-6564ddad6613b.jpeg)
Rizia Rahman
Bangladeshi novelist
Date of Birth | : | 28 December, 1939 |
Date of Death | : | 16 August, 2019 (Aged 79) |
Place of Birth | : | Kolkata, India |
Profession | : | Writer |
Nationality | : | Bangladeshi |
রিজিয়া রহমান (Rizia Rahman) স্বাধীনতা উত্তর কালের বাংলাদেশের একজন নারী ঔপন্যাসিক ছিলেন। ষাটের দশক থেকে গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, রম্যরচনা ও শিশুসাহিত্যে তার বিচরণ। তার প্রকাশিত প্রথম গ্রন্থ অগ্নি স্বাক্ষরা। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলো হল ঘর ভাঙা ঘর, উত্তর পুরুষ, রক্তের অক্ষর, বং থেকে বাংলা। লিখেছেন অভিবাসী আমি ও নদী নিরবধি নামে দুটি আত্মজীবনী। উপন্যাসে অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৯ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।
প্রাথমিক জীবন
রিজিয়া ১৯৩৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর ভারতের কোলকাতার ভবানীপুরে এক মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক বাড়ি ছিল কোলকাতার কাশিপুর থানার নওবাদ গ্রামে। তার পারিবারিক নাম ছিল জোনাকী। তার বাবা আবুল খায়ের মোহম্মদ সিদ্দিক ছিলেন একজন চিকিৎসক ও মা মরিয়াম বেগম একজন গৃহিণী। তাদের পরিবার ছিল সংস্কৃতিমনা। তার দাদা মুন্সী আব্দুল খালেকের পড়ালেখার অভ্যাস ছিল। তার ঘরে সেলফ ভর্তি ছিল ইংরেজি আর ফার্সি বই। তার বাবা ছিলেন সঙ্গীত অনুরাগী। তিনি এসরাজ ও বাঁশি বাজাতেন এবং উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শুনতেন। তার মা সায়গল, জগন্ময় মিত্র ও কানন বালার গান শুনতেন। তার বাবার চাকরির কারণে তাদের ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকতে হয়েছে। ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগের পর তারা বাংলাদেশে চলে আসে। দেশে তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় ফরিদপুরে। সেই সময় শখের বশে কবিতা লিখতেন। ১৯৫০ সালে তিনি যখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়েন তখন তার লেখা গল্প টারজান সত্যযুগ পত্রিকায় ছোটদের পাতায় ছাপা হয়েছিল। ১৯৫২ সালে তার বাবার মৃত্যুর পর তারা ঢাকার শাইনপুকুরে নানাবাড়িতে চলে আসেন। সেই সময় তার এক মামা চাঁদপুরে চাকরি করতেন। তিনি সেখানে চলে যান এবং একটি বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হন। তার মামার পরিবার রক্ষণশীল হওয়ার কারণে তাকে বোরখা পড়তে বাধ্য করা হয়। একদিন স্কুলে যাওয়ার পথে বোরখায় আটকে রাস্তায় লোকের সামনে পড়ে যাওয়ায় তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরে প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৬০ সালে দীর্ঘদিন পর দৈনিক ইত্তেফাকের সাহিত্য পাতায় তার লেখা গল্প ছাপা হয় এবং দৈনিক সংবাদের সাহিত্য পাতায় তার লেখা কবিতা ছাপা হয়। ১৯৬৭ সালে ইত্তেফাকের সাহিত্য পাতার সম্পাদক কামরুন নাহার লাইলির উৎসাহে তিনি লাল টিলার আকাশ নামক গল্প লিখেন। পরে ললনা পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখতেন।
শিক্ষাজীবন
বাবার বদলীর চাকরির কারণে তার শিক্ষাজীবন নিরবচ্ছিন্ন ছিল না। বাবার কর্মস্থল ফরিদপুরে এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার শিক্ষাগ্রহণ শুরু হয়। বাবার মৃত্যুর পর চাঁদপুরে মামার বাড়িতে চলে যান এবং এক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও সেখান থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করতে পারেননি। প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে তাকে ম্যাট্রিক পাস করতে হয়। বিয়ের পর স্বামীর সাথে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে চলে যান এবং সেখানে কোয়েটা গভর্মেন্ট কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে দুই বছর লেখাপড়া করেন। কিন্তু মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট সম্পর্কিত জটিলতার কারণে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় তাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি না দিলে দেশে এসে ইডেন মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৬৫ সালে এই কলেজ থেকেই স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন।
কর্মজীবন
