photo

Golam Dastagir Gazi

politician
Date of Birth : 14 Aug, 1948
Place of Birth : Dhaka
Profession : Politician
Nationality : Bangladeshi

গোলাম দস্তগীর গাজী (জন্ম: ১৪ আগস্ট, ১৯৪৮) একজন রাজনীতিবিদ যিনি ২০০৮-এ প্রথমবার এবং ২০১৪-তে দ্বিতীয়বার আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা যিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে   অংশ গ্রহণ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতাপূর্ণ অবদান রাখায় বাংলাদেশ সরকার গাজীকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করেছে। 


নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদসদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী তার এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব প্রদানের জন্য জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন।  তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী। 


জন্ম ও শিক্ষাজীবন 

গোলাম দস্তগীর গাজীর পৈতৃক বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলায়। তার বাবার নাম গোলাম কিবরিয়া গাজী এবং মায়ের নাম সামসুননেছা বেগম। পড়াশুনার শুরু করেছিলেন পুরান ঢাকার বিদ্যাপীঠে। মাধ্যমিক পাশ করার পর ভর্তি হন নটরডেম কলেজে।তার স্ত্রীর নাম হাসিনা গাজী। তাদের দুই ছেলে।এক ছেলের নাম গোলাম মর্তূজা পাপ্পা ও আরেক জনের নাম গোলাম আশরিয়ার বাপ্পী।ব্যবসায়ী হিসেবে দুই ছেলেই দেশে ও দেশের বাহিরে সুনাম অর্জন করেছেন।


মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা 

১৯৭১ সালে গোলাম দস্তগীর গাজী ছাত্র থাকাকালীন সময়ে রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি ভারতে চলে যান। সে সময় তিনি বিএসসি পাস করে সবে মাত্র আইন কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের ২নং সেক্টর এ বিভিন্ন সম্মুখ যুদ্ধে বীরত্বের সাথে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন এবং ঢাকার কয়েকটি সফল অপারেশনে অংশ নিয়েছিলেন। গাজী অপারেশনে সব সময় সামনে থাকতেন। গ্যানিজ ও দাউদ পেট্রল পাম্পের অপারেশন তার উল্লেখযোগ্য অপারেশন।


বিদ্যুৎ কেন্দ্র অপারেশন 

১৯৭১ সালের ১৯ জুলাই ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্যরা কয়েকটি উপদলে ভাগ হয়ে ঢাকায় একযোগে কয়েকটি অপারেশন পরিচালনা করেন। গাজী ও মুক্তিযোদ্ধারা বিস্ফোরক লাগানোর কয়েক মিনিট পর প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে ঢাকার রামপুরা এলাকা। ট্রান্সফরমার পুরোপুরি ধ্বংস ও ঢাকা শহরের একাংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। কথা ছিল সন্ধ্যা সাতটায় একটি ফিয়াট গাড়িতে চড়ে গোলাম দস্তগীর গাজী ও তার সহযোদ্ধারা অপারেশনে যাবেন। কিন্তু যাত্রার আগে হঠাৎ ওই গাড়ি বিগড়ে যায়। এতে করে রাত আটটা পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধারা অপেক্ষা করেন। গাড়ি ঠিক না হওয়ায় বিস্ফোরক রেক্সিনের ব্যাগে ভরে তারা গোপন স্থান থেকে বেরিয়ে পড়েন। রামপুরায় মঞ্জুর নামে একজনের বাড়ি ছিল তাদের মিলনস্থল। ঠিক তখনই তারা শুনতে পান দূর থেকে ভেসে আসা গুলির শব্দ।


এতে এলাকার লোকজন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। দ্রুত যে যার বাড়ির বাতি নিভিয়ে দরজা-জানালা বন্ধ করে দেন। রাস্তায় চলাচলরত মানুষজন দ্রুত তাদের গন্তব্যে যেতে থাকেন। এর মধ্যেই তিনটি ভাড়া রিকশায় উঠে পড়েন তারা। প্রথম রিকশায় গাজী ও নীলু। তাদের পায়ের আড়ালে ভাঁজ করে লুকানো ছিল স্টেনগান। রামপুরা ডিআইটি সড়ক থেকে রিকশা রওনা হয় উলনের পথে। রাস্তায় আলো নেই। অসমান কাঁচা রাস্তায় রিকশা এগিয়ে যায়। সামনের কিছু দূর যাওয়ার পর গাজী ও নীলু পেছনে তাকিয়ে দেখেন বাকি দুই রিকশা নেই। নানা ঘটনার পর তারা আবার একত্র হয়ে রওনা হন। একসময় দৃষ্টিগোচর হয় লক্ষ্যস্থল উলন বিদ্যুৎকেন্দ্রের (সাবস্টেশন) আলো। রওনা হওয়ার সময় তারা ঠিক করে রেখেছিলেন লক্ষ্যস্থলের কাছাকাছি যাওয়ার পর প্রথম রিকশা আগে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফটকে যাবে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় রিকশায় থাকা মুক্তিযোদ্ধারা ফটকের কাছাকাছি পৌঁছে চালককে দাঁড়াতে বলবেন। চালকেরা তাদের চালাকি বুঝতে পারেননি বা কাউকে চিনতেও পারেননি। প্রথম রিকশা আগে ফটকের সামনে যায়।


ফটকে তখন পাহারায় ছিল একজন রাইফেলধারী পুলিশ ও বিদ্যুকেন্দ্রের একজন নিরাপত্তাপ্রহরী। তারা দুজন রিকশা দেখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। গোলাম দস্তগীর গাজী ও নীলু ক্ষিপ্রতার সঙ্গে চলন্ত রিকশা থেকে লাফিয়ে নেমে চোখের পলকে তাদের দিকে স্টেনগান তাক করে ধরেন। পুলিশ রাইফেল মাটিতে ফেলে নিঃশব্দে হাত তোলে। নিরাপত্তাপ্রহরী পালানোর চেষ্টা করে। তাকে নীলু আটকান। এর মধ্যে তাদের পেছনের সহযোদ্ধারা কাজ শুরু করে দেন। দ্বিতীয় রিকশায় থাকা মতিন টেলিফোনের তার কেটে দেন। গাজী ফটকের পুলিশের কাছে জেনে নেন বাকি পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মীরা কে কোথায়। জানা যায় ১৫-১৬ জন পুলিশ ও নিরাপত্তা-কর্মী একটি বড় ঘরে রাতের খাবার খাচ্ছে। তাদের সবাইকে তারা নিঃশব্দে আত্মসমর্পণ করান। তাদের নিরস্ত্র করে নীলু ও মতিন পাহারায় থাকেন। গাজী ও মতিন স্টেনগান হাতে এগিয়ে যান ট্রান্সফরমারের দিকে। ট্রান্সফরমার ছিল কাঁটা তার দিয়ে ঘেরা। প্রায় দোতলাসমান উঁচু ট্রান্সফরমার। অপারেটর রুমের ভেতর দিয়ে সেখানে যেতে হতো। গাজী, মতিন (এক) ও আরও দুই সহযোদ্ধা ভেতরে ঢুকে ট্রান্সফরমারের গায়ে পিকে (বিস্ফোরক) লাগান। 


সম্মাননা 

মুক্তিযুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টরে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করার জন্যে বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করে।

সমাজসেবামূলক কার্যক্রমে ভূমিকা রাখার জন্য তাকে ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক মাদার তেরেসা পদকে ভূষিত করা হয়।

স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে ২০২০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। 

Quotes

Total 0 Quotes
Quotes not found.