photo

Lionel Messi

Argentine footballer
Date of Birth : 24 Jun, 1987
Place of Birth : Rosario, Argentina
Profession : Argentine Footballer
Nationality : Argentine
Social Profiles :
Facebook
Instagram
লিওনেল আন্দ্রেস “লিও” মেসি (Lionel Messi) (স্পেনীয় উচ্চারণ: (ljoˈnel anˈdɾes ˈmesi) (শুনুন); জন্ম: (২৪ জুন ১৯৮৭) একজন আর্জেন্টাইন পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড় যিনি মেজর লিগ সকার ক্লাব ইন্টার মায়ামি এবং আর্জেন্টিনার জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে একজন আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে খেলেন। তিনি বর্তমানে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ৫ই আগস্ট, ২০২১ তারিখে বার্সেলোনা ঘোষণা করে যে লিওনেল মেসি ক্লাবের সাথে চুক্তি নবায়ন করবেন না। ক্লাবটি মেসির চলে যাওয়ার কারণ হিসাবে স্প্যানিশ লিগার নিয়মকানুন দ্বারা সৃষ্ট আর্থিক এবং কাঠামোগত বাধার কথা উল্লেখ করেছে। মেসি বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত।

প্রারম্ভিক জীবন
মেসি আর্জেন্টিনার রোজারিওতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা হোর্হে হোরাসিও মেসি ইস্পাতের কারখানায় কাজ করতেন এবং মা সেলিয়া মারিয়া কুচ্চিত্তিনি ছিলেন একজন খণ্ডকালীন পরিচ্ছন্নতা কর্মী। তার পৈতৃক পরিবারের আদি নিবাস ছিল ইতালির আকোনা শহরে। তার পূর্বপুরুষদের একজন অ্যাঞ্জেলো মেসি ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে সেখান থেকে আর্জেন্টিনায় চলে আসেন। মেসির বড় দুই ভাই এবং এক ছোট বোন রয়েছে। বড় দুই ভাইয়ের নাম রদ্রিগো ও মাতিয়াস এবং ছোট বোনের নাম মারিয়া সল। পাঁচ বছর বয়সে মেসি স্থানীয় ক্লাব গ্রান্দোলির হয়ে ফুটবল খেলা শুরু করেন, যার কোচ ছিলেন তার বাবা হোর্হে। ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে মেসি রোজারিও ভিত্তিক ক্লাব নিওয়েল'স ওল্ড বয়েজে যোগ দেন। তিনি একটি স্থানীয় যুব পরাশক্তির অংশ হয়ে পড়েন, যারা পরবর্তী চার বছরে একটি মাত্র খেলায় পরাজিত হয়েছিল এবং স্থানীয়ভাবে “দ্য মেশিন অফ ‘৮৭” (The machine of '87) নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। তাদেরকে এই নামে অভিহিত করার কারণ তাদের জন্ম সাল ছিল ১৯৮৭।

১১ বছর বয়সে মেসির গ্রোথ হরমোনের (growth hormone) সমস্যা ধরা পড়ে। স্থানীয় ক্লাব রিভার প্লেট মেসির প্রতি তাদের আগ্রহ দেখালেও সেসময় তারা মেসির চিকিৎসা খরচ বহন করতে অপারগ ছিল। এ চিকিৎসার জন্যে প্রতিমাসে প্রয়োজন ছিল ৯০০ মার্কিন ডলার। বার্সেলোনার তৎকালীন ক্রীড়া পরিচালক কার্লেস রেক্সাস মেসির প্রতিভা সম্পর্কে জানতে পারেন। তিনি মেসির খেলা দেখে মুগ্ধ হন। হাতের কাছে কোন কাগজ না পেয়ে একটি ন্যাপকিন পেপারে তিনি মেসির বাবার সাথে চুক্তি সাক্ষর করেন। বার্সেলোনা মেসির চিকিত্‍সার সমস্ত ব্যয়ভার বহন করতে রাজি হয়। এরপর মেসি এবং তার বাবা বার্সেলোনায় পাড়ি জমান। সেখানে মেসিকে বার্সেলোনার যুব একাডেমি লা মাসিয়া'র সভ্য করে নেয়া হয়।

