Rudra Mohammad Shahidullah
Bangladeshi poet
Date of Birth | : | 16 October, 1956 |
Date of Death | : | 21 July, 1991 (Aged 34) |
Place of Birth | : | Mongla Upazila |
Profession | : | Poet |
Nationality | : | Bangladeshi |
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ (Rudra Mohammad Shahidullah) (১৬ অক্টোবর ১৯৫৬ - ২১ জুন ১৯৯১) ছিলেন একজন বাংলাদেশি কবি ও গীতিকার৷ তার জনপ্রিয় কবিতার মধ্যে অন্যতম “বাতাসে লাশের গন্ধ”৷ এই কবির স্মরণে বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার মোংলার মিঠেখালিতে গড়ে উঠেছে “রুদ্র স্মৃতি সংসদ”৷
জন্ম ও শিশুকাল
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জন্ম তার পিতার কর্মস্থল বরিশাল জেলায়৷ তিনি বরিশাল আমানত গঞ্জ রেডক্রস হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন৷ তার মূল বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার সাহেবের মাঠ গ্রামে৷ তার বাবার নাম ডাঃ শেখ ওয়ালিউল্লাহ ও মায়ের নাম শিরিয়া বেগম৷ উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম৷ ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যের প্রতি আলাদা একটা টান ছিল কবি রুদ্রর৷ ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় তার বোনের ট্র্যাংক থেকে তিনি ও তার মামাতো ভাইয়েরা মিলে টাকা ধার করেন৷ কথা ছিল তারা সিনেমা দেখতে যাবেন৷ কিন্তু সেটি না করে রুদ্র আরেকটি কাজ করলেন৷ তারা একটি লাইব্রেরি তৈরি করলেন৷ সেই লাইব্রেরির নাম দেয়া হয়েছিল বনফুল লাইব্রেরি৷ এছাড়া ছোটবেলায় রুদ্র অনেক অভিমানীও ছিলেন৷ একটা ঘটনা থেকে তা আঁচ করা যায়৷ দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি তার স্কুলের কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় প্রথম হন৷ আবার একই স্কুলের পরিচালনা পরিষদে ছিলেন তার বাবা৷ নিজের ছেলেকে প্রথম স্থানের পুরস্কার দেয়াটা তিনি সমীচীন মনে করেননি৷ তিনি ভেবেছিলেন সেটা স্বজনপ্রীতি হতে পারে৷ অনুষ্ঠান শেষে তিনি অবশ্য অনেক বই কিনে দিয়েছিলেন তার ছেলেকে৷ কিন্তু রুদ্র তার বাবার দেয়া সব বই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন অভিমান করে৷
যৌবন
যৌবনে রুদ্র ছিলেন প্রাণবন্ত এবং কিছুটা উচ্ছন্ন৷ খেয়ালীপনা তার মধ্যে ছিল না৷ তার চুল ছিল কোঁকরা৷ তার মুখে ছিল খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি৷ জিন্স পরতেন প্রায় সময়ই৷ সবসময় আড্ডা দিতে ভালোবাসতেন৷ তবে কবিতার ক্ষেত্রে তিনি অনেক মনোযোগী থাকতেন৷ তার এই অস্থির ভাব নিয়ে কবি শামসুল হক বলেছিলেন, “তার মধ্যে যে বাউন্ডুলেপনা ছিল তা তাকে সুস্থির হতে দেয়নি৷”
শিক্ষাজীবন
ঢাকা ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুল থেকে ১৯৭৪ সালে এসএসসি পাস করেন৷ ছাত্র হিসেবে তিনি মেধাবী ছিলেন৷ চার বিষয়ে লেটার মার্কস পেয়েছিলেন এবং প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন৷ ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৭৬ সালে এইচএসসি পাস করেন৷ অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন৷ ১৯৮০ সালে সম্মানসহ বিএ এবং ১৯৮৩ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ৷
কর্মজীবন
তিনি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা এবং জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক৷ ১৯৭৫ সালের পরের সবকটি সরকারবিরোধী ও স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন৷ প্রতিবাদী কবি হিসেবে খ্যাত৷ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, দেশাত্মবোধ, গণআন্দোলন, ধর্মনিরপেক্ষতা, ও অসাম্প্রদায়িকতা তার কবিতায় বলিষ্ঠভাবে উপস্থিত৷ এছাড়া স্বৈরতন্ত্র ও ধর্মের ধ্বজাধারীদের বিরুদ্ধে তার কণ্ঠ ছিল উচ্চকিত৷ কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠে যে কজন কবি কবিতাকে শ্রোতৃপ্রিয় করে তোলেন, তিনি তাদের অন্যতম৷ তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ৩৪ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং “ভালো আছি ভালো থেকো”সহ অর্ধশতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন৷
