কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি
Admin February 03, 2025 192
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বর্তমানে কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি শাখা। বুদ্ধিমত্তা বা চিন্তা করার ক্ষমতা প্রাণীর আছে কিন্তু জড়বস্তুর নেই। তবে বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন প্রচেষ্টায় যন্ত্রের মধ্যে চিন্তা করার ক্ষমতা প্রদান করতে সম্ভব হয়েছে। এটিই মূলত আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলতে বস্তুতপক্ষে যন্ত্রের বুদ্ধিমত্তাকে বোঝায়। অর্থাৎ কোনো ঘটনা বা পরিস্থিতির সাপেক্ষে কোনো যন্ত্র যেমন- কম্পিউটার কী ধরনের সিদ্ধান্ত নিবে তার সক্ষমতা পরিমাপণ পদ্ধতি হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। উদাহরণ হিসেবে রোবটের কথা বলা যায়, রোবটের বৃদ্ধি হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কী

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একক কোনো সংজ্ঞা নেই। গবেষকেরাও এর সংজ্ঞা নিয়ে একমত নন। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের অধ্যাপক ল্যারি বার্নবাউম বলেন, সাধারণভাবে বলতে গেলে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো কম্পিউটার বিজ্ঞানের এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে বুদ্ধিদীপ্ত কাজ করতে যন্ত্র তৈরি ও প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেয়। একই কাজ কোনো ব্যক্তি করলে আমরা তাকে বুদ্ধিমান বলে থাকি।

কয়েক দশক ধরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মূলত বিশ্লেষণী কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে বিশাল তথ্যভান্ডার (বিশাল ডেটা সেট) বিশ্লেষণ করে কোনো বিষয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া বা ধরন চিহ্নিত করার কাজ করার সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে উন্নতির ফলে ‘জেনারেটিভ এআই’ ক্ষেত্রটির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। জেনারেটিভ এআই হচ্ছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি রূপ যা কোনো বস্তু তৈরি করতে পারে। এই প্রযুক্তি কোনো শব্দ, ছবি, ভিডিওর মতো বিষয় সৃষ্টি করতে পারে। অনেক সময় এই পদ্ধতি মানুষের সৃজনশীলতার মতো জটিল বিষয়টি অনুকরণ করে থাকে। এখনকার জনপ্রিয় চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি ও ছবি প্রস্তুতকারক ডাল-ইর মতো প্রোগ্রামে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই সক্ষমতা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। মানুষ যেভাবে চিন্তা করে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তা পারে না। এটি অনেক সময় একই মানের কাজ করে থাকে। কৃত্রিম বুদ্ধিমান সফটওয়্যারে আঁকা ছবি যেমন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার জিতেছে। বিচারকদের চমকে দিয়েছে। বিচারক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আঁকা ছবির সঙ্গে শিল্পীর আঁকা ছবির পার্থক্য বের করতে পারেননি। এ ছাড়া ভয়েস জেনারেটিং সফটওয়্যার এএলএসের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কণ্ঠস্বর সংরক্ষণ করেছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার

অনেক শিক্ষার্থীই চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে তাদের বিনামূল্যে তাদের অ্যাসাইনমেন্ট সম্পন্ন করতে পেরে আনন্দিত—যদিও এর নৈতিকতা নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সাধারণ কাজ সম্পন্ন করতে বাধা থাকা উচিত না। শিক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বহুমাত্রিক ব্যবহারের অর্থ হবে এর সম্পূর্ণ কাঠামো পরিবর্তন করা। কিন্তু সঠিকভাবে যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করা যায় এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যদি এর দক্ষতার উন্নতি করতে পারে, তাহলে সেটা একইভাবে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য বাড়তি সহায়ক হতে পারে।

মাল্টিপল চয়েস প্রশ্নের (এমসিকিউ) সঠিক উত্তর বেছে নেওয়ার মতো কিছু কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা যেতেই পারে। এতে শুধু সময়ই বাঁচবে না, শিক্ষার্থীরা দ্রুততম সময়ে তাদের ফলাফল পেয়ে যাবেন। এর ব্যবহার হতে পারে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে কোর্স সাজাতে, তাদের দুর্বলতা চিহ্নিত করতে এবং সেই অনুযায়ী তাদেরকে মতামত জানাতে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একটি যথাযথ সুপারিশসহ বিশদ প্রতিবেদন তৈরি করতে পারে এবং শিক্ষকের কাছে পাঠাতে পারে। এমনকি শিক্ষার্থীরাও একইভাবে নিজেদের দুর্বলতা খুঁজে নিয়ে তা কাটিয়ে উঠতে পারে।

চ্যাটবট ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অনেক শিক্ষার্থী গুগলের বিকল্প হিসেবে এটি ব্যবহার করছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস গাইড হিসেবে চ্যাটবট ব্যবহার করছে, যা শিক্ষার্থীদের ইনস্টিটিউটের বিস্তারিত তথ্য জানতে সহায়তা করছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্যও বাড়তি সহায়ক হতে পারে। যেহেতু এর অ্যালগরিদম শিক্ষার্থীর দক্ষতা বিশ্লেষণ করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী তাদের পরামর্শ দিতে পারে, তাই এটি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদেরকে নিজস্ব গতিতে এগিয়ে যেতে সহায়ক হতে পারে। শিক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহারে অন্যতম অবদান রেখে চলেছেন খান একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সালমান খান। তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্প্রতি 'খানমিগো' নামে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত শিক্ষা সহায়ক চালু করেছে। শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, এটি শিক্ষকদের পাঠ পরিকল্পনা পর্যন্ত তৈরি করে দিতে সহায়ক। এই ভবিষ্যৎ প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকতে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হুমকি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্রমাগত উন্নতির ফলে চাকরির বাজার সংকোচনের পাশাপাশি বর্তমানে যে বিষয়টি নিয়ে সবাই চিন্তিত তা হলো মানুষ দ্বারা সৃষ্ট এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যন্ত্রগুলো কি ভবিষ্যতে মানব সভ্যতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে? নিউটনের তৃতীয় সূত্র অনুযায়ী প্রত্যেকটি ক্রিয়ারই একটি সমান বা বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। ঠিক তেমনি, যেকোনো কাজেরই ভালো ও খারাপ দুটি দিকই থাকে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ক্রমাগত উন্নতির ফলে, আমরা মানুষের মতো চিন্তাভাবনা সম্পন্ন, পরিবেশের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম যন্ত্র কিন্তু বিভিন্ন আঙ্গিকে তৈরি করে ফেলেছি।

বর্তমানে যে জিনিসটি নিয়ে কাজ হচ্ছে তা হলো যন্ত্রকে কীভাবে মানুষের মতো আবেগ অনুভূতি প্রবণ করা যায়। আর এই বৈশিষ্ট্যগুলো অর্জিত হলে প্রকৃতপক্ষেই তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিতে সক্ষম হবে। ফলে মানুষের ওপর তাদের নির্ভরতাও শেষ হয়ে যাবে। আর এই ধরনের একটি যন্ত্র ভুল নির্দেশনা পেলে তা একজন আবেগ অনুভূতিহীন বুদ্ধিমান মানুষ যতটা ভয়ংকর হতে পারে, তার চেয়েও বেশি ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে, যাদের ওপর মানুষের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।