বার্সেলোনা
মেসি ২০০০ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত বার্সেলোনার যুব একাডেমির ইনফান্তিল বি, কাদেতে বি এবং কাদেতে এ দলে খেলেছেন। কাদেতে এ দলে খেলার সময় তিনি ৩০ খেলায় ৩৭ গোল করেন। ২০০৩ সালে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে তাকে ক্লাব থেকে প্রায় ছেড়েই দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু যুব দলের প্রশিক্ষণকর্মীদের জোরাজুরিতে ক্লাবের ব্যবস্থাপনা পরিষদ তাকে দলে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় (সেসময় সেস্‌ ফ্যাব্রিগাসকে ছেড়ে দেওয়া হয়)। ২০০৩–০৪ মৌসুমে মেসি পাঁচটি আলাদা দলে খেলেন, যা একটি রেকর্ড। তিনি হুভেনিল বি দলে খেলে ১টি গোল করেন এবং হুভেনিল এ দলে খেলার সুযোগ লাভ করেন। সেখানে তিনি ১৪ খেলায় ২১টি গোল করেন। ২০০৩ সালের ২৯ নভেম্বর, বার্সেলোনা সি (তের্সেরা দিভিসিওন) দলে এবং ২০০৪ সালের ৬ মার্চ, বার্সেলোনা বি (সেহুন্দা দিভিসিওন) দলে তার অভিষেক হয়। ঐ মৌসুমে তিনি উভয় দলের হয়েই খেলেন এবং সি দলের হয়ে তার গোল সংখ্যা ছিল ১০ খেলায় ৫ এবং বি দলের হয়ে ৫ খেলায় শূন্য। এই দুই দলে অভিষেকের পূর্বে মেসির মূল দলে অভিষেক হয়েছিল ২০০৩ সালের ১৬ নভেম্বর, পোর্তোর বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচে (১৬ বছর এবং ১৪৫ দিন বয়সে)।

২০১৬-১৭ মৌসুম
আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার ইনজুরির ফলে মেসি স্প্যানিশ সুপারকোপার ম্যাচে অধিনায়কত্বের মাধ্যমে ২০১৬-১৭ মৌসুম শুরু করেন। ১৩ সেপ্টেম্বর উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে সেল্টিকের বিরুদ্ধে মেসি মৌসুমে প্রথমবারের মতো হ্যাট্রিক করেন, যা চ্যাম্পিয়নস লিগে তার ৬ষ্ঠ হ্যাট্রিক ছিল (তৎকালীন সর্বোচ্চ)। এর ১ সপ্তাহ পর আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ম্যাচে তিনি কুঁচকির চোটে পড়ে ৩ সপ্তাহের জন্য খেলা থেকে ছিটকে যান। ১৬ অক্টোবর দেপার্তিভো লা করুণার বিপক্ষে ম্যাচে বদলি হিসেবে নেমে ৩ মিনিটের মধ্যে গোল করে তিনি মাঠে ফিরেন। এর ৩ দিন পর ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে ম্যাচে তিনি ক্লাব ক্যারিয়ারের ৩৭তম হ্যাট্রিক করেন। ১ নভেম্বর ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচে মেসি চ্যাম্পিয়নস লিগ গ্রুপ পর্যায়ে তার ক্যারিয়ারের ৫৪তম গোলটি করেন, যা রাউলের পূর্ববর্তী ৫৩ গোলের রেকর্ডটি ভেঙে দেয়।

২০১৮-১৯ মৌসুম
আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার বিদায়ের ফলে অধিনায়কত্বের বাহুবন্ধনী মেসির হাতে পড়ে। ১২ আগস্ট সেভিয়াকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে স্প্যানিশ সুপারকোপা জয়ের মাধ্যমে মেসি অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ট্রফি জিতেন। ১৯ আগস্ট আলাভাসের বিপক্ষে ম্যাচে মেসির প্রথম গোলটি বার্সেলোনার লা লিগা ইতিহাসে ৬০০০তম গোল ছিল। ১৮ সেপ্টেম্বর উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে পিএসভি এন্দোভানের বিরুদ্ধে মেসি হ্যাট্রিক করেন, যা চ্যাম্পিয়নস লিগে তার ৮ম হ্যাট্রিক ও ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ২০ অক্টোবর সেভিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে মেসি ইনজুরিতে পড়েন ও তিন সপ্তাহের জন্য খেলা থেকে ছিটকে যান। ৮ ডিসেম্বর এস্পানিয়লের বিপক্ষে ৪-০ গোলে জয়ী ম্যাচে মেসি জোড়া গোল করেন। ম্যাচে মেসির প্রথম গোলটির মাধ্যমে ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে লালিগায় টানা ১৩ মৌসুম কমপক্ষে ১০ গোল করার ইতিহাস গড়েন তিনি।

