photo

Muhammed Zafar Iqbal

Bangladeshi writer
Date of Birth : 23 Dec, 1952
Place of Birth : Sylhet
Profession : Writer
Nationality : Bangladeshi
মুহম্মদ জাফর ইকবাল (জন্ম: ২৩ ডিসেম্বর ১৯৫২) হলেন একজন বাংলাদেশী কথাসাহিত্যিক ও বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখক, কলাম লেখক, পদার্থবিদ, শিক্ষাবিদ ও আন্দোলনকর্মী। তিনি ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ক্যলিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনলজি ও বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চে ১৮ বছর কাজ করার পর তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন ও ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন এবং ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত একই বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ কৌশল বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। ২০১৮ সালে ৩ অক্টোবর তিনি অবসরে যান। তিনি বিভিন্ন গল্প, উপন্যাস, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লিখেছন। তার লেখা কিছু উপন্যাস চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে। তাকে বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

প্রাথমিক জীবন
১৯৫২ সালের ২৩ ডিসেম্বর, পিতার কর্মস্থল সিলেটে মুহম্মদ জাফর ইকবালের জন্ম। তার নাম আগে ছিল বাবুল। তার পিতা মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন। বাবা ফয়জুর রহমান আহমদের পুলিশের চাকরির সুবাদে তার ছোটবেলা কেটেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায়। পিতা লেখালেখির চর্চা করতেন এবং পরিবারের এই সাহিত্যমনস্ক পরিবেশে জাফর ইকবাল খুব অল্প বয়স থেকেই লিখতে শুরু করেন। তিনি তার প্রথম বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখেন সাত বছর বয়সে। ১৯৭১ সালের ৫ মে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এক নদীর ধারে তার পিতাকে গুলি করে হত্যা করে। বিশ্ববিদ্যালয়-পড়ুয়া জাফর ইকবালকে পিতার কবর খুঁড়ে তার মাকে স্বামীর মৃত্যুর ব্যাপারটি বিশ্বাস করাতে হয়েছিল।

শিক্ষাজীবন
জাফর ইকবাল ১৯৬৮ সালে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৭০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। তিনি ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৭৬ সালে স্নাতক পাশ করে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি অর্জন করতে যান। তার বিষয় ছিল "প্যারিটি ভায়োলেশন ইন হাইড্রোজেন অ্যাটম" (হাইড্রোজেন পরমাণুতে সমতা লঙ্ঘন)। সেখানে ১৯৮২ সালে পিএইচডি সম্পন্ন করার পর ক্যালটেক থেকে তার ডক্টরেট-উত্তর গবেষণা সম্পন্ন করেন।

কর্মজীবন
ড. জাফর ইকবাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৫ ও ১৯৭৬ সালে যথাক্রমে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৫ সালে অনার্সে দুই নম্বরের ব্যবধানে প্রথম শ্রেণীতে ২য় স্থান অধিকার করেন। পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান ও ১৯৮২ সালে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি সম্পন্ন করেন। পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের পরে, জাফর ইকবাল ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে (ক্যালটেক) ডক্টরেটোত্তর গবেষক হিসেবে কাজ করেন (প্রধানত নরম্যান ব্রিজ ল্যাবরেটরি অফ ফিজিক্সে)। এরপর তিনি বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চ (বেলকোর)-এ গবেষক হিসাবে যোগদান করেন (এটি বেল ল্যাবস থেকে পৃথক একটি কর্পোরেশন, বর্তমানে যা টেলকোরডিয়া টেকনোলজিস নামে পরিচিত)। ১৯৯৪ সালে তিনি প্রতিষ্ঠানটি ত্যাগ করেন।

ওই বছরেই তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। তিনি একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য মনোনীত হন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং তড়িৎ ও বৈদ্যুতিন প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত থেকে  ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর তিনি অবসর গ্রহণ করেন।

জাফর ইকবাল বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশি তরুণদের মধ্যে গণিতকে জনপ্রিয় করতে ভূমিকা পালন করেন। ২০১১ সালে, তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে তার অবদানের জন্য রোটারি সিড পুরস্কার লাভ করেন।

২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকার এনসিটিবির পাঠ্যবই "সহজ" ও "শিক্ষার্থী বান্ধব" করার উদ্যোগ নেয়। এর আওতায় ২০১৮ শিক্ষাবর্ষের জন্য নবম ও দশম শ্রেণির ১২টি পাঠ্যবই পরিমার্জন করা হয়। এই ১২টির ৬টি বই জাফর ইকবাল এবং মোহাম্মদ কায়কোবাদের নেতৃত্বে পরিমার্জন করা হয়।

