হঠাৎ হাই প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায়

হঠাৎ হাই প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায়
Admin February 04, 2025 268
ব্লাড প্রেশারে ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের খাবারে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ এড়িয়ে চলতে হবে। তাদের খাদ্যতালিকায় গোলাপী লবণ ব্যবহার করতে হবে। আরও জল পান করা স্বাভাবিকভাবে রক্তচাপ কমাতেও সাহায্য করতে পারে। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিরা কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করে তাদের রক্তচাপ কমাতে পারেন। অতিরিক্ত মাখন, তেলযুক্ত খাবার যেমন কেক, পেস্ট্রি, পরোটা, লুচি, আইসক্রিম ইত্যাদি খাওয়া যাবে না। ডিমের কুসুম, খাসির মাংস, গরুর মাংস ইত্যাদি কোলেস্টেরল বাড়ায়। তাই এগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। 

হাই প্রেশারের লক্ষণসমূহ

প্রেশার হাই হলে আপনার মধ্যে তাৎক্ষণিক কিছু শারীরিক জটিলতা দেখা দেবে। যেমন: মাথা ঘোরানো, মাথা ব্যথা, ক্লান্তি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব, বুক ধড়ফড় করা, অবসাদ, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা, স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে অসুবিধা ইত্যাদি।

কেন এমন হয়

মূলত অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন কিংবা ভুল ডায়েটে অনেকেই প্রেশার হাই হওয়ার সমস্যায় ভোগেন। অনেকে আবার দুশ্চিন্তা, অপর্যাপ্ত ঘুম ও বংশগতির কারণেও এ সমস্যায় ভোগেন। এ সময় ঘাবড়ে না গিয়ে বাড়িতেই প্রথমে নিন প্রয়োজনীয় কিছু পদক্ষেপ।

প্রেসার হাই হলে করণীয়

প্রেশার হাই হওয়া একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি তখনই ঘটে যখন ধমনিতে রক্তের অত্যধিক চাপ পড়ে। এর ফলে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ে। বাড়ে স্ট্রোকের ঝুঁকিও।
 
তাই অনলাইন সহায় হেল্থের প্রতিষ্ঠাতা ডা. তাসনিম জারা হাই প্রেশার দ্রুত নিয়ন্ত্রণের কিছু ঘরোয়া উপায়ের কথা জানিয়েছেন। আসুন জেনে নিই, হঠাৎ প্রেশার আরও বেড়ে গেলে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য তাৎক্ষণিক কী করবেন:
 
১।  হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলে শারীরিক চলাচল কমিয়ে দিন। শান্ত থাকুন। পারলে আরামদায়ক কোনো স্থানে বসুন বা এক পাশে শুয়ে পড়ুন। কেননা, এটি রক্তের চাপ কমতে সাহায্য করে।

২। রক্তের চাপ কমাতে খেতে পারেন তেঁতুলের রস। তেঁতুলের রসের পরিবর্তে খেতে পারেন লেবুর পানি।

৩।  আপনার খাদ্যতালিকায় আদা রাখুন। আদা একটি সুপারফুড। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ও পেশি শিথিল করে।

৪।  রক্তচাপ বেড়ে গেলে প্রক্রিয়াজাত ও তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। সেই সঙ্গে চর্বিযুক্ত খাবার, খাবারের লবণ, ধূমপান উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে এমন খাবারও এড়িয়ে চলুন।

৫।  এ সময় চিনি, তেল, ঘি, মাখন, লবণ ও রেডমিট একেবারেই খাওয়া যাবে না।

৬। এ সময় পর্যাপ্ত পানি পান করুন। কারণ শরীর সঠিকভাবে হাইড্রেশন থাকলে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক থাকে।

৭।  দ্রুত রক্তচাপ কমাতে পটাশিয়াম যুক্ত খাবার খান। এজন্য ডায়েটে রাখুন পটাশিয়াম যুক্ত ফল, টক দই। ওজন বেশি থাকলে সেটিও ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার ওপর জোর দিচ্ছেন তিনি। 