২০২০-২১ মৌসুম
২৭ সেপ্টেম্বর লা লিগায় ভিলারিয়ালের বিপক্ষে ৪-০ ব্যবধানে জয়ী ম্যাচে পেনাল্টি থেকে গোল করে মৌসুম শুরু করেন। এর দুই দিন পর লুইস সুয়ারেসের প্রস্থান নিয়ে মন্তব্য করে তিনি পুনরায় বোর্ডের সমালোচনা করেন। মেসি এ বিষয়ে বলেন, "এখন কোনো কিছুই আমাকে আর বিস্মিত করে না।" ২০ অক্টোবর চ্যাম্পিয়নস লিগে ফেরেঙ্কভারোসের বিপক্ষে ৫-১ ব্যবধানে জয়ী ম্যাচে পেনাল্টিতে গোল করে ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে মেসি টানা ১৬ চ্যাম্পিয়নস লিগে গোল করার রেকর্ড করেন। ২৫ নভেম্বর প্রকাশিত ২০২০ ফিফা বর্ষসেরা পুরুষ খেলোয়াড়ের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ও পরে সেরা ৩ জন খেলোয়াড়ের তালিকায় মেসি জায়গা করে নেন। ২৯ নভেম্বর মেসি ওসাসুনার বিপক্ষে ৪-০ ব্যবধানে জয়ী ম্যাচে দলের চতুর্থ গোলটি করেন এবং ৪ দিন পূর্বে প্রয়াত আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বার্সেলোনার জার্সির নিচে পরিহিত সাবেক ক্লাব নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজের জার্সি প্রদর্শন করে স্ক্রিনে ম্যারাডোনার ছবির দিকে উভয় হাত উঠিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। উক্ত জার্সিটি ছিল ক্লাবটির হয়ে ১৯৯৩ সালে ম্যারাডোনার পরিহিত ১০ নং জার্সির অনুরূপ। মেসি ১৭ ডিসেম্বর ঘোষিত ফিফা বর্ষসেরা পুরুষ খেলোয়াড়ের তালিকায় রবের্ত লেভানদোভস্কি ও ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর পরে ৩য় হন এবং ফিফা ফিফপ্রো বিশ্ব একাদশে চতুর্দশতম বারের মতো জায়গা করে নেন। ২৩ ডিসেম্বর মেসি লালিগায় রিয়াল ভালাদোলিদের বিপক্ষে ম্যাচে তার বার্সেলোনা ক্যারিয়ারের ৬৪৪তম গোল করে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সান্তোসের হয়ে পেলের করা এক ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটি ছাড়িয়ে যান। মেসির এই রেকর্ডটি বুদউয়েজার নামক বিয়ার কোম্পানি সকল গোলকিপারকে যাদের বিরুদ্ধে মেসি গোল করেছেন বিয়ারের বোতল পাঠিয়ে উদযাপন করে।


আন্তর্জাতিক কর্মজীবন
আর্জেন্টাইন-স্পেনীয় নাগরিক হিসেবে ২০০৪ সালে মেসিকে স্পেনের জাতীয় অনূর্ধ্ব ২০ ফুটবল দলে খেলার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু মেসি তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি ২০০৪ সালের জুনে, আর্জেন্টিনার অনূর্ধ্ব ২০ দলের হয়ে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে প্রথম প্রীতি খেলায় মাঠে নামেন। তিনি ২০০৫ দক্ষিণ আমেরিকান যুব চ্যাম্পিয়নশিপে আর্জেন্টিনা দলের হয়ে খেলেন, যেখানে আর্জেন্টিনা তৃতীয় হয়। ২০০৫ ফিফা যুব চ্যাম্পিয়নশিপে আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হয় এবং তিনি ৬টি গোল করে প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন বল এবং গোল্ডেন বুটের পুরস্কার জিতেন।

