Saifur Rahman
Former Minister of Finance of Bangladesh
Date of Birth | : | 06 Oct, 1932 |
Date of Death | : | 05 Sep, 2009 |
Place of Birth | : | Baharmardan, Moulvibazar |
Profession | : | Former Minister Of Finance Of Bangladesh |
Nationality | : | Bangladeshi |
সাইফুর রহমান (৬ অক্টোবর ১৯৩২– ৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯) বাংলাদেশের একজন অর্থনীতিবিদ এবং রাজনীতিবিদ যিনি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সর্বোচ্চ ১২ বার বার্ষিক অর্থ বাজেট পেশকারী অর্থমন্ত্রী। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একজন নেতা ছিলেন যিনি সর্বোচ্চ সময়কালীন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। ২০০৫ সালে ভাষা আন্দোলনে তার অবদানের জন্য তাকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন
সাইফুর রহমান ৬ অক্টোবর ১৯৩২ সালে তৎকালীন মৌলভীবাজার মহকুমার সদর উপজেলার বাহারমর্দন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আব্দুল বাছিত এবং মা তালেবুননেসা। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ছিলেন সাইফুর রহমান।
শিক্ষাজীবন
সাইফুর মৌলভীবাজার সরকারি হাইস্কুল থেকে লেখাপড়ার পর দি এইডেড হাই স্কুল থেকে ১৯৪৯ সালে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৫১ সালে সিলেট মুরারীচাঁদ কলেজ থেকে আইএ পাস করে ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিকম ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি ১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত লন্ডনে পড়াশুনা করেন এবং দি ইনস্টিটিউট অভ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অভ ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস (আইসিএইডাব্লিউ) থেকে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (সিএ) ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬২ সালে তিনি যুক্তরাজ্যে অ্যাডভান্সড ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আর্থিক ও মুদ্রানীতি এবং উন্নয়ন অর্থনীতিতে বিশেষায়িত শিক্ষা গ্রহণ করেন।
পেশা জীবন
সাইফুর রহমান পেশায় একজন চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট ছিলেন। ১৯৬২ সালে পেশাজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৯ সালে তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় বেতন কমিশনে প্রাইভেট সেক্টর হতে একমাত্র সদস্য মনোনীত হন। তিনি ১৯৭৩ ও ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ জাতীয় বেতন কমিশনের সদস্যও ছিলেন।
তিনি ‘রহমান, রেহমান অ্যান্ড হক’ নামে একটি নিরীক্ষা ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন যা চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে তার কৃতিত্বের স্মারক হয়ে আছে।
১৯৯৪ সালে তিনি স্পেনের মাদ্রিদে বিশ্ব ব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সুবর্ণ জয়ন্তী সম্মেলনের গভর্নর নির্বাচিত হন। ১৯৮০ থেকে ১৯৮২ ও ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ মেয়াদে তিনি বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইডিবি, আইএফএডিতে বাংলাদেশের গভর্নর ছিলেন। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৫ মেয়াদে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।
রাজনৈতিক জীবন
সাইফুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেন এবং সলিমুল্লাহ হল ছাত্র ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকার জন্য তিনি গ্রেফতার হয়ে এক মাস কারাবরণ করেন। তার জাতীয় রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভার বাণিজ্য উপদেষ্টা হিসেবে।
১৯৭৭ সালে তিনি জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দলে যোগ দেন যা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে রূপান্তরিত হয়। তিনি ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন সিলেট-১৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৭৮ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত তিনি প্রথমে জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভার বাণিজ্যমন্ত্রী ও পরে আবদুস সাত্তারের মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২৪ মার্চ ১৯৮২ সালে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের কাছ থেকে এরশাদ ক্ষমতা দখল করে সামরিক শাসন জারি করলে বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের প্রায় সব নেতার সাথে তিনি গ্রেফতার হন।
১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি টেকনোক্র্যাট অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে সিলেট-৪ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১২ জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে মৌলভীবাজার-৩ ও সিলেট-৪ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে তিনি সিলেট-১ ও মৌলভীবাজার-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভার অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ছিলেন।
বাংলাদেশে মুক্ত বাজার সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রবর্তক হিসেবে সমধিক পরিচিত। তিনি সবচেয়ে বেশি সময়কাল ধরে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এবং মোট ১২ বার জাতীয় বাজেট পেশ করেন।
ব্যক্তিগত জীবন
সাইফুর রহমান ১৯৬০ সালে বেগম দূররে সামাদ রহমানকে বিয়ে করেন। তিনি তিন ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জনক। ২০০৩ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তার স্ত্রী মৃত্যুবরণ করেন। তার পুত্র এম নাসির রহমান মৌলভীবাজার-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য।
স্বীকৃতি ও সম্মানা
ভাষা আন্দোলনে তার অবদানের জন্য ২০০৫ সালে একুশে পদক লাভ করেন।
অর্ডার নেশন্যাল, সেনেগালের সর্বোচ্চ জাতীয় সম্মাননা।
মৃত্যু
৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে সিলেট থেকে ঢাকা আসার পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাছে এক মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনায় তৎক্ষণাৎ মারা যান।