photo

Mohammed Shahabuddin

President of Bangladesh
Date of Birth : 10 December, 1949 (Age 75)
Place of Birth : Pabna, Bangladesh
Profession : President, Jurist
Nationality : Bangladeshi
Social Profiles :
Facebook
মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন (Mohammed Shahabuddin) হলেন বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি। বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি ২৪ এপ্রিল ২০২৩ তারিখ থেকে দায়িত্বাধীন আছেন। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পূর্বে তিনি জেলা ও দায়রা জজ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার ছিলেন।

প্রাথমিক ও শিক্ষা জীবন

মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ১৯৪৯ সালের ১০ই ডিসেম্বর তৎকালীন পাকিস্তান অধিরাজ্যের পূর্ববঙ্গ প্রদেশের (বর্তমান বাংলাদেশের) পাবনা জেলার শিবরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শরফুদ্দিন আনছারী ও মাতার নাম খায়রুন্নেসা। তিনি ১৯৬৬ সালে পাবনা রাধানগর মজুমদার একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৮ সালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন ও ১৯৭১ সালে (১৯৭২ সালে অনুষ্ঠিত) বিএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৭৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। পরে পাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এর আহ্বায়ক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৯ এপ্রিল তিনি ভারতে যান এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে পাবনা জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধ করেন।

কর্মজীবন

মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ১৯৮০ থেকে দুই বছর দৈনিক বাংলার বাণীতে সাংবাদিকতা করেন। পরে আইন পেশায় যোগ দেন। শুরুতে তিনি পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলেন। ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডারে তিনি মুন্সেফ (সহকারী জজ) পদে যোগ দেন। সাহাবুদ্দিন ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশন-এর মহাসচিব নির্বাচিত হন। কর্মের ধারাবাহিকতায় তিনি যথাক্রমে যুগ্ম জেলা জজ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং জেলা ও দায়রা জজ পদে দায়িত্ব পালন করে ২০০৬ সালে অবসরে যান।

সরকারি চাকরিতে থাকাকালীন ১৯৯৯ সালে সাহাবুদ্দিন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ১০ সদস্যবিশিষ্ট দলের সদস্য হিসেবে ‘আন্তর্জাতিক আইন সম্মেলন’-এ যোগদানের জন্য চীনের রাজধানী বেইজিং সহ চীনের বিভিন্ন প্রদেশ পরিদর্শন করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালকের দায়িত্ব পালনকালে তিনি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন সেমিনারে যোগদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড সফর করেন। জাতিসংঘের অর্থায়নে এই সফর অনুষ্ঠিত হয় এবং এই সফরে সংসদ সদস্য, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ বেসামরিক আমলারাও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা, হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের ঘটনা তদন্তে পরবর্তী সময়ে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান (সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির পদমর্যাদায়) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার কারণ ও সুপারিশ প্রণয়নের জন্য গঠিত তাদের দাখিলকৃত প্রতিবেদন সরকার গেজেট আকারে প্রকাশ করে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বিচারিক কাজের পাশাপাশি তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক হিসেবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাসহ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডেস্ক অফিসার হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালের ১৪ মার্চ তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ২০১৬ সালে অবসরে যান।

দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক উত্থাপিত কথিত পদ্মাসেতু সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে অন্যতম মুখ্য ভূমিকা পালন করেন এবং বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের মিথ্যা ও অন্তঃসারশূন্যতা প্রমাণে সমর্থ হন। তার প্রেরিত তদন্ত প্রতিবেদন কানাডার আদালত কর্তৃক সমর্থিত হয়।

তিনি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান এবং এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক লিমিটেডের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

রাজনৈতিক জীবন

সাহাবুদ্দিন ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সংঘটিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর তিনি কারাবরণ করেন।

তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ২২তম জাতীয় পরিষদে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

পরবর্তীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের মৃত্যুতে খালি থাকা প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান পদে তাকে মনোনীত করা হয়।

রাষ্ট্রপতিত্ব

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখ সাহাবুদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। এর আগের দিন, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য তার নামে দুটি মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়। অতঃপর এ নির্বাচনে অন্য কোন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল না করায় ও প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাইপূর্বক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ১৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করেন।

শপথ গ্রহণ
২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল বঙ্গভবনে সকাল ১১টায় বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসাবে তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান। একইদিনে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ থেকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্ৰহণ সংক্রান্ত সরকারী গেজেট প্রকাশিত হয়।

শ্রম বিল
২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন শ্রম বিল ২০২৩ ভেটো দিয়ে পুনর্বিবেচনার জন্য পাঠিয়েছিলেন যা আগে সংসদে পাস হয়েছিল।

শেখ হাসিনার পদত্যাগ
৫ আগস্ট ২০২৪ সালে, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের ফলে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান। একই দিন জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন শেখ হাসিনার পদত্যাগের কথা নিশ্চিত করেন। এরপর ৬ অগাস্ট ২০২৪ সালে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন।

বিতর্ক

আরও দেখুন: ২০২৪ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ আন্দোলন
অক্টোবর ২০২৪ সালে, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন মানবজমিন এর সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে উদ্ধৃত করেন যে,

আমি অনেকবার পদত্যাগপত্র সংগ্রহের] চেষ্টা করেছি কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। হয়তো তিনি সময় পাননি। যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে, একদিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদত্যাগপত্রের কপি সংগ্রহ করতে আসেন। আমি তাকে বলেছিলাম যে আমিও খুঁজছি
এই বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারী শক্তির পক্ষে থাকার অভিযোগ তুলেন এবং তার পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন শুরু করেন ছাত্র-জনতা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠনগুলো। এরই ধারাবাহিকতায় তার বাসভবন বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভ করে তার পদত্যাগ চান বিক্ষোভকারীরা। পরে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন এই বিষয়টি মীমাংসিত এবং কোন বিতর্ক সৃষ্টি না করার জন্য আহ্বান জানান।

ব্যক্তিগত জীবন

মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ১৯৭২ সালের ১৬ নভেম্বর রেবেকা সুলতানার সাথে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের এক পুত্র সন্তান রয়েছে, যার নাম মো. আরশাদ আদনান (রনি)।

কিংবদন্তি

তার সম্মানে ২০২০ সালে পাবনা পৌরসভা কর্তৃক নির্মিত একটি উদ্যানের নামকরণ করা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বিনোদন পার্ক।

Quotes

Total 0 Quotes
Quotes not found.