
Salimullah Khan
Bangladeshi writer
Date of Birth | : | 18 August, 1958 (Age 66) |
Place of Birth | : | Cox's Bazar, Bangladesh |
Profession | : | Writer |
Nationality | : | Bangladeshi |
Social Profiles | : |
Facebook
Twitter
Instagram
|
সলিমুল্লাহ খান (Salimullah Khan) একজন প্রথিতযশা বাংলাদেশী চিন্তাবিদ ও লেখক। তিনি পণ্ডিত ও গণবুদ্ধিজীবী হিসেবে প্রসিদ্ধ। তার রচনা ও বক্তৃতায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমাজ, রাজনীতি, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের বিশ্লেষণ মানুষকে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করে। বাংলাদেশের তরুণ লেখক ও চিন্তকদের মাঝে সলিমুল্লাহ খানের অনুসারী রয়েছে। তার রচনায় কার্ল মার্ক্স, জাক লাকঁ ও আহমদ ছফার চিন্তার প্রভাব দেখা যায়। তিনি প্লাতোন, জেমস রেনেল, ফ্রঁৎস ফানঁ, শার্ল বোদলেয়ার, ডরোথি জুল্লে প্রমুখের লেখা বাংলায় অনুবাদ করেছেন।
জন্ম ও পরিবার
সলিমুল্লাহ খান ১৯৫৮ সালের ১৮ আগস্ট বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মহেশখালীতে বেড়ে ওঠেন। তার বাবা ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ। তারা পাঁচ ভাই তিন বোন। সলিমুল্লাহ খান চতুর্থ। বড় তিন ভাই ও ছোট তিন বোন। তার নানাবাড়ি কালার মার ছড়া, কক্সবাজার।
শিক্ষা
সলিমুল্লাহ খান চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পাস করেন। এরপর ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। এখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। উচ্চ শিক্ষার জন্য ঢাকায় আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলবিতে ভর্তি হন। ছাত্রাবস্থায়, ১৯৭৬ সালে আহমদ ছফার সাথে সলিমুল্লাহ খানের পরিচয় হয়। আহমদ ছফার মাধ্যমে অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের সাথে পরিচয় হয় সলিমুল্লাহ খানের। এ পর্যায়ে কিছু সময়ের জন্য তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের ছাত্র শাখার সাথে জড়িত ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ইয়র্কের দ্যা নিউ স্কুল বিশ্ববিদ্যালয় তিনি দীর্ঘ কাল অধ্যয়ন ও গবেষণা করেন। এখানে তার সর্বশেষ অভিসন্দর্ভের বিষয় ছিলো "ইংল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকিং তত্ত্ব, ১৭৯৩-১৮৭৭।" এ অভিসন্দর্ভের জন্য তাকে পিএইচডি ডিগ্রি দেয়া হয়।
কর্মজীবন
১৯৮৩-৮৪ সালে সলিমুল্লাহ খান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মধ্যে দিয়ে কর্ম জীবন শুরু করেন। পরবর্তীকালে ১৯৮৫-৮৬ মেয়াদে অল্প দিনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধীনস্থ ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট(আইবিএ) তে শিক্ষকতা করেন। ১৯৮৬ সালে বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান পড়াশোনা করতে। দীর্ঘ কাল তিনি নিউ ইয়র্কে অবস্থান করেন। নিউ ইয়র্কের দ্যা নিউ স্কুল বিশ্ববিদ্যালয় তাকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করে।
১৯৯৯ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। এখানে তিনি অর্থনীতি পড়াতেন। একই সঙ্গে আইন ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে নিয়ে তিনি কিছু দিন তিনি ঢাকা হাই কোর্টে যাতায়াত করেন। তিনি ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন এবং স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো ছিলেন। ২০০৬ সালে তিনি ঢাকার স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি তে আইন বিভাগের একজন অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।
পরবর্তীকালে সলিমুল্লাহ খান ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ ইউল্যাব-এ অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। তিনি বর্তমানে সেন্টার ফর এডভান্সড থিওরির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সাথে জড়িত যেমনঃ এশিয়ান শিল্প ও সংস্কৃতি কেন্দ্র, আহমেদ ছফা রাষ্ট্রসভা ইত্যাদি।
কর্ম ও তৎপরতা
কর্মজীবনের শুরুর দিকে সলিমুল্লাহ খান আব্দুর রাজ্জাকের বিখ্যাত বক্তব্যের ওপর একটি বই লেখেন। বইটির নাম "বাংলাদেশ: স্টেট অব দ্য নেশন"। ১৯৮১ সালে বইটি প্রকাশিত হয়। আহমদ ছফা তার এই বইয়ের সমালোচনা করেন। আব্দুর রাজ্জাককে নিয়ে সলিমুল্লাহ খানের মূল্যায়ন ঠিক নয় বলে মনে করেন তিনি। সলিমুল্লাহ খান প্র্যাক্সিস জার্নাল নামে একটি সাময়িকী সম্পাদনা করতেন ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮৬/৮৭ সাল পর্যন্ত।
