photo

Cristiano Ronaldo

Portuguese footballer
Date of Birth : 05 Dec, 1985
Place of Birth : Hospital Dr. Nélio Mendonça, Funchal, Portugal
Profession : Football Player
Nationality : Portuguese
Social Profiles :
Facebook
Twitter
Instagram
ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো দোস সান্তোস আভেইরো জিওআইএইচ কমএম (পর্তুগিজ: Cristiano Ronaldo, পর্তুগিজ উচ্চারণ: [kɾiʃˈtjɐnu ʁɔˈnaldu]; জন্ম: ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫; ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো নামে সুপরিচিত) হলেন একজন পর্তুগিজ পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড়। তিনি বর্তমানে সৌদি আরবের পেশাদার ফুটবল লিগের শীর্ষ স্তর সৌদি পেশাদার লিগের ক্লাব আল নাসর এবং পর্তুগাল জাতীয় দলের হয়ে আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে খেলেন। তিনি মূলত কেন্দ্রীয় আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে খেললেও মাঝেমধ্যে ডান পার্শ্বীয় আক্রমণভাগের খেলোয়াড় অথবা বাম পার্শ্বীয় আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে খেলেন। প্রায়ই বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় এবং সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গণ্য রোনালদো পাঁচটি ব্যালন ডি’অর এবং চারটি ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট অর্জন করেছেন, যা কোন ইউরোপীয় খেলোয়াড় হিসেবে রেকর্ড সংখ্যক জয়। কর্মজীবনে তিনি ৩৪টি প্রধান সারির শিরোপা জয় করেছেন, তন্মধ্যে রয়েছে সাতটি লিগ শিরোপা, পাঁচটি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ, একটি উয়েফা ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ, এবং একটি উয়েফা নেশনস লিগ শিরোপা। রোনালদোর চ্যাম্পিয়নস লিগে সর্বাধিক ১৪০টি গোল এবং ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে সর্বাধিক ১২টি গোলের রেকর্ড রয়েছে। তিনি অল্পসংখ্যক খেলোয়াড়দের একজন যিনি ১,১৮১ টি পেশাদার খেলায় অংশগ্রহণ করেছেন এবং তার ক্লাব ও দেশের হয়ে ৮৫১ টি গোল করেছেন। তিনি ১০০টি আন্তর্জাতিক গোল করা দ্বিতীয় পুরুষ ফুটবলার এবং প্রথম ইউরোপীয়।

মাদেইরায় জন্মগ্রহণ করা ও বেড়ে ওঠা রোনালদো এডরিনহার হয়ে তার যুব ক্যারিয়ার শুরু করেন এবং ন্যাশিওনালে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সেখানে তিনি ২ বছর খেলেন। ১৯৯৭ সালে রোনালদো পর্তুগিজ ক্লাব স্পোর্টিং সিপিতে আসেন এবং সেখানে ২০০২ সালে তার প্রাপ্তবয়স্ক ক্লাব কর্মজীবন শুরু করেন। স্পোর্টিং সিপির হয়ে খেলার সময় রোনালদো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ম্যানেজার স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হন, যিনি তাকে ২০০৩ সালে £১২.২৪ মিলিয়নের (€১৫ মিলিয়ন) বিনিময়ে ইউনাইটেডে নিয়ে আসে। ২০০৪ সালে রোনালদো ইউনাইটেডের হয়ে প্রথম শিরোপা এফএ কাপ জেতেন এবং দলটিকে টানা তিনটি প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা, একটি চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জেতাতে সাহায্য করেন। ২৩ বছর বয়সে তিনি তার প্রথম ব্যালন ডি অর অর্জন করেন। রোনালদো ইংল্যান্ডে খেলা প্রথম খেলোয়াড় যিনি প্রধান ৪টি পিএফএ এবং এফডব্লিউএ পুরস্কার জিতেছেন, যা তিনি ২০০৭ সালে করেছেন। ২০০৮ সালে তিনি ৪টি প্রধান পিএফএ এবং এফডব্লিউএ ট্রফির মধ্যে ৩টি জেতেন এবং ফিফা ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার, ফিফপ্রো প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার, ওয়ার্ল্ড সকার প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার এবং ওনজে দ’অর অ্যাওয়ার্ড জেতেন। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে রোনালদোকে এফডব্লিউএ প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। ২০০৯ সালে রিয়াল মাদ্রিদ তাকে £৮০ মিলিয়নের (€৯৪ মিলিয়ন/$১৩১.৬ মিলিয়ন) বিনিময়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে তাদের দলে নিয়ে আসে, যার ফলে রোনালদো সেইসময় ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড়ের সম্মান পান। রোনালদো ২০০৯ সালে সেরা গোলের জন্য প্রথম পুস্কাস অ্যাওয়ার্ড জেতেন। তিনি ২০০৮ ও ২০১১ সালে ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু পুরস্কার লাভ করেন। মাদ্রিদে তিনি মোট ১৫টি শিরোপা জেতেন, তন্মধ্যে রয়েছে দুটি লা লিগা শিরোপা, দুটি কোপা দেল রে, ও চারটি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা, এবং তিনি এই ক্লাবের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা। মাদ্রিদে যোগদানের পর তিনি বালোঁ দরের দৌড়ে তিনবার তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসি কাছে পরাজিত হয়ে রানার-আপ হন এবং ২০১৩-২০১৪ সালে টানা দুবার ও ২০১৬-২০১৭ সালে আবারও টানা দুবার ব্যালোন ডি'ওর অর্জন করেন। তিনিই একমাত্র পর্তুগিজ যিনি ৫ বার এই পুরস্কার জিতেছেন। ২০১৮ সালের টানা তৃতীয় চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ৫টি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জয় করেন। ২০১৮ সালে তিনি প্রারম্ভিক €১১৭ মিলিয়নের (£৮৮ মিলিয়ন) ট্রান্সফার ফিতে ইয়ুভেন্তুসের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন, যা কোন ইতালীয় ক্লাবের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক এবং ত্রিশোর্ধ্ব কোন খেলোয়াড়ের জন্য সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক। ইয়ুভেন্তুসে তিনি প্রথম তিনি মৌসুমেই দুটি সেরিয়ে আ শিরোপা, দুটি সুপারকোপা ইতালিয়ানা, ও একটি কোপা ইতালিয়া জয় করেন।২০২১ সালে তিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এ তিনি যোগ দেন।

