
Khudiram Bose
Date of Birth | : | 03 December, 1889 |
Date of Death | : | 11 August, 1908 (Aged 18) |
Place of Birth | : | Midnapore District |
Profession | : | Youngest Martyrs, Revolutionary |
Nationality | : | British Indian |
বসু, ক্ষুদিরাম (Khudiram Bose) বিপ্লবী ও শহীদ। মেদিনীপুর জেলার হাবিবপুর গ্রামে ক্ষুদিরামের জন্ম। ছয় বছর বয়সে মা লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবীর মৃত্যু এবং একই বছরে পিতা ত্রৈলোক্যনাথ বসু মারা গেলে জ্যেষ্ঠ বোন তাঁকে লালন পালন করেন। গ্রামের বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষার পর তমলুকের ‘হ্যামিল্টন’ স্কুল ও তারপর ১৯০৩ সালে মেদিনীপুরের ‘কলেজিয়েট’ স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তিনি শিক্ষা লাভ করেন। পড়াশুনায় মেধাবী হলেও কিশোরোচিত দুরন্তপনা ও দুঃসাহসিক কার্যকলাপের প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিল।
ক্ষুদিরাম বসু
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী ও স্বদেশী আন্দোলন ক্ষুদিরামের মতো স্কুলের ছাত্রদেরও প্রভাবিত করে এবং পরিণামে তিনি পড়াশোনা ছেড়ে সত্যেন বসুর নেতৃত্বে এক গুপ্ত সমিতিতে যোগ দেন। আরও কয়েকজনের সঙ্গে সেখানে তিনি শরীরচর্চার সাথে সাথে নৈতিক ও রাজনৈতিক শিক্ষা পেতে শুরু করেন। এ সময়ে পিস্তল চালনাতেও তাঁর হাতেখড়ি হয়। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ইংল্যান্ডে উৎপাদিত কাপড় পোড়ানো ও ইংল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত লবণে বোঝাই নৌকা ডোবানোর কাজে ক্ষুদিরাম অংশগ্রহণ করেন।
১৯০৬ সালের মার্চে মেদিনীপুরের এক কৃষি ও শিল্পমেলায় রাজদ্রোহমূলক ইস্তেহার বণ্টনকালে ক্ষুদিরাম প্রথম পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। পরবর্তী মাসে অনুরূপ এক দুঃসাহসী কর্মের জন্য তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন এবং আদালতে বিচারের সম্মুখীন হন। কিন্তু অল্প বয়সের বিবেচনায় তিনি মুক্তি পান। ১৯০৭ সালে হাটগাছায় ডাকের থলি লুট করা এবং ১৯০৭ সালের ৬ ডিসেম্বর নারায়ণগড় রেল স্টেশনের কাছে বঙ্গের ছোটলাটের বিশেষ রেলগাড়িতে বোমা আক্রমণের ঘটনার সাথে তিনি জড়িত ছিলেন। একই বছরে মেদিনীপুর শহরে অনুষ্ঠিত এক রাজনৈতিক সভায় সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যপন্থি রাজনীতির বিরুদ্ধে তিনি বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী ও স্বদেশী আন্দোলনের কর্মীদের প্রয়োজনভিত্তিক কঠোর সাজা ও দমননীতির কারণে কলকাতার প্রধান প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড বাঙালিদের অত্যন্ত ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন। যুগান্তর বিপ্লবীদল ১৯০৮ সালে তাঁকে হত্যার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরামের উপর এ দায়িত্ব পড়ে।