তিনি বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক পর্যায়ের অর্থনীতি ও সংস্কৃতির সমালোচনা করেন। তার সমালোচনার ভিত্তি হল মার্কসবাদী তত্ত্ব। তিনি উপনিবেশবাদবিরোধী আন্দোলনের তাৎপর্য তুলে ধরেন এবং পশ্চিমা হস্তক্ষেপের নিন্দা করেন। পশ্চিমা চিন্তাধারা ও বক্তব্যকে ঔপনিবেশিক এবং সাম্রাজ্যবাদী লিগ্যাসির মাধ্যমে বিশ্লেষণ করেন। এই দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি শার্ল বোদলেয়ার, ওয়াল্টার বেঞ্জামিন, মিশেল ফুকো , ফ্রানৎস ফানোঁ লেভি স্ত্রস, এডওয়ার্ড সাইদ , তালাল আসাদ এবং অন্যান্যদের ওপর লেখালেখি করেছেন।
বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি তার লেখার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে। তিনি লালন শাহ , রামপ্রসাদ চন্দ্র , জসিমউদ্দীন , রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, আহমদ ছফা, আবুল হাসান, চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ এবং তার কিছু সমসাময়িক ব্যক্তিদের নিয়ে লিখেছেন। বাংলা শব্দপ্রকরণের নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির ওপর সমালোচনা করেছেন। তিনি বাংলা ভাষাকে দাপ্তরিকভাবে ব্যবহারের পক্ষে যুক্তি দেখান। বাংলাদেশের উচ্চ শ্রেণীর লোকদের বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ করেন। তিনি উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার সমর্থক। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ সরকার কওমী মাদ্রাসার দাওরা ডিগ্রিকে মাস্টার্স সমমান দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সলিমুল্লাহ খান এই কাজের প্রশংসা করেন। বাংলাদেশে কীভাবে বাংলা ভাষার মাধ্যমে ইসলাম প্রচারিত হয়েছে, তা নিয়ে তিনি আলোচনা করেছেন।
তিনি কাজী নজরুল ইসলামকে একটি ঔপনিবেশিকতা-বিরোধী ও গণতান্ত্রিক চিন্তা লালিত কবি হিসেবে তুলে ধরেন। তার বই আহমদ ছফা সঞ্জীবনী আহমদ ছফার কাজের অকপট মূল্যায়ন। বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাবিদ হিসেবে উল্লেখ করেন, যিনি কাজী নজরুলের দর্শনের যথার্থ উত্তরাধিকারী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে আহমদ ছফার লেখাগুলো সংগ্রহ করে তিনি তা সম্পাদনা করে প্রকাশ করেন।
বেহাত বিপ্লব ১৯৭১ বই এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের কৌশলগত ও রাজনৈতিক দিক বিশ্লেষণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক তিনটি নীতি হিসেবে তিনি বলেন, "সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার"। ২০১১ সালে bdnews24.com একটি বিতর্কের আয়োজন করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র মেহেরজান নিয়ে তিনি সমালোচনা করেন। শাহবাগ আন্দোলনের সময় সলিমুল্লাহ খান যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষ নিয়ে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কেও তিনি হস্তক্ষেপ করেছেন।
সাম্প্রদায়িকতা ও চরমপন্থা নিয়ে সলিমুল্লাহ খান ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করেন। তিনি বলেন ভারতে সাম্প্রদায়িকতার উত্থান ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সময়ে। সাম্প্রদায়িক হামলার নিন্দা করেন এবং প্রস্তাব দেন সামাজিক ন্যায়বিচার সমুন্নত করার, যা সাম্প্রদায়িকতা নির্মূল করতে পারে। সব সম্প্রদায়ের নিজ নিজ ধর্ম পালনের সমান অধিকার নিয়ে কথা বলেন।
তিনি প্লাতোন, জেমস রেনেল , শার্ল বোদলেয়ার , ফ্রানৎস ফানোঁ, ডরোথি জুল্লে প্রমুখের লেখা বাংলায় তর্জমা করেছেন। সলিমুল্লাহ খান বহুভাষী। ২০০৫ সাল থেকে তিনি বাংলা সাধু ভাষায় লেখালিখি করছেন। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিভিশন টকশো এবং বিতর্ক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে থাকেন।
Quotes
Total 6 Quotes
আমি কবির নাম দেখে কবিতা পড়ি না।কবিতা পড়ার পর কবির নাম দেখি। - সলিমুল্লাহ খান
আমার মতে কবিতায় যদি মানুষের দরকারি কাথাগুলো না বলা হয় তাহলে কবিতা লেখার দরকার কী? - সলিমুল্লাহ খান
প্রত্যেক মানুষই দর্পনে নিজের মুখ দেখে। আমি জুল্লে’র ভেতরে হয়তো নিজের মুখ দেখেছি। - সলিমুল্লাহ খান
আমি শুরু থেকেই কমুনিস্টদের প্রতি সমবেদনা সম্পন্ন। তবে আমি অ- কমুনিস্টদের কবিতা পড়েও আনন্দ পাই। - সলিমুল্লাহ খান
জুল্লে’র যে রাজনৈতিক বিশ্বাস সেটা আমার শ্রদ্ধেও কিন্তু সে জন্য আমি তার কবিতা অনুবাদ করি নাই। - সলিমুল্লাহ খান
আধুনিক কবিতার দুর্বলতা, আধুনিক কবিতা জীবন থেকে পালিয়ে বেড়ায় এবং যে কারণে আমার মতে, আধুনিক কবিতা নিজেই আত্মহত্যা করছে। এ থেকে রক্ষা পাওয়ার একটাই পথ আবার ন্যাশনাল পপুলার ট্রাডিশানে ফিরে যাওয়া এবং সেভাবে কবিতা নিজেকে রিনিউ করবে। কবিতা শুধু রোম্যান্টিকতা নয়। কবিতা প্রশ্ন করে জীজ্ঞাসা করে। - সলিমুল্লাহ খান