রোনালদো শীর্ষ ইউরোপিয়ান লিগগুলোর মধ্যে প্রথম খেলোয়াড় যিনি পর পর দুই মৌসুমে ৪০ গোল করেছেন, রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে কম সময়ে ১০০ লিগ গোল করেছেন এবং তিনিই প্রথম খেলোয়াড় যিনি লা লিগায় প্রত্যেক দলের বিরুদ্ধে গোল করেছেন। এছাড়াও তিনি রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল ও লা লিগায় মিনিট প্রতি সর্বোচ্চ গোল করার রেকর্ডের অধিকারী। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি তার ৩০০তম ক্লাব গোল পূর্ণ করেন। ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি তার ক্যারিয়ারের ৪০০তম গোল করেন। এছাড়া তিনি ২০১৭ সালে ক্যারিয়ারের ৬০০ তম গোল করেন। রোনালদো বিশ্বের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১০০ গোল করার রেকর্ড গড়েন। তিনিই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টানা ১১ ম্যাচে গোল করেন। এছাড়া তিনি এই আসরে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ১৫ গোলের রেকর্ড গড়েন এবং ২০১২ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হন যা আরেকটি রেকর্ড।

রোনালদো পর্তুগাল জাতীয় দলের হয়ে খেলেন, যাদের হয়ে ২০০৩ সালের আগস্ট মাসে কাজাকিস্তানের বিরুদ্ধে তার অভিষেক ঘটে। তিনি জাতীয় দলের হয়ে ১০০ এর অধিক ম্যাচ খেলেছেন এবং তিনি পর্তুগালের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের অধিকারী। তিনি পর্তুগালের হয়ে প্রধান ৫টি টুর্নামেন্ট; ২০০৪ উয়েফা ইউরো, ২০০৬ ফিফা বিশ্বকাপ, ২০০৮ উয়েফা ইউরো, ২০১০ ফিফা বিশ্বকাপ এবং ২০১২ উয়েফা ইউরোতে অংশগ্রহণ করেছেন। ২০০৪ সালের উয়েফা ইউরোর প্রথম খেলায়, গ্রিসের বিরুদ্ধে তিনি তার প্রথম আন্তর্জাতিক গোল করেন। ২০০৮ সালের জুলাই মাসে পর্তুগালের অধিনায়ক হন এবং ২০১২ সালের উয়েফা ইউরোতে অধিনায়ক হিসেবে দলকে সেমি-ফাইনালে নিয়ে যান এবং প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ গোল করেন।

রোনালদোর এক ম্যাচে ৪ বা এর বেশি গোল আছে ১১টি। এর মধ্যে ম্যাচে চার গোল ৯ বার, ৫ গোল দুবার। ৪ গোলের ম্যাচগুলো হচ্ছে যথাক্রমে সৌদি প্রো লিগে আল ওয়েহদা (২০২৩), ইউরো বাছাইয়ে লিথুয়ানিয়া (২০১৯), লা লিগায় জিরোনা (২০১৮), বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অ্যান্ডোরা (২০১৬), লা লিগায় সেল্তা ভিগো (২০১৬), চ্যাম্পিয়নস লিগে মালমো (২০১৫), লা লিগায় এলচে (২০১৪), সেভিয়া (২০১১) ও রেসিংয়ের (২০১০) বিপক্ষে। ম্যাচে ৫ গোল করেছেন দুবার। দুটিই লা লিগায় রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে। প্রথমটি ২০১৫ সালের মে মাসে গ্রানাদা, পরেরটি একই বছরের সেপ্টেম্বরে এসপানিওলের বিপক্ষে।

তিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ঐতিহ্যবাহী ৭নং জার্সি পড়ে খেলতেন, যা পূর্বে জর্জ বেস্ট, এরিক কাঁতোয়াঁ এবং ডেভিড বেকহ্যামের মত তারকারা পড়তেন। রিয়াল মাদ্রিদে প্রথম বছর তিনি ৯ নং জার্সি নিয়ে খেলেন। রিয়াল মাদ্রিদ লিজেন্ড রাউলের ক্লাব ছাড়ার পর রোনালদো ৭ নং জার্সি লাভ করেন।

২০২৩ সালে তিনি সৌদি ক্লাব আল নাসরে যোগ দেন।
রোনালদো তার ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ গোলই পেনাল্টি থেকে করেন। এ কারনে তিনি 'পেনাল্ডো' নামেও পরিচিত।