কর্তৃপক্ষ কিংসফোর্ডকে কলকাতা থেকে দূরে মুজাফ্ফরপুরে সেশন জাজ হিসেবে বদলি করে দিয়েছিলেন। দুই যুবক ৩০ এপ্রিল স্থানীয় ইউরোপীয় ক্লাবের গেটের কাছে একটি গাছের আড়ালে অতর্কিত আক্রমণের জন্য ওত পেতে থাকেন। কিন্তু কিংসফোর্ডের গাড়ির মতো অন্য একটি গাড়িতে ভুলবশত বোমা মারলে গাড়ির ভেতরে একজন ইংরেজ মহিলা ও তাঁর মেয়ে মারা যান। এ ঘটনার পর ক্ষুদিরাম ওয়ানি রেলস্টেশনে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। তিনি বোমা নিক্ষেপের সমস্ত দায়িত্ব নিজের উপর নিয়ে নেন। কিন্তু অপর কোনো সহযোগীর পরিচয় দিতে বা কোনো গোপন তথ্য প্রকাশ করতে রাজি হননি। তাঁকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য অনুসারে মুজফ্ফরপুর কারাগারে ১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট ফাঁসিতে তাঁর মৃত্যৃ হয়।
শৈশব জীবন
তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত মেদিনীপুর জেলা শহরের কাছাকাছি কেশপুর থানার অন্তর্গত মোহবনী গ্রামে ৩রা ডিসেম্বর ১৮৮৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ক্ষুদিরাম বসু হলেন পিতা ত্রৈলোক্যনাথ বসু ও মাতা লক্ষীপ্রিয় দেবীর চতুর্থ সন্তান। পরবর্তী সময়ে পুত্রের মৃত্যুর আশঙ্কায় তাঁহারা তখনকার সমাজের নিয়ম অনুযায়ী তাদের পুত্রকে তার বড় বোনের কাছে তিন মুঠি খুদের বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। খুদের বিনিময়ে ক্রয়কৃত শিশুটির নাম পরবর্তীকালে ক্ষুদিরাম রাখা হয়। ক্ষুদিরাম বসু তার বড়ো দিদি অপরুপা দেবীর ছত্রছায়ায় ও স্নেহ-ভালোবাসার বড়ো হতে থাকে। অপরুপা দেবীর স্বামী অমৃতলালবাবুর চাকরী ক্ষেত্রে স্থান বদলী হলে ক্ষুদিরাম বসুকেও একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হত।
কৈশোর জীবন
ক্ষুদিরাম বসু প্রাপ্তবয়সে পৌঁছানোর অনেক আগেই একজন ডানপিটে, বাউন্ডুলে, রোমাঞ্চপ্রিয় হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। কিন্তু ১৯০২-০৩ খ্রিস্টাব্দ কালে যখন বিপ্লবী নেতা শ্রী অরবিন্দ এবং সিস্টার-নিবেদিতা মেদিনীপুর ভ্রমণ করে জনসম্মুখে বক্তব্য রাখলে, সেখানে উপস্থিত তরুণ ছাত্র ক্ষুদিরাম বসু বিপ্লবে অনুপ্রাণিত হন এবং স্পষ্টভাবেই তিনি অনুশীলন সমিতিতে যোগদান করেন। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে ক্ষুদিরাম তার বোন অপরূপার স্বামী অমৃতলালবাবুর সাথে তমলুক শহর থেকে মেদিনীপুরে চলে আসেন।
শিক্ষাজীবন
ক্ষুদিরাম বসু তমলুকের হ্যামিল্টন স্কুল এবং মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষালাভ করেন।
কর্মজীবন
ক্ষুদিরাম বসু ছিলেন একজন প্রাণদরদী ও ভালোবাসার মানুষ। স্বাভাবিক ভাবেই মানুষের দুঃখ-কষ্ট দেখলে তার প্রাণও কেঁদে উঠতো। জনগণ এর সেবাই ছিল তাঁর কাছে পরম ব্রত। প্রকৃতির নানান দুর্যোগে মানুষের সাহায্যের জন্য বাড়ি বাড়ি ঘুরে অর্থ সংগ্রহ করে দুটি অন্নের ব্যবস্থা করতেন। দেশসেবা ও মাতৃ জননী ভারতমায়ের স্বাধীনতার দাবিতে বিপ্লবী সংগঠনে যুক্ত হয়ে জীবন উৎসর্গ করেন।
বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডের জীবন