রিজিয়া রহমান সাহিত্য পত্রিকা 'ত্রিভুজ'-এর সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন জাতীয় জাদুঘরের পরিচালনা বোর্ডের ট্রাস্টি ও জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের কার্য পরিচালক হিসেবে। তিন বছর বাংলা একাডেমির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সাহিত্যিক জীবন
শৈশব থেকে বিভিন্ন পত্রিকায় তার কবিতা ও গল্প ছাপা হলেও তার প্রথম গল্পগ্রন্থ অগ্নিস্বাক্ষরা ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত হয়। এই গল্পগ্রন্থে লাল টিলার আকাশ গল্পটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ম্যাগাজিনে অশ্লীলতার অভিযোগে ছাপাতে নারাজ ছিল। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী সম্পাদনা বোর্ডকে রাজি করিয়ে তা প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। পরে ললনা পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে তার ঘর ভাঙ্গা ঘর ছাপা হয়, যা বই আকারে ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয়। বস্তির মানুষের দুঃখ-দুর্দশা-ক্লেদ নিয়ে রচিত এই উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত তার উত্তর পুরুষ উপন্যাসে তিনি চট্টগ্রামে হার্মাদ জলদস্যুদের অত্যাচার এবং পর্তুগিজ ব্যবসায়ীদের দখলদারিত্বের চিত্র তুলে ধরেছেন। এতে চিত্রিত হয়েছে আরাকান-রাজ-সন্দ-সুধর্মার অত্যাচার, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের বীরত্ব, পর্তুগিজদের ব্যবসায়ীদের গোয়া, হুগলি, চট্টগ্রাম দখলের ইতিহাস। নিষিদ্ধ পল্লীর দেহপসারিণীদের মানবেতর দৈনন্দিন জীবনের ঘটনাবলী নিয়ে লিখেছেন রক্তের অক্ষর (১৯৭৮)। সাপ্তাহিক বিচিত্রা পত্রিকায় দেহপসারিণীদের নিয়ে লিখিত প্রতিবেদন পড়ে তিনি এই উপন্যাস লেখার প্রেরণা পান। বং থেকে বাংলা (১৯৭৮) তার একটি অন্যতম উপন্যাস। বাঙালি জাতীয়তাবোধ ও বাংলা ভাষার বিবর্তন এই উপন্যাসের মূল বিষয়। এই উপন্যাসের ভূমিকায় তিনি লিখেছেন, "বাংলাদেশের জাতিগঠন ও ভাষার বিবর্তনের ওপর ভিত্তি করে 'বং থেকে বাংলা' উপন্যাসের সৃষ্টি।"
নীল বিদ্রোহের পরবর্তী সময়ে খুলনা অঞ্চলের এক বিপ্লবী রহিমউল্লাহর ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার বীরত্বগাঁথা নিয়ে লিখেছেন অলিখিত উপাখ্যান (১৯৮০)। এটি মূলত বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ডায়েরির পাতা থেকে অনুপ্রাণিত। রিজিয়া তার স্বামীর কর্মস্থল বেলুচিস্তানে কয়েক বছর অবস্থান করেন। ১৯৫৮ সালের বেলুচিস্তান বিদ্রোহের পটভূমিতে তিনি রচনা করেন শিলায় শিলায় আগুন (১৯৮০)। তার স্বামীর আরেক কর্মস্থল বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে কাজ করার সময় তিনি সাঁওতালদের জীবনচিত্র পর্যবেক্ষণ করেন। তাদের শিকারি থেকে কৃষক।
গ্রন্থতালিকা
গল্পগ্রন্থ
- অগ্নিস্বাক্ষরা (১৯৬৭)
- নির্বাচিত গল্প (১৯৭৮)
- চার দশকের গল্প (২০১১)
- দূরে কোথাও
উপন্যাস
- ঘর ভাঙা ঘর (১৯৭৪)
- উত্তর পুরুষ (১৯৭৭)
- রক্তের অক্ষর (১৯৭৮)
- বং থেকে বাংলা (১৯৭৮) (মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক)
- অরণ্যের কাছে (১৯৮০)
- অলিখিত উপাখ্যান (১৯৮০)রাজনৈতিক ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস
- শিলায় শিলায় আগুন (১৯৮০) (ঐতিহাসিক উপন্যাস)
- ধবল জোত্স্না (১৯৮১)(রোমান্টিক উপন্যাস)
- সূর্য় সবুজ রক্ত(মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক)
- একাল চিরকাল (১৯৮৪)
- ঝড়ের মুখোমুখি (১৯৮৬)
- প্রেম আমার প্রেম (১৯৮৫)
- সবুজ পাহাড় (১৯৮৫)
- একটি ফুলের জন্য (১৯৮৬) (মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক)
- শুধু তোমাদের জন্য (১৯৮৮)
- হে মানব মানবী (১৯৮৯)
- হারুন ফেরেনি (১৯৯৪)
- বাঘবন্দী (২০০৬)
- আবে-রওয়াঁ (২০০৬)
- সুপ্রভাত সোনালি দিন (২০০৬)
- অতলান্ত নীল (২০০৬)
- অন্ধকারে বেতোফেন (২০০৬)
- উৎসে ফেরা (২০০৯)(মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক)
- কাছেই সাগর ( মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক)
- আলবুর্জের বাজ (২০১০)
- পবিত্র নারীরা (২০১০)
- সীতা পাহাড়ে আগুন (২০১০)
- নিঃশব্দ শব্দের খোঁজে
- তৃণভূমির বাইসন
- ডাইম নিকেল
- প্রজাপতি নিবন্ধন
- প্রাচীন নগরীতে যাত্রা
- চন্দ্রাহত
- বান্ধবী প্রিয়দর্শিনী ও অন্যান্য (২০১২)
Quotes
Total 0 Quotes
Quotes not found.