জীবনী
তিনি পর্তুগালের মাদেইরাতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা জোসে দিনিস আভেইরো ও মা মারিয়া ডোলোরেস দস সান্তোস আভেইরো। বড় ভাই হুগো এবং বড় দুই বোন এলমা ও কাতিয়ার সাথে তিনি বেড়ে উঠেছেন। কাতিয়া পর্তুগালের একজন গায়িকা। মঞ্চে তিনি "পেনাল্ডো" নামে গান করেন। তার মার পরিবারের নাম দস্ সান্তোস এবং বাবার পরিবারের নাম আভেইরো।
রোনাল্ডো নামটি পর্তুগালে সচরাচর দেখা যায় না; তার বাবা-মা মার্কিন রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রেগানের সাথে মিলিয়ে এ নাম রাখেন।

প্রাথমিক ক্যারিয়ার
তিন বছর বয়স থেকে রোনালদো ফুটবলের সংস্পর্শে আসেন। তিনি ছয় বছর বয়স থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খেলতে শুরু করেন। কৈশোরে তার প্রিয় দল ছিল "বেনফিকা" যদিও তিনি তাদের প্রতিপক্ষ "স্পোর্টিং ক্লাবে দি পর্তুগালে" যোগদান করেন। তিনি মাত্র আট বছর বয়সে প্রথমে "আন্দোরিনহা" নামে একটি অপেশাদার দলে তার ক্রীড়াজীবন শুরু করেন, যেখানে তার বাবা কাজ করতেন। ১৯৯৫ সালে, দশ বছর বয়সের মধ্যেই পর্তুগালে তার সুনাম ছড়াতে থাকে। মাদিয়েরার শীর্ষ দুটি দল "সিএস মারিতিমো" ও "সিডি ন্যাশিওনাল" তাকে পেতে উম্মুখ ছিল। অপেক্ষাকৃত বড় দল মারিতিমো আন্দোরিনহার ব্যবস্থাপকের সাথে একটি মিটিং-এ অংশ নিতে পারেননি। ফলে সিডি ন্যাশিওনাল রোনালদোকে হস্তগত করে। ন্যাশিওনালের হয়ে সে মৌসুমে শিরোপা জেতার পর স্পোর্টিং দলের সাথে তিনি চুক্তিবদ্ধ হন।

স্পোর্টিং ক্লাবে দি পর্তুগাল
রোনালদো স্পোর্টিং এর অন্যান্য তরুণ খেলোয়াড়ের সাথে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দলে "ফুটবল কারখানা" হিসেবে পরিচিত আলকোচেতে। এখানে তিনি প্রথম-শ্রেণীর প্রশিক্ষণ পান। স্পোর্টিং বুঝতে পারে রোনালদোর আরো সমর্থন দরকার। তাই তারা রোনালদোর মাকে তার কাছে রাখার ব্যবস্থা নেয়। স্পোর্টিং-এর পক্ষে তার অভিষেক খেলায় তিনি দুই গোল করেন মোরেইরেন্সের বিপক্ষে। তিনি পর্তুগালের হয়ে উয়েফা অনূর্ধ্ব ১৭ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলেছেন।

উয়েফা অনূর্ধ্ব ১৭ চ্যাম্পিয়নশিপে তার কৃতিত্বের কারণে তিনি ফুটবল বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষনে সমর্থ হন। লিভারপুলের সাবেক ম্যানেজার জেরার্ড হুলিয়ার ১৬ বছর বয়সের রোনালদোর দিকে আকৃষ্ট হন। কিন্তু লিভারপুল তাকে দলে নিতে অস্বীকৃতি জানায় কারণ তিনি ছিলেন খুবই কম বয়সী ও শীর্ষ ফুটবলার হতে তার আরো সময় দরকার ছিল। ২০০৩ সালের গ্রীষ্মে তিনি স্যার স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হন যখন লিসবনে স্তাদিও জোসে এলভালাদে স্টেডিয়াম উদ্বোধনের জন্য আয়োজিত খেলায় স্পোর্টিং ৩-১ গোলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে হারিয়ে দেয়। রোনালদো দুই উইংয়েই খেলার দক্ষতা দেখান। এই খেলার পরে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের খেলোয়াড়েরা তরুণ রোনালদোর প্রশংসা করেন ও বলেন ভবিষ্যতে তার বিরুদ্ধে খেলার চেয়ে তাকে নিজেদের দলে খেলতে দেখতে চান।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
২০০৩–২০০৬
ডেভিড বেকহ্যাম রিয়াল মাদ্রিদে চলে যাওয়ার পর ফার্গুসন সিদ্ধান্ত নেন তিনি রোনালদকে দলে নেবেন। রোনালদো ১২.২৪ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগদান করেন। রোনালদোকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ঐতিহ্যবাহী ৭নং জার্সি দেয়া হয়, যেটি পড়ে একসময় মাঠ কাঁপিয়েছেন জর্জ বেস্ট, ব্রায়ান রবসন, এরিক ক্যান্টোনা ও ডেভিড বেকহ্যাম।

ওল্ড ট্রাফোর্ডে বোল্টন ওয়ান্ডারার্সের বিরুদ্ধে ৬০তম মিনিটের পরিবর্তিত খেলোয়াড় হিসেবে রোনালদোর ম্যানচেস্টারের পক্ষে অভিষেক হয়। তখন ইউনাইটেড ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল। তিনি একটি পেনাল্টি জিতেন, তবে রুড ভ্যান নিস্তেলরয় সেই পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন। তবে এ খেলার ফলাফলে সেটির কোন বিরুপ প্রতিক্রিয়া পড়েনি, ইউনাইটেড এতে ৪-০ গোলে জয়ী হয়। তিনি পোর্টসমাউথের বিপক্ষে ফ্রি-কিক থেকে ইউনাইটেডের হয়ে প্রথম গোল করেন যে খেলায় ইউনাইটেড ৩-০ গোলে জয়লাভ করে। রোনালদো ইউনাইটেডে তার প্রথম মৌসুম শেষ করেন মিলওয়ালির বিপক্ষে ২০০৪ এফএ কাপের ফাইনালে প্রথম গোল করার মাধ্যমে এবং ইউনাইটেড ৩-০ গোলে শিরোপা নিশ্চিত করে।