২০২৩ সালে সরকারের নতুন শিক্ষা নীতি আওতায় বিভিন্ন শ্রেণির বইয়ে পরিবর্তন আনা হয়। জাফর ইকবাল ৭ম শ্রেণির পাঠ্যবইসহ একাধিক নতুন পাঠ্যবইয়ের সহ-লেখক এবং প্রধান সম্পাদক ছিলেন। তবে "বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ)" পাঠ্যবইটি প্রকাশের পর চৌর্যবৃত্তি ও যান্ত্রিক অনুবাদের অভিযোগ উঠে। পরে জাফর ইকবাল বইটির জন্য তার ভুলের কথা স্বীকার করেন ও হাসিনা খানের সাথে যৌথ বিবৃতিতে জানান, "এ বছর বইটির পরীক্ষামূলক সংস্করণ চালু হয়েছে এবং সামনের শিক্ষাবর্ষ থেকে এতে যথেষ্ট পরিমার্জন ও সম্পাদনার সুযোগ রয়েছে।"

সাহিত্য
জাফর ইকবাল বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই লেখালেখি করেন। তার প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী কপোট্রনিক ভালোবাসা সাপ্তাহিক বিচিত্রায় প্রকাশিত হয়েছিল। গল্পটি পড়ে একজন পাঠক দাবি করেন সেটি বিদেশি গল্প থেকে চুরি করা। দাবিটিকে মিথ্যে প্রমান করতে তিনি গল্পটির চরিত্রগুলোকে নিয়ে আরও কিছু গল্প রচনা করেন এবং সাপ্তাহিক বিচিত্রায় প্রকাশ করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে এই গল্পগুলো নিয়ে কপোট্রনিক সুখ-দুঃখ নামে একটি বই প্রকাশিত হয়। এই বইটি পড়ে শহীদ-জননী জাহানারা ইমাম প্রশংসা করেন। আমেরিকাতে বসেই তিনি বেশ কয়েকটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী রচনা করেন। দেশে ফিরে এসেও তিনি নিয়মিত বিজ্ঞান-কল্পকাহিনী লিখে যাচ্ছেন, প্রতি বইমেলাতে তার নতুন সায়েন্স ফিকশন বা বিজ্ঞান কল্পকাহিনী প্রকাশিত হয়।

তিনি দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক কালের কন্ঠ সহ একাধিক পত্রিকায়সাদাসিধে কথা নামে নিয়মিত কলাম লিখে থাকেন। তার লেখা কলামগুলোর বিষয়বস্তু হচ্ছে রাজনীতি এবং দেশের সমসাময়িক ঘটনা। তবে ২০২০ সালের ২৫ ডিসেম্বর নিজের লেখা এক কলামে সাদাসিধে কথা থেকে বিরতি নেওয়ার ঘোষণা দেন এবং ২০২০ কে একটি 'দুঃখের বছর' বলে অভিহিত করেন। 

বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড গড়ে তোলার পিছনে তার অবদান রয়েছে। গণিত শিক্ষার উপর তিনি ও অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ বেশ কয়েকটি বই রচনা করেছেন। এর মাঝে "নিউরনে অনুরণন" ও "নিউরনে আবারো অনুরণন" বই দুটি উল্লেখযোগ্য।

রচনাবলি
মূল নিবন্ধ: মুহম্মদ জাফর ইকবালের রচনাবলি
ব্যক্তিগত জীবন

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ড. ইয়াসমীন হক।
প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক, লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন তার বড় ভাই এবং রম্য ম্যাগাজিন উন্মাদের সম্পাদক ও কার্টুনিস্ট, সাহিত্যিক আহসান হাবীব তার ছোট ভাই। তার বোন তিনজন- সুফিয়া হায়দার, মমতাজ শহীদ ও রুখসানা আহমেদ।

পুরস্কার ও সম্মাননা
বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ২০০৪
শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে ২০০৫ সালে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার
কাজী মাহবুবুল্লা জেবুন্নেছা পদক, ২০০২
খালেদা চৌধুরি সাহিত্য পদক, বাংলা ১৪১০
শেলটেক সাহিত্য পদক ২০০৩
ইউরো শিশুসাহিত্য পদক ২০০৪
মোহা. মুদাব্বর-হুসনে আরা সাহিত্য পদক ২০০৫
মার্কেন্টাইল ব্যাংক সম্মাননা পদক ২০০৫
আমেরিকা অ্যালুমনি এ্যসোসিয়েশন পদক ২০০৫
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালুমনি এ্যাসোসিয়েশন পদক '০৫
শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১১
জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পুরস্কার আজীবন সম্মাননা

হত্যার প্রচেষ্টা
মূল নিবন্ধ: মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপর জঙ্গী আক্রমন
২০১৮ সালের ৩ মার্চে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালকে ছুরিকাঘাত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) উৎসবের রোবোটিক প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ইকবালকে লক্ষ্য করে হামলাটি চালানো হয়।