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ

  • মাথাব্যথা
  • বমি বমি ভাব অথবা বমি
  • মাথা ঘোরা
  • ক্লান্তি এবং দুর্বলতা
  • বুক ধড়ফড় করা
  • শ্বাসকষ্ট হওয়া
  • চোখে ঝাপসা দেখা
  • নাক দিয়ে রক্ত পড়া

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ঘরোয়া প্রতিকার

আদা

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আদা চা অনেক উপকারি। আদা হৃদপিন্ডের সংকোচনের শক্তি এবং হার কমাতে সাহায্য করে। এটি একটি ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার হিসাবেও কাজ করে যা রক্তচাপ কমাতে সহায়ক। এক কাপ পানিতে কয়েক টুকরা আদা নিয়ে পাঁচ মিনিট সিদ্ধ করে নিন। এরপর ঠান্ডা করে আদা চা পান করুন।

রসুন

রসুন উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তাৎক্ষণিকভাবে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে রসুন অনেক কার্যকরি। ব্লাড প্রেশার অনেক বেড়ে গেলে এক থেকে দুই টুকরা রসুন নিয়ে সরাসরি খেয়ে নিন বা কুচি কুচি করে কেটে মধুর সাথে মিশিয়ে খেয়ে নিন।

ভিটামিন বি এবং ডি

ভিটামিন বি এবং ভিটামিন ডি তে থাকা পুষ্টিগুণ উচ্চ রক্তচাপের উপর বিপরীত প্রভাব ফেলে। এই ভিটামিনগুলি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং উচ্চ রক্তচাপের কারণে হওয়া স্বাস্থ্য জটিলতা যেমন স্ট্রোক প্রতিরোধে কার্যকর।

গোটা শস্য, ডিম, দুগ্ধজাত খাবার, মাংস, লেবু, গাঢ় শাক এবং চর্বিযুক্ত মাছ ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার। হাই ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে এগুলো নিয়মিত পর্যাপ্ত খাওয়া উচিত।

আপেল সিডার ভিনেগার

হাই ব্লাড প্রেশার কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার উপকারি ভূমিকা রাখে। আপেল সিডার ভিনেগার শরীরে রেনিন নামক এক এনজাইমের কার্যকলাপ হ্রাস করতে সাহায্য করে যা উচ্চ রক্তচাপ তৈরি করে থাকে। এক গ্লাস গরম পানিতে তিন চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার যোগ ভালভাবে মিশিয়ে পান করুন।

লেবুর রস

নিয়মিত শারীরিক ব্যায়ামের পাশাপাশি লেবুর রস পান শরীরে হাই ব্লাড প্রেশার কমাতে সহায়তা করে। এক গ্লাস গরম পানিতে অর্ধেক লেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে পান করলে উচ্চ রক্তচাপ তাৎক্ষণিকভাবে নিয়ন্ত্রণে আসে।

গ্রিন টি

পরিমিত পরিমাণে গ্রিন টি উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। গ্রিন টিতে থাকা পলিফেনল ধমনীকে শিথিল করতে সাহায্য করে, ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিয়মিত একবার বা দুইবার গ্রিন টি পান কার্যকরি ভূমিকা রাখে।

তবে খুব বেশি গ্রিন টি পান করবেন না কারণ এর ক্যাফেইন উপাদান হিতে বিপরীত রক্তচাপ বাড়িয়ে তুলতে পারে।

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড কার্ডিওপ্রোটেকটিভ প্রভাব প্রদর্শন করে থাকে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে থাকা ডকোসাহেক্সায়েনোয়িক অ্যাসিড (ডিএইচএ) রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দন কমাতে সাহায্য করে। সামুদ্রিক মাছ (স্যামন, টুনা ইত্যাদি), বীজ, আখরোট এবং চিয়া বীজ, বাদাম ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা হাই ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে যা খাবেন না

  • চর্বিযুক্ত মাংস
  • টমেটো
  • চিনিযুক্ত খাবার
  • প্যাকেটজাত বা প্রক্রিয়াজাত খাবার
  • জাংক ফুড
  • অতিরিক্ত অ্যালকোহল
  • অতিরিক্ত ক্যাফেইন