২৯ অক্টোবর ২০০৫ সালে রোনালদো প্রিমিয়ার লিগে ইউনাইটেডের ১০০০ তম গোল করেন যদিও মিডেলসবার্গের বিরুদ্ধে ওই খেলায় ইউনাইটেড ৪-১ গোলে পরাজয় বরণ করে। তিনি ২০০৫ সালে সকল প্রতিযোগিতায় ১০ গোল করেন এবং ভক্তরা তাকে ২০০৫ ফিফপ্রো স্পেশাল ইয়াং প্লেয়ার অফ দ্যা ইয়ার অ্যাওয়ার্ডের জন্য নির্বাচিত করে।
১৪ জানুয়ারি ২০০৬ সালে সিটি অফ ম্যানচেস্টার স্টেডিয়ামে ম্যানচেস্টার ডার্বিতে (খেলায় ইউনাইটেড ৩-১ গোলে পরাজিত হয়) প্রাক্তন ইউনাইটেড খেলোয়াড় অ্যান্ড্রু কোলকে লাথি মারার জন্য লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন।
উইগান অ্যাথলেটিকের বিরুদ্ধে ২০০৫-০৬ মৌসুমের ফুটবল লিগ কাপের ফাইনাল ম্যাচে তিনি তিনি ৩য় গোলটি করে (ইউনাইটেড ৪-০ গোলে জয়লাভ করে) দলকে শিরোপা জেতাতে সাহায্য করেন যা ইংলিশ ফুটবলে তার ২য় শিরোপা ছিল।

২০০৬–২০০৯
২০০৬-০৭ মৌসুম রোনালদোর জন্য অত্যন্ত সাফল্যমণ্ডিত বলে গণ্য করা হয়। এই মৌসুমে রোনালদো ২০এর অধিক গোল করেন যা ইউনাইটেডের প্রিমিয়ার লিগ জয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তার এই সাফল্যের অন্যতম কারণ ধরা হয় রেনে মিউলেনস্টিনের সাথে তার একান্ত প্রশিক্ষণ

২০০৭ সালের জানুয়ারিতে রোনালদো পরপর দ্বিতীয় মাসের জন্য বার্কলে মাসের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে নির্বাচিত হন। প্রিমিয়ারশিপের ইতিহাসে এটি তৃতীয় ঘটনা। এর আগে আর্সেনালের ডেনিস বার্গক্যাম্প ১৯৯৭ ও রবি ফাউলার ১৯৯৬ সালে পরপর দুইমাস এ পুরস্কার জিতেছেন। রোনালদো ইউনাইটেডের পক্ষে তার ৫০তম গোল করেন চির-প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার সিটির বিরুদ্ধে যেটি ৪ বছর পর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে লিগ শিরোপা জেতায় এবং তিনি বছরের শেষের দিকে টানা ২য় বারের মত ফিফপ্রো স্পেশাল ইয়াং প্লেয়ার অফ দ্যা ইয়ার পুরস্কার জেতেন।

রিয়াল মাদ্রিদ ২০০৭ এর এপ্রিলে ৮০ মিলিয়ন ইউরোর (৫৪ মিলিয়ন পাউন্ড) বিনিময়ে রোনালদোকে কিনতে প্রস্তুত ছিল। তবে ২০০৭ সালের মার্চ মাসের শুরুতে রোনালদো ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড নিশ্চিত করে যে তার বর্তমান চুক্তি নবায়নের জন্য আলোচনা শুরু করেছেন। ১৩ এপ্রিল ২০০৭ তারিখে রোনালদো প্রতি সপ্তাহে ১২০,০০০ পাউন্ডের বিনিময়ে ইউনাইটেডের সাথে পাঁচ বছর মেয়াদী চুক্তি করেন যা ইউনাইটেডের ইতিহাসে একটি রেকর্ড। তিনি বলেন, "আমি দলে খুশি ও আমি ট্রফি জিততে চাই। আশাকরি এই মৌসুমেই আমরা সেটা করব।" 

রোনালদো এই মৌসুমে বেশ কয়েকটি ব্যক্তিগত পুরস্কার জেতেন যার পিএফএ প্লেয়ার অফ দ্যা ইয়ার এবং পিএফএ ইয়াং প্লেয়ার অফ দ্যা ইয়ার ছিল অন্যতম। অ্যান্ডি গ্রের পর তিনি একমাত্র ফুটবলার যিনি একই বছর এই দুই পুরস্কার লাভ করেছেন। ওই বছরের ৩তয় পুরস্কার পিএফএ ফ্যানস্‌ প্লেয়ার অফ দ্যা ইয়ার পুরস্কার জেতেন। তিনি ওই বছর এফডব্লিউ ফুটবলার অফ দ্যা ইয়ার পুরস্কার জেতেন যার ফলে তিনি প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে একই বছরে সকল প্রধান পিএফএ এবং এফডব্লিএ পুরস্কার জেতার কীর্তি অর্জন করেন। রোনালদো ২০০৬-০৭ মৌসুমের জন্য পিএফএ প্রিমিয়ার সেরা একাদশে অন্তর্ভুক্ত হন।