ব্যক্তিগত জীবন
১৯৮১ সালের ২৯ জানুয়ারি লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে বিয়ে করেন৷ ১৯৮৮ সালে তাদের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটে৷
প্রকাশিত গ্রন্থ
- কবিতা
- উপদ্রুত উপকূল (১৯৭৯)
- ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম (১৯৮১)
- মানুষের মানচিত্র (১৯৮৬)
- ছোবল (১৯৮৬)
- গল্প (১৯৮৭)
- দিয়েছিলে সকল আকাশ (১৯৮৮)
- মৌলিক মুখোশ (১৯৯০)[৭]
- ছোটগল্প
- সোনালি শিশির
- নাট্যকাব্য
- বিষ বিরিক্ষের বীজ
- বড়গল্প
- মনুষ্য জীবন
- পুরস্কার
- মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮০)
মৃত্যু
তসলিমা নাসরিনের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের পর তিনি আরো মুক্ত জীবন যাপন করতে শুরু করেন৷ তিনি খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম করতেন৷ ঠিক ঠাক সময়ে খেতেন না এবং নিজের শরীরের যত্ন নিতেন না৷ ফলে তার পাকস্থলিতে ক্ষত তৈরি হয়েছিল৷ ১৯৯১ সালের ২১ জুন ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাড়িতে তিনি মারা যান৷ বাগেরহাট জেলার মোংলা থানার মিঠাখালি মামার বাড়িতে চিরনিদ্রায় শায়িত কবি৷
Quotes
Total 103 Quotes
তুমি জানো না__আমি তো জানি,কতোটা গ্লানিতে এতো কথা নিয়ে এতো গান, এতো হাসি নিয়ে বুকে নিশ্চুপ হয়ে থাকি। - রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
একা থাকার এই ভালো লাগায় হারিয়ে গিয়েছি, নিঃসঙ্গতা আমাকে আর পাবে না। - রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
উচিত ছিলো তোমার বাড়ি এক্কেবারে আমার বাড়ির পাশেই হওয়া । জানলা খুলে চোখ দুটোকে মেলে দিলেই দেখতে পাবো টুকিটাকি জিনিশপত্র শোবার ঘরে অলস চুলে বোলাচ্ছ সেই স্নিগ্ধ লাজুক আঙুলগুলো । উচিত ছিলো জানলা খুললে তোমার আমার দেখতে পাওয়া সারাটি ক্ষন। - রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
কথা ছিলো, চিল-ডাকা নদীর কিনারে একদিন ফিরে যাবো। একদিন বট বিরিক্ষির ছায়ার নিচে জড়ো হবে সহজিয়া বাউলেরা, তাদের মায়াবী আঙুলের টোকা ঢেউ তুলবে একতারায়- একদিন সুবিনয় এসে জড়িয়ে ধ’রে বোলবে: উদ্ধার পেয়েছি। - রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
আয়ু থাক নেশায় বিভোর থাকুক বাসনা সারা দেহে, ঝরার আগেই তুমি হাতটি মেল,পতনের আগে শুধু জানিয়ে দিও এ তোমার ভুল সাধ,ভুল বাসনা। - রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
আমি একা এই ব্রহ্মান্ডের ভেতর একটি বিন্দুর মতো আমি একা। - রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
পাঁচশো পঞ্চান্ন মার্কা আধ-খাওয়া একটা সিগারেট প্রথমে স্পর্শ করলো তার বুক। পোড়া মাংসের উৎকট গন্ধ ছড়িয়ে পড়লো ঘরের বাতাসে। জ্বলন্ত সিগারেটের স্পর্শ তার দেহে টসটসে আঙুরের মতো ফোস্কা তুলতে লাগলো। - রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
আমি যার শিয়রে রোদ্দুর এনে দেবো বলে কথা দিয়েছিলাম সে আঁধার ভালোবেসে রাত্রি হয়েছে । এখন তার কৃষ্ণ পক্ষে ইচ্ছের মেঘ জোনাকির আলোতে স্নান করে, অথচ আমি তাকে তাজা রোদ্দুর দিতে চেয়েছিলাম। - রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
বিদায়ের সেহনাই বাজে নিয়ে যাবার পালকি এসে দাঁড়ায় দুয়ারে সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে এই যে বেঁচে ছিলাম দীর্ঘশ্বাস নিয়ে যেতে হয় সবাইকে অজানা গন্তব্যে হঠাৎ ডেকে ওঠে নাম না জানা পাখি অজান্তেই চমকে ওঠি জীবন, ফুরালো নাকি! এমনি করে সবাই যাবে, যেতে হবে। - রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
কতোখানি ডাক শুনে ছুটে যায় এই মুগ্ধ মানুষ অভ্যন্তরে কতোখানি উৎসবে সব পথ ভেঙে একখানা পথ শুধু একখানা ঘর জেগে ওঠে মর্মের মর্মস্থলে। - রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