২০০৬ বিশ্বকাপ
২০০৫–০৬ মৌসুমে ইনজুরির কারণে ২০০৬ ফিফা বিশ্বকাপে মেসির খেলা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তবুও মেসি দলে ডাক পান। বিশ্বকাপ শুরুর পূর্বে আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব ২০ দলের বিপক্ষে সিনিয়র দলের হয়ে একটি খেলায় তিনি ১৫ মিনিট খেলেন এবং অ্যাঙ্গোলার বিপক্ষে একটি প্রীতি খেলায় ৬৪তম মিনিটে বদলি হিসেবে নামেন। আইভরি কোস্টের বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রথম খেলায় মেসি সাইড বেঞ্চে বসেছিলেন। পরের খেলায় সার্বিয়া এবং মন্টেনেগ্রোর বিপক্ষে খেলার ৭৪তম মিনিটে বদলি হিসেবে মাঠে নামেন মেসি এবং ৭৮তম মিনিটে হের্নান ক্রেসপোর একটি গোলে সহায়তা করেন। খেলার ৮৮তম মিনিটে মেসি একটি গোল করেন। এতে করে, আর্জেন্টিনার সর্বকনিষ্ঠ এবং ইতিহাসের ৬ষ্ঠ কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে গোল করার কৃতিত্ব অর্জন করেন তিনি। খেলায় আর্জেন্টিনা ৬–০ ব্যবধানে জয় লাভ করে। নেদারল্যান্ডস-এ­র বিপক্ষে পরের খেলায় মেসি প্রথম দলে সুযোগ পান। খেলাটি ০–০ সমতায় শেষ হয়। মেক্সিকোর বিপক্ষে রাউন্ড-১৬ এর খেলায় ৮৪তম মিনিটে মেসি বদলি হিসেবে খেলতে নামেন। খেলায় উভয় দল তখন ১–১ গোলে সমতায় ছিল। খেলতে নেমেই তিনি একটি গোল করলেও তা অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায়। অতিরিক্ত সময়ে রদ্রিগুয়েজের গোলে আর্জেন্টিনা ২–১ ব্যবধানে জয় পায়। কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে কোচ জোসে পেকারম্যান মেসিকে বেঞ্চে বসিয়ে রাখেন। পেনাল্টি শুটআউটে ৪–২ ব্যবধানে আর্জেন্টিনা হেরে যায় এবং টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়ে।

২০১০ বিশ্বকাপ
২০১০ বিশ্বকাপে মেসি ১০ নম্বর জার্সি পরে মাঠে নামেন। এই প্রথম বড় কোন প্রতিযোগিতায় তিনি ১০ নম্বর জার্সি পরে নামেন। বিশ্বকাপের প্রথম খেলায়, নাইজেরিয়ার বিপক্ষে খেলার পুরোটা সময়ই তিনি মাঠে ছিলেন। তিনি গোল করার অনেকগুলো সুযোগ তৈরি করেছিলেন, কিন্তু তার সবকয়টি প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন নাইজেরিয়ান গোলরক্ষক ভিনসেন্ট এনইয়েমা। খেলায় আর্জেন্টিনা ১–০ ব্যবধানে জয় লাভ করে। পরের খেলায় কোরিয়া রিপাবলিকের বিপক্ষে মেসি মাঠে নামেন। খেলায় আর্জেন্টিনা ৪–১ ব্যবধানে জয় লাভ করে। ম্যারাডোনার­ অধীনে তিনি মূলত একজন আক্রমণাত্মক মাঝমাঠের খেলোয়াড় বা প্লেমেকার হিসেবে খেলেছিলেন। খেলার সবকটি গোলেই তার ভূমিকা ছিল। তার সহায়তায় গঞ্জালো হিগুয়েইন খেলায় হ্যাট্রিক করেন। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার তৃতীয় ও গ্রুপ পর্বের শেষ খেলায় গ্রিসের বিপক্ষে মেসি অধিনায়ক হিসেবে মাঠে নামেন। খেলায় আর্জেন্টিনা ২–০ ব্যবধানে জয় লাভ করে। কোন গোল না করলেও এই জয়ে মেসির বড় ভূমিকা ছিল, যার ফলে তাকে ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত করা হয়।