২০০৭-০৮ মৌসুমের ২য় খেলায় পোর্টস্‌মাউথের খেলোয়াড় রিচার্ড হাজেসের মাথায় গুঁতো দেয়ার অভিযোগে তাকে লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠের বাইরে বের করে দেয়া হয় এবং পরবর্তীতে তাকে ৩ খেলার জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। পরবর্তীতে রোনালদো বলেন তিনি এই ঘটনা থেকে অনেক শিক্ষা পেয়েছেন এবং অঙ্গীকার করেন যে ভবিষ্যতে কখনো খেলোয়াড়দের প্ররোচিত করবেন না। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে স্পোর্টিং লিসবনের বিরুদ্ধে খেলার প্রথম লেগে তার একমাত্র গোলে ইউনাইটেড জয়লাভ করে। ২য় লেগে ঘরের মাঠে ইনজুরি টাইমে তার গোলে ইউনাইটেড গ্রুপ পর্বে তাদের শীর্ষস্থান নিশ্চিত করে।

২০০৭ সালে বালোঁ দ’অরে তিনি ২য় স্থান ও ফিফা ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার অফ দ্যা ইয়ারে তৃতীয় স্থান লাভ করেন।

১২ জানুয়ারি ২০০৮ সালে, রোনালদো ইউনাইটেডের হয়ে প্রথম হ্যাটট্রিক করেন নিউক্যাসেল ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠ ওল্ড ট্রাফোর্ডে যা ইউনাইটেডকে প্রিমিয়ার লিগ পয়েন্টতালিকায় শীর্ষে তুলে আনে। রিডিং এর বিরুদ্ধে খেলায় তিনি ২৩ তম প্রিমিয়ার লিগ গোল করেন যা ২০০৬-০৭ মৌসুমে করা গোলের সমান ছিল। ২০ ফেব্রুয়ারিতে অলিম্পিক লিওর বিরুদ্ধে একজন অসনাক্ত লিও সমর্থক রোনালদো এবং ন্যানির চোখে লেজার মারে যা নিয়ে উয়েফা পরে তদন্ত করে। এই ঘটনার জন্য লিওকে ১ মাস পর ৫,০০০ ফ্রাঙ্ক (£২,৪২৭) জরিমানা করা হয়।

১৯ মার্চ ২০০৮ সালে, রোনালদো বোল্টনের বিরুদ্ধে প্রথম বারের মত ইউনাইটেডের অধিনায়কত্ব পালন করেন। ওই খেলায় তার জোড়া গোলের সুবাদে ইউনাইটেড ২-০ গোলে জয়লাভ করে। ওই খেলার দ্বিতীয় গোলটি মৌসুমে তার ৩৩ তম গোল ছিল, যার মাধ্যমে তিনি ইউনাইটেডের পক্ষে ১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে জর্জ বেস্টের এক মৌসুমে করা ৩২ গোলের রেকর্ড ভেঙ্গে দেন। ২৯ মার্চ রোনালদো অ্যাস্টোন ভিলার বিরুদ্ধে আবারও জোড়া গোল করেন যা মৌসুমে তার গোলসংখ্যা ৩৫এ উন্নীত করে। রোনালদো তার টানা গোল করার পুরস্কার পান প্রথম উইঙ্গার হিসেবে ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু অ্যাওয়ার্ড লাভের মাধ্যমে।

২১ মে ২০০৮ সালে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে প্রিমিয়ার লিগ প্রতিদ্বন্দ্বী চেলসির বিরুদ্ধে ২৬ মিনিটে ইউনাইটেডের প্রথম গোল করেন যদিও চেলসি খেলার ৪৫ মিনিটে সমতাসূচক গোল করে। অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত খেলা ১-১ গোলে অমীমাংসিত থাকে যার ফলে তা টাইব্রেকারে গড়ায়। পেনাল্টি শুটআউটে রোনালদো গোল করতে ব্যর্থ হন, যদিও জন টেরি বল জালে জড়াতে ব্যর্থ হন যার ফলে ইউনাইটেড সাডেন ডেথে ৬-৫ গোলে বিজয়ী হয়। রোনালদো ভক্তদের ভোটে ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হন, এবং ৪২ গোল করার মাধ্যমে ওই মৌসুম শেষ করেন। ওই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তিনি সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে উয়েফা সেরা ফরওয়ার্ড এবং উয়েফা টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন।

৫ জুন ২০০৮ সালে স্কাই স্পোর্টস খবর প্রকাশ করে রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদে যেতে ইচ্ছুক, যদি তারা তাকে সেই পরিমাণ অর্থ প্রস্তাব করে যা তাকে বছরের শুরুতে করা হয়েছিল। ৯ জুন ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ মাদ্রিদের বিপক্ষে রোনালদোকে দলে নেয়ার তথাকথিত তৎপরতার ব্যপারে ফিফার কাছে অভিযোগ দাখিল করে, যদিও ফিফা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। তার ট্রান্সফারের পক্ষে জল্পনা-কল্পনা ৬ আগস্ট পর্যন্ত চলতে থাকে যখন রোনালদো নিশ্চিত করেন যে তিনি আর কমপক্ষে একবছর ওল্ড ট্রাফোর্ডে থাকবেন।

