদুর সাথে সম্পর্কের সময় তাদের সন্তান সান্দ্রা মাশাদুর জন্ম হয়। আনিসিয়া মাশাদুর পেলের কাছ থেকে স্বীকৃতির জন্য বহুদিন লড়াই চালিয়েছিলেন, কিন্তু পেলে বরাবরই ডিএনএ পরীক্ষার ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিলেন। অবশেষে আদালতের নির্দেশে পেলে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সম্মতি দেন যা প্রমাণ করে যে তিনি পেলের মেয়ে ছিলেন। ২০০৬ সালে ক্যান্সারে সান্দ্রা মাশাদুর মৃত্যু হয়।

৭৩ বছর বয়সে পেলে ৪১ বছর বয়সী মার্সিয়া এওকিকে বিয়ের ইচ্ছা পোষণের ঘোষণা দেন। সাও পাওলোর পেনাপোলিস শহরে জন্ম এই জাপানি-ব্রাজিলীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানিকারকের সাথে ২০১০ সাল থেকে পেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে নিউ ইয়র্কে তাদের প্রথম দেখা হয়, পরিবর্তীতে ২০০৮ সালে তাদের আবারও সাক্ষাৎ ঘটে।২০১৬ সালের জুলাইয়ে তারা বিয়ে করেন।

মৃত্যু
পেলে ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ সালে ৮২ বছর বয়সে কোলন ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন

Quotes

Total 0 Quotes
Quotes not found.