২০১৪ বিশ্বকাপ ২০১৪ বিশ্বকাপের আর্জেন্টিনা দলে মেসি অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৫ জুন, গ্রুপ পর্বের প্রথম খেলায় বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার বিপক্ষে ২-১ গোলে জয় পায় আরজেন্টিনা। খেলার ৬৫তম মিনিটে তিনি বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার রক্ষণভাগের তিন জন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে আর্জেন্টিনার হয়ে দ্বিতীয় গোলটি করেন। ২০০৬ বিশ্বকাপে সার্বিয়া ও মন্টিনিগ্রোর বিপক্ষে গোল করার আট বছর পর করা এই গোলটি বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় তার দ্বিতীয় গোল। গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় খেলায় তিনি ইরানের বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধের শেষের দিকে যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে আর্জেন্টিনার পক্ষে একমাত্র জয়সূচক গোল করেন। প্রায় ২৫ মিটার দূর থেকে নেয়া শটে বলটি সামান্য বেঁকে গোলপোস্টের বাম পাশের উপরের কোণা দিয়ে জলে জড়ায়। এই গোলটি ছিল তার ৪০তম আন্তর্জাতিক গোল। এই জয়ের মাধ্যমে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে নিজেদের স্থান নিশ্চিত করে। ২৫ জুন, গ্রুপ পর্বের শেষ খেলায় নাইজেরিয়ার বিপক্ষে জোড়া গোল করার মাধ্যমে মেসি প্রতিযোগিতায় তার গোল সংখ্যা ৪২-এ নিয়ে যান। খেলায় আর্জেন্টিনা ৩-২ গোলে জয় লাভ করে এবং গ্রুপের প্রথম স্থানে থেকে গ্রুপপর্ব শেষ করে। গ্রুপ পর্বের ৩টি খেলায়ই সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন মেসি। ১৬ দলের পর্বে আরজেন্টিনা মুখোমুখি হয় সুইজারল্যান্ডের। খেলাটির ৯০ মিনিট গোলশূন্য অবস্থায় শেষ হলে তা অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় এবং অতিরিক্ত সময়ে দি মারিয়ার করা একমাত্র গোলে সহায়তা করেন মেসি। এই খেলায় সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে তিনি গ্রুপ পর্বের সবকয়টিসহ টানা চারটি খেলায় সেরা খেলোয়াড় হিসেবে স্বীকৃতি পান। কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের বিপক্ষে জয়ের মাধ্যমে আরজেন্টিনা সেমি ফাইনালে খেলার সুযোগ করে নেয়। সেমি ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে খেলাটি অমিমাংসিতভাবে শেষ হলে পেনাল্টি শুটআউটে গড়ায়। মেসি প্রথম পেনাল্টি নেন এবং তা গোলে পরিণত করার মাধ্যমে আর্জেন্টিনাকে জয়লাভে সাহায্য করেন। ফাইনালে আরজেন্টিনা জার্মানির মুখোমুখি হয়। খেলায় আর্জেন্টিনা দলে কিছু গোলের সুযোগ হাতছাড়া করে। মেসির একটি শট গোলবারের বাহিরে দিয়ে চলে যায়। এছাড়া আর্জেন্টিনার একটি গোল অফসাইডের কারণে বাতিল হয়। ৯০ মিনিট শেষে খেলাটি অমিমাংসিত থাকলে ৩০ মিনিটের অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়। খেলার শেষের দিকে মারিও গোটজে'র করা একমাত্র গোলে জয় পায় জার্মানি। বিশ্বকাপ না জিতলেও মেসিকে প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত করা হয়। যদিও তাঁর এই পুরস্কার জয় নিয়ে বিতর্ক