মেদিনীপুরে আসার পরই তাঁর বিপ্লবী জীবনের অভিষেক। তিনি বিপ্লবীদের একটি নবগঠিত আখড়ায় যোগ দেন। ১৯০২ সালে জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসু এবং রাজনারায়ণ বসুর প্রভাবে মেদিনীপুরে একটি গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠন গড়ে উঠেছিল। এটি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ব্রিটিশবিরোধীদের দ্বারা পরিচালিত হতো। ওই সংগঠনের নেতা ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু। অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই ক্ষুদিরাম তার গুণাবলীর জন্য সবার চোখে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেন। ক্ষুদিরাম সত্যেন্দ্রনাথের সাহায্যে বিপ্লবী দলভুক্ত হয়ে এখানে আশ্রয় পান। ক্ষুদিরাম তাঁরই নির্দেশে “সোনার বাংলা” শীর্ষক বিপ্লবাত্মক ইশতেহার বিলি করে গ্রেপ্তার হন। ১৯০৬ সালে কাঁসাই নদীর বন্যার সময়ে রণপার সাহায্যে ত্রাণকাজ চালান।
সংগ্রামী জীবন
ক্ষুদিরাম বসু তার শিক্ষক সত্যেন্দ্রনাথ বোস এর নিকট হতে এবং শ্রীমদ্ভগবদগীতা পড়ে ব্রিটিশ উপনিবেশের বিরুদ্ধে বিপ্লব করতে অনুপ্রাণিত হন। তিনি বিপ্লবী রাজনৈতিক দল যুগান্তরে যোগ দেন। ১৬ বছর বয়সে ক্ষুদিরাম পুলিশ স্টেশনের কাছে বোমা পুঁতে রাখেন এবং ইংরেজ কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করেন। একের পর এক বোমা হামলার দায়ে ৩ বছর পর তাকে আটক করা হয়। ৩০শে এপ্রিল ১৯০৮ এ মুজাফফরপুর, বিহারে রাতে সাড়ে আটটায় ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল যৌথ ভাবে ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনে কিংসফোর্ড হত্যা পরিকল্পনায় বোমা ছুড়লে গাড়িতে উপস্থিত জনৈক বৃটিশ মিসেস কেনেডি এবং তার কন্যা মিস কেনেডিকে হত্যা করেন।
ক্ষুদিরামের ফাঁসি
ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনে তিনজনকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ক্ষুদিরামের বিচার শুরু হয় ২১শে মে ১৯০৮ তারিখে যা আলিপুর বোমা মামলা নামে পরিচিত হয়। বিচারক ছিলেন জনৈক বৃটিশ মি. কর্নডফ এবং দুইজন ভারতীয়, লাথুনিপ্রসাদ ও জানকিপ্রসাদ। রায় শোনার পরে ক্ষুদিরামের মুখে হাসি দেখা যায়। তার বয়স খুব কম ছিল। বিচারক কর্নডফ তাকে প্রশ্ন করেন, তাকে যে ফাঁসিতে মরতে হবে সেটা সে বুঝেছে কিনা ? ক্ষুদিরাম আবার মুচকে হাসলে বিচারক আবার প্রশ্নটি করেন। ক্ষুদিরাম তখন ওপরে উদ্ধৃত কথাটি বলেন। তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ভোর ছয় টায়। দিনটা ছিল ১৯০৮ সালের ১১ ই আগস্ট। সেই দিন খুব ভােরে ক্ষুদিরাম উঠে পড়লেন, ভাবছিলেন তাকে পৃথিবী থেকে চিরদিনের জন্যে বিদায় নিতে হবে। অথচ সবাইকে ছেড়ে যেতে তার মন সরছিল না। কিন্তু নির্ভীক হৃদয়ে তিনি ফাঁসির জন্যে তৈরি হলেন। মনের মধ্যে তিনি যেন একটা শক্তির সন্ধান পেয়েছিলেন। তাই ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও তিনি ছিলেন নির্ভীক। হাসি মুখে ফাঁসির দড়ি গলায় দিয়ে তিনি মৃত্যুকে বরণ করলেন।