৭ই জুলাই গোড়ালিতে চোটের কারণে আমস্টারডামে তার অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের পর, ১৭ সেপ্টেম্বর ভিলারিয়ালের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের খেলায় পার্ক জি সুং বদলি হিসেবে তিনি পুনরায় মাঠে নামেন এবং ২৪ সেপ্টেম্বর লিগ কাপের ৩য় রাউন্ডে মিডেলস্বার্গের বিরুদ্ধে ৩-১ গোলে জয়ের খেলায় তিনি মৌসুমের তার প্রথম গোল করেন।

১৫ নভেম্বর স্টোক সিটির বিরুদ্ধে ৫-০ গোলে জয়ের খেলায় রোনালদো ইউনাইটেডের হয়ে সকল প্রতিযোগিতায় ১০০ ও ১০১ তম গোল করেন, যার দুইটিই আবার ছিল ফ্রি-কিক থেকে।এই গোলের মাধ্যমে রোনালদো প্রিমিয়ার ১৯ দলের সবার বিপক্ষে গোল করার কৃতিত্ব অর্জন করেন। ২ ডিসেম্বরে, রোনালদো ১৯৬৮ সালে জর্জ বেস্টের প্রথম ইউনাইটেড খেলোয়াড় হিসেবে বালোঁ দ’অর জেতেন। এতে তিনি ৪৪৬ পয়েন্ট পান যা রানার-আপ মেসির চেয়ে ১৬৫ পয়েন্ট বেশি ছিল। ১৯ ডিসেম্বর ইউনাইটেড ২০০৮ ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জেতার পর রোনালদো সিলভার বল পুরস্কার পান।

৮ জানুয়ারি ২০০৯ সালে, রোনালদো ম্যানচেস্টার এয়ারপোর্টের কাছে একটি রাস্তায় কার দুর্ঘটনায় অক্ষত থাকেন, যাতে তার ফেরারি দুমড়েমুচড়ে যায়। এই ঘটনার চার দিন পরে রোনালদো প্রথম প্রিমিয়ার লিগ খেলোয়াড় হিসেবে এবং লুইজ ফিগোর পর প্রথম পর্তুগিজ হিসেবে ফিফা ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার অফ দ্যা ইয়ার পুরস্কার জেতেন।

রোনালদো চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মৌসুমে তার প্রথম ও চেলসির বিরুদ্ধে ফাইনালের পর তার প্রথম গোল করেন ইন্টার মিলানের বিরুদ্ধে ১১ মার্চ ২০০৯ সালে। খেলায় ইউনাইটেড ২-০ গোলে জয়লাভ করে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছায়। পোর্তোর বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালের ২য় লেগের ম্যাচে ৪০ গজ দূর থেকে আকর্ষণীয় জয়সূচক গোল করেন যা ইউনাইটেডকে সেমিফাইনালে নিয়ে যায়। বছরের সেরা গোল হিসেবে, ওই গোলের জন্য তিনি ২০০৯ সালে সদ্য চালুকৃত ফিফা পুস্কাস অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। পরে তিনি ওই গোলটিকে তার করা সেরা গোল হিসেবে অভিহিত করেন। রোনালদো ইউনাইটেডের হয়ে ২য় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল খেলেন ২০০৯ সালে যদিও ইউনাইটেড ফাইনালটি ২-০ গোলে হেরে যায়। ওই মৌসুমে তিনি ইউনাইটেডের হয়ে ৫৩ খেলায় মাঠে নামেন যা এর আগের মৌসুমের চেয়ে ৪টি বেশি ছিল, এতে তিনি ২৬ টি গোল করেন যা তার ক্যারিয়ার সেরা ৪২টি গোলের চেয়ে ১৬ গোল কম ছিল।

১১ জুন ইউনাইটেড, রোনালদোর ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছাজ্ঞাপনের পর রিয়াল মাদ্রিদ হতে শর্তবিহীন £৮০ মিলিয়ন এর প্রস্তাব গ্রহণ করে। গ্লেজার পরিবারের (ইউনাইটেডের মালিকপক্ষ) প্রতিনিধি এটা নিশ্চিত করে যে এটা ইউনাইটেড ম্যানেজার ফার্গুসনের সম্মতিতেই করা হয়েছে। যখন রিয়াল মাদ্রিদে রোনালদোর ট্রান্সফার নিশ্চিত হয় তখন রোনালদো,তাকে একজন খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ফার্গুসনকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, "ক্রীড়াক্ষেত্রে তিনি আমার পিতা, এবং আমার ক্যারিয়ারে একজন অন্যতম প্রধান ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব।

রিয়াল মাদ্রিদ
২০০৯-১০ মৌসুম
২৬ জুন ২০০৯ সালে রিয়াল মাদ্রিদ নিশ্চিত করে যে রোনালদো পহেলা জুলাই ২০০৯ সাল থেকে তাদের দলে যোগ দেবে। তার ট্রান্সফার ফি ছিল £৮০ মিলিয়ন (€৯৪ মিলিয়ন) যা তাকে বিশ্বের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড় করে তোলে। রিয়াল মাদ্রিদের সাথে তার চুক্তির মেয়াদ ছিল ৬ বছর। চুক্তি অনুসারে তিনি প্রতি বছর €১১ মিলিয়ন বেতন পেতেন। তার বাইআউট ক্লসের মূল্য €১ বিলিয়ন। ৬ জুলাই রোনালদোকে রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্ব মিডিয়ার সামনে হাজির করা হয়, যেখানে তাকে ৯ নং জার্সি দেয়া হয়। তাকে রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি প্রদান করেন আলফ্রেদো দি স্তেফানো। রোনালদোকে রিয়াল মাদ্রিদে স্বাগত জানানোর জন্য ৮০,০০০ থেকে ৮৫,০০০ দর্শক স্যান্টিয়াগো বার্নাব্যুতে জড় হয়, যা দিয়াগো মারাদোনার ৭৫,০০০ দর্শকের রেকর্ড যা ১৯৮৪ সালে বার্সেলোনা থেকে নাপোলিতে আসার পর হয়েছিল তা ভঙ্গ হয়। এই অনুষ্ঠানটি বিভিন্ন স্পেনীয় ও পর্তুগিজ টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