কোপা আমেরিকা ও বিশ্বকাপ জয়
১৪ জুন ২০২১-এ, ব্রাজিলে ২০২১ কোপা আমেরিকার আর্জেন্টিনার উদ্বোধনী গ্রুপ ম্যাচে চিলির বিপক্ষে ১-১ ড্রয়ে ফ্রি কিক থেকে গোল করেন মেসি। ২১ জুন, মেসি তার ১৪৭ তম ম্যাচে খেলেন এবং টুর্নামেন্টের তাদের তৃতীয় খেলায় প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ১-০ জয়ে আর্জেন্টিনার হয়ে সবচেয়ে বেশি খেলার জন্য জাভিয়ের মাশ্চেরানোর রেকর্ডের সমান করেন। এক সপ্তাহ পরে, তিনি রেকর্ডটি ভেঙে দেন যখন তিনি তার দলের চূড়ান্ত গ্রুপ ম্যাচে বলিভিয়ার বিপক্ষে ৪-১ ব্যবধানে জয়লাভ করেন, পাপু গোমেজের প্রথম গোলে সহায়তা করেন এবং পরে দুটি গোল করেন। ৩ জুলাই, প্রতিযোগিতার কোয়ার্টার ফাইনালে ইকুয়েডরের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে জয়ে মেসি দুবার সহায়তা করেন এবং ফ্রি-কিক থেকে গোল করেন। ৬ জুলাই, কলম্বিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনালে ১-১ গোলে ড্র করে, মেসি তার দেশের হয়ে তার ১৫০তম উপস্থিতি করেন এবং টুর্নামেন্টে তার পঞ্চম অ্যাসিস্ট নথিভুক্ত করেন, লাউতারো মার্টিনেজের জন্য একটি কাট-ব্যাক, যা তার নয়টি গোল অবদানের রেকর্ডের সাথে মিলে যায়। পাঁচ বছর আগে থেকে একটি একক টুর্নামেন্টে; পরে তিনি আর্জেন্টিনার শেষ ৩-২ পেনাল্টি শুট-আউট জয়ে তার স্পট কিকে গোল করে তার পঞ্চম আন্তর্জাতিক ফাইনালে এগিয়ে যান। ১০ জুলাই, আর্জেন্টিনা ফাইনালে স্বাগতিক ও ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে ১-০ গোলে পরাজিত করে, মেসিকে তার প্রথম বড় আন্তর্জাতিক শিরোপা এবং ১৯৯৩ সালের পর আর্জেন্টিনার প্রথম, সেইসাথে তার দেশের যৌথ রেকর্ড ১৫ তম কোপা আমেরিকা সামগ্রিক করে।আর্জেন্টিনার করা ১২ টি গোলের মধ্যে নয়টিতে মেসি সরাসরি জড়িত ছিলেন, চারটি করেছেন এবং পাঁচটিতে সহায়তা করেছেন; তিনি তার পারফরম্যান্সের জন্য টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন, যা তিনি নেইমারের সাথে ভাগ করে নেন। এছাড়াও তিনি কলম্বিয়ার লুইস দিয়াজের সাথে চার গোল করে সর্বোচ্চ স্কোরার হিসেবে সমাপ্ত হন, মেসিকে গোল্ডেন বুট পুরস্কৃত করা হয় কারণ তার আরও সহায়তা ছিল। ৯ সেপ্টেম্বর, মেসি ২০২২ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বলিভিয়ার বিপক্ষে হোম জয়ে একটি হ্যাটট্রিক করেন যা তাকে ৭৯ গোল সহ দক্ষিণ আমেরিকার সর্বোচ্চ পুরুষ আন্তর্জাতিক স্কোরার হিসেবে পেলের উপরে চলে যায়।

ব্যক্তিগত জীবন
মাকারিনা লেমোস নামক এক মেয়ের সাথে মেসির সম্পর্ক ছিল। মেসি পরে বলেছিলেন, ২০০৬ বিশ্বকাপের আগে ইনজুরি সারিয়ে যখন তিনি আর্জেন্টিনায় যান, তখন মেয়ের বাবা ঐ মেয়ের সাথে মেসিকে পরিচয় করিয়ে দেন। লুসিয়ানা স্যালাজার নামক এক আর্জেন্টাইন মডেলের সাথেও তার সম্পর্ক ছিল। ২০০৯ সালে ক্যানাল ৩৩ টেলিভেশন চ্যানেলের ‘‘হ্যাটট্রিক বার্সা’’ নামক অনুষ্ঠানে মেসি বলেন, ‘‘আমার একজন মেয়েবন্ধু আছে এবং সে আর্জেন্টিনাতে থাকে। আমি সুখী এবং নিশ্চিন্তে আছি।’’ সিজেস কার্নিভালে, অ্যান্তোনেলা রকুজ্জো নামক ঐ মেয়ের সাথে মেসিকে দেখা যায়। রকুজ্জো রোজারিওর স্থানীয় অধিবাসী। ২০১২ সালের ২ জুন, ইকুয়েডরের বিপক্ষে মেসি একটি গোল করেন ও একটি গোলে সহায়তা করেন। গোল করার পর তিনি বলটি তার জার্সির ভেতর ঢুকিয়ে নেন, যা তার মেয়েবন্ধুর গর্ভবতী হওয়ার ইঙ্গিত বহন করে। রকুজ্জো তার টুইটারে পোস্ট করেন যে তিনি সেপ্টেম্বরে সন্তান জন্ম দিতে যাচ্ছেন। মেসি নিশ্চিত করেন যে এটি একটি ছেলে শিশু, সে অক্টোবরে জন্মগ্রহন করবে এবং তিনি ও তার মেয়েবন্ধু শিশুটির নাম থিয়াগো রাখার পরিকল্পনা করেছেন। তবে, থিয়াগোর জন্ম একটু পরেই হয়। ২ নভেম্বর, থিয়াগো জন্মগ্রহণ করে এবং মেসি সন্তানের বাবা হন। বার্সেলোনার দাপ্তরিক ওয়েবসাইটে সংক্ষিপ্তভাবে প্রকাশ করা হয়, ‘‘লিও মেসি একজন বাবা।’’ পাশাপাশি, মেসি তার ফেসবুক পাতায় পোস্ট করেন, ‘‘আজ আমি বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষ, আমার সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে এবং এই উপহারের জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ।

