কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
Admin February 03, 2025 191
বিভিন্ন খাবারে কিশমিশ দিলে স্বাদ যেন কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এ ছাড়া চীনাবাদাম, আলমন্ড বা কাজুবাদামের মতো ড্রাই ফ্রুট খেতে যদি স্বাদ না পান, তবে স্বাদ বৃদ্ধি করতে সেগুলো কিশমিশের সঙ্গে চিবিয়ে খেতে পারেন। কিশমিশ অনেক পরিচিত হলেও কিন্তু এর স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেকেই জানেন না। গ্যাস্ট্রিক, কোষ্ঠকাঠিন্যসহ বিভিন্ন রোগে অনেক উপকারী ভূমিকা রাখে এটি। জানুন কিশমিশ খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা

কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

হজমে সহায়তা করে

প্রতিদিন কয়েকটি কিশমিশ খেলে পেট ভালো থাকে। এতে ফাইবার থাকে, যা পানির উপস্থিতিতে ফুলে উঠতে শুরু করে। আর এগুলো পেটে রেচক প্রভাব দেয় ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া প্রতিদিন কিশমিশ খেলে তা অন্ত্রের চলাচলকে নিয়মিত রাখে এবং তাতে থাকা ফাইবারগুলো বিষাক্ত পদার্থ ও বর্জ্য পদার্থকে সিস্টেমের বাইরে রাখতেও সাহায্য করে।

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমায়

কিশমিশে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম অনেক ভালো মাত্রায় থাকে। আর এগুলো অ্যাসিডিটি কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া সিস্টেম থেকে টক্সিন অপসারণ করার পাশাপাশি আর্থ্রাইটিস, গাউট, কিডনিতে পাথর এবং হৃদরোগের মতো রোগ প্রতিরোধেও সহায়তা করে।

রক্তাল্পতায় উপকারী

কিশমিশে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স থাকায় তা রক্তাল্পতার চিকিৎসায় সাহায্য করে। আর কিশমিশে থাকা তামা লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতেও সাহায্য করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে

কিশমিশে ক্যাটেচিং নামের একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে এটি শরীরকে ফ্রি র‌্যাডিক্যাল কার্যকলাপ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে, যা টিউমার এবং কোলন ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।

সংক্রমণের চিকিৎসায় সাহায্য করে

কিশমিশে পলিফেনলিক ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট থাকে যেটি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে সুপরিচিত। আর এটি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলো প্রদর্শন করায় তা জ্বরের ঝুঁকি কমাতে এবং ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতে সাহায্য করে। এ জন্য দিনে কয়েকটি কিশমিশ খেলে তা আপনার ঠাণ্ডা এবং অন্যান্য সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে।

ওজন বৃদ্ধি করতে উপকারী

আপনি যদি ওজন বৃদ্ধি করতে চান, তা হলে আপনার জন্য সেরা হতে পারে কিশমিশ। এটি ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ সমৃদ্ধ এবং আপনাকে প্রচুর শক্তি দিতে পারে। আর এটি শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল না জমতে দিয়ে ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

ত্বকের জন্য উপকারী

কিশমিশ ত্বককে ভেতর থেকে রক্ষা করে কোষকে যে কোনো ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের কোষ, কোলাজেন এবং ইলাস্টিনের ক্ষতি থেকে ফ্রি র্যাডিকেলগুলোকে বাধা দেয়। এ কারণে এটি বার্ধক্যের লক্ষণ যেমন বলি, সূক্ষ্ম রেখা ও ত্বকে দাগ দেখা দেওয়ার সমস্যা বিলম্ব করতে সাহায্য করে।

কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা

সমিস ফাইবার, ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি ভালো উৎস। কিসমিস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তবে, অতিরিক্ত কিসমিস খেলে কিছু ক্ষতি হতে পারে। অতিরিক্ত কিসমিস খেলে গ্যাস, ডায়রিয়া এবং বমি বমি ভাব হতে পারে।

সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

১। শক্তি বাড়ায়:
সকালে খালি পেটে কিসমিস খেলে শরীরে শক্তির যোগান বাড়ে। কিসমিসের প্রাকৃতিক শর্করা দ্রুত গ্লুকোজ সরবরাহ করে, যা আপনাকে দিন শুরু করতে সাহায্য করে।

২। হজমশক্তি উন্নত করে:
কিসমিসে থাকা আঁশ হজমশক্তি উন্নত করে। এটি অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।

৩। রক্তস্বল্পতা দূর করে:
কিসমিস আয়রনের একটি ভালো উৎস। সকালে খালি পেটে কিসমিস খেলে আয়রন দ্রুত শরীরে শোষিত হয় এবং হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ে। এটি রক্তস্বল্পতা দূর করতে কার্যকর।

৪। লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করে:
কিসমিস খাওয়ার মাধ্যমে লিভারের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া উন্নত হয়। এটি লিভারের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে এবং লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।

৫। হাড় মজবুত করে:
কিসমিসে ক্যালসিয়াম ও বোরন থাকে, যা হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় এবং হাড়কে শক্তিশালী করে। নিয়মিত খেলে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমে।

৬। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে:
কিসমিসে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে, যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি রক্তনালীগুলিকে শিথিল করে এবং রক্তপ্রবাহ উন্নত করে।

৭। ত্বক সুন্দর করে:
কিসমিসে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি থাকে, যা ত্বকের কোষগুলিকে পুনর্গঠিত করে এবং বার্ধক্যের লক্ষণ কমায়। এটি ত্বককে উজ্জ্বল ও মসৃণ রাখতে সাহায্য করে।

৮। ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়:
কিসমিসে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস থাকে, যা দেহের ফ্রি র‍্যাডিক্যাল দূর করে। এটি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

৯। হার্ট সুস্থ রাখে:
কিসমিস হার্টের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে থাকা ফাইবার, পটাশিয়াম ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রক্তের কোলেস্টেরল কমায় এবং হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

১০। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক:
যদিও কিসমিস মিষ্টি, এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। এটি রক্তের শর্করা ধীরে বাড়ায় এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করে।