২১ জুলাই সামরক রোভার্সের বিরুদ্ধে ১-০ গোলে জয়লাভের খেলায় রোনালদোর রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে অভিষেক ঘটে। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে তিনি তার প্রথম গোল করেন ১ সপ্তাহ পর পেনাল্টি কিক থেকে যেই খেলায় মাদ্রিদ ৪-২ গোলে এলডিইউ কুইটোকে পরাজিত করে। ২৯শে আগস্ট, রোনালদো লা লিগায় অভিষেক খেলায় পেনাল্টি থেকে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন এবং মাদ্রিদ ঘরের মাঠে ওই খেলায় দেপর্তিভো লা করুণাকে ৩-২ গোলে পরাজিত করে। ১৫ই সেপ্টেম্বর, রোনালদো এফসি জুরিখের বিরুদ্ধে দুইটি গোল করেন যার দুইটিই ছিল আবার ফ্রি-কিক থেকে; জুরিখের মাঠে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ওই খেলায় রিয়াল ৫-২ গোলের বিশাল ব্যবধানে জুরিখকে পরাজিত করে। ২৩ সেপ্টেম্বর ভিলারিয়ালের বিপক্ষে গোল করেন এবং লা লিগার ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে প্রথম চার খেলার চারটিতেই গোল করার রেকর্ড করেন।

১০ই অক্টোবর, পর্তুগালের হয়ে খেলার সময় রোনালদো গোড়ালির ইনজুরিতে পড়েন যা তাকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত মাঠ বাইরে ছিটকে দেয়। এর ফলে তিনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এসি মিলানের বিপক্ষে দুইটি ম্যাচ খেলতে পারেননি। ইনজুরি থেকে তার ফিরে আসার পর প্রথম খেলায়, রিয়াল বার্সেলোনার বিরুদ্ধে এল ক্লাসিকোতে ১-০ গোলে পরাজিত হয়। ৬ ডিসেম্বর, তিনি রিয়ালের হয়ে আলমেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। রিয়ালের ৪-২ গোলে জয়লাভের ওই খেলায় তিনি একটি পেনাল্টিও মিস করেন। তিনি প্রথম হলুদ কার্ডটি দেখেন গোল উৎযাপনের জন্য জার্সি খোলার দায়ে এবং এর ৩ মিনিট পর প্রতিপক্ষের খেলোয়াড় কে লাথি দেয়ার জন্য তাকে ২য় হলুদ কার্ড দেখিয়ে মাঠের বাইরে বের করে দেয়া হয়।

রোনালদো ২০০৯ ফিফা বিশ্বসেরা খেলোয়াড়ের তালিকায় ও ২০০৯ বালোঁ দ’অরে ২য় স্থান অধিকার করেন। ৫ মে ২০১০ সালে রোনালদো রিয়ালের হয়ে প্রথম হ্যাট্রিক করেন। রোনালদো এবং গঞ্জালো হিগুইন ওই মৌসুমে মিলিতভাবে ৫৩ লিগ গোল করেন যা তাদেরকে রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল করা যুগল বানায়।


ব্যক্তিগত জীবন
ব্যক্তিগত জীবনে রোনালদো বিশ্বের সবচেয়ে ধনী খেলোয়াড়। তিনি তার দানশীলতা এবং বিশ্বব্যাপী অসহায় মুসলমানদের সাহায্য করার জন্য বহুল প্রশংসিত। সম্প্রতি এক জরিপে তাকে বিশ্বের সবচেয়ে দানশীল খেলোয়াড় হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ফিলিস্তিনের একটি সংস্থা তাকে পার্সন অফ দ্য ইয়ার ২০১৬ প্রদান করে।

তিনি ২০১১ সালে জয় করা সোনার বুট ফিলিস্তিনের দরিদ্র শিশুদের জন্য নিলামে বিক্রি করে দিয়েছিলেন।
তিনি সিরিয়াতে শরণার্থীদের ৫০০০ ঘর বানিয়ে দিয়েছিলেন।
তিনি ইসরায়েলি ফুটবলারদের সাথে জার্সি বদল এবং করমর্দন করেননি কারণ তিনি অত্যাচারীদের অপছন্দ করেন৷
নেপালে ভূমিকম্পে তিনি নেপালকে অর্থ প্রদান করতে চাইলে নেপালি সরকার তা সরাসরি নিতে অনিচ্ছা পোষণ করলে তিনি সেফ দ্যা চিলড্রেন নামক সংস্থার মাধ্যমে নেপালি শিশুদের স্বাস্থ্য সহায়তায় অনুদান প্রদান করেন৷
রোনালদো বিশ্বের অসংখ্য ক্যান্সার নিরাময় কেন্দ্র তথা হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় বহন করেন৷
২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনি রাশিয়ান সুপারমডেল ইরিনা শায়ক এর সাথে ডেট করেন।