দানশীলতা
২০০৭ সালে, মেসি প্রতিষ্ঠা করেন ‘‘লিও মেসি ফাউন্ডেশন’’। এই সংস্থা সুরক্ষিত নয় এমন শিশুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের প্রতি নজর রাখে। শৈশবে মেসিরও শারীরিক সমস্যা ছিল, তাই এই সংস্থা আর্জেন্টিনার রোগাক্রান্ত শিশুদের স্পেনে নিয়ে গিয়ে চিকিত্‍সার ব্যবস্থা করে এবং যাতায়াত, চিকিত্‍সা ও অন্যান্য ব্যয় বহন করে। এই সংস্থার জন্য মেসি নিজে চাঁদা সংগ্রহ করে থাকেন। এছাড়াও হার্বালাইফ নামক একটি বহুমুখী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান লিও মেসি ফাউন্ডেশনের সহায়তা করে থাকে।

সম্পত্তি
২০১০ সালের মার্চে, ফুটবল ভিত্তিক ফরাসি ম্যাগাজিন ফ্রান্স ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ফুটবলারদের তালিকায় মেসিকে শীর্ষস্থানে রাখে। ২৯.৬ মিলিয়ন পাউন্ড (৩৩ মিলিয়ন ইউরো) বার্ষিক আয় নিয়ে ডেভিড বেকহ্যাম ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো পেছনে ফেলে তিনি শীর্ষস্থান দখল করেন। বেতন, বোনাস ও মাঠের বাইরের বিভিন্ন মাধ্যম হতে তিনি এই অর্থ আয় করে থাকেন। তার সর্বমোট সম্পত্তি হিসাব করা হয়েছে ১১০ মিলিয়ন ইউএস ডলার। ২০১৪ সালের মে মাসে, ফোর্বস কর্তৃক প্রকাশিত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক প্রাপ্ত খেলোয়াড়দের তালিকায় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পেছনে থেকে দ্বিতীয় হন মেসি। বিগত ১২ মাসে তার মোট আয় ৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

পারিশ্রমিক
২০১২ সালের ডিসেম্বরে, বার্সেলোনা ঘোষণা করে যে মেসি পাঁচ বছরের জন্য চুক্তি নবায়ণ করতে যাচ্ছেন যার মাধ্যমে তিনি ২০১৮ সাল পর্যন্ত বার্সেলোনায় থাকবেন। এই চুক্তিতে তার পারিশ্রমিক বাড়িয়ে করা হয় ১৬ মিলিয়ন ইউরো (২১.২ মিলিয়ন ডলার), যা তাকে বিশ্বের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত ফুটবলারে পরিণত করে। স্পেনে এই স্তরের আয়ের আয়কর বন্ধনী ৫৬% হওয়ায়, বার্সাকে মেসির পক্ষে আয়কর দিতে হবে ২০ মিলিয়ন ইউরোর (২৬.৫ মিলিয়ন ডলার) চেয়ে সামান্য বেশি।

Quotes

Total 0 Quotes
Quotes not found.