রোনালদো অনেক দাতব্য কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত থেকেছেন। ২০০৫ সালের জুনে তিনি মার্তুনিস নামে এক ১১ বছর বয়সী সুনামি থেকে বেঁচে যাওয়া ইন্দোনেশিয়ান ও তার বাবাকে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব দেখার সুযোগ করে দেন, যার সম্পূর্ণ খরচ তিনি নিজে বহন করেন। পরে সব খেলোয়াড়েরা মিলে তার জন্য ইন্দোনেশিয়ায় একটি বাড়ি কিনতে সাহায্য করেন।
২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্রিস্তিয়ানো তার নিজ শহরে "সিআর৭" নামে একটি ফ্যাশন স্টোর স্থাপন করেন। তার বোনেরা এটির দেখাশোনা করেন।

দুটি বিশ্বকাপ বাছাই খেলার পর রোনালদো ইন্দোনেশিয়ায় যান। তিনি সেখানকার সুনামিদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন এবং অর্থ-সাহায্য তুলতে অংশ নেন। তিনি ইন্দোনেশিয়ার উপ-রাষ্ট্রপতি জুসুফ কাল্লা ও পূর্ব টিমোরের রাষ্ট্রপতি জানানা গুসমাওর সাথে দেখা করেন এবং তার নিজস্ব খেলার সরঞ্জামাদির নিলাম করে ৬৬,০০০ পাউন্ড সংগ্রহ করেন।

জীবনের প্রথমার্ধ
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ডস সান্তোস আভেইরো পর্তুগিজ দ্বীপ মাদেইরার রাজধানী ফুঞ্চালের সাও পেদ্রো প্যারিশে ১৯৮৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী জন্মগ্রহণ করেন এবং সান্তো আন্তোনিওর নিকটবর্তী প্যারিশে বেড়ে ওঠেন। তিনি মারিয়া ডোলোরেস ডস সান্তোস ভিভেইরোস দা আভেইরো, একজন বাবুর্চি এবং জোসে ডিনিস অ্যাভেইরো, একজন পৌর মালী এবং খণ্ডকালীন কিট ম্যান এর চতুর্থ এবং কনিষ্ঠ সন্তান। তার পিতার পাশে তার প্রপিতামহ, ইসাবেল দা পিয়েদাদে , কেপ ভার্দে সাও ভিসেন্টে দ্বীপ থেকে ছিলেন। তার এক বড় ভাই, হুগো এবং দুই বড় বোন, এলমা এবং লিলিয়ানা ক্যাটিয়া "কাতিয়া" । তার মা প্রকাশ করেছেন যে তিনি দারিদ্র্য, তার বাবার মদ্যপান এবং ইতিমধ্যে অনেক সন্তান থাকার কারণে তাকে গর্ভপাত করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তার ডাক্তার প্রক্রিয়াটি করতে অস্বীকার করেছিলেন। রোনালদো একটি দরিদ্র ক্যাথলিক খ্রিস্টান বাড়িতে বড় হয়েছেন, তার সব ভাইবোনের সাথে একটি রুম ভাগ করে নিয়েছেন।

শৈশবে, রোনালদো ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত আন্দোরিনহার হয়ে খেলেন, যেখানে তার বাবা কিট ম্যান ছিলেন, এবং পরে দুই বছর ন্যাসিওনালের সাথে কাটিয়েছেন। 1997 সালে, ১২ বছর বয়সে, তিনি স্পোর্টিং সিপি -র সাথে তিন দিনের ট্রায়ালে যান, যিনি তাকে £1,500 ফি দিয়ে স্বাক্ষর করেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি স্পোর্টিং এর যুব একাডেমীতে যোগদানের জন্য মাদেইরা থেকে লিসবনের কাছে আলকোচেতে চলে যান। ১৪ বছর বয়সে, রোনালদো বিশ্বাস করতেন যে তিনি আধা-পেশাদারভাবে খেলার ক্ষমতা রাখেন এবং তার মায়ের সাথে সম্পূর্ণরূপে ফুটবলে মনোনিবেশ করার জন্য তার শিক্ষা বন্ধ করতে সম্মত হন। একটি ছাত্র হিসাবে একটি ঝামেলাপূর্ণ জীবন এবং তার পরিবার থেকে দূরে লিসবন এলাকায় বসবাসের কারণে, তিনি ৩ তম গ্রেডের পরে স্কুলে পড়া শেষ করেননি। স্কুলে অন্যান্য ছাত্রদের কাছে জনপ্রিয় থাকাকালীন, তাকে তার শিক্ষকের দিকে একটি চেয়ার ছুড়ে মারার পরে বহিষ্কার করা হয়েছিল, যিনি তাকে "অসম্মান" করেছিলেন বলে তিনি বলেছিলেন। এক বছর পরে, তার টাকাইকার্ডিয়া ধরা পড়ে, এমন একটি অবস্থা যা তাকে ফুটবল খেলা ছেড়ে দিতে বাধ্য করতে পারে। রোনালদোর হার্ট সার্জারি করা হয়েছিল যেখানে একটি লেজার ব্যবহার করে একাধিক কার্ডিয়াক পাথওয়েকে একটিতে পরিষ্কার করা হয়েছিল, তার বিশ্রামরত হৃদস্পন্দন পরিবর্তন করে। পদ্ধতির কয়েক ঘন্টা পরে তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল এবং কয়েক দিন পরে আবার প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছিল।

Quotes

Total 0 Quotes
Quotes not found.